Thikana News
০৬ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪

গিরগিটি ও স্বপ্নচোরা পাখি

গিরগিটি ও স্বপ্নচোরা পাখি
আশরাফ উদ্দীন আহ্মদ


দুষ্টু একটা কোকিল মিষ্টি সুরে কুহু কুহু ডাকছে দূরের কোনো গাছের ঘন সবুজ পাতার ভেতর ডালে বসে। মৃদুমন্দ সমীরণ বয়ে যায় শরীরকে হালকা পরশ বুলিয়ে। মাঘ চলে গেছে। ফাল্গুনের ঝিরিঝিরি আমেজ জানান দিচ্ছে, চারদিকে কেমন একটা মায়াবী ছোঁয়া মনকে দোলা দেয় একটু একটু। মন পবনের নায়ে চড়ে হারিয়ে যেতে চায় কোন সে সুদূরিকায়। কোকিলটা বড় বেহায়া, সেই ডাকছে তো একটানা ডেকে যাচ্ছে। কেন যে অমন করে ঘরছাড়া ডাক সে শিখেছে, আর উদাসী মনকে উদাসীন করে তোলে। শরীর কিসের এক মিষ্টি শিহরণে নাকি দমকা বাতাসে ক্লান্তিতে ছেয়ে যায়। মনে হয় ভরা নদীর বাঁকে কাউকে খুঁজে ফেরে দিবানিশি।

পুকুরঘাটে সেগুন কাঠের তক্তার ওপর আছড়ে-পাছড়ে কাপড় কাচছিল কালাচাঁদের বউ চুমকি। ওপাশের কলাগাছের সারি, একটা মেঠো সড়ক এঁকে-বেঁকে চলে গেছে নয়নাহাটি হাটের মাথা বরাবর। কালাচাঁদ শেখের বউ অবিরাম ডান-বাম হাতে কাপড় উপরে আকাশের দিকে ছুড়ে মেরে আবার সরু বেদেনি কোমর ভেঙে অকস্মাৎ নুয়ে পড়ে কাঠের তক্তায় ফেলে পেটাচ্ছে। নিজের রাঙা পা দুটো পুকুরের পানি স্পর্শ করে আছে, শরীরের কাপড় এলোমেলো, সেদিকে তাকানোর ফুরসতই-বা কোথায়? কিন্তু এখন একটু সচেতনভাবে চারদিকটা দেখে নেয়, বুকের কাপড়টা সামলে পুকুরের দক্ষিণ কোণের মতিনন্দীর আমবাগানের দিকে পলকহীন তাকিয়ে থাকে। এভাবে মরার কোকিল ওর মনটাকে ছিনিয়ে নিল কেন, বোঝে না।

বুকের ভেতর এখন বড় বেশি হ্যাঁচড়প্যাঁচড় করছে চুমকির। সময়জ্ঞান নেই বলে মুখ ঝামটা দিয়ে দুটো গালমন্দ পাড়ে, কিন্তু খিস্তিখেউড় করলেও ওর তাতে কী আর যায় আসে। একটু থেমে থেমে কুহু কুহু ডাকছে। সেই সুর যেন সুর নয়, কখনো মনে হয় কানে গরম সিসা ঢেলে দিচ্ছে, আবার কখনো মনে হয় জিবের ডগায় পরম অমৃত। মরার ফাল্গুন মাসের এ এক বিদ্্ঘুটে কাণ্ড, কারণে-অকারণে অবাধ্য মনটাকে নিয়ে পাগলামু খেলা খেলবে।

চুমকির চোখ বুজে আসে ফাগুনের ঝিরিঝিরি শিহরণে। দুপুর পেরিয়ে যাওয়া মরা রোদের লুটোপুটি খেলা চলছে গাছের মাথায় মাথায়। চুমকির মনটা নরম রোদের বুকে বুক মিলিয়ে হারিয়ে যায়। নীলের ছোঁয়া ওই দিগন্তে ভেসে ভেসে মাধুর্যমণ্ডিত পৃথিবীর রূপ-রস আর সমস্ত ভালোবাসা চুষে নিতে বড় অভিলাষ জাগে। কাপড় কাচা বন্ধ করে একটু বসে জিরিয়ে নিলেও তো মন্দ হয় না, কিন্তু পারে না। কালাচাঁদ শেখের চামচাটা চুমকির কাচা কাপড় ঘাড়ে করে নিয়ে টানা দড়ি এবং ঘাসের ওপর শুকোতে দিচ্ছে, একটু পরপর এসে। ছোঁড়াটা বেশ চালাক, খুব ধীরেসুস্থে পা ফেলে ফেলে কাজ করে, বেশি সময় নিয়ে কাজ করার কারণ সে শরীরকে আরাম দিচ্ছে, যার দরুন কাচা কাপড় জমে আছে বালতি ভরে। চুমকি অনেক বকেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি, যেমন তো সে তেমনই, বকতে বকতে নিজেই ক্লান্ত এখন। একসময় কেমন একটু মায়াও লাগে, বড় মিষ্টি চেহারাখানা, একেবারে নতুন না হলেও মাস চারেক তো হলো। 

নামটা আবার কানাই, কে যে অমন একটা শিহরণ-জাগানো সুন্দর নাম তাকে দিল, ভেবে সে মাঝেসাঝে দিশেহারা, বুকের মধ্যে কম্প তৈরি হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের মাথায় একঝাঁক কাক ডেকে যাচ্ছে। চুমকি কর্দমাক্ত পায়ে ডাঙায় উঠে এসে ঘাসের ওপর দাঁড়ায়। 
মন-খারাপ-করা এই বিকেলের হাত ধরে আরেকটু পরে মাধুবি সন্ধ্যা নেমে আসে বিড়াল পায়ে, চুমকি একসময় বাড়িমুখো পা বাড়ায়।
কালাচাঁদ শেখ এক ঝলক তাকিয়ে ঘরের দাওয়ায় উঠে দোকানের ভেতরে চলে যায়। বাড়ি-লাগোয়া লন্ড্রি তার, নিজের দোকানের কাপড় তেমন অর্ডার না থাকার কারণে বাইরের লন্ড্রির কাপড় সে পাইকারি রেটে অর্ডার নেয় এখনো। কালাচাঁদ শেখ মূলত ‘হরে-কৃষ্ণ ড্রাই ক্লিনার’ এর বাঁধা ধোপা অর্থাৎ কারিগর। শান্তিপুরের ডাকঘর মোড়ের এলাহাবাদ ব্যাংকের বিপরীত মুখেই ফণীভূষণ বৈরাগীর এই লন্ড্রি। সে-ই এখন মালিকানাসূত্রে স্বত্বাধিকারী। 

যদিও তার পূর্বে ইলিয়াস শাহ এবং তারও পূর্বে শওকত চাকলাদার নামের ব্যক্তি ছিল এই হরে-কৃষ্ণ ড্রাই ক্লিনারের মালিক। ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় থেকে কাগজপত্র ঘাঁটলে দেখা যাবে, হরে-কৃষ্ণ ড্রাই ক্লিনারের আদি ইতিহাস। ফণীভূষণ বৈরাগী একটু ছ্যাঁচড়া টাইপের লোক বটে, কালাচাঁদকে ঠকাতে পারলে যেন বর্তে যায়, এমনই ভাবখানা।

কালাচাঁদ শেখের বাপ ইউনূস শেখ বরাবরই হরে-কৃষ্ণ ড্রাই ক্লিনারের কারিগর। আগে এই নাম ছিল না, প্রথম নাম স্মরণ করলে একটু হেরফের হলেও ‘ইলিয়াস-সালাম লন্ড্রি’ সম্ভবত হবে। বাপের মুখে কালাচাঁদ শেখ শুনেছে সে ইতিহাস। ইলিয়াস-সালাম দুই ভাই ছিল, পাকিস্তানের জন্ম হতেই ধুতির কাছা খুলে দুই ভাইই বস্তা কাঁধে পাড়ি জমায় পূর্ব পাকিস্তান। রাতারাতি পানির দরে বিক্রি করে দেয় তাবৎ সহায়-সম্পত্তি, শওকত চাকলাদার নামের এক গরুর দালালের কাছে। সে অবশ্য কিছুদিন চালিয়েছিল নাম পরিবর্তন করে ‘চাকলাদার ড্রাই ক্লিনার’ দিয়ে। দালালের চোখ সব সময় উপর দিকে, কড়কড়ে টাকা ছাড়া সে কি আর কিছু বোঝে। তা ছাড়া সমস্যা হলো হিন্দু গ্রাহকের মন বুঝে কথা বলা অর্থাৎ তাদের মোসাহেবি করা ছিল তার স্বভাবের বাইরে। তার পরও ওই চাঁদা, হিন্দুদের বারো মাসে চৌদ্দ পার্বণের চাঁদা দিতে গিয়েও জেরবার অবস্থা। এমন পরিস্থিতির মাঝে ‘চাকলাদার ড্রাই ক্লিনার’ টিকেছিল কিছুদিন কিন্তু তারপর আর পারল না অর্থাৎ কুলিয়ে উঠতে পারল না আরকি!

একদিন শওকত চাকলাদার সেধে ওই ফণীভূষণ বৈরাগীর কাছে তুলে দেয় চাকলাদার ড্রাই ক্লিনারের স্বত্বাধিকার। প্রথমে অনেক ছেনালি করলেও নামমাত্র মূল্যে লন্ড্রির অধিকার পেয়ে সে কী মহাখুশি। এত দিনে ইউনূস শেখ গত হয়েছে, কালাচাঁদ ওই লন্ড্রির কারিগর হিসেবে মোটামুটি বেশ খ্যাতিও পেয়েছে। ঠিক এই সময়ই ফুলিয়ার নন্দনহাটের পুরোনো কাঠ ব্যবসায়ী ফণীভূষণ মালিকানা পায়। 
তারপর কয়েক বছর পর কানাঘুষা আর কানে কানে কথায় কালাচাঁদ স্পষ্ট বোঝে, ওই শওকত চাকলাদারকে সুকৌশলে এখান থেকে তাড়ানোর পেছনে ফণীভূষণের লম্বা হাত ছিল। চৌকস ফণীভূষণ ব্যবসায়ী মানুষ, এভাবে অনেক মুসলমানকে পথেও বসিয়েছে, তার বুদ্ধির জুড়ি নেই।

কালাচাঁদ শেখকে কেমন একটু সমীহ করে ওই লোকটা। তবে কালাচাঁদ বেশ বোঝে, এটাও তার ব্যবসার মারপ্যাঁচ। শান্তিপুরের আদিলোক বলতে যাদের বোঝায়, কালাচাঁদ অবশ্যই তাদের একজন। চৌদ্দপুরুষ সূত্রে তারা এই মাটির সন্তান। কারও অনুগ্রহ বা দয়ায় নয়, প্রকৃতির নিয়মেই তারা এই আকাশ-বাতাস-মাটির বুকে স্থান পেয়েছে এবং এতেই তার আনন্দ-গৌরব-সুখ-ভালোবাসা। দিনে দিনে শান্তিপুর বা তার আশপাশে কত চেকনাই বা পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে, মানুষের মধ্যে নতুনের আনন্দ, সুন্দরের প্রতীক ঝলমল করছে, মানুষ প্রতিদিন দ্রুতবেগে চলার মতো আধুনিক থেকে আধুনিকতার উচ্চ শিখরে আরোহণ করছে-কালাচাঁদ শেখের ওদিকে এতটুকু দৃষ্টি নেই। দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুরা একে একে কত শত-হাজার পরিবার বাসা বাঁধল, জমি-জিরাত ভোগদখল করল, ওদিকে কখনো তাকায়নি কালাচাঁদ শেখ।

ইউনূস শেখও তেমনি একজন উদাসীন প্রকৃতির মানুষ ছিল। কারও সাতে-পাঁচে কোনো দিন ছিল না লোকটা। তারই একমাত্র ছেলে কালাচাঁদ বাপের ধাত পেয়েছে সবটুকু, চুমকিই তার একমাত্র সম্বল। সামনে শ্রাবণে সাত বছর হবে ওদের বিয়ে, শরীরজুড়ে টইটম্বুর করে বাড়তি যৌবন। উঠতি বয়সে কী রকম আঁটসাঁট আর চৌকস ছিল ওর শরীর-স্বাস্থ্য, তা একবার অনুসন্ধানী চোখে পরখ করলেই স্পষ্ট অনুধাবন করা সম্ভব। চুমকিকে এই বয়সে দেখলেও এখনো যে কারও বুকের হৃৎপিণ্ডের ভেতর দুরু দুরু শুরু হয়ে যায় অথবা স্তিমিত হয়ে যায় বুকের খাঁচার ওঠানামার শ্বাস-প্রশ্বাস।

কালাচাঁদ উঠোনের দাওয়ার ওপর বসে দুপুরের খাড়া রোদে শুকনো কুল আর সরিষা গাদার দিকে তাকিয়ে আছে। ডান দিকের ঝোপ থেকে উড়াল দেয় একটি শালিক, কুয়োপাড়ের কাছে ডাই করে রাখা আখের গোড়ার ভেতর থেকে একটা গিরগিটি ছুটে বের হয়ে উঁচু প্রাচীরের ওপর উঠে হাঁপাচ্ছে এখন। জ্বালানির জন্য কেনা এই আখের গোড়া শুকাচ্ছে ফাল্গুনের রোদে। দাওয়ায় বসে মালেক কবিরাজের পরিত্যক্ত বাড়ির পাশের কৃষ্ণচূড়াগাছের লাল টকটকে ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে মনটা কেমন হয়ে যায়, মানুষের আয়ু কদিনের আর, এমন একটা ভাবনা আচ্ছন্ন করে ফেলে মুহূর্তে!

মালেক কবিরাজ অকস্মাৎ মরে গেল, আর অমনি চার ছেলেমেয়ে শরিকে শরিকে তুমুল গন্ডগোল-ঝামেলা করে বাড়িটা বিক্রি করল। এখন মালিকানাসূত্রে হারাধন আচার্যের নাম সেটেলমেন্ট রেকর্ডে থাকলেও দখল না নেওয়ার কারণে বাড়িটা সাপ-ব্যাঙের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। 

হারাধন আচার্য কৃষ্ণনগর-কলকাতা-হুগলি শহরে তিনটি সংসার পেতেছে, শান্তিপুরে নতুন করে আবার সংসার করবে বলে অনেকে অনুমান করলেও আসলে তা ঠিক নয়। তবে কী কারণে বাড়িটা কিনেও অমন হেলাফেলা করে ফেলে রেখেছে, তা এলাকার কেউ বোঝে না। 

কবিরাজ বাড়ি অর্থাৎ হারাধনের কেনা বাড়ির নারকেলগাছগুলোর মাথায় ফাল্গুনের রোদ পড়ে চকচক করছে, একটু একটু মৃদু সমীরণে শরীরে শীতের শিহরণ অনুভূত হচ্ছে।

এমন সময় চুমকি সরিষার তেল এনে স্বামী নামের মানুষটার সমস্ত গায়ে-পিঠে-বুকে আদরে-সোহাগে রগড়ে রগড়ে মালিশ করে দেয়। কালাচাঁদ আনমনে অনেক কথা ভাবতে থাকে। চুমকির বিয়ে হয়েছিল হরিনাথপুরের স্যাকড়া বাড়ির বড় ছেলে মধুসূদনের সঙ্গে। ওই সংসারে বেশি দিন সে থাকতে পারল না। 

ভাগ্যদেবীর নিষ্ঠুর ইঙ্গিতে চুমকি বাপের বাড়ি চলে আসে মাত্র বছরখানেকের মধ্যেই। কারণ মধুসূদন একদিন গাঙে নাইতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি, গাঙের জলের তোড়ে কোথায় সে তলিয়ে যায়, সে খবর আর পাওয়া যায়নি। বাবার বাড়ি এসে চুমকি এক শ্বাসরুদ্ধকর জীবন অতিবাহিত করতে থাকে। চারদিকের পরিবেশ তার কাছে ক্রমশ আরও কঠিন থেকে কঠিনতর মনে হয়। এভাবে প্রায় সাড়ে তিন বছর কেটে যায়। জীবন আর পৃথিবীর ওপর যখন বিতৃষ্ণা-বীতশ্রদ্ধা, ঠিক তখনই দেবদূতের মতো উজ্জ্বল আলোর একরাশ ঝলকানি আর সম্ভাবনার সহানুভূতি ছড়িয়ে চুমকির জীবনে কালাচাঁদের আবির্ভাব ঘটে।

বেড়পাড়ার মাধব বাগদীর বাড়ি কালাচাঁদের যাওয়া-আসা ছিল সেই বাল্যকাল থেকে। মাধব বাগদীর কেমন সম্পর্কের বোন ছিল চুমকি। দিন কতক চোখাচোখি হয় কালাচাঁদের সঙ্গে, চুমকি তখন বাপের হালভাঙা সংসার চালানোর জন্য স্বামীর ঘর থেকে এসে মাধব বাগদীর মেয়ে অনুপমার সঙ্গে চরকায় সুতো তোলার কাজ করত। চরকা ঘুরিয়ে যে কটা পয়সা হতো, তা জুড়ে দিয়ে সংসারটা গোঁজামিল দিয়ে চালাত। চলত কি চলত না সেটা বড় কথা না হলেও এখানেই হয় তাদের মন দেওয়া-নেওয়ার প্রথম পাট। উনুনের নিভন্ত আগুন একসময় আপনা থেকেই দপ করে সগর্বে জ্বলে ওঠে। মেঘে সংবৃত আকাশ প্রকর্ষ ছড়িয়ে পৌরাণিক গল্পের মতো একদিন চুমকি তাবৎ জীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে উঠে দাঁড়ায়। ধবধবে শুভ্র মনে বাড়তি আনন্দ-ভালোবাসা পেয়ে প্রজাপতি নেচে যায় ফুলকাননে। তারপর দুজনের গতিধারা মিশে যায় সেই চেনা পথের বাঁকে। কায়ক্লেশে কেটে যায় এতগুলো বছর, কোনো অভিযোগ নেই চুমকির।

কত বছর হলো তাদের সংসার, কিছু জানে না কালাচাঁদ। জীবন এবং পৃথিবীর সঙ্গে তাহলে কি এতকাল শুধুই কপটতা করেছে, বুকের মধ্যে আলুলায়িত স্বপ্নগুলো কবে যেন বা মরে গেছে। এভাবে মানুষ কি পেছনের সমস্ত আটপৌরে আখ্যান, উথলানো সময়ের গল্প ভুলে যায়? চুমকির কোলে আজও একটা উত্তরাধিকারী দিতে পারেনি। 
মনটা কদাচিৎ বড় বেশি উথালপাথাল করে কালাচাঁদ শেখের, তখন সে হয়তো নিজের দোষ দেয়। চুমকির চোখের দিকে তাকিয়ে সেভাবে কখনো প্রশ্ন করতে পারেনি সে। বোবা পাথরের মতো নিষ্পলক শুধু দেখে, টোটকা-কবিরাজে কোনো বিশ্বাস নেই, আধুনিক চিকিৎসায়ও যায়নি হয়তো লজ্জায় নয়তো ইচ্ছেয়, কিংবা হয়তো শুধু ভালোবাসা নিয়ে বাঁচার প্রত্যাশায় কারও বিশ্বাসভাঙার অভিলাষ হয়নি। কখনো মনে হয়নি তাদের জীবনটা শূন্য, বরং মনে হয় নিরন্তর চলছে একটা ভালোবাসাসজ্জিত মানবলীলা। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার, চুমকিও কখনো সে রকম কোনো প্রশ্ন করেনি, নিরুত্তর সে শুধু স্বামী-সংসার ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। কালাচাঁদ তাকিয়ে থেকে ঘর্মাক্ত এক ঘূর্ণমান চুমকি নামের প্রাণীকে দেখে, এই দেখা একজন স্বামীর চোখে দেখা। ইতিউতি বিশ্রীভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কর্দমাক্ত পরিবেশের মাঝে একজন উন্নাসিক অন্নদা প্রত্যক্ষ করে।

চুমকি নিয়মিত গাঙের ধারে তক্তার ওপর আছড়ে-পাছড়ে কাপড় কাচে, তার শরীরের কমনীয়তা আর আড়াআড়ি ছায়ায় উদ্ভাসিত হয় গাঙের জল। কখনো বুকভরে শ্বাস নেয় চুমকি। আর তখন হয়তো গাছগাছালিভরা সবুজ বনানী দেখে। কানাই কখনো বিস্ময়সিক্ত চোখে চুমকির চোখে চোখ রেখে নিজের মহার্ঘ পরখ করে। বেশ কিছুদিন থেকে চুমকি একটু-আধটু করে কানাইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ওর চোখের মধ্যে দুর্লভ নবোন্মেষ প্রত্যক্ষ করে চুমকি, বুকের ভেতর কী এক আতঙ্কে দুরু দুরু করে, কিছুই সে খোলাসা করে বলতে পারে না। একসময় চুমকি বুঝতে পারে, সে যেন মনের অজান্তে তিলকরাঙা ওই সদ্য গোঁফ গজানো বালককে ভালোবেসে ফেলেছে। গাঙের ধারে কাপড় কাচতে বসে কখনো-সখনো একদণ্ড মন খুলে দুটো কথা বলে নেয়। কানাই কখনো হাবাগোবা ভাব দেখিয়ে নিজের মধ্যে ঢুকে থাকে 
শামুকের মতো।

চুমকি নরম স্বরে বলে, বিষ্ণুপুরের হাটখোলায় নাকি কোথা থেকে যাত্রাদল এসেছে।

কানাই মাথা নিচু করে বলল, কে বলেছে গো!

চুমকি সরাসরি বলে ওঠে, তোর দাদা, সেদিন শুনলাম গেছিল...
আচম্বিত কানাই বলে, তোমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে না?
একটু লজ্জিত হয় চুমকি, ঠোঁট রাঙা হয়ে যায়। বাসন্তী রঙের ভেজা শাড়িখানা শরীর লেপ্টে আরও যেন সৌন্দর্যে ভরপুর করে তুলেছে। উন্নত বুকজোড়ার দিকে একঝলক তাকিয়ে কানাই কেমন একটু এলোমেলো হয়ে যায়। অমনি একদঙ্গল চড়ুই কিচিরমিচির করতে করতে কোথা থেকে উড়ে এসে চুমকির চোখের সামনে খোলা জায়গায় বসে। পুকুরের চারধারে হরেক জাতের গাছগাছালি মাথা তুলে চুমকিকে দেখছে আগাপাছতলা। মুহূর্তে নিজেকে হারিয়ে ফেলে সে, না-বলা কত কথা মনকে কেমন আচ্ছন্ন করে তার।

কালাচাঁদের সঙ্গে বিয়ের কত আগে, মধুসূদন স্যাকড়ার সঙ্গে বিয়েরও আগে, কত স্মৃতি, কত ছবি আজও চোখের তারায় ঝিলিক হানে। বুকের ভেতর অন্য রকম এক বসন্ত দুলে ওঠে নতুন ফুলের সৌরভে, ফড়িং ধরার সেই বাল্যকাল মানুষের জীবন থেকে একদিন আচমকা হারিয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু সে স্মৃতি মন থেকে মুছে ফেলা যায় না। হয়তো-বা মৃতের আত্মার মতো পেছন থেকে তাড়া করে ফেরে। প্রাণহন্তা সেই সময় বড় পাষণ্ড, বিষদাঁতে জর্জরিত করে সর্বাঙ্গ, সে কষ্টের জ্বালা সহ্য হয় না কিছুতেই।

কানাইয়ের চোখে কী আছে কিছুই চুমকি খুঁজে পায় না। এই মন খারাপ করা উচাটন ফাল্গুনের হাওয়ায় কোকিলের উদাসী সুর শুনে কেন হ্যাঁচড়প্যাঁচড় করতে থাকে তার বুকের ভেতরটা, কালাচাঁদের উপচানো ভালোবাসায় এতটুকু খাদ নেই, তবু কেন মন পথশ্রান্তিতে আচ্ছাদিত। সারাটা দিন পুকুরঘাটে কেটে যায় তার সময়, নিথর দু’চোখ শুধু আকাশের শুভ্রতা আর সবুজের বৈচিত্র্য প্রত্যক্ষ করে। এভাবেই দিন যায়, রাত্রি আসে, রাত্রি যায়, দিন আসে। শান্তিপুরের আকাশ-বাতাস-মাটি-পাখি-পানি আর মানুষের সঙ্গে একজন চুমকি, অচেনা কোনো প্রাণী নয়, আর কানাই সে পরিবেশের একজন নধর নন্দদুলাল। অকস্মাৎ চুমকি একদিন মনের অজান্তেই বলে ফেলে, কানাই, আমাকে নিয়ে যাবে যাত্রা দেখাতে একদিন।

কথাটা বলে নিজেই যেন লজ্জায় মুষড়ে যায়। আগ বাড়িয়ে ওভাবে বলাটা সমীচীন হলো কি না ভেবে পায় না। দেহাতি পাগলা বাতাস একসময় বুকের ওপর সিক্ত কাপড়টুকু উড়িয়ে নিয়ে যায়। উড়িয়ে আর কোথায় নিয়ে যাবে, একটু এলোমেলো করে দেয় আরকি। নিষিক্ত শরীরে কেমন একটা শিহরণ অনুভূত হয় তার। কিন্তু এরপর আর সে কিছুই বলতে পারে না। নিজের কাছে নিজেই লজ্জায় ফেটে পড়ে। কোথায় ছিল এত লজ্জা ভেবে পায় না, মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি মারে ভয় নামের কঠিন এক অগ্নিশিখা। যেন-বা এখনই দপ করে জ্বলে উঠবে।
কানাইয়ের চোখের দিকে কোনোভাবে সোজাসুজি তাকাতে পারে না সে। এতটা লজ্জা কেন চোখের তারায় এসে দলছুট মৌমাছির মতো বিঁধে গেল, কিছুই বুঝতে পারে না। কী হতে কী যে হলো আর এখন কীবা হবে, কীবা বলবে কোনো কথা মুখে আর সরে না তার।
আরেক দিন বিকেলের ঠিক পরপর, কালাচাঁদ শেখ কৃষ্ণনগর গিয়েছিল কী একটা কাজে, রাত্রে না ফেরার কথাও বলেছিল চুমকিকে, আর বলেছিল, কানাইকে রাত্রে বাড়ি রাখতে!

চুমকি প্রথমে দোমনা করেছিল কিন্তু স্বামীর কথায় শেষমেশ সায় দেয়। রাত্রে কানাই খাওয়াদাওয়া করে ঘরের বাইরে দাওয়ার কাঠের তক্তার ওপর শুয়ে ছিল, মাঝরাত্রে চুমকি ঘরের দরজা খুলে বাইরে এসে দেখে, কানাই নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে, আড় চোখে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে। রাত্রের চাঁদ ঝলমলে রুপালি আলো ঢেলে যাচ্ছে পৃথিবীর বুকে, লতা-পাতা-বৃক্ষে আবৃত কালাচাঁদ শেখের বাড়িখানা বড় রমণীয় লাগে। কী এক ফুলের মিষ্টি সুঘ্রাণে ম-ম করছে চারদিক। চুমকি ওই সুঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। বুকের মধ্যে হ্যাঁচড়প্যাঁচড় করতে থাকে শত শত জনমের ভালোবাসা। একসময় নিঃশ্বাস গরম হয়ে ওঠে, নিজেকে হারিয়ে ফেলে। কানাই চোখ খুলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়।

চুমকি হালকা রসিকতার স্বরে বলে, আমাকে যাত্রা দেখাতে নিয়ে যাবে?

কানাই জ্যোৎস্নার মিষ্টি আলোয় নিজেকে বারবার দেখার চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না, একটা আবরণ তাকে একটু একটু গ্রাস করতে থাকে। ক্রমে ক্রমে রাত্রি বেড়ে যায়।

মাঝের দিন বাদে কানাই উপস্থিত হয় কালাচাঁদ শেখের বাড়ি, ভূত দেখার মতো ভড়কে যায় চুমকি। মুহূর্তে আকাশের মেঘরাশির মতো একরাশ লজ্জা ঘিরে ধরে তাকে। আঁচলে মুখ ঢাকে অকস্মাৎ, বুকের ভেতরটা কেমন আঁকুপাঁকু করে ওঠে, সংবিৎ যেন-বা হারিয়ে যাবে এখনই, কিছুই বলতে পারে না মুখ ফুটে। গত পরশুর সমস্ত ছবি আয়নার মতো ভেসে ওঠে চোখের সামনে। রাত্রের আলো-আঁধারির মধ্যে সে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল, কিছুই যেন-বা জানে না, ভোর হতেই সে-ই যে চলে গেল আর আসার নাম নেই, গতকালটা ছিল অন্যদিনের থেকে ভিন্ন।

কিছুই ভালো লাগেনি চুমকির, মানুষের মন কি এমন হয়! আকুলি-বিকুলি মনটা পুড়ে পুড়ে মরেছে ওই ভোর থেকে সমস্ত দিন। কখনো ইচ্ছে হয়েছে কানাইয়ের বাড়ি গিয়ে ডেকে আনে। পুরুষ মানুষের এমনও লজ্জা হয় কখনো, নিজের এলোমেলো শরীরখানা তুলে দিয়েছিল সে-ই তো, কিন্তু তাতে ওর এত লজ্জা কিসের! পুরুষ মানুষের সমস্ত গুণাবলি ওইটুকু কানাইয়ের মধ্যে ঢের রয়েছে, বলার অপেক্ষা রাখে না। বলা চলে, ওই রাত্রে নিজেই যেন লজ্জায় নুয়ে পড়েছিল শেকড়ের মতো মাটির গভীরে।

গতকাল দুপুরে কালাচাঁদ শেখ কৃষ্ণনগর থেকে কাজ শেষ করে ফিরে কানাইয়ের দেখা না পেয়ে বলে, হারামজাদা রাত্রে থাকেনি বুঝি...
চুমকির সর্বশরীর কেঁপে ওঠে। রাত্রে ভালো ঘুম না হওয়ার কারণে চোখের কোলে কালো একটা রেখা পড়েছে, যা খুব গভীরভাবে তাকালে স্পষ্ট অনুমান করা যায়। চুমকি কিছুই বলতে পারেনি। বেতাল বাতাস শুধু উড়িয়ে নিয়ে চলে ওর মন-প্রাণ। চরকা নাচনের মতো মাথার মধ্যে এলোপাতাড়ি ঘুরছে কানাই, কানাইয়ের নাম। আঁটসাঁট শরীরের একজন ছেলে তাকে এভাবে ছন্নছাড়া করল কী জাদুবলে?
কালাচাঁদ একসময় মলিন কণ্ঠে বলল, রাত্রে ভালো ঘুম হয়নি, তাই না...
ঘুম-শব্দটা বলে রহস্যের হাসি ছড়িয়ে আবার চুমকি বলে ওঠে, রাত্রে আমার কবে আর ভালো ঘুম হলো!
থেঁতলানো শরীরে আবার কে বিষের ব্যথা দিল, এমন বোধ হলো কালাচাঁদ শেখের, খানিকক্ষণ মুখে কলুপ এঁটে রাখে। একসময় থিতু চোখে চুমকির দিকে একটু তাকিয়ে সরে যায়। কানাইকে কিছু বলতে বারণ করেছে এবং সেও জানিয়ে দেয় কানাইকে, তুমি গত পরশু রাত্রে ছিলে না বলবে ওকে...
বিকেলের পরপর কাপড় কাচা শেষ করে ঘাট থেকে বাড়ি ফিরে ধপাস করে বসে পড়ে দাওয়ার ওপর। গোসল করার ফলে চুল গলিয়ে পানি চুয়ে চুয়ে নামছে শরীরের তাবৎ অংশে, কানাই চোরা চোখে একজন নিরাভরণ সিক্ত বসনের মেয়েমানুষ প্রত্যক্ষ করে, বুকের মধ্যে হুলুস্থুল ঝড়ের পূর্বাভাস। কালাচাঁদ শেখ দোকান বন্ধ করে অর্ডার আনতে গেছে। চুমকির শরীরে জাদু আছে। চোখের তারায় কী যে আছে অনুমান করতে পারে না, চুমকি তৎক্ষণাৎ বলে ওঠে, আজ যাত্রা দেখতে নিয়ে যাবে না গো...
কানাই নিজের মধ্যে গলে যায়, ঠেঁটা বাতাস অমনি চুমকির বুকের অবশিষ্ট কাপড়টুকু উড়িয়ে নেয়।
ওপাশের নিমগাছের মাথায় শেষ বিকেলের সোনালি রোদ গড়াগড়ি খাচ্ছে, হতচ্ছড়া একটা কোকিল একটু পরপর ডেকে ডেকে চুমকির মনটাকে এলোমেলো করে তুলছে। কুয়োপাড়ের গর্তে জমে থাকা পানিতে মুখ চুবিয়ে চুবিয়ে বাড়ির কবুতরগুলো তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। কানাই নিষ্পলক তাকিয়ে ওদের দিকে। আবার চুমকি বলে, কী হলো, নিয়ে যাবে না, নাকি আমাকে তোমার ঘেন্না লাগে...
কিছু সময় নীরব অতিবাহিত হয়। তারপর কানাই শক্ত হয়ে বলে, তোমার তো স্বামী রয়েছে, ওকে বলো না কেন?
চুমকি হালকা ঠাট্টার ছলে বলে, স্বামী তো কী হয়েছে, কানাই তো নয় সে!
কানাই যেন আকাশ থেকে পড়ে মুহূর্তে, তুমি মুসলমানের বউ, আমি হিন্দু, লোকে জানাজানি হলে কী হবে ভেবেছ?
ঠোঁট উল্টে চুমকি নির্ভীক কণ্ঠে বলল, ওপরেই আমি মুসলমানের বউ, আসলে তো হিন্দুঘরের মেয়ে এবং মধুসূদনের বউ, কথাটা মিথ্যে নয় একরত্তি।
কানাই তার পরও বলে ওঠে, কিন্তু এখন তো তুমি মুসলমান, মিথ্যে বলবে কীভাবে?
-আরে হাদারাম, মিথ্যে কথা মিথ্যে কথা, তুমি বোকারাম দেখছি গো একেবারে।
-সবাই যা দেখছে আমিও তো তাই দেখছি, আমার দেখা কি ভুল তবে বলছ।
-শুধু ভুল না মহাভুল রে বাবা! চোখের মাথা খেয়েছ জানি, এখন দেখছি মহাভুলে পড়ে আছ।
-কী যে বলো, তোমার রসিকতা বুঝি না কচু!
-তুমি জানো না, হিন্দু মেয়েরা জীবনে শুধু একবারই ছ্যাঁদনা তলায় যায়, আর কি কখনো...
কানাই বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে রইল। কালাচাঁদ তাহলে তোমার...
চুমকি চোখের তারায় একঝলক দুষ্টুমি ছড়িয়ে দেয়। ওকে আমি ভালোবেসেছিলাম, আমাকে জয় করেছে।
Ñজয় করেছে মানে কী, বুঝলাম না তো?
চুমকি হেসে কুটিকুটি হয়ে গড়িয়ে পড়ে যেন কানাইয়ের গায়ে। নাম না-জানা ফুলের সুবাসে চারদিক কেমন ভরে ওঠে। কাছের ওই কতবেলগাছটা অবাক চোখে ওদের কথা শুনছে মনোনিবেশ ঘটিয়ে। আবার চুমকি বলে, বাসি ফুলে পুজো হয় না কানাই, টাটকা ফুলে মা তুষ্ট হয়...

কানাই মুহূর্তে আপন খোলসে প্রত্যাবর্তন করে, চারদিকের রুগ্্ণ পরিবেশে সে যেন হাঁপিয়ে উঠেছে, বুকের বাম পাশ কেমন দপদপ করছে এখন। চৈতালি বাতাসে কী যে জাদু আছে বুঝে পায় না। চুমকি নরম কণ্ঠে বলে, কানাই, আমি তোমাকে জয় করতে চাই গো...।
কেঁচোর মতো মাটির গহ্বরে প্রবেশ করতে কানাই মুহূর্তে দিশেহারা হয়ে ওঠে, একটা গিরগিটি দৌড়ে ছুটে আসে ওপাশের বেড়ার ধারের বুনো ডুমুরগাছের ভেতর থেকে, কানাই তাকিয়ে অবাক হয়। এই গিরগিটির রং নাকি বদল হয় মুহূর্তে। বড় হাঁপাচ্ছে, সম্ভবত তাড়া খেয়ে এসেছে। পাটকাঠির মতো সরু ওই গিরগিটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনের মধ্যে কেমন এক মায়া জন্মে, সে মায়ার কথা কাউকেই বলা যায় না।

কমেন্ট বক্স