হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ১৪ জুলাই (সোমবার) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দিচ্ছিলেন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছিলেন, ঠিক তখন মস্কোর স্টক মার্কেট ২.৭ শতাংশ বেড়ে যায়। এই বৃদ্ধির কারণ এটাই যে, রাশিয়া আরও কঠিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করছিল ট্রাম্পের কাছ থেকে।
সোমবার রাশিয়ার জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড মস্কোভস্কি কমসোমোলেটস হুঁশিয়ারি দিয়ে লিখেছিল, “ট্রাম্পের সোমবারের চমক আমাদের দেশের জন্য সুখকর হবে না।”
অবশ্য, ট্রাম্পের ঘোষণা রাশিয়ার জন্য একেবারে সুখকর না হলেও, দেশটি কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। যেমন, ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে রাশিয়ার বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর সেকেন্ডারি শুল্ক কার্যকর হবে ৫০ দিন পর। ফলে রাশিয়ার হাতে এখনো সময় আছে পাল্টা প্রস্তাব দেওয়ার কিংবা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর আরও পিছিয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরির।
সেইসঙ্গে ৫০ দিনের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি না হলে রাশিয়ার বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন তিনি।
ওয়াশিংটনে ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে ইউক্রেন তার যা করার প্রয়োজন, তা করতে পারে।’’
রুট নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর মাধ্যমে ইউক্রেনকে ব্যাপকভাবে প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ করবে এবং ইউরোপীয় দেশগুলো এর ব্যয় বহন করবে।
ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ৫০ দিনের মধ্যে শান্তিচুক্তি না হলে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যরত দেশগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র ১০০ শতাংশ সেকেন্ডারি ট্যারিফ বা পরোক্ষ শুল্ক আরোপ করবে। এর মানে হলো, যে দেশ রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করবে, সেই দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় দ্বিগুণ শুল্ক দিতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, ভারত যদি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা চালিয়ে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্য আমদানির সময় ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এতে ভারতীয় পণ্য এত ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে যে মার্কিন ব্যবসায়ীরা তা কিনতে আগ্রহ হারাবে।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করার লক্ষ্য রয়েছে, কারণ দেশটির রাজস্বের এক-তৃতীয়াংশ আসে তেল ও গ্যাস থেকে, যা তাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য।
ঘটনার পর মস্কো স্টক এক্সচেঞ্জ সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়, কারণ বিশ্লেষকরা আরও কঠোর পদক্ষেপের আশঙ্কা করছিলেন।
পুতিনের সাবেক উপদেষ্টা ও রুশ রাজনৈতিক ভাষ্যকার সার্গেই মারকভ এই শুল্ক হুমকিকে ‘ব্লাফ’ বলে অভিহিত করেছেন এবং দাবি করেছেন, ট্রাম্প ইউক্রেনে শান্তি আনার চেষ্টায় পিছিয়ে পড়েছেন।
এদিকে মার্চে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিকে রাশিয়া স্বাগত জানালেও শর্ত জুড়ে দেয় – ইউক্রেনের সামরিক মদদ ও গোয়েন্দা সহায়তা বন্ধ করতে হবে এবং কিয়েভকে সেনা সমাবেশ থামাতে হবে।
ক্রেমলিন বলছে, তারা শান্তি চায়। তবে শান্তির আগে যুদ্ধের ‘মূল কারণগুলো’ সমাধান করতে হবে। রাশিয়ার দৃষ্টিতে এসব কারণ হলো তাদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি – ইউক্রেন, ন্যাটো ও ‘সমষ্টিগত পশ্চিমা বিশ্ব’ থেকে আসা হুমকি।
ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও ইউক্রেনে শান্তিচুক্তি করাকে প্রাধান্য দিচ্ছিল, ফলে কূটনৈতিক আলোচনায় শাস্তির বদলে ‘লোভনীয় প্রস্তাব’ ছিল মুখ্য।
তবে ক্রেমলিন-বিরোধীরা সতর্ক করেছিলেন, এই কৌশলের মাধ্যমে রাশিয়া কেবল সময় কিনছে।
ক্রেমলিন মনে করে, তারা যুদ্ধক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তাই তারা শান্তি চাইলেও তা চায় নিজেদের শর্তে। সেই শর্তগুলোর অন্যতম হলো ইউক্রেনে পশ্চিমা অস্ত্র সহায়তা বন্ধ।
কিন্তু ট্রাম্পের সোমবারের ঘোষণায় স্পষ্ট, এই শর্ত মানা হচ্ছে না। বরং ইউরোপের অর্থে মার্কিন অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি পুতিনের ওপর ‘খুশি নন’। তিনি দাবি করেন, ‘ভালো ফোনালাপের’ পরও ইউক্রেনে বিধ্বংসী বিমান হামলা হওয়ায় তিনি হতাশ।
ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি পুতিনকে খুনী বলতে চাই না, তবে সে একজন কঠিন লোক। সে ক্লিনটন, বুশ, ওবামা, বাইডেন – সবাইকে বোকা বানিয়েছে। আমাকে না। একসময় শুধু কথা বলে লাভ হয় না, কাজ করতে হয়।”
এদিকে রাশিয়ারও ট্রাম্পকে নিয়ে হতাশা বাড়ছে। মস্কোভস্কি কমসোমোলেটস লিখেছে, “(ট্রাম্প) স্পষ্টতই এক ধরণের বিভ্রমে ভুগছেন। আর তার মুখটা অনেক বড়।”
ঠিকানা/এসআর