রাতের খাবার দেরি করে খাওয়ার সঙ্গে ওজন ছাড়াও রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির সম্পর্ক পাওয়া যায়।
এই তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর’য়ে অবস্থিত ‘জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের করা ২০২০ সালে ‘ক্লিনিকেল এনডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবোলিজম’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায়।
তবে আমাদের দেশে রুটিনহীন জীবনে এই নিয়ম পালন করা হয়ে ওঠে না।
এই বিষয়ে হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বেঙ্গালুরু ভিত্তিক ‘স্পোর্টস অ্যান্ড পারফর্মেন্স নিউট্রিশনিস্ট’ দীপিকা ভাসুদেভান বলেন, “খাবার খাওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। তবে সন্ধ্যে সাতটার মধ্যে দিনের শেষ খাবার শেষ করার নানান উপকারিতা রয়েছে।”
দিনের শেষভাগে খাবার খাওয়ার ওপর সার্বিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে। কী ধরণের খাবার খাওয়া হচ্ছে এবং সারাদিন নাস্তা হিসেবে কী গ্রহণ করা হয়েছে সেদিকেও খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
তবে জীবনধারার সাথে তাল মিলিয়ে দেহের ক্ষুধাভাব ও পূর্ণতা বোঝার চেষ্টাও করতে হবে। যারা বেশি রাত জাগেন তাদের সন্ধ্যেবেলায় খাবার খাওয়ার পরে মাঝ রাতে ক্ষুধা লাগতে পারে।
এক্ষেত্রে নিজের জীবনযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে খাদ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। রাতে বেশি ক্ষুধা পেলে হালকা ও স্বাস্থ্যকর নাস্তা খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে যেন অধিভোজন হয়ে না যায়।
রাতের খাবার আগে খাওয়ার উপকারিতা
অনেকেই বলেন ওজন কমাতে রাতের খাবার আগে খাওয়া উচিত। যদিও এই বিষয়ে জোরালো কোনো প্রমাণ নেই। তবে অন্যান্য অনেক উপকার অস্বীকারও করা যাবে না।
সার্কাডিয়ান ছন্দ
২৪ ঘণ্টায় মানব দেহ দিনের আলো ও আঁধারের প্রভাবে প্রভাবিত হয়। একেই বলে ‘সার্কাডিয়ান রিদম’। এই ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে খাবার গ্রহণ করা হজমে সহায়তা করে ও বিপাক বাড়ায়, পরিপাক তন্ত্র বিশ্রাম পায় এবং চাপ প্রয়োগ ছাড়াই দেহ দূষণ মুক্ত হয়।
বিরতির সময়টা স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম ও উন্নত হজমের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ
রাতে আগে খাবার খাওয়া দেহে ইন্সুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়ায় অর্থাৎ দেহ কোষ ইন্সুলিনে সক্রিয় সাড়া দেয়। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও ইন্সুলিন প্রতিরোধের ঝুঁকি অর্থাৎ টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
ঘুম ভালো হয়
ঘুমের কাছাকাছি সময়ে খাবার খাওয়া বদহজম ও ঘুমে জটিলতা সৃষ্টি করে। আগে খাবার খাওয়া রাতে নিরবিচ্ছিন্ন ও উন্নত ঘুমে সহায়তা করে, জানান ভাসুদেভান।
হৃদস্বাস্থ্য
রাতে দেরি করে খাওয়া বিশেষত উচ্চ ক্যালরি ও অস্বাস্থ্যকর চর্বি স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে রাতে উচ্চ ক্যালরি ও চর্বি বহুল খাবার খাওয়া ঠিক নয়।
হরমোনের ভারসাম্য
ইন্সুলিন, কর্টিসোল ইতাদি হরমোন দৈনিক ছন্দ মেলে চলে। রাতে আগে খাবার খাওয়া এই সকল ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে চলা বিপাক ও হরমোনের মাত্রা স্বাস্থ্যকর ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।
ভাসুদেভানের মতে, “খাওয়া ও ঘুমাতে যাওয়ার মাঝে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা বিরতি রাখা প্রয়োজন। খাওয়ার পরে ২০ মিনিট হাঁটা হজমে সহায়তা করে।”
রাতে ঘুমানোর আগে খাবার খাওয়া হজমে জটিলতা, বদহজম, অ্যাসিডিটি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা কি-না সারা রাতই ওঠানামা করতে থাকে।
ঠিকানা/এসআর