Thikana News
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
নতুন মিত্রের সন্ধানে সরকার ♦ চীন-ভারতের মতিগতিতে নতুন উদ্বেগ

ব্রিকসের স্বাদ জি-টোয়েন্টিতে?

ব্রিকসের স্বাদ জি-টোয়েন্টিতে?
বিশেষ প্রতিনিধি : দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের কূটনীতির জের ও বেদনার মাঝেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে জি-টোয়েন্টি সম্মেলন। এতেও প্রাসঙ্গিক বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে হোস্ট কান্ট্রি ভারতসহ যুক্তরাষ্ট্র-চীন-রাশিয়া আরও প্রাসঙ্গিক। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের জি-টোয়েন্টিতে যোগ না দেওয়ার খবরে নিরাশ হয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো  বাইডেন। আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সরাসরি সাক্ষাতের। ডেলাওয়ারে রিহোবোথ সৈকতে অবকাশে থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, আসন্ন জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে শি জিনপিংয়ের যোগ না দেওয়ার খবরে হতাশ হয়েছেন। এতে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি দেখা হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হলো বলেও আক্ষেপ বাইডেনের। এই আক্ষেপ-হতাশার মধ্যে নতুন খবর, বাইডেনের স্ত্রী জিল বাইডেন করোনায় আক্রান্ত। ফার্স্ট লেডি করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বাইডেনের বিদেশ ভ্রমণে কোনো প্রভাব পড়বে কি না, তা স্পষ্ট করেনি হোয়াইট হাউস। তবে শি জিনপিং ও পুতিনের জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে না আসার খবরে হতাশ বাইডেন ফার্স্ট লেডির করোনাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে ভারত সফর থেকে বিরত থাকতে পারেন বলেও গুঞ্জন উঠেছে। এবার সুযোগ হাতছাড়া হলেও শি এবং বাইডেনের মধ্যে নভেম্বরে সান ফ্রান্সিসকোতে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন শীর্ষ সম্মেলনে দেখা হওয়ার সুযোগ আছে। গত বছরের ১৪ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়ায় জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে বিশ্বের ক্ষমতাধর এই দুই নেতার মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়। এখন পর্যন্ত খবর হচ্ছে, ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া এবারের জি-সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী লি কাচিয়াং চীনের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনও এ সম্মেলনে আসছেন না। তবে অদূর ভবিষ্যতে তার সঙ্গে এক টেবিলে বসার অপেক্ষায় উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন। হতে পারে অস্ত্র বিনিময়সহ বিভিন্ন চুক্তি। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার বৈঠকের বিষয়টি সামনে এনে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র আড্রিয়েনে ওয়াটসন জানান, চলতি মাসেই আলোচনায় বসতে পারেন পুতিন ও কিম। এ সময় পিয়ংইয়ংকে রাশিয়ার সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে এমন কোনো সমঝোতা থেকে সরে আসার আহ্বান জানায় হোয়াইট হাউস, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি করে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে রাশিয়া ও এর ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারকে রকেট, গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও তা বরাবরই নাকচ করেছে কিম প্রশাসন। গেল জুলাইয়ে উত্তর কোরিয়া সফর করেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু। ওয়াশিংটনের দাবি, সে সফরেই নয়া অস্ত্র বিনিময় চুক্তির ভিত্তি তৈরি করেছে দুই দেশ। এর আগে ২০১৮ তে রাশিয়া সফরে সর্বশেষ সশরীরে আলোচনায় বসেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন।
তালগোল পাকানো বিশ্ব পরিস্থিতির মাঝে কোনো ধরনের সমঝোতা ছাড়াই শেষ হলো কৃষ্ণসাগর দিয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তি ইস্যুতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বৈঠকটি। খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তি ইস্যুতে আলোচনা করতে রাশিয়ার দক্ষিণ উপকূলীয় শহর সুচিতে হয় তাদের বৈঠকটি। টানা তিন ঘণ্টা আলোচনা করেও রুশ প্রেসিডেন্টকে শস্য চুক্তিতে ফেরাতে পারেননি তুর্কি প্রেসিডেন্ট। চুক্তিটি বাতিলের জন্য পশ্চিমাদের দোষারোপ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। পরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিন সাফ জানিয়ে দেন, রাশিয়ার খাদ্য ও সার রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেই কেবল শস্য রপ্তানি আবারও শুরু হবে। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা করতে রাশিয়া কখনোই অস্বীকৃতি জানায়নি বলেও জানান তিনি। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তিটি আবারও ফিরিয়ে আনতে ইউক্রেনের মনোভাব আরও নরম করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলগুলোতে এখনই শস্য পাঠানো জরুরি। গেল জুলাইয়ে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে সরে আসে রাশিয়া। চলমান স্নায়ুচাপগ্রস্ত বিশ্বে বিভিন্ন দেশ যে যাকে যেভাবে পারছে নিজের বুঝমতো শিকার ধরছে।
ফাঁকতালে লাভ খুঁজতে গিয়ে দরকারি মনে করলে কাছে টানছে, নইলে দূরে সরছে। সাইডলাইন খুঁজছে। চীনা প্রেসিডেন্টের তার পাশের দেশ ভারতে বিশ্বনেতাদের এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে না আসায় হিসাব গোলমাল হয়ে গেছে কারও কারও। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে কিছু টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কে উত্তেজনা কমাতে এ বছর ওয়াশিংটনের দিক থেকে কিছু কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ সত্ত্বেও খুব একটা ফল হয়নি। চীন ও ভারতের সম্পর্কেও তিক্ততা তৈরি হয়েছে সীমানা বিরোধকে ঘিরে। হিমালয় অঞ্চলে সীমানা বিরোধ নিয়ে এই দুই দেশ সেখানে মুখোমুখি অবস্থানে আছে। গত সপ্তাহে বেইজিং একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছিল, যেখানে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ এবং আকসাই-চিন মালভূমি চীনের সীমানাভুক্ত বলে দেখানো হয়েছে। এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল ভারত। গত বছরের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে দুই নেতার মধ্যে সাক্ষাতের দুই মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে কথিত চীনা গুপ্তচর বেলুন ওড়ানোর অভিযোগ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়। এ ঘটনায় সম্পর্ক উন্নয়নের আশা মুখ থুবড়ে পড়ে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে অনেক কিছু নিয়েÑইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অভিযান, শিনজিয়াং প্রদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, হংকং ও তাইওয়ানকে নিজের দেশের অংশ বলে চীনের দাবি এবং দক্ষিণ চীন সাগর।
অন্যদিকে উচ্চ প্রযুক্তির খাতে চীন যাতে ঢোকার সুযোগ না পায়, সে জন্য তাদের বিরুদ্ধে যেসব অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও বেইজিং ক্ষুব্ধ। সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা দফায় দফায় বেইজিং সফর করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, অর্থমন্ত্রী জানেট ইয়েলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি। এদিকে শি তার দেশকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেতা হিসেবে তুলে ধরছেন এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার বিপরীতে একটি বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার পক্ষে সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। গত মাসে তিনি যখন ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান, তখন তিনি সেখানে ‘পশ্চিমা আধিপত্যের’ সমালোচনা করেন। তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ‘ঔপনিবেশিক জোয়াল’ থেকে মুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। ব্রিকস বলতে শুরুতে বোঝানো হতো ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকাÑএই পাঁচটি দেশকে। তবে জানুয়ারি মাস হতে এই জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে আরও ছয়টি দেশÑআর্জেন্টিনা, মিসর, ইরান, ইথিওপিয়া, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এটি বেইজিংয়ের জন্য এক কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দুই পরাশক্তি, রাশিয়া এবং চীনের প্রেসিডেন্টদ্বয়ের উপস্থিতিতে জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে ভারতের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে উজ্জ্বল হওয়ার যে নমুনা তৈরি হয়েছিল, তা আর আপাতত হচ্ছে না। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বকে বাদ দিয়ে ব্রিকসের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব যেমন ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে, রাশিয়া এবং চীনকে বাদ দিয়ে জি-২০ সম্মেলনের গুরুত্ব হারিয়ে যেতে বসেছে। এর পরও এ ধরনের আন্তর্জাতিক সভা-সম্মেলন চলতে থাকবে পরাশক্তিদের বিভক্তির মধ্যেও, যা হয়েছিল বিগত স্নায়ুযুদ্ধের সময়েও। এর মাঝে বাংলাদেশের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির অঙ্ক জমেছে পুরোদমে। বিশেষ করে, পশ্চিমা দুনিয়া থেকে অন্ধকারে ডুবতে থাকা সরকারের দিক থেকে চলছে অন্তহীন চেষ্টা। ব্রিকসের কষ্ট জি-টোয়েন্টি থেকে কিছুটা উশুলের চেষ্টায় হিতাকাক্সক্ষী খুঁজে হয়রান সরকার। কমলালেবুর কাজ দোকানের ভিটামিন সি ট্যাবলেটে সারানোর চেষ্টা এক পা এগোলে দু’পা পিছিয়ে যাচ্ছে।

কমেন্ট বক্স