Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
বাইডেন ঝড় ♦ মোদির কম্পন ♦ হাসিনার বাজিমাত 

কূটনীতির দোলাচলে দুলছে দেশের রাজনীতি 

কূটনীতির দোলাচলে দুলছে দেশের রাজনীতি 
বিশ্বরাজনীতির বাঁকে কেবল উপ-অঞ্চল বা দক্ষিণ এশিয়া নয়, ভারত নয়; বাংলাদেশ পরিস্থিতিও জটিল থেকে জটিলতর। কিন্তু দৃশ্যত উইন উইন ভাব সবদিকে। লাভের প্রশ্নে সবাই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন। যার যার পক্ষে এই ভাবভঙ্গির প্রমাণ ও বিশ্লেষণও আছে। বিশেষ করে, জি-টোয়েন্টির অছিলায় হোস্ট কান্ট্রি হিসেবে ‘গ্লোবাল সাউথে’র স্টিয়ারিং রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে ভারত। অন্তত নিজ দেশের ভেতরে জোরালো প্রচারণায় বিশ্বমঞ্চে নিজের ভিন্ন গুরুত্ব প্রমাণের চেষ্টায় নরেন্দ্র মোদি। জি-টোয়েন্টির সদস্য না হয়েও আমন্ত্রিত হয়ে ধন্য বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা। বাইডেনের সঙ্গে এক সেলফিতেই বাজিমাত করে দিতে পেরেছেন বলে স্বস্তি তাদের। শাহি এলানের মতো তা প্রচার করছে তার দল ও সরকার।
জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ কী পেল ঘুরেফিরে আসছে এমন প্রশ্ন। অনেকের মতে, এই সম্মেলনে দুই অধিবেশনে বিশ্বদরবারে নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। আলোচনায় রয়েছে শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদির বৈঠক। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে সেলফি তুলছেনÑসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন কয়েকটি আলোকচিত্র নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনার ঝড় উঠেছে বাংলাদেশে। ওই সেলফি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চর্চা চলছে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে আলোচনা-সমালোচনা। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই এসব ছবি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার করছেন। কেউ কেউ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের সম্পর্ক ভালো হয়ে যাওয়ার প্রমাণ হিসেবে এ সেলফিকে বর্ণনা করছেন। আবার কেউ কেউ এটিকে ‘নয়াদিল্লির সাফল্য’ হিসেবেও প্রচার করছেন। তবে এ নিয়ে সরকার সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে রীতিমতো প্রচারযুদ্ধ চলছে সামাজিক মাধ্যমে। বিরোধীরা দাবি করছেন, সেলফি দিয়ে বিভ্রান্তির চেষ্টা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোনো নড়চড় হবে না।
অন্যদিকে সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে আসা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যা করার করেছেন। হাসিমুখে চলে যাওয়ার পর বোমাটি ফাটিয়েছেন চীনের প্রতিবেশী দেশ ভিয়েতনাম সফরে গিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বন্ধুত্ব ও অংশীদারত্ব আরও বাড়াতে চান বলে যাওয়ার পর সেখানে জানান, চীনের সঙ্গে ল্যাঠা মিটিয়ে ফেলতে চান, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বসতে উদ্্গ্রীব তিনি। আবার তথ্য ফাঁস করার মতো জানিয়েছেন, ভারতে তাকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। দিল্লি সফর শেষে ১০ সেপ্টেম্বর রোববার ভিয়েতনামে পৌঁছে সংবাদ সম্মেলন করেন বাইডেন। সেখানে ভারতের গণমাধ্যম, মানবাধিকার ও বাক্্স্বাধীনতা ইস্যুতে মোদিকে খোঁচা দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন জানান, মানবাধিকার রক্ষা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো সংবেদনশীল ইস্যু নিয়ে তার কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। তাকে তিনি মানবাধিকার রক্ষা করার গুরুত্বের বিষয়ে বলেছেন। পাশাপাশি মোদির সামনে নাকি তিনি শিক্ষিত সমাজের ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলেছেন।
রীতি অনুযায়ী, এ ধরনের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর মার্কিন সাংবাদিকেরা উভয় রাষ্ট্রনেতাকেই কিছু প্রশ্ন করে থাকেন সংবাদ সম্মেলনে। যুক্তরাষ্ট্রে যখন মোদি গিয়েছিলেন, তখনো তাকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তবে বাইডেনের ভারত সফরকালে মার্কিন সাংবাদিকদের নাকি প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ওয়াশিংটনের দাবি, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সফররত মার্কিন সাংবাদিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, মোদি-বাইডেন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর কোনো সওয়াল-জবাব পর্ব থাকবে না। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একাও সংবাদ সম্মেলন করতে দেওয়া হয়নি। পরে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছিল, ভিয়েতনামে পৌঁছে সংবাদ সম্মেলন করবেন বাইডেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাঙালি কূটনীতির পাশাপাশি রাজনীতির চাল আরও নানামুখী। হোয়াইট হাউসের বৈঠক না পেয়ে এবং মার্কিন হস্তক্ষেপ ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের বিরুদ্ধে একাধিক ব্রডসাইড চালুর পর সেলফি ট্রিক্স কোথায় গড়াবে-এ প্রশ্নও আছে। ভারতে বাইডেনের সঙ্গে সেলফির আগে ঢাকায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে তার বৈঠকের ছবিও ব্যাপক প্রচারিত। দেশে ফিরে ছবির উৎসব ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে। তার ওপর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তেও ম্যাখোঁর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির প্রচার-প্রকাশ-প্রসার তুঙ্গে। এরও আগে গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের ছবিও আছে। মোদি, বাইডেন, শি জিনপিং, ল্যাভরভ বা ম্যাখোঁ- কার সঙ্গের ছবি বেশি ফল দেবে, বিফলে যাবে নাকি বিপদ ডেকে আনবে, সেই ফয়সালার অপেক্ষায় নানা মহল। শুধু বাংলাদেশের স্থানিক রাজনীতি নয়, বিশ্বের বড় বড় নেতাদের সহাস্য ও মহা আন্তরিকতার ফটোসেশনের পর বিপরীত ঘটনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচিত।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজে ইমানুয়েল ম্যাখোঁর পাশে থাকার ঘোষণা, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন, গানের দল ‘জলের গান’-এর সংগীতশিল্পী ও বাদ্যযন্ত্রী রাহুল আনন্দর ধানমন্ডির বাসার নিজস্ব স্টুডিওতে গান শোনা, ভাদ্রের বৃষ্টিতে তুরাগ নদে নৌকায় ঘুরে বেড়ানোসহ নানা ঘটনার ছবি ঘুরছে গণমাধ্যমে। ঢাকা শহরের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তুরাগ নদে নৌকা ভ্রমণের সময় আচ্ছামতো সেলফিও তুলেছেন। এসবের ফাঁকে কাজের কাজ সারিয়ে নিয়েছেন। ফরাসি প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এবার একই প্রতিষ্ঠান থেকে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশকে অশেষ ধন্যবাদ ম্যাখোঁর। নগর সুশাসন ও অবকাঠামো কর্মসূচির বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ফ্রান্সের ফ্রান্স উন্নয়ন সংস্থার (এএফডি) মধ্যে ২০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তা চুক্তি তো আছেই। এমন জয়রথের মাঝে দেশের অর্থনীতির ভেতরের অবস্থা করুণ। ভয়াবহ খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে বাংলাদেশ।
অঙ্কটি ভয়ানক পর্যায়েÑ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা গত সাড়ে ১১ বছরে সর্বোচ্চ। বাজার ব্যবস্থাপনায় চরম নৈরাজ্য। সরকারি ঘরানার ব্যবসায়ীদের ফ্রিস্টাইলের কাছে বাজার জিম্মি। বিশ্ববাজারে কমলেও তাদের কাণ্ডকীর্তিতে বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের দাম কেবলই বাড়ছে। তা-ও রেকর্ড মাত্রায়। সরকারের দিক থেকে তা মানতে অনীহা। অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, যারা বলে দেশের অবস্থা খারাপ, তারা অর্থনীতি বোঝেন না। পরিকল্পনামন্ত্রীও কম যাননি। তার মতে, ‘উদীয়মান অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি একধরনের আশীর্বাদ।’ ‘যে সাপের খেলা জানে, সে ঠিকই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। একদিকে কূটনীতি-রাজনীতির অতিচাল, আরেকদিকে বাজার পরিস্থিতি কোন সাপ খেলাকে আমন্ত্রণ করছে-এ নিয়ে ঘুরছে নানা কথা।
কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিপ্লব এনেছে বলে প্রচারিত। পাট উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, চাল উৎপাদনে তৃতীয়, বিভিন্ন সুগন্ধি মসলা এবং কয়েক ধরনের ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। বাংলাদেশ ডাল, কাঁঠাল, লিচু এ ধরনের শস্য ও ফল উৎপাদনে ষষ্ঠ অবস্থানে। আলু, পেঁয়াজ, আদা, চা, মিষ্টিকুমড়া, সিডস, ব্রকলি, আমÑএসব শস্য ও ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি রাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থান করছে। প্রায় ২০টি পণ্যে পৃথিবীতে দশম স্থানের মধ্যে আছে। অর্থাৎ বিভিন্ন কৃষিপণ্যে এক থেকে দশের মধ্যে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যানের এসব তথ্যের সঙ্গে বাজারের চিত্র মিলছে না। তবে বাজার সিন্ডিকেটের সাপ-লুডু খেলা স্পষ্ট। এ খেলায় কে কাকে বধ করবে বা কাকে বধ করতে গিয়ে কাকে খাদে ফেলবে প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
 

কমেন্ট বক্স