Thikana News
০১ অগাস্ট ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫
ঢাকায় চীন-ভারত-মার্কিন গেমের নয়া ভার্সন♦ইয়াও ওয়েনের চিকন টোকা

আকাশি গুজব বাতাসি নাশকতা

আকাশি গুজব বাতাসি নাশকতা
শুল্ক-ঝড়ের মাঝে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার প্রতিনিধিরা কর্মব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটি থেকে গম আমদানির চুক্তি তো হয়েই গেছে। শুল্ক চুক্তির খসড়া পাওয়ার আগে থেকেই অনলাইন-অফলাইনে ব্যাপক নড়াচড়া। সেই সঙ্গে গুজবের সাইক্লোন। গুজবের তথ্য, শব্দ, ভাষায় মাত্রা ছাড়ানো নাশকতা। যদিও বোয়িংয়ের ব্যবসা যুক্তরাষ্ট্র সরকার করে না, তা করে বোয়িং কোম্পানি। বাংলাদেশ বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার দিয়েছে। ভারত, ভিয়েতনাম অর্ডার দিয়েছে ১০০টি করে। ইন্দোনেশিয়া দিয়েছে ৫০টি।
এ রকম অর্ডার বিভিন্ন দেশই দিয়েছে। বোয়িং কোম্পানি তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী সরবরাহ করবে। অর্ডারের বোয়িং পেতে অনেক সময় লাগবে। বাংলাদেশ পাবে আগামী দুয়েক বছর পর নতুন সরকারের আমলে। এ নিয়ে বাস্তবতার বিপরীতে গুজবের গজব। গম নিয়েও কথামালার ধুম। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বছরে বাংলাদেশ প্রায় ৯ মিলিয়ন টন গম আমদানি করে। কখনোই একটি দেশ থেকে পুরোটা আনা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আমদানি হতো। এখন লোহিত সাগর এলাকায় পরিস্থিতির কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা আগের মতো নেই। বিকল্প হিসেবে নির্ভর করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার ওপর।
এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে সয়াবিন ও তুলা আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সয়াবিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর প্রতি ঝোঁক বেশি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের। বিশেষ এবং বাড়তি সুবিধা আছে বলেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানির চিন্তা তাদের। চীন থেকে উৎপাদন ও আমদানি স্থানান্তরের কিছু বিষয়-আশয়ও যোগ হয়েছে। চীনের সতর্ক নজর এদিকে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এরই মধ্যে রাজনীতি মেশানো কিছু বার্তা যোগ করেছেন। বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুন্দর নির্বাচন করতে পারবে। চীনও সেটা চায়। আগ বাড়িয়ে টিপ্পনী কেটে আরও বলেছেন, বিশ্বব্যাপী একাধিপত্য প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। চীনা কোম্পানিগুলো যেন বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করে, সে ব্যাপারে উৎসাহিত করা দরকার। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে চীন একযোগে কাজ করতে চায় বলেও জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের দিকে কিছু ইঙ্গিত রয়েছে তার। এ ব্যাপারে অন্য কারও উদ্বেগের কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন চীনা রাষ্ট্রদূত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এটি বিশ্ববাণিজ্য ও নীতির বিরোধী। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলও চীন-বাংলাদেশের মধ্যে আরও গভীর সম্পর্ক চায় বলে দাবি তার। কূটনৈতিক এ গেম কিছুটা ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী গেমের নতুন ভার্সন। এতে শামিল হয়ে গেছেন রাজনীতিক, আমলা, সুশীল, আঁতেলসহ অনেকে। বাদ নেই গোয়েন্দারাও। তা করতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই এনার্কি, উগ্রতা, নানা হাইপ।
নিত্যনতুন প্লেটো, অ্যারিস্টটল, তালুকদার মনিরুজ্জামান, এমাজউদ্দীন আহমদের বিস্তার। চমৎকার সব প্রেজেন্টেশন। ঢাকার আকাশেও হাইপারসনিক সাবমেরিন উড়িয়ে দেওয়ার অবস্থা। দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোনের মতো যমুনায়ও বিমান বিধ্বস্তের গুজব পর্যন্ত রয়েছে। এর মাঝেই মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে। এই সাক্ষাতের খবরে প্রায় সব পত্রিকারই শিরোনাম ‘বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের স্থান নেই’ বলে প্রধান উপদেষ্টার ‘হুঁশিয়ারি’। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের কোনো উদ্বেগ, বিরক্তি আছে? মার্কিন প্রতিনিধি কি এসব নিয়ে কোনো উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন? ড. ইউনূস হঠাৎ করে এত জোর গলায় ‘সন্ত্রাসবাদের জায়গা নাই’ বলে আওয়াজ দিলেন কেন? বিএনপির মহাসচিবই-বা কেন দক্ষিণপন্থীদের উত্থানে উদ্বেগ জানালেন?
বাংলাদেশের আকাশে ষড়যন্ত্রের এমন ঘনঘটা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে হয়েছিল। ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অনেক হতাহতের প্রেক্ষিতে পরদিন ব্যাপক বিক্ষোভের আয়োজন নিয়ে অনেক তথ্য ঘুরছে। সচিবালয়ে ঢুকে গাড়ি পোড়ানো, পুলিশ পেটানোর রহস্যও বেশ গভীরে। ঘটনা দিয়াবাড়িতে, আন্দোলন সচিবালয়ে ‘মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে’র মতো। এর সঙ্গে বাংলার আকাশে ১৯৭৭ সালের ঘটনার কিছু মিল বিদ্যমান। তখন জাপান এয়ারলাইন্সের বিমান হাইজ্যাকের ঘটনা নিয়ে সবাই ব্যস্ত থাকা অবস্থায় ষড়যন্ত্রকারীরা সামরিক ক্যু করে ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নিধন করতে চেয়েছিল। দীর্ঘ ৪৮ বছর পর পুরোনো ঘটনার নমুনা। সবার মনোযোগকে অন্যত্র সরিয়ে আকাশে-বাতাসে গুজবের আজাব। এ রকম অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে ডেকে প্রধান উপদেষ্টা বুঝিয়েছেন, আধিপত্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রের বিষয়ে।
ভারতের আবার উঠেপড়ে লাগাও দৃশ্যমান। বাংলা ভাষায় কথা বলা পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বিভিন্ন অঞ্চলের ভারতীয়দের সমানে পুশ-ইন করা হচ্ছে বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশি যারা ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়া গেছেন তাদেরকে নয়। আওয়ামী লীগের কয়েক হাজার নেতা অবৈধভাবে ভারতে অবস্থান করছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধী হাসিনা নিজে ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়া ভারতেই। সেদিকটি ঢাকতে জমিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিপরীত গুজবের হাটবাজার। ভারতে সর্বদলীয় সভায় শেখ হাসিনাকে আগস্টে বাংলাদেশে নিয়ে এসে ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে টাটকা গুজব ছড়ানো হয়েছে। বাস্তবে ভারতে এ ধরনের কোনো সভাই হয়নি। হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। ড. ইউনূস সেভ এক্সিট খুঁজছেন, বিদেশে চলে যাবেন মর্মে গুজবও জোরদার করা হচ্ছে। সেনাপ্রধান, সেনাবাহিনী নিয়ে নতুন গুজবের বাজার জমানোর চেষ্টাও ব্যাপক। দেশে একটি অরাজকতা-ঘুরপাক তৈরি করাই এসবের উদ্দেশ্য।

কমেন্ট বক্স