তিন দশকের পর আরো তিনটি বছর
এবং আরো এক শত আটষট্টি ঘণ্টা
পৃথিবীর বাইরে থেকেও
আমাকে হৃদয়ে রাখো একান্ত সঙ্গোপনে!
আমায় রেখেছ মননে, নয়নে, স্বপনে
বুকের গভীরের সিন্দুকে অসীম যতনে,
আমার দু’চোখ খুঁজে নিরন্তর তোমায়;
তোমার ছেড়ে যাওয়া পদচিহ্ন আঁকা
বিলোল বেদনায় বিছানো পথের বাঁকে।
হঠাৎ সন্ধ্যা, দুপুর বা গভীর রাতে
আমি যেন তোমাকেই পাই তেমন করেই,
সেই যে আতর ছিটানো উঠোনজুড়ে
আতর লোবান ধূপের ধোঁয়ায়,
সুতোবিহীন আপাদমস্তক শ্বেত বসনে,
নাসিকায় তুলোর প্রলেপ তুলে
কী অপরূপ অসহ্য শীতল সাজে।
সাড়ে তিন হাত খাটিয়ায় শয্যা পেতে
নিমগ্ন ছিলে স্মিত হাস্যে নিমীলিত চোখে!
গগন বিদীর্ণ ক্রন্দসী সে রাত আমার
হাহাকারে বিভীষিকাময় হাসপাতালের অন্ধকার করিডোরে মহাকাল দাঁড়িয়ে।
স্তব্ধ মুহূর্তের নিশ্চুপ রাত চূর্ণ-বিচূর্ণ করে
তুমি প্রস্থান করেছিলে বাবা আমার, অপার্থিব সৌম্য প্রশান্তির রেশ ছড়িয়ে
মমতার চৌহদ্দির আড়মোড়া ভেঙে
ধীরে পায়ে চলে গেলে অতি সন্তর্পণে।
জাপটে ধরে বুকের ভেতর
বুঝে যাই উষণ দেহে হয়ে গেছে ছন্দপতন,
সেই সে অনুভব : আজো তেত্রিশটা বছর! বুকের প্রকোষ্ঠ ভাঙে নীলাভ মেঘের সুরে।
তোমার পৃথিবীর নক্ষত্রেরা আজ
তোমার থেকে আলোকবর্ষ দূর!
দৃষ্টির বাইরে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ হয়ে
মিইয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন এক এক করে!
বাবা! কোথায় তুমি? কোন সে দূরে;
কোন সে বিধুর? অদম্য সে কষ্টগুলো? উথলে ওঠে বাঁধভাঙা নোনা জলে
ভাসিয়ে দিয়ে বুকের জমিন।
এবং! তারপর এক বুক অসীম শূন্যতায় ভরিয়ে দিয়ে তোমার পৃথিবী
চলেই গেলে নীলাভ বেদনার ইতিহাস হয়ে।


নন্দিনী মুস্তাফী


