Thikana News
১৭ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
প্রিজনভ্যানে চিফ জাস্টিস, আইজিপি, জেনারেলস হাসিনার সরবতা বনাম সরকারের কঠোরতা

‘ক্যান্ট-কারাগার’ সমঝোতা বিতর্ক

‘ক্যান্ট-কারাগার’ সমঝোতা বিতর্ক



 
টান টান উত্তেজনা অক্টোবরের দ্বিতীয়-তৃতীয় সপ্তাহে। ২৩ জন পেশাজীবী জেনারেলের বিরুদ্ধে গুম-খুনের মামলা। অধিকাংশই সামরিক চাকরিতে বহাল। ফলে সেনা-আঙিনায় অস্থিরতার জোর আশংকা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার-অপপ্রচার। সরকার বিরোধী ঘরানা অধিকতর সক্রিয়। ইউটিউবার পিনাকী ভট্টাচার্যের বিস্ফোরক আহ্বান। ৪৬ ব্রিগেডের বিদ্রোহীরা মিছিল করছে বলে ঘোষণা। প্রতিহতকরণে জনগণকে ঝাঁপিয়ে পড়ার জোর তাগাদা। কিন্তু সেরকম কোন ভূতুড়ে কান্ডের প্রমাণ মেলেনি। বরং ২৩-এর মধ্যে ১৫ আসামী সামরিক হেফাজতে। হাসিনার সামরিক সচিব মে. জে. আতাউর পলাতক। এর আগে বিতর্কিত মে. জে. মুজিবও পলাতক। দিল্লিতে বসে ‘অপারেশন রিটার্ন প্রজেক্ট’ নিয়ে ব্যস্ত। প্রকল্পটি উৎসর্গ করা হয়েছে পলাতক শেখ হাসিনাকে।

উত্তেজনার সূচনা 
ও অনঢ় সরকার 

উত্তেজনার সূচনা অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের ঘোষণা থেকে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যনালের চিফ প্রসিকিউটর তিনি। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া জমিয়েছেন। অক্টোবরের শুরুতেই একটি চমক লাগানো ঘোষণা দেন। বলেন আগামী সপ্তাহে দেশে নতুন অনেককিছু ঘটবে। এই ঘোষণায় আতংকিত হন হাসিনাঘনিষ্ঠ অপরাধীরা। বিপদ ঘনিয়ে আসছে বলে প্রচারণা চলতে থাকে। সামরিক আঙিনার শীর্ষ অপরাধীরা পালাবার পথ খোঁজেন। অবশেষে একযোগে ২৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের। আগামী ২২ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে হাজিরার নোটিশ। ক্যান্ট-কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে ১৫ জনকে আটকে সমর্থ হন। ধরামাত্রই তাদেরকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়নি। তবে ঘোষণা এসেছে অচিরেই হস্তান্তরিত হবে। সামরিক কর্তৃপক্ষ ‘আইসিটি’ কমিশনের বিচারের পক্ষে। যতো রকমের সহযোগিতা প্রয়োজন দেওয়া হবে। সামরিক কর্তৃপক্ষের পক্ষে ঘোষণা দেন একজন মেজর জেনারেল।
উল্লেখ্য, গুম-খুনের মামলার মূল বাদি চারজন। জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আজমপুত্র। তিনি সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম আযমী। প্রায় ৮ বছর ‘আয়নাঘরে’ বন্দি ছিলেন। জামায়াতের ফাঁসিপ্রাপ্ত মীর কাশেম-পুত্র ব্যারিস্টার আরমান। বিএনপি’র সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী-পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী। পার্বত্য চট্টগ্রাম ইউডিএফ নেতা  মাইকেল চাকমা প্রমুখ।
বিচার প্রক্রিয়ায় সরকার পক্ষ অনঢ়। যেনো সংশ্লিষ্টদের কাউকেই কোন ছাড় নেই। বিচারকার্য এগিয়ে চলেছে অতিদ্রুত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন অতীব সক্রিয়। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগেই দেখাতে চায় ফলাফল। ইতোমধ্যে সরকার খাঁচাবন্দি করেছে কতিপয় রাঘব-বোয়ালকে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের অপরাধী শুধু নয়। ১৬ বছরের নানামুখী অপরাধীদেরও ছাড়া হচ্ছে না। ১০৫ জন মন্ত্রী-এমপি ১৪ শিকের কারাগারে। বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা।

প্রিজনভ্যানে প্রধান বিচারপতি
আইজিপি, জেনারেলবৃন্দও

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ বিষয়ক বিতর্কিত রায়ের প্রধান বিচারপতি আটক। হাতে হাতকড়া পড়ে দাঁড়াচ্ছেন আদালতে। বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের করুণ দশা। প্রিজনভ্যানে করে আনা-নেওয়া করা হচ্ছে প্রধান বিচারপতিকে। অপিল বিভাগের আলোচিত বিচারক ‘কালো মানিক’ও বিচারাধীন। হাসিনা আমলে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বিতাড়িত হয়েছিলেন। তৎকালীন জিডিএফআই জে. আকবর তাকে বাধ্যতামূলকভাবে বিদেশে পাঠান। সেই জে. আকবরও এখন সপরিবারে পলাতক।
একাধিকবার পুলিশের আইজিপি ছিলেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামী। রাজস্বাক্ষী হলেও ১৪ শিকের কারাগারে বন্দি। গুম-খুনের সম্রাট জে. জিয়াউল হাসানও জপছেন ‘ইয়া নফসি’। হাজারের ওপরে গুম-খুনের অভিযোগ মাথার ওপর। বন্দীদশায় বসে ফাঁস করছেন হাসিনা-রেজিমের হত্যা-কৌশলের কাহিনিপর্ব। সর্বশেষ ৩০ জন সামরিক সহযোগীও গুম-খুনের আসামী। শেখ রেহানার দেবর জে. তারেক সিদ্দিকী আসামী। ২৩ জন টগবগে মেজর জেনারেল প্রত্যক্ষ আসামী। হারাচ্ছেন চাকরি, পদবী, ক্ষেত্রবিশেষে রিটায়ারমেন্ট বেনিফিটও।

ক্যান্ট-কারাগার নিয়ে
সমঝোতা-বিতর্ক

সামরিক অফিসারদের সিভিল কোর্টে বিচার বিষয়ে বিতর্ক চলমান। সেনাপ্রধান জে. ওয়াকারুজ্জামান এ বিষয়ে চাপে রয়েছেন। পেশাগত সতীর্থদের অনেকে ওজর-আপত্তি করছেন। তাদের মতে প্রয়োজনে সামরিক আদালতে বিচার হোক। ৭৫-এ কর্নেল তাহেরের বিচারও মার্শাল কোর্টে হয়। পরে একজন বিচারপতি ফাঁসির রায়টি রিভিউ করেন। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের মামলা চলে সিভিল কোর্টে। সেক্ষেত্রে সামরিক হলেও আসামীরা সাধারণ কারাগারে ছিলেন।
বিতর্ক ওঠে নতুন আসামীদের কারাগারে রাখা প্রসঙ্গে। পেশাগত সতীর্থরা চান না আসামীদের সেনাবিবাসের বাইরে রাখা হোক। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জেনারেল জাহাঙ্গীর সমীপে দেন-দরবার চলে। অবশেষে একটি সমঝোতায় আসতে হয়। তা হলো- বিচার হবে আইসিটি কোর্টে। অর্থাৎ প্রচলিত সিভিল কোর্টেই। অন্যদিকে আসামীরা থাকবেন সেনানিবাসেই। বলা হয়েছে অন্যত্র নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে।  ইতোমধ্যে সেনানিবাসের একটি বাড়িকে ‘ক্যান্ট-কারাগার’ বানানো হয়েছে। বাশার রোডের পাশে ৫৪নং বাড়িটি এখন ‘সেনা-কারাগার’।
অ্যাডভোকেট তাজুল বলেছেন, আসামীদের আদালতে সোপর্দ করা জরুরি। অতঃপর আদালতই তাদের রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। যদিও কারাগারের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত।  আইসিটি’র মামলাগুলো প্রতিষ্ঠানগত নয়। গুম-খুনের অভিযোগগুলো ব্যক্তি অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। জুলাই আন্দোলনে জাতিসংঘের হিসাবে ১৪০০ নিহত। তদন্ত ও বিচারে জাতিসংঘ অনুসৃত রীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ‘ক্যান্ট-কারাগার’ বিষয়ে সচেতন মহলে বিতর্ক চলছে। টিআইবিও অভিযোগ করছে সেনানিবাসে আসামীদের থাকা নিয়ে। সরকার পক্ষ বলছে সেনা-আসামীরা সাধারণ কারাগারে নিরাপদ নয়। আলামত নষ্টের উদ্দেশ্যে শত্রুপক্ষ তাদের হত্যা করতে পারে। 

হাসিনার সরবতা বনাম
সরকারের কঠোরতা

দিল্লি থেকে রাজনৈতিক সক্রিয়তা অব্যাহত রেখেছেন শেখ হাসিনা। উপদেষ্টারা যে দেশেই যান, আওয়ামী প্রতিবাদ চলছে। দেশে হঠাৎ হঠাৎ ঝটিকা মিছিলও ঘটানো হচ্ছে। ড. ইউনূসকে পদত্যাগ করানোর দাবি তোলা হচ্ছে। সরকারপক্ষ বলছে দাবিটি অমূলক। কারণ সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিচ্ছে। অতঃপর বিদায় নেবে উপদেষ্টা পরিষদ। সেক্ষেত্রে আওয়ামী আন্দোলনের প্রয়োজনটি কোথায়? ভারতকেও একই বার্তা দিয়েছে ইউনূস সরকার। ভারতও তাৎক্ষণিকভাবে শেখ হাসিনাকে নোটিশ করেছে। বাংলাদেশ-বিরোধী প্রচারণা বন্ধের পরামর্শ দিয়েছে।
ভারতের আচরণে মার্কিন প্রশাসন বিক্ষুব্ধ। পণ্যশুল্ক ৫০% করে ক্ষান্ত হয়নি। ইরানের সাথে বিশেষ ব্যবসার কারণে ৮ কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করেছে। আমেরিকায় বাংলাদেশ-বিরোধী আওয়ামী কার্যক্রমও নজর কেড়েছে। মার্কিন গোয়েন্দাদের মতে, রাজনৈতিক কার্যক্রমের নেপথ্যে ভারত। আন্দোলনকারী নেতাদের তালিকাও করা হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে গতবছর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ স্বাগত জানায়। নেপথ্য কারণ কি- তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে। তদুপরি, এস. আলমের চার হাজার কোটি টাকায় রাজনীতি চলছে। অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনার কৌশলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তবে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। একজন উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কিসের ভয়! হাসিনা যতো সরব হবে, আমরা ততো কঠোর হবো। ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন ও বিচার সম্পন্ন হবেই হবে।
 

কমেন্ট বক্স