প্রবাসে হাতে গোনা কয়েকটি আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে, যেগুলো বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ঐক্যবদ্ধ সংগঠনের উদাহরণ ছিল। এরমধ্যে অন্যতম ছিল প্রবাসের সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েন অব আমেরিকা ইন্ক। গত জুন মাসে জালালাবাদের ঐক্যর কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়া হয়েছে। এখন জালালাবাদও বিভক্ত। এখন ঐক্যবদ্ধ আঞ্চলিক সংগঠনের মডেল বিয়ানীবাজার সমিতিও জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের পথে হাঁটছে। সহসা উদ্যোগ না নিলে যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে বিয়ানীবাজার সমিতি।
জানা গেছে, বিয়ানীবাজার সমিতির নির্বাচন অত্যাসন্ন। এ কারণে গত কয়ে মাস ধরে চলছিল সদস্য নিবন্ধন কার্যক্রম। উৎসবমুখর পরিবেশে গত ৩০ জুলাই শেষ হয় এই কার্যক্রম। সমিতির আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সদস্য নিবন্ধন কার্যক্রমের শেষ দিনের কাজ সম্পন্ন হলে বর্তমান কার্যকরী পরিষদের পক্ষ থেকে সেখানে উপস্থিত বিয়ানবাজারবাসীর সামনে নিবন্ধন কার্যক্রমের সবকিছু তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক মাহবুব। ঐদিন সেখানে যে হিসাবটি দেয়া হয় এর ঠিক ৫ দিন পরে নতুন আরেকটি হিসাব জনসম্মুখে আনায় কমিউনিটিজুড়ে সমালোচনা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। মূলতঃ এখান থেকেই শুরু সঙ্কটের।
জানা গেছে, সমিতির আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সদস্য নিবন্ধনের শেষ তারিখ ছিল গত ৩০ জুলাই রোববার। ওইদিন নিউইয়র্কের ওজন পার্কস্থ সমিতির নিজস্ব ভবনে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত সদস্য নিবন্ধনের শেষ দিনের এই কার্যক্রম চলে। সদস্য নিবন্ধন কার্যক্রম পরিণত হয় বিয়ানীবাজারবাসীর মিলনমেলায়। নির্ধারিত সময়ের আগেই সমিতির ভবন ও আশপাশের এলাকা বিয়ানীবাজারবাসীর পদাচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে সদস্যরা সদস্য ফরম পূরণের পাশাপাশি আড্ডায় মেতে ওঠেন। সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিয়ানীবাজারবাসীরা সদস্য নিবন্ধন কার্যক্রমে অংশ নেন। সদস্যরা আগামী অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্ধারিত সদস্য ফি জমা দিয়ে সদস্য নিবন্ধিত হন। সংগঠনের সভাপতি মোঃ আব্দুল মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক মাহবুবের তত্ত্বাবধানে সহ-সভাপতি ফয়জু মিয়া, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান দুখু, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তালহা ও দপ্তর সম্পাদক আব্দুল হামিদসহ কার্যকরী পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতায় সম্পন্ন হওয়া সমিতির এই সদস্য নিবন্ধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন সংগঠনের উপদেষ্টা ও সাবেক কর্মকর্তাবৃন্দ।
সদস্য নিবন্ধন কার্যক্রম শেষে সমিতির বর্তমান পরিষদ নিবন্ধিত সাধারণ সদস্য, সিনিয়র সদস্য ও আজীবন সদস্যের পৃথক ও সর্বমোট সংখ্যা এবং একইসাথে নিবন্ধন প্রক্রিয়া খাতে সমিতির আয়ের পরিমাণ উপস্থিত বিয়ানীবাজারবাসীর সামনে ঘোষণা করেন। সেই ঘোষণায় জানানো হয়, বিয়ানীবাজার সমিতিতে এ বছর নতুন সাধারণ সদস্য হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন ৫ হাজার ৯০২ জন। এছাড়া সিনিয়র সদস্য ৬৯১, নতুন আজীবন সদস্য ৩৫ জন সহ মোট ৬ হাজার ৬২৮জন সদস্য নিবন্ধন করেছেন। পূর্বের ৮৫৫ জন আজীবন সদস্যসহ মোট সদস্য সংখ্যা ৭ হাজার ৪৮৩ জন। কার্যক্রম শেষে ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে যারা নিবন্ধিত হয়েছেন তারা এবং সংগঠনের আজীবন সদস্য কেবলমাত্র তারাই সমিতির আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
একইসাথে এদিন সমিতির সদস্য নিবন্ধন কার্যক্রম বাবদ আমেরিকান মুদ্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯০৫ ডলার আর বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ২ কোটি টাকা আয় হয়েছে বলেও ঘোষণা করা হয়। শুধু তাই নয়, সমিতির এবারের এই আয়কে রেকর্ড পরিমাণ বলে উল্লেখ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রস্থ বিয়ানীবাজার সমিতির আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাস্তবায়িত নতুন সদস্য নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর উপস্থিত বিয়ানীবাজারবাসীর সামনে নিবন্ধিত বিভিন্ন ধাপের সদস্য সংখ্যা এবং সদস্য নিবন্ধন ফি বাবদ আয়ের হিসাব প্রকাশের ঠিক ৫ দিন পরে এ সংক্রান্ত একটি সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসায় বর্তমান পরিষদকে নিয়ে সমালোচনা তীব্র হয়ে উঠেছে। সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে আগের ঘোষণার চেয়েও সিনিয়র সদস্য হিসেবে ২০ জন এবং সাধারণ সদস্য হিসেবে ১৭৬ জন সদস্যকে বাড়তি দেখানো হয়েছে।
‘আদায়কৃত বাড়তি টাকার উৎস খুঁজতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে’ উল্লেখ করে প্রকাশ্যে আসা সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে বর্তমান পরিষদের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, গত ৩০ জুলাই ভোট নিবন্ধনের শেষ তারিখে নিবন্ধনে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়, ওই সময়ে ভুলবশত ৮টি বই গণনায় না আসায় উপস্থাপিত তথ্যের সংশোধনী আনা হয়েছে। এতে সিনিয়র সদস্য হিসেবে ২০ জন এবং সাধারণ সদস্য হিসেবে ১৭৬ জন সদস্য যুক্ত হয়েছেন। সে হিসেবে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এ বছর নতুন সাধারণ সদস্য হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন ৫ হাজার ৯৯৮ জন। এছাড়া সিনিয়র সদস্য ৭১১, নতুন আজীবন সদস্য ৩৫ জন সহ মোট ৬ হাজার ৬২৮জন সদস্য নিবন্ধন করেছেন। পূর্বের ৮৫৫ জন আজীবন সদস্যসহ মোট সদস্য সংখ্যা ৭ হাজার ৬৭৯ জন। যা পূর্বে ঘোষিত সদস্য সংখ্যা থেকে ১৯৬ জন বেশি।
এদিকে, বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি- ইউএসএ ইনক এর নতুন সদস্য নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর নতুন করে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ্যে আসায় সমিতির সাথে সংশ্লিষ্ট কমিউনিটির বিয়ানীবাজারবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে সচেতন বিয়ানীবাজারবাসীর পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয় বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের কাছে এতে কোন সুরাহা হয় না। ১৩ জুন রোববার নিউইয়র্কের ওজন পার্কে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন সমিতির সাবেক কর্মকর্তা ছাড়াও সাধারণ বিয়ানীবাজারবাসী। তারা সংগঠনের দায়িত্বশীলদের প্রতি ভোটার তালিকায় এই বাড়তি ভোট অন্তর্ভুক্তি না করার অনুরোধ জানান। একই সাথে সংকট উত্তরণে সমিতির সাবেক সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ সচেতন বিয়ানীবাজারবাসীর সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান।
এদিকে এসব নিয়ে চলছে উত্তেজনা। প্রতিবাদ সমাবেশও হয়েছে। এসব সমাবেশ থেকে দাবি উঠেছে সমস্যা সমাধানের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমিতির সদস্যরা বলছেন, ভোটার তালিকা নিয়ে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান না হলে বিয়ানীবাজার সমিতি ভেঙে যেতে পারে।