জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংসদে ১০০ আসনের একটি উচ্চকক্ষ গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উচ্চকক্ষের সদস্যরা নিম্নকক্ষে প্রতিটি দলের প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ অনুযায়ী ‘সংখ্যাগত প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি’তে (পিআর) মনোনীত হবেন। ৩১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সংলাপের ২৩তম দিনে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
দীর্ঘ আলোচনা সত্ত্বেও দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্য না হওয়ায় এবং ভিন্নমত থাকায়, বিষয়টি কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছিল। সেই দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে কমিশন এ সিদ্ধান্ত জানায়।
কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার পক্ষে রাজনৈতিক মতৈক্য হলেও বেশিরভাগ দল ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে।
সংলাপে কিছু দল সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে এবং কিছু দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে। এই অবস্থায় বিদ্যমান ৫০ সংরক্ষিত নারী আসন রাখার পাশাপাশি জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ৩০০ সংসদীয় আসনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন। সেই সঙ্গে চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, উচ্চকক্ষের নিজস্ব কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবে না। তবে অর্থবিল ব্যতীত অন্য সব বিল নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ উভয় কক্ষে উপস্থাপন করতে হবে। উচ্চকক্ষ কোনো বিল স্থায়ীভাবে আটকে রাখতে পারবে না। এক মাসের বেশি বিল আটকে রাখলে সেটিকে উচ্চকক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত বলে গণ্য করা হবে।
নিম্নকক্ষ কর্তৃক প্রস্তাবিত বিলসমূহ পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করবে উচ্চকক্ষ এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তা অনুমোদন অথবা প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল অনুমোদন করে, তবে উভয় কক্ষে পাস হওয়া বিল রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হবে। আর যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে তা সংশোধনের সুপারিশসহ নিম্নকক্ষে পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে। নিম্নকক্ষ সেই সংশোধনসমূহ আংশিক বা পূর্ণভাবে গ্রহণ কিংবা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।
বিএনপি এবং তাদের মিত্র জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, এনডিএম ও এলডিপি দাবি জানিয়েছে যে, উচ্চকক্ষে আসন বরাদ্দ নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে দিতে হবে। তারা উচ্চকক্ষের এখতিয়ার নিয়েও আপত্তি তুলেছে।
অন্যদিকে, সিপিবি-বাসদ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, দেশের বর্তমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় উচ্চকক্ষের কোনো প্রয়োজন নেই।
ঠিকানা/এএস