বাংলাদেশে নির্বাচনী মাঠ দ্রুত জমে উঠছে। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি ও জামায়াত। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হওয়া নিয়ে আশংকাও রয়েছে। অনেকের ধারণা- নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন ভণ্ডুলে ত্রিমুখী কর্মসূচি দেবে।
ইতোমধ্যে ভারত থেকে হুমকিও দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, অন্যতম নীতি-নির্ধারক জাহাঙ্গীর কবির নানক। বলেছেন, ১৯৯৬-এ সুন্দরভাবে নির্বাচন সাজান খালেদা জিয়া। কিন্তু আমরা তা সুকৌশলে ভণ্ডুল করেছি। দেড় মাসের মাথায় বিতর্কিত সংসদ বাতিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসে।
অনলাইন সাক্ষাৎকারে নানক বলেন, আমরা রাজনীতি বুঝি। ৫ আগস্টে হেরেছি, দেশ ছেড়েছি বলে চিরপরাজিত নই। একাত্তরেও ভূখন্ড ছেড়ে আওয়ামী লীগকে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। পরে নতুন পতাকা, স্বাধীনতা নিয়ে দেশে ফিরেছি। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির হাতে আজ দেশ। জনগণ এই অচলাবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করতে চায়। শেখ হাসিনাকে ছাড়া আজ কিসের নির্বাচন? আমাদের স্পষ্ট কথা> নো আওয়মী লীগ, নো ইলেকশন। আজ সারা পৃথিবী এ কথা বলছে। জাতিসংঘসহ ৬ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন চাপ দিয়েছে। দেশে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গলীগের এক কোটি ৩৬ লাখ সদস্য। ঠিকমতো একটি ডাক দিতে পারলে ইউনূস সরকার ভেসে যাবে।
জনাব নানকের হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে নীতি নির্ধারকেরা। বিএনপি-জামায়াত সমস্বরে সভায় সভায় বক্তব্য দিচ্ছে। বলছে, একটি দল নির্বাচন ভন্ডুলে মাতোয়ারা হয়েছে। জনগণের ভোটের মাধ্যমে একটি স্থায়ী সরকার প্রয়োজন। তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে। কিন্তু একটি দল জটিলতার মাধ্যমে কারফিউ আনতে চায়। তাতে আসন্ন নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সৃষ্টি হবে জটিলতা।
জামায়াত ‘ধর্মবিক্রির মতলববাজ’ বনাম বিএনপি ‘চাঁদাবাজ, দখলবাজ’
২০০১, ২০১৮-তে একজোটেই নির্বাচন করেছিলো। জামায়াতেরও প্রতীক ছিলো বিএনপির ধানের শীষ। কিন্তু ২০২৬-এর নির্বাচনে মত ও পথ আলাদা। জামায়াত ১৫ বছর পর ফিরে পেয়েছে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক। এবার নিজের প্রতীকেই বিশাল নির্বাচনী প্রস্ততি। ৩০০ আসনের প্রার্থীদের প্রাথমিক নামও ঘোষণা করেছে।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে দুদিনের সম্মেলন করেছে বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভিডিওতে আবেগপ্রবণ ভাষণ দেন। এক ছেলের দুই মা বিষয়ক গল্প শোনান। আসল মা উন্মোচনে কৌশলী হওয়ার উদাহরণ দেন। বোঝাতে চান ‘বিএনপি’ আসলে মাটি-মানুষের আসল মা। জামায়াতের বিরুদ্ধে সরাসরি কোন বক্তব্য দেননি। এলাকায় এলাকায় বিএনপি নেতারাও কিছু বলতে পারছেন না। জামায়াতকে ‘জান্নাতের টিকেট বিক্রয়কারী’ পর্যন্তই বলছেন।
জামায়াতকে আক্রমণ না করায় তরুণ প্রজন্ম ক্ষুব্ধ। তাদের মতে, জামায়াত একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী। রাজাকার-আলবদর-আলশামস্-এর উত্তরাধিকারী। হানাদার বাহিনীদের হাতে বঙ্গনারীদের তুলে দিয়েছিলো। ধর্ষণ সহযোগীরা প্রকাশ্যে ক্ষমা চায়নি। অতএব তাদেরকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসানো অনুচিত। তরুণ ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের অভিযোগ গুরুতর। বলছেন তারা পতাকা, দেশ-স্বাধীনতা চায়নি। কিন্তু নীতিহীনভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসতে চায় কেনো?
কোন মঞ্চেই বিএনপি এমন সমালোচনা করতে পারছে না। মিডলেভেল নেতারা বলছেন, আমাদের হাত-পা বাঁধা। কারণ অতীতে ৩-৪ বার জামায়াতের সঙ্গে জোট হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত একসঙ্গে জিতেছি, হেরেছিও। তখন তো জামায়াতের পাপগুলো আলোচনায় আসেনি। এখন বিরোধিতার জন্যে
এগুলো বলা সম্ভব নয়। মানুষও নতুন কিছু জানতে, বুঝতে চায়। যদিও জামায়াত বিএনপিকে চাঁদাবাজ, দখলবাজ বলে গালি দিচ্ছে। আর বিএনপি বলছে জামায়াত ধর্মবিক্রির মতলববাজ।
উল্লেখ্য, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়েও রয়েছে সমালোচনা। নির্বাচনের তিন মাস বাকি, ঘোষিত হয়নি ফেরার তারিখ। দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনুমতি নেয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত পিস্তল ও নিরাপত্তারক্ষীর অস্ত্রের লাইসেন্স হয়নি। জামায়াত বলছে মহান আল্লায় বিশ্বাস রাখুন। বাঁচা-মরার সব ক্ষমতা ওনার ওপরে ছেড়ে দিন।
‘জুলাই হত্যাকান্ড’কে ঢাকছে ‘সালমান হত্যাকান্ড’ ♦ ত্রিভূজ প্রেমের করুণ নিয়তি : আজিজ-শাবনাজ প্রবাসে
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ট্রাইবুনালে চলছে হাসিনা গং-এর বিচার। এই ‘আইসিটি’ কোর্টে সরকার পক্ষীয় কৌশলী আমিন আহমেদ। তার ভূমিকা দ্বিমুখী বলে অভিযোগ উঠেছে। ‘আমজনতা পার্টি’র তারেক রহমান করেছেন কট্টর সমালোচনা। বলেছেন, এই আদালতের তিনপক্ষই জামায়াত ঘরানার। পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুন এখন রাজস্বাক্ষী। শতকোটি টাকায় বিষয়টি সমঝোতা করেছেন জামায়াতের শিশির মনির। ওনার ‘ল-ল্যাব’ কোম্পানি এই কাজে অগ্রণী ভূমিকায় নিবেদিত। উল্লেখ্য, ব্যারিস্টার শিশির মনির সুনামগঞ্জ থেকে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অচিরেই একাধিক মামলায় হচ্ছে শেখ হাসিনার ফাঁসি।
তবে, আইসিটি মামলার বিষয়টি অনেকটা পশ্চাৎপদ। অধিকসংখ্যক মানুষ আগ্রহী ‘সালমান শাহ হত্যা মামলা’য়। ১৯৯৬-এর ৬ সেপ্টেম্বর নিহত হন তরুণ চিত্রনায়ক। ঢাকার ইস্কাটন প্লাজায় ১২-বি অ্যাপার্টমেন্টে রহস্যজনক মৃত্যু। হত্যা না আত্মহত্যা- এই জট এখনও খোলেনি। তৎকালীন স্ত্রী সামিরা হকের দাবি আত্মহত্যা। অন্যদিকে মা নীলা চৌধুরীর দাবি পরিকল্পিত হত্যা। বিষয়টি গত ২৯ বছর ‘অপমৃত্যু মামলা’ বলে পরিচালিত হয়েছে। গত ২০ অক্টোবর আদালত এটিকে ‘হত্যা মামলা’ বলেছে। ফলে সালমান শাহ-এর ভক্তগোষ্ঠী ও নীলা চৌধুরী মহাখুশি। সালমানের মামা আলমগীর কুমকুম মামলা করেছেন। রমনা থানায় দায়েরকৃত মামলায় আসামী ১১ জন।
২৯ ছবির জনপ্রিয় নায়ক সালমানের পৈতৃকবাস সিলেটে। হযরত শাহ জালালের দরগায় সমাধিস্থ। বাবা কমরউদ্দিন আহমদ মার্কিন দূতাবাসে কনসালটেন্ট ছিলেন। মা নীলা চৌধুরী এরশাদ জমানায় জাতীয় পার্টি নেত্রী। সালমানের স্ত্রী সামিরা হক কনভার্টেড বাঙালি। বাবা ক্রিকেটার শফিকুল হক হীরা চট্টগ্রামের। মা লুসি চীনা বংশোদ্ভূত, থাইল্যান্ডে বসবাসকারী। বিবাহসূত্রে মুসলিম ও বাংলাদেশের নাগরিক। চট্টগ্রামে স্ব-মালিকানায় বিউটি পার্লার চালান। সালমান নিহতের বিষয়টি ত্রিভূজ প্রেমের ফসল বলে জানা যায়। মাফিয়া ডন ও চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই নেপথ্যনায়ক। নায়িকা শাবনূর ছিলো ওনার ব্যনারের চৌকষ তরুণী। সালমানের সাথে ১৭টি ছবিতে ছিলো সফল জুটি। তাদের ঘনিষ্ঠতায় দু’জন মারাত্মক ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন। প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও স্ত্রী সামিরা। ১৯৯৬-এর জুলাই-এ সাপ্তাহিক চিত্রালী’তে বেরোয় খবর। যে সালমান-শাবনাজের গোপন বিয়ে হয়েছে। এমন মিথ্যে সংবাদের নেপথ্যে একটি চলচ্চিত্র মহল। সালমান-শাবনাজ জুটির কারণে যাদের ব্যবসা হুমকির মুখে। অবশেষে ত্রিমুখী ষড়যন্ত্রে চিরবিদায় নিতে হয় শীর্ষনায়ক সালমানকে। পরের মাসে মামলাটি আদালতে গড়াবে। দেশ-বিদেশ-প্রবাসে এ বিষয়ে কোটি মানুষের কৌতুহল।
উল্লেখ্য, সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামীও আজিজ মোহাম্মদ ভাই। রায় ঘোষণার আগেই পালিয়ে যান থাইল্যান্ড। সামিরা মা লুসির সহায়তায় সেখানে স্থায়ী হন। অন্যদিকে চিত্রনায়িকা শাবনাজ স্থায়ী হন অস্ট্রেলিয়ায়। ত্রিভূজ প্রেমের সামিরাও মাঝে থাইল্যান্ডে ছিলেন।
হাসিনার তীর এখন হাসিনার দিকেই
ক্ষমতায় থাকতে অনেকগুলো তীর ছোড়েন শেখ হাসিনা। এখন সেগুলো ‘ইউটার্ন’ হয়ে নিজের বুকেই বিদ্ধ হচ্ছে। প্রথমত আধুনিক টেলি রেকর্ডিং সিস্টেম। বিরোধী দল বা ভিন্নমতালম্বীদের কথোপকথন গোপনে রেকর্ড করা। ইসরায়েল থেকে ২২শ’ কোটি টাকায় আনান মেশিনপত্র। পরিচালিত হতো জে. জিয়াউল আহসানের অধীনে। এতে শেখ হাসিনা কিছুটা উপকৃতও হন। কিন্তু কর্মকর্তারা গোপনে শেখ হাসিনার কথা-বার্তাও রেকর্ড করেন। রাজনীতিক ইনু, মেয়র তাপস, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বা সালমান। অসংখ্যজনের সঙ্গে সংলাপ, ‘লিথ্যাল ওয়েপন’ ব্যাবহারের দুর্লভ তথ্য। বিবিসি’র মাধ্যমেও সত্যতা নিশ্চিত হওয়া কথোপকথন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রয়োজনে গঠন করেন ‘আইসিটি আদালত’। মূলত জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের ফাঁসি দিতেই এই আয়োজন। ২০১২-এর সেই আদালত এখন শেখ হাসিনার মুখোমুখি। তার গড়া আদালতই এবার ওনাকেই ফাঁসি দিচ্ছে। যেনো নিজের ছোঁড়া তীরে নিজেই হচ্ছেন শরাহত!


সালেম সুলেরী


