বাংলাদেশে ভ্রমণ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে ঢুকতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, এমন ঘটনা বাস্তবে নজিরবিহীন। অথচ কিছু গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এ কারণে সাধারণ প্রবাসীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আর এই আতঙ্ক বা ভয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও গ্রিনকার্ডধারী হয়েও অনেকে বাংলাদেশে বেড়াতে যাচ্ছেন না। অনেকে পূর্ব নির্ধারিত যাত্রা বাতিল করছেন। ফেরত দিচ্ছেন এয়ার টিকেট। ফলে ব্যবসায়ে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিউইয়র্কে বাংলাদেশি মালিকানাধীন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো।
নিউইয়র্কের ব্যবসায়ীরা বলছেন- কমিউনিটির বিপদে যেখানে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়ানোর কথা, সেখানে আমাদের অনেকে আরো আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। এটা কাম্য নয়। বরং যারা সত্যিকার অর্থে ভয়ে আছেন, আমাদের উচিত তাদের অভয় দেওয়া। তাদের সাহস জোগানো। সাধ্যমত সহযোগিতা করা।
বাংলাদেশি মালিকানাধীন জনপ্রিয় ট্রাভেল এজেন্সি এস্টোরিয়া ডিজিটাল ট্রাভেলের কর্ণধার নজরুল ইসলাম ঠিকানাকে বলেন, বৈধ অভিবাসীদের বিমানবন্দর থেকে ফেরত দেওয়ার ঘটনা, এমনটা শুনিনি। এমনটি ঘটে থাকলে তা নজিরবিহীন। তিনি বলেন, আমাদের ট্রাভেল এজেন্সি থেকে এ পর্যন্ত যতজন টিকেট নিয়েছেন, কারো কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু অনেকেই ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। যারা অভয় দেবেন, তাদের অনেকেই বরং আতঙ্ক ছাড়াচ্ছেন।
কিছু গণমাধ্যম ‘চটকদার’ নিউজ করে ভয় ছড়াচ্ছে - অভিযোগ করে নজরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি অনেক নিরীহ প্রবাসী দেশে যাওয়া বাতিল করেছেন শুধুমাত্র ‘চটকদার’ খবরের জন্য। তিনি বলেন, সারা বছরে ব্যবসা হয় সামারে। অথচ এই সামারে নানান আতঙ্কে অনেকে আগে টিকেট কাটলেও তা ফেরত দিচ্ছেন। এতে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বড় ধরনের ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
বাংলাদেশি মালিকানাধীন জনপ্রিয় ট্রাভেল এজেন্সি বাংলা ট্রাভেলের কর্ণধার বেলায়েত হোসেন বেলাল ইমিগ্রেশন আতঙ্ক না ছড়িয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, গুজব বা আতঙ্ক ছড়ালে কমিউনিটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বরং আমাদের উচিত যারা অকারণে ভয়ে আছেন তাদের সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করা।
ইমিগ্রেশন বিষয়ক অভিজ্ঞ প্যারালিগ্যাল বেলাল ঠিকানাকে বলেন, ইমিগ্রেশন অফিসার কখনো প্রচলিত আইনের বাইরে যেতে পারেন না। একজন সিটিজেন বা গ্রিনকার্ডধারীকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দিতে হবে। যদি কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তাকে আদালতে সোপর্দ করার নিয়ম রয়েছে। তিনি বলেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি অবশ্যই জানবেন। ভয় তো তার জন্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কারো বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশনের অর্ডার থাকলে তিনি নিশ্চয় ইমিগ্রেশনের মুখোমুখি হবেন না। এমনকী তিনি ইমিগ্রেশনের এই কড়াকড়ির সময়ে ট্রাভেল করা থেকে সাধারণত বিরত থাকবেন। এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে এমন ঘটনা শুধুু শোনাই যায়। এটা আইনের সঙ্গে একেবারেই বেমানান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে একজন সিটিজেন ও গ্রিনকার্ডধারীর অভিন্ন অধিকার রয়েছে। পাথর্ক্য শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ভোট দিতে পারেন। কিন্তু গ্রিনকার্ডধারী ভোট দিকে পারেন না।
বেলায়েত হোসেন বেলাল মনে করেন, ইমিগ্রেশনের যে কোনো মিথ্যা বা অসত্য খবরে কমিউনিটিতে আতঙ্ক ছড়ায়। আর এতে কমিউনিটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কমিউনিটির বৃহৎ স্বার্থে এ ধরনের আতঙ্ক ছড়ানো থেকে সবাইকে বিরত থাকা উচিত।
আইন কী বলে?
যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন আইনে একজন নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার অধিকার অবিচ্ছেদ্য। আইন ও সংবিধানের দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কখনোই দেশে প্রবেশে বাধা দেওয়া যায় না। তারা কতদিন বিদেশে ছিলেন বা তাদের অতীতে কোনো আইনি সমস্যা ছিল কিনা, তাতে কোনো পরিবর্তন আসে না। তবে- সীমান্ত কর্মকর্তারা যদি পরিচয় যাচাই করতে চান বা বিবৃতিতে অসঙ্গতি পান, তাহলে নাগরিকদের সেকেন্ডারি স্ক্রিনিং, জিজ্ঞাসাবাদ, ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষা বা স্বল্প সময়ের জন্য আটক করতে পারেন।
ফোন আনলক করতে বা পাসওয়ার্ড দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রবেশে আইনি বাধা দেওয়া যায় না, তবে এতে বিলম্ব, ডিভাইস জব্দ বা দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুুখীন হওয়া সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের আটক বা দেশ থেকে বহিষ্কারের ঘটনা ইতিপূর্বে ঘটেছে। তবে তা ছিল ভুলবশত। যদিও আইস দাবি করেছে- তারা কখনো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বহিষ্কার করে না।