Thikana News
০৭ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪

নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্য : ওষ্ঠাগত জনজীবন

নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্য : ওষ্ঠাগত জনজীবন
বাংলাদেশের বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পাগলা ঘোড়ায় কিছুতেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রব্যমূল্যের নিম্নমুখী করার ক্ষেত্রে যত হাঁকডাক, আরেকদিকে আলু-পেঁয়াজ, ডিম, ডাল-চালের দামের পাগলা ঘোড়ার খুরের আওয়াজের মধ্যে ফারাকটা দেখে বিভিন্ন মহল থেকে উচ্চারিত হচ্ছে এই মর্মে যে, বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো। 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেমন দলে দলে রেষারেষি, হিংসা-বিদ্বেষ; বাজারে দ্রব্যমূল্যেও যেন সেই দলাদলি, রেষারেষি, হিংসা-বিদ্বেষ। আলুর দাম বাড়লে পটল ভাবে আমিই-বা পেছনে পড়ে থাকব কেনÑআমার প্রয়োজনও কম নয়। আমার দামও বাড়াতে হবে। একইভাবে ডিম, তেল, নুন, পেঁয়াজ, মরিচ, চাল-ডালের দামও বাড়তে থাকে। এভাবে বাড়তে বাড়তে একসময় লাগাম ছিঁড়ে যায়। তখন সবকিছু হয়ে পড়ে লাগামহীন। আর একবার লাগাম ছিঁড়ে গেলে কোনো চেষ্টাতেই লাগাম জোড়া লাগানো যায় না। সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। মানুষ তখন দিশেহারা হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এখন ঠিক সেই পরিস্থিতি।

বাংলাদেশে কোনো পালা-পার্বণ, উৎসব-আয়োজন এলে অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। আর নির্বাচন এলে তো কথাই নেই। তখন ব্যবসায়ীরাও ষোলো আনা সুযোগ নেন। সরকারও থাকে ঢিলেঢালা। কাউকে কিছু বলতে চায় না। ভোটের সময় ব্যবসায়ীদের আশকারা দেয়। ভোটের সময় বাংলাদেশে সবাই একটু ছাড় পায়, পাবলিক ছাড়া। পাবলিক অখুশি হলে, অনেকেই ভাবেন, কিছু যায় আসে না। ব্যবসায়ী বা যারা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ফুলে-ফেঁপে আঙুল ফুলে বটগাছের মতো হয়, তারা হাতে থাকলেই হলো। নির্বাচন এলে সবকিছু আরও বেশি ফ্রিস্টাইল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে সবকিছুই এক্সট্রা লার্জ। কখনো কখনো ডাবল এক্সট্রা নাই। স্মল বা মিডিয়াম নেই। স্মল কেবল পাবলিক। তারা আরও ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে থাকে।

ঠিকানায় এখন দুটি বিষয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশিত হয়। এক. ডেঙ্গু, দুই. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য। ডেঙ্গুতে মানুষের জীবন যাচ্ছে। আর দ্রব্যমূল্যে মানুষের অসহায় অবস্থা। ডেঙ্গুর মতো একবারে মৃত্যু হয় না, তবে অপুষ্টি ও নানা রোগ-শোকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। গত ২৭ সেপ্টেম্বরের একটি সংবাদ শিরোনাম : ‘নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্যে জনজীবন ওষ্ঠাগত’। খবরটি শুরু হয়েছে এভাবে, ‘১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তোফায়েল আহমেদ। সচিবালয়ে বক্ষ্যমান প্রতিবেদনে যিনি প্রতিবেদক, তার সঙ্গে প্রায় দেখা হতো, কথা হতো। বাজার পরিস্থিতি, বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য জানতে চাইলে তিনি বলতেন এবং বাজার পরিস্থিতির ওপর নজরদারি করতে গিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নিতে উদ্যোগী হতেন। প্রয়োজনবোধে তিনি বাজার নেতাদের বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দিতেন।

এখন তেমনটা আর দেখা যায় না। জনস্বার্থে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। বরং মাফিয়া, গডফাদার, সিন্ডিকেট চক্র এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপটের কাছে সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা, মন্ত্রী, এমপিদের অসহায়ত্বই প্রকাশ করতে দেখা যায়। আরও একটি ধারণা দিয়ে জনগণকে বুঝ দেওয়া হয়, আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু খাদ্য বলতে যে কেবল ধান-চাল বোঝায় নাÑএই সত্য আড়াল করা হয়। তেল, নুন, আলু, পটল, চাল, ডিম, কলা, পেঁয়াজ, রসুন সব মিলেই যে খাদ্যতালিকা সম্পূর্ণ হয়, এই সত্যটা আড়াল করার চেষ্টা হয়। আরও একটি বেদনাদায়ক দিক হচ্ছে, কৃষক সমাজ রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, পান্তা-পেঁয়াজ খেয়ে সবকিছু জন্মায়Ñসেই কৃষক সমাজ কোনো দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির সুবিধা পান না। তারা না খেয়েই দিন কাটান। তাদের পরিবার, ছেলেসন্তান অপুষ্টিতে ভোগে, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগী চক্রের কাছে সবকিছু জিম্মি হয়ে পড়ে। যারা তাদের নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার পায়, তারা নিজেদের এতটাই অসহায় মনে করে, তারা প্রকাশ্যে বলতে পর্যন্ত লজ্জাবোধ করে না এ কথা বলতে যে, ‘সিন্ডিকেট চক্র এতটাই শক্তিশালী যে তাদের দমন করা সম্ভব হয় না’।

কিন্তু এ অবস্থা আর কত দিন চলতে পারে? কর্তব্যে অবহেলা করে কিংবা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে এ দায়িত্ব পালন করা যাবে না। এখানে সবার জীবনের প্রশ্ন জড়িত। তাই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে দেশ ও মানুষকে শতভাগ সততার সঙ্গে সেবা করার মানসিকতা নিয়ে।

কমেন্ট বক্স