বিশ্বব্যাংকের সামনে ‘জয়বাংলা’ সমাবেশ বা শোডাউন করে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবারো সুনজরে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে নেতা-কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে খুশী হয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে তাকে কিছু সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এমনকী বিএনপির বিক্ষোভের সময় হামলায় আহত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সিদ্দিকুর রহমানের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন। একাধিক সূত্র বলছে, সিদ্দিকুর রহমান তার নেতৃত্বের সাফল্যে দলের প্রধানের কাছ থেকে পুরস্কৃত হতে যাচ্ছেন। সেই পুরস্কারটি কী হবে এই মুহূর্তে বলা কঠিন হলেও তিনি যে পুরস্কৃত হবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত।
সূত্র মতে, সরকারের কোনো পদে সিদ্দিকুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। তা না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া থেকে দলের মনোনয়ন অথবা কেন্দ্রের কোনো পদে তাকে অন্তর্ভূক্ত করে সম্মানিত করার হতে পারে।
সূত্র আরো জানায়, দলের ত্যাগী নেতাদের সবসময় মূল্যায়ন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওয়ান ইলেভেনে যারা ত্যাগী ছিলেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাদের সবাইকে মূল্যায়ন করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের প্রতিও দলীয় প্রধানের সুনজর রয়েছে। বিশেষ করে কথিত দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক যখন অর্থায়ন বন্ধ করেছিল, তখন ২০১১ সালের ১২ জুন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সামনে বিশাল বিক্ষোভ করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। ওই সমাবেশের নেতৃত্ব দেন ড. সিদ্দিকুর রহমান। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি সিদ্দিকুর রহমানের প্রশংসা করেছেন। অনেকে বলছেন, ওই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এক যুগেরও বেশী সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে বহাল আছেন তিনি। দলের একটি অংশ সবসময় সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে কট্টর হলেও কিছুই করতে পারেনি। বরং শেখ হাসিনা ২০২৬ সাল পর্যন্ত তাকে সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনের মৌখিক নির্দেশ দিয়ে গেছেন। সম্প্রতি বিশ্ব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগদানের আগে ভার্জিনিয়ার হোটেল রিজ কার্লটনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি গ্রুপকে ডেকেছিলেন দলের প্রধান শেখ হাসিনা। সেখানে প্রতিপক্ষরা সিদ্দিকুর রহমানের অপসারণ চেয়ে নতুন কমিটি দাবি করেছিলেন। জবাবে শেখ হাসিনা তাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সিদ্দিকুর রহমানই দায়িত্ব পালন করবেন। ২০২৬ নয়, যতদিন তিনি চাইবেন ততদিন সিদ্দিকুর রহমান প্রেসিডেন্ট থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের আরো বলেছেন, ‘সিদ্দিকুর রহমানকে আমিই প্রেসিডেন্ট বানিয়েছি। তিনি দলের পরীক্ষিত নেতা। অতএব, তার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ শুনতে চাই না।’
এদিতে গত ১ মে সোমবার বিশ্বব্যাংকের সামনে জয়বাংলা সমাবেশে বিএনপির হামলায় আহত হয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বাসায় বিশ্রামে আছেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঠিকানাকে বলেন, বয়স হয়েছে। এই বয়সে হামলার শিকার হয়েছেন। সুস্থ হতে একটু সময় লাগবে।
পুরস্কৃত হচ্ছেন, এই খবরে তিনি বলেন, এমন কোনো খবর তিনি জানেন না। কিছু পাওয়ার লোভে তিনি রাজনীতি করেন না। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন উল্লেখ করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা আমার ওপর আস্থা রেখে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন করছি। এটাই আমার জন্য পরম সৌভাগ্যের। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় যা যা করার তা দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি করবেন। কোনো হামলাকে তিনি পরোয়া করেন না।
দলের প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে যাবেন উল্লেখ করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নেত্রী আমাকে বেশকিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। সুস্থ হওয়ার পর নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু করবেন। বিশেষ করে প্রথমেই যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের কমিটি করে দেবেন। অন্যান্য কিছু সাংগঠনিক কাজও রয়েছে। সেগুলো সম্পাদন করবেন।
তিনি বলেন, আমার ওপর যেমন বঙ্গবন্ধু কন্যার আস্থা রয়েছে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর আমার আস্থা রয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে তারা যে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন, তা প্রমাণিত হয়েছে বিশ্বব্যাংকের সামনে জয়বাংলা সমাবেশে। তিনি বিভিন্ন রাজ্য থেকে যাওয়া নেতা-কর্মীদের প্রতি এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।