Thikana News
২২ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্বে যত দিন বাঙালি থাকবে  বাংলা ভাষা বিলুপ্ত হবে না

নিউইয়র্কে আলোচনা সভায় বক্তারা
বিশ্বে যত দিন বাঙালি থাকবে  বাংলা ভাষা বিলুপ্ত হবে না
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও ঔপন্যাসিক অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ বলেছেন, বিশ্বে প্রায় সাত হাজার মাতৃভাষা রয়েছে। অনেক ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে যতদিন বাঙালি থাকবে, বাংলাদেশি থাকবে, বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বাংলা ভাষা বিলুপ্ত হবে না। গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজার হলরুমে অভিবাসী বাঙালি নাগরিক সমাজের উদ্যোগে‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসঃ উত্তর আমেরিকা অভিবাসীদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ড. হাকিম আরিফ। 
অভিবাসী বাঙালি নাগরিক সমাজ যুক্তরাষ্ট্রের আহবায়ক নুরুল বাতেনের সভাপতিত্বে সাংবাদিক ও উপস্থাপক শামীম আল আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা। 
আলোচনা সভায় অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (আমাই)) প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ও কার্যক্রমের বিস্তারিত বর্ণনায় বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ১৭৫টি দেশে দেড় কোটি অভিবাসী ও প্রবাসী বসবাস করেন। প্রথম প্রজন্মে বাঙালিত্ব, বাংলা ভাষায় কথন, পঠন, লিখন চালু রাখে। তবে বিপত্তিটা শুরু হয় দ্বিতীয় প্রজন্ম থেকে, তারা কথা বোঝে, ঠিকমত বলতে পারে না। তারা বাংলায় লিখতে ও পড়তেও জানে না। এভাবে চললে অভিবাসী দেশে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠিত না হয়ে তৃতীয় প্রজন্ম থেকেই ভাষা বিলীন হয়ে যাবে। তাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট উত্তর আমেরিকায় দ্বিতীয় প্রজন্মের সন্তানদের বাংলা ভাষার অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তাদের বাংলা ভাষা শিখানোসহ তা ধারণ ও লালনে উৎসাহিত করতে প্রাথমিকভাবে ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটি ইউএসএ চ্যাপ্টার থেকে প্রাপ্ত অনুদানের দশ হাজার ডলার ব্যয় করা হবে। আমরা ইউনেস্কোর মাধ্যমে প্রতিটি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ড. আরিফ বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে একটি অনুবাদ কেন্দ্র চালু আছে, বাংলা ও ইংরেজিতে পাঁচ খণ্ডে মাতৃভাষা বিশ্বকোষ প্রকাশিত হবে, বহুভাষিক পকেট অভিধান প্রকাশিত হচ্ছে; পাঁচটি বইয়ে পণেরটি ভাষা অন্তর্ভুক্ত হবে। তিনি আরও বলেন, অভিবাসী ও প্রবাসী প্রতিটি নাগরিক বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি তাই সবাইকে বাংলা সংস্কৃতির প্রসারে একুশের পাশাপাশি নববর্ষ উদযাপন, বইমেলা, লালন-রবীন্দ্র- নজরুল বিভিন্ন সম্মেলনে দ্বিতীয় প্রজন্মকে ব্যাপকহারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। না হলে আপনারা শুধু টার্কিই খাবেন, টার্কি দিবসই পালন করবেন - পান্তা ভাত, শুটকি- ইলিশের স্বাদও ভুলে যাবেন। মনে রাখবেন- একটি জাতির ভাষা আগে মরে এবং সব শেষে বিলীন হয় খাদ্যভ্যাস। আমরা সবাই মিলিতভাবে বাংলাভাষা ও বাংলা সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী প্রজন্মের পর প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাব।
নিউইয়র্কে নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা বলেন, নিউইয়র্কে বাঙালি জনসমাজে এটাই আমার প্রথম অনুষ্ঠান। অভিবাসীদের বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির লালন  ও দরদ দেখে আমি অভিভুত। আমি যতদিন দায়িত্বে আছি- দ্বিতীয় প্রজন্মের মাঝে ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো এবং সিটির স্কুলে বাংলা ভাষা শিক্ষার ব্যপারে সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিবো।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস; অভিবাসীদের ভূমিকা শীর্ষক মূল আলোচনায় মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহা একুশ উদযাপন ও নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বিগত বত্রিশ বছর সবকিছুই সম্ভব হয়েছে উত্তর আমেরিকা অভিবাসীদের ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং সহায়তায়। তাই এই গৌরবের কৃতিত্ব সবার। বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি রক্ষায় আমাদের সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাভাষা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্যে দ্বিতীয় প্রজন্মের সন্তানের জন্য আরও ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির সিনিয়র প্রোগ্রামিং লাইব্রেরিয়ান সেলিনা শারমিন তার বক্তব্যে বাংলা ভাষায় কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির বিভিন্ন কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন।
সাংবাদিক তোফাজ্জল লিটনের সঞ্চালনায় দ্বিতীয় পর্বে  আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধান অতিথিকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন কবি শামস আল মমিন, কবি ফকির ইলিয়াছ, সাংবাদিক রিমন ইসলাম, সাংবাদিক সনজীবন কুমার, অ্যাক্টিভিস্ট হাবিব রহমান হারুন প্রমুখ। 
অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্কে বসবাসরত বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশাজীবি, কিশোরগঞ্জ জেলাবাসী সহ বিপুল সংখ্যক অভিবাসী উপস্থিত ছিলেন। 
কিশোরগঞ্জের কৃতি সন্তান ড. হাকিম আরিফ ও পত্নী অধ্যক্ষ শিরীন সুলতানাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন কিশোরগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো.আব্দুর রাজ্জাক ও সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. ফজলুল হক। 

কমেন্ট বক্স