Thikana News
১৯ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

স্মিয়ার ক্যাম্পেইন ড. ইউনূস এবং রাজনীতির বৈঠক

স্মিয়ার ক্যাম্পেইন ড. ইউনূস এবং রাজনীতির বৈঠক



 
আজকাল কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতার মন্তব্যে বিভ্রান্ত হই। একজন বললেন, তিনি নাকি হতাশ ড. ইউনূসকে নিয়ে। কারণ, এ সময়ে বিনিয়োগের হার ২৬ শতাংশ কম। প্রশ্ন হলো, তাহলে কি ফ্যাসিজমই ভালো ছিল। ড. ইউনূস ব্রিটেন গিয়েছেন। প্রচারণা চলছে তার ব্রিটেন সফর নাকি ব্যর্থ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার তাকে সাক্ষাৎ দিতে চাননি। এই প্রচারণাটা শুরু করেছে বাংলাদেশের এমন একটি খবরের কাগজ, যার সংযুক্তি মাফিয়াদের সঙ্গে। বিগত রেজিমে এই মাফিয়া গোষ্ঠীটি ছিল অসম্ভব রকম শক্তিশালী। বিগত রেজিম-প্রধানকে ক্ষমতায় রাখতে যে গোষ্ঠীর প্রধান প্রকাশ্যে শপথ করেছিলেন। সুতরাং তাদের কাছে ড. ইউনূসকে ব্যর্থ প্রমাণ করার মানেই হলো বিগত রেজিম যে ভালো ছিল, তা প্রতিষ্ঠা করা।
ইন্টেরিম সরকার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই একটা গোষ্ঠী স্মিয়ার ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে ড. ইউনূস ও তার সরকারের বিরুদ্ধে। এর সোজা এবং একটা অর্থই হলো ড. ইউনূসকে ব্যর্থ প্রমাণ করা, অর্থাৎ বিগত রেজিমের যথার্থতা প্রতিষ্ঠিত করা। বুঝে হোক, আর না বুঝে হোক, বিএনপির কতিপয় নেতা এই স্মিয়ার ক্যাম্পেইনের সঙ্গে জড়িয়েছেন। মাফিয়া মিডিয়া যা করছে, তা তারা জেনে-বুঝে করছে। ব্রিটেন সফর নিয়ে এই স্মিয়ার ক্যাম্পেইনের মূলে হলো, টিউলিপ সিদ্দিকের অপকর্মকে আড়াল করা। ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়া দিয়ে কাজ শুরু করেছে। দরবেশ বাবার সুপুত্রের দুটি বাড়ি ইতিমধ্যেই জব্দ হয়েছে ইংল্যান্ডে। যে বাড়ির একটাতে টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানা থাকতেন। সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী জাবেদ সাহেবের সম্পত্তিতেও হাত পড়ছে ব্রিটিশ সরকারের। যে সম্পত্তি বাংলাদেশকে লুট করে করা হয়েছিল। আর ড. ইউনূসের ব্রিটেন সফরের লক্ষ্যের মধ্যে চুরির টাকা উদ্ধারও একটি। সুতরাং লুটেরাদের সহযোগীরা স্মিয়ার ক্যাম্পেইনে শরিক হবেই। কিন্তু মুশকিল হলো বিএনপির কেউ কেউ এই স্মিয়ার ক্যাম্পেইনে জড়িত হচ্ছেন কেন! তারা তো গত ১৭ বছর নির্যাতিত। তাদের তো কোনো চুরির টাকা নেই, যা বাইরে পাচার করা হয়েছে। তাহলে তাদের এই ক্যাম্পেইনে যোগ দেওয়ার মানে কী? তবে কি কেউ কেউ বিগত রেজিমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তলে তলে টেম্পু চালিয়েছেন? আর সে কারণেই গত ১৭ বছরে আন্দোলনে সফল হতে পারেনি বিএনপি? বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবিসংবাদিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার-জীবন মেনে নিতে হয়েছে এদের জন্যই? তারেক রহমান এখন পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারছেন না কি এদের কারণেই? প্রশ্ন আছে অনেক, উত্তর তো জানা।

রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়াকে আমি সব সময়ই প্রাসঙ্গিক কেন বলি, তা নিয়ে অনেকেই মনঃক্ষুণ্ন হন। অনেকে আমাকে বিএনপিপন্থী বলেন। বলুন, অসুবিধা নেই। আমি জানি, আমি কী। আমার প্রশ্ন বাদ দিন, পারলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়ার প্যারালাল কাউকে দেখান তো। কাউকে দেখান, যিনি নির্দ্বিধায় কারাবরণ করতে পারেন, যখন তার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সকল রকম সুযোগ ও সম্ভাবনা ছিল। দেখান তো, নিজের ছেলে আহত, মৃতপ্রায়, তাকে দেশ ছেড়ে যেতে বলা হলো, তিনি বললেন, বাংলাদেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই। দেখান নারে ভাই, দ্বিতীয়জন এমন কেউ।

বর্তমান পরিস্থিতিতেই দেখেন। যখন বিএনপির কেউ কেউ ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে, তাকে বিতর্কিত করতে এককাট্টা, তখনই পরিস্থিতি বুঝে এগিয়ে এলেন সেই বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির নেতৃবৃন্দকে নিষেধ করলেন, ড. ইউনূস ও তার সরকারের সঙ্গে বিরোধে না জড়াতে। বিএনপির সর্বনাশ ঠেকাতে যা এই মুহূর্তে দরকার ছিল। জানি বিএনপির কতিপয় নেতার আশাভঙ্গ হয়েছে, কারণ তারা অন্য রকম স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করেছিলেন। ৫ আগস্টের পর যেমন কারও কারও স্বপ্ন ছিল তারেক রহমানের দেশে ফিরতে দেরি আছে, বেগম জিয়াও অসুস্থ, সুতরাং নির্বাচনটা আগেভাগে হয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রী হতে কোনো বাধা নেই। তাদের সেই স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত ভঙ্গ হয়েছে। কিন্তু তারা চেষ্টা ছাড়েনি। তাদের কর্মকাণ্ড ১৭ বছর জুলুমের শিকার একটি দলকে খোদ জালিম করে তুলেছে। মানুষের যে সহমর্মিতা ছিল বিএনপির মজলুম নেতাকর্মীদের প্রতি, দলের প্রতি, তা কতিপয় নেতার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। এসব নেতা মূলত জিয়ার রাজনীতিই অনুধাবন করতে পারেননি। জিয়া দলকে ব্যক্তির ঊর্ধ্বে রেখেছিলেন। বিপরীতে এসব নেতা ব্যক্তিচিন্তায় অস্থির। তাদের এই অস্থিরতা দেশটাকেই অস্থির করে ফেলেছে। ফলে প্রতিনিয়তই জনসমর্থন কমছে বিএনপির মতো একটি মজলুম দলের। জানি, আমার এসব কথায় কেউ কেউ আপত্তি জানাবেন। তাদের বলছি, মাঠে নেমে দেখুন, মানুষ কী বলছে। নিজেদের লোভ দমন করে দলটাকে বাঁচান। কারণ বাংলাদেশের মানুষের সামনে এখন বিএনপি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি যদি আওয়ামী লীগকেই অনুসরণ করে, তাহলে তারাও আওয়ামী লীগের মতো ব্যর্থ হবে। আর বিএনপির ব্যর্থতা মানে বাংলাদেশের ব্যর্থতা। ৩৬ জুলাই যে আশা নিয়ে বাংলাদেশ জেগে উঠেছিল, সেই আশা ভঙ্গ হবে বিএনপির ব্যর্থতায়। ইতিমধ্যেই বিএনপির কতিপয় নেতার কর্মকাণ্ডে যা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
আমি যখন লেখা শেষ করছি, তখন ড. ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে তারেক রহমানের বৈঠক শেষ হয়েছে। প্রেস ব্রিফিং চলছে। এই বৈঠকটার প্রতি দৃষ্টি ছিল সবার, কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থেই রাজনীতি বোঝেন, তারা জানতেন এই মিটিং শেষ হবে হাসিমুখে এবং সৌহার্দ্যতায়। এই বৈঠক নিয়ে তাই আমার খুব একটা সংশয় ছিল না। বিশেষ করে, বেগম খালেদা জিয়া এবং ড. ইউনূসের বোঝাপড়াটা যারা জানেন, তাদের জানা ছিল শেষ মুহূর্তে কী ঘটবে। জানি, এই বৈঠকে বিএনপির মধ্যে থাকা বিশেষ দেশের লবি আশাহত হবে, তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হবে। কিন্তু মুশকিলটা হলো স্বপ্নভঙ্গ হলেও তারা ঘুম থেকে উঠবে না। তারা তাদের পরবর্তী স্বপ্ন দেখার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
 

কমেন্ট বক্স