Thikana News
০১ অগাস্ট ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫

নেতৃত্ব হারাচ্ছেন জি এম কাদের

নেতৃত্ব হারাচ্ছেন জি এম কাদের
জাতীয় পার্টির (জাপা) অভ্যন্তরীণ কোন্দল অবশেষে প্রকাশ্যে রূপ নিল চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কঠোর সিদ্ধান্তে। দলের প্রেসিডিয়াম সভা ডাকা নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোর জেরে অবশেষে মহাসচিব পদ হারালেন মজিবুল হক চুন্নু। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, যাকে দলের নতুন মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই রদবদল শুধু মহাসচিব পদেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। জাপা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে। দলটির আরেক কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করেছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এমন পরিস্থিতিতে ৮ জুলাই মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে জি এম কাদেরকে তুলাধোনা করেন বহিষ্কৃত নেতারা।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশে এখন নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়েছে। নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছে রাজনৈতিক ছোট-বড় সকল দল। কিন্তু একেবারে ভিন্ন চিত্র জাপায়। অন্তঃকোন্দলে অনেকটা স্থবির দলীয় কর্যক্রম। দলের ভেতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ফ্যাসিস্ট সময়ে দলের ভূমিকার সঙ্গে নেতৃত্বের দুর্বলতা অনিশ্চিতের মুখে ফেলেছে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ।
দলের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পার্টির দশম কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জ্যেষ্ঠ নেতাদের বড় একটি অংশ জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর তৎপরতায় যুক্ত রয়েছেন। যদিও চেয়ারম্যান জি এম কাদের বিরোধী অংশের নেতারা গত ২৮ জুন জাপার সম্মেলনের কথা থাকলেও শেষ সময়ে তা বাতিল করেন। কৌশলগত কারণে তারা সম্মেলন আয়োজন থেকে সরে আসেন বলেও দাবি করেন। এর আগে দলের প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ২৮ জুন বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে সম্মেলন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। পরে ১৬ জুন মিলনায়তন না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে জি এম কাদের সম্মেলন স্থগিত করেন।
দলের সিনিয়র রাজনৈতিক নেতারা মনে করেন, বিগত দশম জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে জাতীয় পার্টিতে। সম্মেলনের আয়োজন, চেয়ারম্যানের ক্ষমতা কমানো, আর্থিক স্বচ্ছতা আনাসহ নানা ইস্যুতে বিভক্ত হয়ে পড়েন দলটির প্রথম সারির নেতারা। তাদের মধ্যে বিভক্তি আরও প্রকট হয় গত ২৮ জুনের সম্মেলন স্থগিত হওয়াকে ঘিরে। প্রকাশ্য আসে দলের চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের অন্তঃকোন্দল।
এদিকে মহাসচিব পদ হারানোর পর মজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে চেয়ারম্যান (জি এম কাদের) বিরোধী জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে জাপার নতুন দল গঠনের সম্ভাবনা দেখছেন দলের নেতারা। দলের একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরেই জি এম কাদেরের নেতৃত্বশৈলী দলে প্রশ্নবিদ্ধ। প্রেসিডিয়ামের সম্মতি ছাড়াই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া, দলের গণতান্ত্রিক চর্চা ক্ষুণ্ন করা ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এসব কারণে দলের অধিকাংশ নেতা চেয়ারম্যানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলটির ঘনিষ্ঠতা এবং জি এম কাদেরের অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী অবস্থান দলকে রাজনৈতিকভাবে আরও কোণঠাসা করে তুলেছে বলে মনে করেন নেতারা। দলে নেতৃত্বের পরিবর্তনের পক্ষে থাকা নেতারা বলছেন, ইতিমধ্যে জি এম কাদেরসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে। জি এম কাদের নেতৃত্বে থাকলে সামনে দলের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এমনকি নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে ৮ জুলাই গুলশানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা চেয়ারম্যানের চিঠি পেয়েছি। আপনার লাভ লেটার পেয়েছি। আমরা আপনাকে বহিষ্কার করিনি। আমরা আপনাকে ফেলে যেতে চাই না। আমরা দলকে শক্তিশালী করব। আবার বৃহত্তর ঐক্য করব। আপনাকে আবারও বলব, আসেন। আপনাকে আমরা সম্মান দেব। কিন্তু দল ভাঙবে, দল ছোট হবে- এ রাজনীতি আমরা করব না।’
সংবাদ সম্মেলনে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘উনি (জি এম কাদের) যে কী করেন, নিজেই বুঝতে পারছেন না। তিনি কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, নিজেই জানেন না। ওনার মানসিক অবস্থা ঠিক আছে কি না, ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করা দরকার। জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমরা পার্টি করি। কাদের সাহেব, আপনি আমাদের দল ও পদ থেকে অব্যাহতি দিলেন, ওকে। কিন্তু প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি দিলেন; যাতে আগামী কাউন্সিলে কোনো চ্যালেঞ্জ না হয়। আপনি যাতে একরতফাভাবে নেতা নির্বাচন হন।’
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিব পদ থেকে বহিষ্কার করে মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিব করেছিলেন জি এম কাদের। জাপার গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারায় কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই যে কাউকে পদ বা দল থেকে অব্যাহতি বা বহিষ্কার করার ক্ষমতা চেয়ারম্যানের রয়েছে।

কমেন্ট বক্স