Thikana News
০১ অগাস্ট ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫

ম্যানহাটনে বন্দুক হামলায় বাংলাদেশি  পুলিশ অফিসার দিদারুলসহ নিহত ৪

ম্যানহাটনে বন্দুক হামলায় বাংলাদেশি  পুলিশ অফিসার দিদারুলসহ নিহত ৪
বিশ্বের রাজধানী হিসাবে পরিচিত নিউইয়র্ক সিটির প্রাণকেন্দ্র ম্যানহাটনের মিডটাউনে একটি বহুতল ভবনে বন্দুক হামলায় নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) অফিসার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দিদারুল ইসলামসহ চারজন নিহত হয়েছেন। হামলাকারী ২৭ বছর বয়সী শেন তামুরাও আত্মহত্যা করেছেন। 
গত ২৮ জুলাই সোমবার সন্ধ্যায় সংঘটিত এই হামলার কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে পুলিশ বলছে- হামলাকারী মানসিক রোগ নিরাময়ের ওষুধ সেবন করতেন। তার মস্তিষ্ক পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক সিটি মেডিকেল এক্সামিনার অফিস। 
বন্দুক হামলার নিহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামসের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া নিহতদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন তিনি। 
সিনেট মাইনোরিটি লিডার চাক শুমার এই ঘটনায় দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেছেন।  
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ ঘটনায় আমার হৃদয় ভেঙে গেছে।
নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম (৩৬) প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে (এনওয়াপিডি) কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা এবং তার দুটি ছোট সন্তান রয়েছে। পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, ‘তিনি যেমন বেঁচেছেন, তেমনই বিদায় নিয়েছেন একজন বীরের মতো।’
পুলিশ জানিয়েছে, বন্দুকধারী শেন তামুরা লাস ভেগাসের বাসিন্দা। তার মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পূর্ব ইতিহাস রয়েছে। তবে কী কারণে তিনি এই হামলা চালিয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, ঘটনায় আরও একজন গুরুতর আহত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। তিনি বলেন, ‘পাঁচজন নিরপরাধ মানুষকে গুলি করা হয়েছে।’
নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি একটি পার্ক করা বিএমডব্লিউ গাড়ি থেকে নেমে এম-৪ রাইফেল হাতে নিয়ে ভবনের দিকে এগিয়ে যায়। ভবনে ঢুকেই সে পুলিশ কর্মকর্তার ওপর গুলি চালায় এবং আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করা এক নারীকে গুলি করে। এরপর লবিতে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে।
পুলিশ জানায়, বন্দুকধারী পরে এলিভেটরের দিকে যায় এবং নিরাপত্তা ডেস্কের পেছনে লুকিয়ে থাকা এক নিরাপত্তাকর্মী ও লবিতে থাকা আরও একজনকে গুলি করে। এরপর সে ভবনের ৩৩ তলায় উঠে একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একজনকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে নিজেই গুলি করে আত্মহত্যা করে।
পুলিশ জানায়, বন্দুকধারীর গাড়ি থেকে একটি রাইফেল কেস, একটি রিভলভার, গুলি ও ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নিউইয়র্ক ফায়ার সার্ভিস (এফডিএনওয়াই) কর্মীরা পার্ক অ্যাভিনিউর ওই অফিস ভবনে গিয়ে উপস্থিত হন। ভবনটিতে দেশের শীর্ষ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ন্যাশনাল ফুটবল লিগের (এনএফএল) অফিস রয়েছে।
সাক্ষাৎকারে জেসিকা চেন নামে এক নারী বলেন, তিনি দ্বিতীয় তলায় একটি উপস্থাপনায় অংশ নিচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ নিচতলা থেকে একের পর এক গুলির শব্দ শুনতে পান। পরে সবাই মিলে একটি কনফারেন্স রুমে গিয়ে দরজায় টেবিল ঠেলে আটকে দেন।
জেসিকা বলেন, “আমরা সবাই খুব ভয় পেয়েছিলাম”। তিনি জানান, এ সময় তিনি তার বাবা-মাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে বার্তা পাঠান।
স্থানীয় টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ভবন থেকে মানুষ হাত ওপরে তুলে বেরিয়ে আসছেন। ওই ভবনে ব্ল্যাকস্টোন ও আয়ারল্যান্ডের কনস্যুলেট জেনারেলের অফিস রয়েছে। পুলিশ কমিশনার জানান, ভবনটিতে নিউইয়র্ক পুলিশের দুটি বাহিনী অতিরিক্ত দায়িত্বে কর্মরত ছিল, যাদের বেসরকারিভাবে নিরাপত্তার কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
এ ঘটনার পর শহরের জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগ ওই এলাকায় যানজট, রাস্তা বন্ধ ও গণপরিবহন বিঘ্নের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে। উল্লেখ্য, চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত নিউইয়র্কে গুলি সংক্রান্ত সহিংসতা ও খুনের হার গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম ছিল বলে জানা গেছে। 
এদিকে নিহত চারজনের মৃত্যুর ধরনকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে ঘোষণা করেছে নিউইয়র্ক সিটির প্রধান মেডিক্যাল এক্সামিনার অফিস। নিহতদের মধ্যে ছিলেন এনওয়াইপিডি অফিসার দিদারুল ইসলাম, আলানড এটিয়েন, ওয়েসলি লে-প্যাটনার, এবং রুডিন কোম্পানির একজন কর্মচারী। এ ছাড়া হামলাকারী শেন তামুরার মরদেহও মঙ্গলবার পরীক্ষা করা হয়।
মেডিক্যাল এক্সামিনারের মতে, দিদারুল ইসলাম বুকে ও বাম বাহুতে গুলির আঘাতে মারা যান। অন্য তিনজনের মৃত্যুও বুকে গুলির আঘাতে হয়েছে। হামলাকারী শেন তামুরাও বুকে গুলির আঘাতে মারা যান এবং তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

কর্মস্থলে দিদারুলের মরদেহ : নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের ৪৭তম প্রিসিঙ্কটে ২৯ জুলাই মঙ্গলবার সকালে পৌঁছেছিল কালো-নীল পতাকা, যা সাধারণত কোনো পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুতে শোকের প্রতীক হিসেবে টানানো হয়। ফায়ার ফাইটাররা একটি মই-ট্রাক ব্যবহার করে ভবনের সামনের দরজায় অর্ধচন্দ্রাকার শোক-পতাকাটি টানিয়ে দেয়। কিন্তু তার আগেই, অফিসার দিদারুল ইসলাম (৩৬) এর মৃত্যুতে স্টেশন হাউস এবং আশেপাশের এলাকায় এক ধরনের নীরব বিষণ্নতা ছেয়ে গিয়েছিল। সোমবার রাতে ম্যানহাটনের একটি উচ্চ ভবনের লবিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান দিদারুল ইসলাম। 
এর আগে মঙ্গলবার ভোরে এনওয়াইপিডির সদস্যরা ম্যানহাটনের প্রেসবিটারিয়ান/ওয়েইল কর্নেল মেডিকেল সেন্টারে অফিসার দিদারুল ইসলামের মরদেহের সম্মানজনক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
পুলিশ কমিশনার টিশ জানান, হামলাকারীর উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি এটি একজন একক হামলাকারী এবং এখন আর জনসাধারণের জন্য কোনো সক্রিয় হুমকি নেই।”
তিনি আরও বলেন, একটি কালো ইগড গাড়ি পার্ক অ্যাভিনিউতে এসে দাঁড়ায় এবং একজন ব্যক্তি এম-৪ রাইফেল হাতে ভবনের দিকে এগিয়ে যায়। সে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করে, লবিতে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় এবং তারপর এলিভেটরের দিকে যায়।

শেন তামুরার মস্তিষ্ক পরীক্ষা হবে : শারীরিক অটোপসির পাশাপাশি বন্দুক হামলাকারী শেন তামুরার মস্তিষ্কও পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক সিটির মেডিকেল এক্সামিনার অফিস। ধারণা করা হচ্ছে, ফুটবল খেলার সময় মাথায় আঘাতজনিত কারণে ‘সিটিই’ নামক এক ধরনের নিউরোলজিক্যাল সমস্যা থেকে এই সহিংস মনোভাব তৈরি হয়।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস আগে বলেছিলেন, তামুরা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তার সিটিই রয়েছে এবং তিনি এনএফএল-এর প্রতি বিরক্ত ছিলেন। এই ভবনেই এনএফএল-এর সদর দফতর অবস্থিত, যেখানে এই হামলার ঘটনা ঘটে। 
একজন পুলিশ কর্মকর্তা আগেই ফক্স নিউজ ডিজিটালকে জানিয়েছিলেন, হামলাকারীর মানিব্যাগে পাওয়া তিন পৃষ্ঠার একটি নোটে এনএফএল-এর উল্লেখ ছিল এবং এতে এনএফএল-এর বিরুদ্ধে রাগ প্রকাশ করা হয়েছিল, যা এই ক্ষয়িষ্ণু মস্তিষ্কের রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।
এনএফএল কমিশনার রজার গুডেল জানিয়েছেন, ম্যানহাটনের পার্ক অ্যাভিনিউতে এনএফএল সদর দপ্তরের ভবনে গুলির ঘটনার পর নিউইয়র্ক সিটিভিত্তিক সব কর্মীকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত (৮ সপ্তাহ) বাসা থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।
এনএফএল-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমাদের নিউইয়র্ক অফিসভিত্তিক সহকর্মীরা অন্তত আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত বাসা থেকে কাজ চালিয়ে যাবেন। অফিস বন্ধ থাকবে এবং ভবনে প্রবেশ না করতে অনুরোধ করা হয়েছে।”
বন্দুক হামলার ঘটনায় একজন এনএফএল কর্মী গুরুতর আহত হন, তবে বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।
এদিকে ম্যানহাটনের ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউ ভবনে চারজন নিহত হওয়ার পর সেখানে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন ছুটিতে থাকা এনওয়াইপিডি কর্মকর্তা ছিলেন। ভবনের সামনের দরজা বোর্ড দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে এবং মানুষজন পাশের দরজা দিয়ে প্রবেশ করছেন। এই ভবনে এনএফএল ও ব্ল্যাকস্টোনের মতো শীর্ষ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয় রয়েছে।

হামলাকারী শেন তামুরার অতীত : ঘটনার মূল অভিযুক্ত শেন তামুরা ক্যালিফোর্নিয়ার গ্রানাডা হিলস চার্টার হাইস্কুলে ফুটবল খেলতেন। তাঁর প্রাক্তন কোচ ওয়াল্টার রবি জানান, শেন খুবই শান্ত প্রকৃতির এবং কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। কোচদের কথা মেনে চলতেন এবং খেলায় নেতৃত্ব দিতেন কাজ দিয়ে। তবে কোচ রবি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আমি কি আরও কিছু করতে পারতাম? হয়তো ওর পাশে থাকা দরকার ছিল।”
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া : যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কি না, এই প্রশ্নে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে নিশ্চিত করেন যে, মেয়র এরিক অ্যাডামসের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।

ট্রাম্প ও চাক শুমারের শোকবার্তা : ম্যানহাটনের ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউয়ের অফিস টাওয়ারে বন্দুকধারীর নির্বিচার গুলিতে বাংলাদেশি-বংশোদ্ভূত এনওয়াইপিডি কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামসহ চারজন নিহত হওয়ার একদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ শোক প্রকাশ করেন। 
তিনি লেখেন, ‘আমার হৃদয় নিহত চারজনের পরিবার, বিশেষ করে সর্বোচ্চ ত্যাগ-স্বীকারকারী ওই এনওয়াইপিডি অফিসারের পরিবারের সঙ্গে আছে, এ ধরনের ‘পাগল সন্ত্রাসীর’ সহিংসতা বোধগম্যের বাইরে। ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর ওপর আমার আস্থা রয়েছে, তারা নিশ্চিতভাবেই কেন এমন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলো, সে রহস্য উদ্‌ঘাটন করবে।
ট্রাম্প নিহত পুলিশ সদস্য দিারুলকে ‘সত্যিকারের নায়ক’ আখ্যায়িত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত তৎপরতার প্রশংসা করেন এবং নিহতদের স্মরণে প্রার্থনার আহ্বান জানান। একই দিন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস শহর জুড়ে সরকারি ভবনে পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন।
নিউইয়র্কের ইউএস সিনেটর ও সিনেট মাইনোরিটি লিডার চার্লস চাক শুমার তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ও সিনেটে ভাষণ থেকে নিহত পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলামের স্মরণে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
এক্স (সাবেক টুইটার)-এ শুমার লিখেছেন- ‘আমি নিহত NYPD অফিসার দিদারুল ইসলামের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করছি। আমেরিকায় বন্দুক সহিংসতা বন্ধে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। সিনেট ফ্লোরে দেওয়া একটি ভাষণে তিনি বলেন, তিনি যা করতেন ঘণচউ কর্মকর্তারা প্রতিদিনই করেন: বিপদের দিকে দৌড়ে যেতেন, অন্যদের রক্ষা করতেন, নিজের জীবন বাজিতে রেখে দায়িত্ব পালন করতেন—এবং সেই দায়িত্ব পালনের সময় তিনি প্রাণ উৎসর্গ করলেন। একজন ঘণচউ কর্মকর্তা যখন কর্তব্য পালনের সময় নিহত হন, সেটা শুধু দুঃখজনক নয়- এটি আমাদের শহরের একটি বড় ক্ষতি।’

মামদানির শ্রদ্ধাঞ্জলি
ম্যানহাটনের মিডটাউনে এক মর্মান্তিক বন্দুক হামলায় চারজন নিহত হওয়ার পর নিউইয়র্কের সিটি নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। 
২৮ জুলাই সোমবার জোহরান মামদানি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে লেখেন, ‘একজন বাংলাদেশি অভিবাসী, যিনি চার বছর আগে এনওয়াইপিডিতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি পার্কচেস্টারে বসবাস করতেন তার গর্ভবতী স্ত্রী, দুই ছোট সন্তান এবং বয়স্ক বাবা-মায়ের সঙ্গে। যখন তিনি পুলিশ বিভাগে যোগ দেন, তার মা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন এত ঝুঁকিপূর্ণ একটি পেশা বেছে নিচ্ছেন? তিনি জবাবে বলেছিলেন, তিনি এমন একটি উত্তরাধিকার রেখে যেতে চান, যেটি তার পরিবার গর্বের সঙ্গে স্মরণ করতে পারবে। তিনি সেটা করে দেখিয়েছেন, তার চেয়েও বেশি।’
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর পুরো নিউইয়র্ক শহর শোকাহত হয়ে পড়ে। অনেকেই মামদানিকে সমালোচনার মুখে ফেলেন, কারণ তিনি পূর্বে এনওয়াইপিডিকে ‘ডিফান্ড’ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েড আন্দোলনের সময়, তিনি পুলিশ বিভাগকে ‘বর্ণবাদী, সমকামী-বিরোধী এবং জননিরাপত্তার বড় হুমকি’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি পুলিশিংয়ের নতুন ভাবনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার একটি পোস্টে লেখা ছিল, ‘এই সমস্ত দুঃখ-কষ্ট, কেবল টাকার জন্য। এই ধরনের দুষ্ট ও দুর্নীতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনও আপস চলে না। এটিকে ডিফান্ড করুন। ধ্বংস করুন। সহিংসতার চক্র বন্ধ করুন।’ সম্প্রতি উগান্ডায় বিলাসবহুল বিয়ে উদযাপনের জন্য সমালোচিত মামদানি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে এই ভয়াবহ ঘটনার পরে এনওয়াইপিডি ও প্রথম সাড়া-প্রদানকারী সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, ‘মিডটাউনে এই ভয়াবহ বন্দুক হামলার খবর পেয়ে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। নিহত ও আহতদের পরিবার এবং গুরুতর আহত এনওয়াইপিডি অফিসারকে আমার চিন্তায় ও প্রার্থনায় রাখছি। ঘটনাস্থলে থাকা সব প্রথম প্রতিক্রিয়াকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

কমিউনিটিতে শোক
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বন্দুকধারীর হামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সোমবার সন্ধ্যায় দিদারুলের নিহতের খবর দেখে অনেকে বিশ্বাসও করতে পারেননি। 
দিদারুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে প্রবাসের আমব্রেলা সংগঠন হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটি। এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ সোসাইটি গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে এনওয়াইপিডির গর্বিত কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামকে, যিনি কর্তব্যরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে শহীদ হয়েছেন।
অফিসার দিদারুল ইসলাম নিউইয়র্ক সিটিতে তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন অসীম সাহস, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে। তাঁর অকাল মৃত্যু শুধু তাঁর পরিবার ও সহকর্মীদের জন্য নয় বরং সমগ্র বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর আত্মত্যাগ আমাদের সবার হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি মো. আতাউর রহমান সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আলী এবং ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ এক যৌথ শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। 
তাঁরা বলেন, ‘কমিউনিটির একজন সাহসী সন্তানের এভাবে চলে যাওয়া আমাদের গভীরভাবে মর্মাহত করেছে। আমরা সকল প্রবাসীর কাছে দোয়া কামনা করি, মহান আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করেন।’
বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরী পরিষদ ও ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষ থেকেও মরহুমের আত্মার শান্তি এবং তাঁর পরিবারের ধৈর্য ও শক্তি কামনা করে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। 
বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অফিসার অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) এক বিবৃতিতে দিদারুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছে। সোমবার রাতে নিহত দিদারুলের আত্মার মাগফেরাত কামনায় তাৎক্ষণিকভাবে এক আলোচনা সভায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও দক্ষ পুলিশ বাহিনী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কর্মরত আছেন কয়েকশত বাংলাদেশি। যেখানে প্রত্যেকেই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের সম্মান বৃদ্ধি করছেন।
বাংলাদেশি কমিউনিটির বহু মানুষ বিভিন্নভাবে শোক প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে দিদারুলের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমাবেদনা জানিয়েছেন। 
এদিকে সহকর্মীর মৃত্যুতে নিউইয়র্ক পুলিশ সদস্যদের বেশিরভাগই তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করে দিদারুলের ছবি পোস্ট করেছেন। 
উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যায় বন্দুকধারী শেন তামুরার হামলায় নিউ ইয়র্ক সিটির ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউয়ের একটি বহুতলভবনে পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামসহ চারজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন ।

শোক সইতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত দিদারুলের বাবা 
একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলামের বাবা আব্দুর রব।    
তাকে ম্যানহাটানের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। 
২৮ জুলাই সোমবার দিবাগত রাত ১টায় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে দিদারুল ইসলামের মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিউইয়র্কের বাড়িতে নেওয়া হয়। 
ম্যানহাটনে একটি বহুতল ভবনে বন্দুকধারীর গুলিতে নিউইয়র্ক পুলিশের সদস্য বাংলাদেশি দিদারুল ইসলাম রতন নিহত হন। তার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার মাগুরা এলাকায়। 

কমেন্ট বক্স