Thikana News
৩০ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫


ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন তদন্ত চায় জাতিসংঘ

ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন তদন্ত চায় জাতিসংঘ সংগৃহীত



 
গাজায় একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের পাশে ফিলিস্তিনিদের হত্যার ঘটনায় স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। রবিবার এই ঘটনার পর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলির অভিযোগ ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। খবর বিবিসির।

রাফাহয় আমেরিকান ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর ত্রাণকেন্দ্রের কাছে খাদ্যের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
রেড ক্রস জানিয়েছে, তাদের হাসপাতাল ১৭৯ জন আহত ব্যক্তিকে গ্রহণ করেছে, যাদের মধ্যে ২১ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, এই ঘটনায় ৩১ জন নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অবশ্য দাবি করেছে, তারা ওই স্থানে বা আশপাশে কোনো বেসামরিক নাগরিককে লক্ষ্য করে গুলি চালায়নি এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ‘মিথ্যা’।

জিএইচএফ বলেছে, এই ঘটনাকে ঘিরে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো ‘পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও ভুয়া’ এবং তারা এখনও পর্যন্ত তাদের কেন্দ্রে বা আশপাশে হামলার কোনো প্রমাণ পায়নি।

জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গাজায় ত্রাণ নিতে এসে ফিলিস্তিনিদের নিহত ও আহত হওয়ার খবর শুনে আমি স্তব্ধ। আমি এই ঘটনাগুলোর অবিলম্বে ও স্বাধীন তদন্ত দাবি করছি এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানাই।’

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বক্তব্যকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছে এবং গুতেরেসের বিবৃতিতে হামাসের নাম না থাকায় সমালোচনা করেছে। 

সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, রোববার ভোরে আমেরিকান ত্রাণকেন্দ্রের কাছে হাজারো সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালানো হয়, যাতে ৩১ জন নিহত ও ১৭৬ জন আহত হন।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি জানিয়েছে, রাফাহর রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতাল ‘ম্যাস ক্যাজুয়ালটি ইনফ্লাক্স’ পেয়েছে, যার মধ্যে নারীরাও ছিলেন। আহতদের অধিকাংশই গুলির আঘাতে বা ধাতব খণ্ডে জখম হন।

চিকিৎসাসেবা সংস্থা মেদসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ের (এমএসএফ) জানিয়েছে, খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালে তাদের টিম গুরুতর আহত বহু ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিয়েছে, যাদের অনেকেই সংকটাপন্ন অবস্থায় ছিলেন। একজন কর্মীর ভাই ওই ত্রাণকেন্দ্র থেকে খাবার নিতে গিয়ে নিহত হন বলেও জানান তারা।

রাফাহর এক সাংবাদিক বিবিসিকে বলেন, আল-আলম চত্বরের কাছে ফিলিস্তিনিরা জড়ো হয়েছিল। তখন ইসরায়েলি ট্যাংক এগিয়ে এসে গুলি ছোড়ে।

রবিবার সকালে অনলাইনে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু মানুষ খোলা বালুময় জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে, সেই সময় স্বয়ংক্রিয় গুলির শব্দ শোনা যায়। তবে বিবিসি ভিডিওর স্থান সুনির্দিষ্টভাবে যাচাই করতে পারেনি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, তারা ওই ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে কোনো বেসামরিক নাগরিককে লক্ষ্য করে গুলি চালায়নি। মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন হামাসকে ‘গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে দোষারোপ করেন।
পরে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, ত্রাণকেন্দ্র খোলার আগে প্রায় ১ কি.মি. দূরে কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তি সেনাবাহিনীর দিকে এগিয়ে আসায় সতর্কতামূলক গুলি চালানো হয়।

জিএইচএফ এক বিবৃতিতে জানায়, এই ঘটনাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যে তথ্য ছড়ানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর। আমাদের পরিচালিত কার্যক্রমে কোনো হতাহত বা গোলযোগ ঘটেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এই ঘটনার সংবাদ কাভারেজকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে দাবি করেন এবং বলেন, “ড্রোন ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শী বর্ণনায় স্পষ্ট যে কোনো গুলি, মৃত্যু বা বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি।”

ঠিকানা/এসআর

এদিকে সোমবার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাফাহর তাল আল-সুলতান এলাকায় একই ত্রাণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে আরও তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

রেড ক্রস জানিয়েছে, তাদের হাসপাতাল ৫০ জন আহতকে পেয়েছে, যাদের মধ্যে দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালে আরও একজনের মরদেহ পৌঁছায়।

এছাড়া জাবালিয়ার একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় ১৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬ শিশু ও ৩ নারী রয়েছেন বলে জানিয়েছে সিভিল ডিফেন্স। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেকে চাপা পড়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজাজুড়ে “সন্ত্রাসী সংগঠনের সামরিক কাঠামো, টানেল ও অস্ত্রগার” লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। 

উল্লেখ্য, ২ মার্চ ইসরায়েল গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে এবং দুই সপ্তাহ পর সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করে, যার ফলে হামাসের সঙ্গে দুই মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ১৯ মে ঘোষণা দেন, সেনাবাহিনী গাজার “সব এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেবে”।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স