Thikana News
০৮ অগাস্ট ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫

দিদারুলের বীরোচিত শেষযাত্রা 

ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারে জানাজায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল *  যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট থেকে পুলিশের অংশগ্রহণ
দিদারুলের বীরোচিত শেষযাত্রা 
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মিডটাউনে একটি ভবনে বন্দুক হামলায় নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিউইয়র্ক পুলিশের ডিটেকটিভ দিদারুল ইসলামকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। গত ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার তাকে পূর্ণ মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এর আগে নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার জামে মসজিদে নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলামকে প্রথম শ্রেণির ডিটেকটিভ হিসেবে মরণোত্তর পদোন্নতির ঘোষণা দেয়।
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও তীব্র তাপদাহের মধ্যেই দিদারুল ইসলামের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় নিউইয়র্কের গর্ভনর ক্যাথি হোকুল, সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস, ডেমোক্রেট মেয়র প্রার্থী ও অ্যাসেম্বলি মেম্বার জোহরান মামদানি, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু ক্যুমো, রিপাবলিকান মেয়র প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া, বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি এবং ৫৪টির বেশি প্রিসিঙ্কট ও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা, হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সদস্য, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) সদস্য, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন কমিউনিটির সদস্য, স্থানীয় নেতা ও সিটি প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 
পার্কচেস্টার জামে মসজিদের আশেপাশের রাস্তা ছিল শুনশান নীরব, ইউনিফর্মধারী কর্মকর্তা, বাংলাদেশি অভিবাসী ও শোকাহত স্থানীয়রা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান দিদারুল ইসলামকে। জানাজার নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় বৃষ্টি।
জানাজা শেষে পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, ‘দিদারুল ইসলাম এই দেশে একজন অভিবাসী হিসেবে এসেছিলেন। তার জীবনের কোনো গ্যারান্টি ছিল না। শুধু আশা ছিল যে কঠোর পরিশ্রম, বিনয় দিয়ে জীবনকে অর্থপূর্ণ কোথাও নিয়ে যাওয়া এবং তা শেষ পর্যন্ত হয়েছে।’
দিদারুল নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে মাত্র সাড়ে ৩ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি স্কুল নিরাপত্তা এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন। দিদারুল ইসলামের স্ত্রী জামিলা আক্তার, পাঁচ ও সাত বছর বয়সী দুই ছেলে এবং তার বাবা-মাকে নিয়ে ব্রঙ্কসের একটি সাধারণ বাড়িতে থাকতেন। অনাগত তৃতীয় সন্তান আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পৃথিবীর আলো দেখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মসজিদের ভেতরে দিদারুলের কফিনটি নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সবুজ, সাদা ও নীল পতাকা দিয়ে মোড়ানো ছিল। সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় এবং একটি বিশাল মার্কিন পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয় তার মরদেহ। ওই কক্ষে বাংলা ও ইংরেজিতে প্রার্থনা করা হয়। ইউনিফর্মধারী ও সাদা পোশাকের কর্মকর্তারা শোকাহত পরিবারের সদস্যদের অনেকেই ছিলেন অশ্রুসিক্ত। ছয়জন অফিসার মসজিদ থেকে কফিনটি বের করে একটি অপেক্ষারত সাদা গাড়িতে তোলেন।  বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য মোটরসাইকেলে করে সারিবদ্ধভাবে কফিনের পাশে যেতে থাকেন। শোকযাত্রাটি নিউজার্সির দিকে যাওয়ার সময় ৬ নম্বর ট্রেন লাইনের নিচে ম্যানহাটনগামী একটি ট্রেন শোকাবহ হর্ন বাজিয়ে প্রয়াত দিদারুল ইসলামকে সম্মান জানায়।
অন্যদিকে, জানাজার পর দিদারের মরদেহ নিয়ে যখন দাফনের উদ্দেশ্যে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন পুলিশের চারটি হেলিকপ্টার টহল দেওয়ার মাধ্যমে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
জানায়ায় উপস্থিত মূলধারার রাজনীতিক ও যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী জানান, পদোন্নতির ফলে দিদারের পরিবার আরও বেশি ভাতা পাবে; অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়বে। তিনি বলেন, আজ স্মরণকালের বৃহৎ জনসমাগম ঘটেছে। আমার মনে হয়, এত বড় জানাজা কোনো বাংলাদেশির জন্য এর আগে নিউইয়র্ক অঞ্চলে হয়নি।’
জানাযায় উপস্থিত ছিলেন দিদারুল ইসলামের বাবা আব্দুর রব, স্ত্রী জামিলা আকতার ও দুই সন্তানসহ আত্মীয়-স্বজনরা।
জানাজা ও দাফনের আগে দিদারুল ইসলামের স্ত্রীর লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়। বক্কব্যে তিনি বলেন, ‘দিদার ছিলেন আমাদের সবকিছু। তার এই মৃত্যু আমাদেরকে একেবারেই মুষড়ে ফেললেও গৌরববোধ করছি যে, এই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ওই লবির অন্যদের জীবন বেঁচেছে।’
জানাজায় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশিদের আমব্রেলা সংগঠন ‘বাংলাদেশ সোসাইটির’ প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান সেলিম, সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হক খান ও সেক্রেটারি রোকন হাকিম, ব্রঙ্কস কমিউনিটি বোর্ডের নেতা শাহজাহান শেখ ও আব্দুস শহীদ ও স্পোর্টস কাউন্সিলের নেতা মহিউদ্দিন দেওয়ানও অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সর্বস্তরের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। 
উল্লেখ্য, গত ২৮ জুলাই সোমবার এক অস্ত্রধারী ম্যানহাটনের একটি ভবনে ঢুকে দিদারুলসহ চারজনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এরপর আত্মহত্যা করে হামলাকারী। সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে দিদারুলকে ‘প্রথম গ্রেডের ডিটেকটিভ’ হিসেবে মরণোত্তর পদোন্নতি দিয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি)। 
এ পর্যন্ত সংগ্রহ প্রায় হাফ মিলিয়ন ডলার পরিবারের জন্য ফান্ডরেইজিং
নিউইয়র্ক পুলিশের ডিটেকটিভ প্রয়াত দিদারুল ইসলামের পরিবারের জন্য ফান্ডরেইজিং করছে তার সহকর্মীরা। ‘ফান্ড দ্য ফার্স্ট’ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফান্ড সংগ্রহ করছে বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)। আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছেন অন্যান্য সহকর্মীরা। তারা ‘গো ফান্ড’ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই ফান্ড সংগ্রহ করছে। দুটি মাধ্যমে ৫ আগস্ট মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় হাফ মিলিয়ন ডলার সংগৃহীত হয়েছে। 
‘ফান্ড দ্য ফার্স্ট’ ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার পর্যন্ত সংগৃহীত হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ২৬ ডলার। গো ফান্ড’ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়েছে ৭১ হাজার ২৫০ ডলার। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাপার একজন কর্মকর্তা ঠিকানাকে জানান, মূলধারার একজন ধণাঢ্য ব্যবসায়ী ম্যাচিং ফান্ডের ঘোষণা দিয়েছেন। ‘ফান্ড দ্য ফার্স্ট’ ওয়েবসাইটে ৫ লাখ ডলার সংগৃহীত হলে ওই ব্যবসায়ী আরো ৫ লাখ ডলার দেবেন। সেই হিসাবে পরিবারের জন্য ১ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড সংগৃহীত হতে পারে। 
এদিকে মরণোত্তর ফার্স্ট গ্রেড ডিটেকটিভ পদোন্নতি লাভ করায় প্রয়াত দিদারুল ইসলামের পরিবার যেসব সুযোগ-সুবিধা পাবে, তার মধ্যে রয়েছে- তিন বছরের বেতন এবং পুলিশ ডিপার্টমেন্টের লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে নগদ ২ লাখ ডলার। এছাড়া দিদারুল ইসলামের স্ত্রী আমৃত্যু পেনশন সুবিধা পাবেন। রয়েছে সোস্যাল সিকিউরিটি সুবিধা। এছাড়াও দিদারুল ইসলামের পরিবার স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাবেন নিউইয়র্ক সিটি থেকে। 
উল্লেখ্য, গত ২৮ জুলাই সোমবার এক অস্ত্রধারী ম্যানহাটনের একটি ভবনে ঢুকে দিদারুলসহ চারজনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এরপর আত্মহত্যা করে হামলাকারী। সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে দিদারুলকে ‘প্রথম গ্রেডের ডিটেকটিভ’ হিসেবে মরণোত্তর পদোন্নতি দিয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি)। 

কমেন্ট বক্স