স্পা ও বডি ম্যাসাজের আড়ালে নিউইয়র্কে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে একটি নারী চক্র, যাদের পরিচয় বাঙালি। সংঘবদ্ধ নারী চক্রটি চাকরি ও বিউটিশিয়ান প্রশিক্ষণের ফাঁদে ফেলে বহু তরুণীকে সর্বস্বান্ত করছে। সম্প্রতি এই চক্রের ফাঁদে পড়ে বিপথগামী হয়েছেন বেশ কয়েকজন তরুণী, যারা স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে এসেছিলেন।
নাম ও পরিচয় গোপন রাখার শর্তে চার জন তরুণী অভিযোগ করেছেন, ফেসবুকে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে তারা কুইন্সের একটি বিউটি পার্লারে যোগাযোগ করেছিলেন। তারা প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। বিউটিয়ান প্রশিক্ষণের তিন মাস পর তাদের স্পা ও বডি ম্যাসাজের প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য করা হয়। তাদের মত অনেক তরুণীর সাথে এমনটি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী তরুণীরা জানান, বিউটি পার্লারের আড়ালে মুলতঃ স্পা ও বডি ম্যাসাজ সার্ভিস দেওয়া হয়, তা তারা পরে টের পেয়েছেন। কিছুদিন পর পার্লারের একজন নারী মালিক ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে স্পা ও বডি ম্যাসাজের হোম সার্ভিস বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করেন। আগে থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েক নারীকে এই কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। এই সার্ভিসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় লোকবল বাড়াতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ওই পার্লারের মালিক।
স্পা ও বডি ম্যাসাজের আড়ালে যৌন ব্যবসা হয় উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী একজন তরুণী জানান, তিনি উন্নত জীবনের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন স্টুডেন্ট ভিসায়। আসার আগে এক সেমিস্টার ফি দিয়েছিলেন। এরপর আর পরিশোধ না করায় তার ছাত্রত্ব টেকেনি। বৈধ কাগজপত্রহীন হয়ে পড়েন একসময়। ট্রাম্পের ্ইমিগ্রেশর কড়াকড়ি আরোপের ফলে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় চাকরিও হারিয়েছেন। নিরূপায় হয়ে জ্যাকসন হাইটসে একটি বিউটি পার্লারে বিউটিশিয়ানের প্রশিক্ষণ নেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখতে পান- এটি ছিল প্রলোভন। পার্লারের মালিক তাকে সরাসরি স্পা ও বডি ম্যাসাজ সার্ভিস প্রশিক্ষণ নিতে বলেন। বিউটিশিয়ান এবং স্পা ও বডি ম্যাসাজের প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর দুই সপ্তাহ পার্লারেই চাকরি করেছেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ পর পার্লারের মালিক হোম সার্ভিসে যেতে বলেন।
তরুণী অভিযোগ করেন- হোম সার্ভিসে কাজের ধরণ জানার পর তিনি অস্বীকৃতি জানালে তাকে আর বেতন দেওয়া হয়নি। বর্তমানে ওই তরুণী বেকার। তিনি বলেন, ‘এখন আমার মানবেতর দিন কাটছে।’
একাধিক সূত্র জানায়, স্পা ও বডি ম্যাসাজের হোম সার্ভিসের আড়ালে কার্যত যৌন ব্যবসা করছে বাঙালি নারী চক্রটি। তারা সংখ্যায় কমপক্ষে ১০ জন। নিউইয়র্কের কুইন্স ও ব্রঙ্কসে তাদের বেশ কয়েকটি বিউটি পার্লার রয়েছে। এরমধ্যে জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকায় দুটি বিউটি পার্লার। জ্যাকসন হাইটসে রুজভেল্ট অ্যাভিনিউতে অবস্থিত বিউটি পার্লারটি সারা রাত খোলা থাকে। একটি বাণিজ্যিক ভবনে গড়ে ওঠা বিউটি পার্লারটিতে রাতের বেলায় অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সোস্যাল মিডিয়ায় দেওয়া বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে - ‘আওয়ার থেরাপিস্ট ইজ ইয়াং...অ্যান্ড সো...’। বিজ্ঞাপনে শুধুমাত্র একটি ফোন নম্বর দেওয়া আছে। নিজেদের ফেসবুক পেইজে স্পন্সর বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির প্রচারণা এমন। বিজ্ঞাপনটিতে গ্রাহকদের দুই ধরনের ম্যাসেজ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। লেখা আছে, ‘উই হ্যাভ নিউ ফোর গার্লস’। ম্যাসাজ পার্লারের এমন বিজ্ঞাপনে ম্যাসাজ ছাড়াও স্পষ্টভাবে অন্যকিছুর ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে! ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, বিজ্ঞাপনে যে ম্যাসাজের কথা উল্লেখ রয়েছে তা শরীরের সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর অংশকে নির্দেশ করে।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, এসব কথিত বিউটি পার্লারের আড়ালে যে অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় সেসবের সঙ্গে বাংলাদেশি কমিউনিটির বেশ কয়েকজন পুরুষ জড়িত রয়েছে, যাদের অনেকেই কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট হিসাবে পরিচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কমিউনিটি লিডার এ প্রতিবেদককে বলেন, যেসব বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে এসে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে আয়-রোজগার করে তারা কমিউনিটির জন্য অভিশাপ। এদের প্রতিহত করা উচিত। আগে কমিউনিটিতে ক্রেডিট কার্ড ও মর্গেজ ফ্রড ছিল। এখন ডলার কামানোর সহজ পথ বেছে নিয়েছে কিছু লোক, যারা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এটা লজ্জার।