প্রায় ১৪ বছরের যুদ্ধের পর দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের পতনের মাধ্যমে সিরিয়ায় নতুন যুগের সূচনার প্রেক্ষাপটে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট নির্বাচনে পরোক্ষভাবে ভোট দিচ্ছেন দেশটির নির্বাচকরা। আজ ৫ অক্টোবর (রবিবার) সিরিয়ার ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যরা দেশটির আইনপ্রণেতা নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন। তবে এই নির্বাচন অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হচ্ছে এমন অভিযোগের মধ্যেই ২১০ আসনের পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন নির্বাচকরা। আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচিত হবেন অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে। খবর আলজাজিরার।
সিরিয়ার নির্বাচনে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ করা হচ্ছে না। পার্লামেন্টের তিনভাগের এক ভাগ সদস্যকে, অর্থাৎ ৭০ জনকে সরাসরি আহমেদ আল-শারা নিয়োগ দেবেন। বাকি দু’ভাগ অর্থাৎ ১৪০ জন সদস্যকে নির্বাচিত করা হবে ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে।
সমালোচকরা তাই বলছেন, এই ব্যবস্থার ফলে সিরিয়ায় নতুন শাসকের হাতেই ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হতে যাচ্ছে, কেননা মুখচেনা লোকেরাই এর মাধ্যমে পার্লামেন্টে আসবেন। এই পদ্ধতিতে সত্যিকার গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার পথকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
গত মাসে এই পদ্ধতির সমালোচনা করে বেশকিছু বেসরকারি সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, নির্বাচনের এই প্রক্রিয়ার অর্থ হলো আল-শারা তার প্রতি অনুগত বা তার নির্ধারিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখবেন। এই ধারাটি হবে সত্যিকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদের চেতনার পরিপন্থি।
এ বিষয়ে ফ্রান্সভিত্তিক সংগঠন ‘সিরিয়ান্স ফর ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস’র নির্বাহী পরিচালক বাসাম আলাহমাদ বলেন, ‘এই প্রক্রিয়াকে আর যাই বলা হোক, নির্বাচন বলা যায় না।’
একটি বিষয় এখন উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশজুড়ে এই পরোক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও দ্রুজ অধ্যুষিত সোয়ায়দা প্রদেশ ও কুর্দি নিয়ন্ত্রিত দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় তা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করা হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও দামেস্কের কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে চলতে থাকা উত্তেজনার কারণে তা বাতিল করা হয়।
মূলত এই পার্লামেন্ট নির্বাচন ‘সিলেকশন’ এবং ‘ইলেকশনে’র মাঝামাঝি একটি হাইব্রিড মডেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আলজাজিরার দামেস্ক প্রতিনিধি ওসামা বিন জাভাইদ। তার মতে, যে পদ্ধতিতেই হোক, এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি প্রতিনিধিত্ব করার মতো কর্তৃপক্ষ পাচ্ছে সিরিয়ার নাগরিকরা। সবচেয়ে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, এই নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক প্রচারণা নেই, পাশাপাশি নেই কোনো রাজনৈতিক দলও।
সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জাভাইদ আরও জানান, সিরীয় নাগরিকরা মনে করছেন, এটা কোনো সাধারণ নির্বাচন নয়। তারা এ বিষয়টিও জানেন ১৪ বছরের যুদ্ধের ক্ষত বয়ে বেড়ানো সিরিয়ায় নির্বাচন আয়োজনের মতো পরিস্থিতিও নেই। তবে নাগরিকরা মনে করছেন, আসাদ পরিবারের ছয় যুগের বেশি শাসনের পর নির্বাচনের একটি সত্যিকার স্বাদ তারা পেতে যাচ্ছেন।
নির্বাচকদের মাধ্যমে নির্বাচিত নতুন পার্লামেন্টের মেয়াদ হবে দুই বছর ছয় মাস এবং আশা করা হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে আগামী নির্বাচনগুলোর জন্য পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করবেন পার্লামেন্টের সদস্যরা।
ঠিকানা/এএস