Thikana News
২৪ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর

বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ল’ ফার্মের মাধ্যমে ফেরত আনা হবে

বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ল’ ফার্মের মাধ্যমে ফেরত আনা হবে নিউইয়র্ক : ঠিকানার স্টুডিওতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের বিশেষ সাক্ষাতকার নিচ্ছেন খালেদ মুহিউদ্দিন। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বিদেশে যারা বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ল’ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করেছেন, সেসব অর্থ ফেরত আনা হবে। এ জন্য বিদেশে ল’ ফার্ম নিয়োগ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে পাচারকৃত অর্থ ফেরত নিতে ইতিমধ্যে আমরা ল’ ফার্ম নিয়োগ করার জন্য কাজ করছি। ল’ ফার্মগুলোকে আমরা তালিকা দেব। ওই তালিকা অনুযায়ী তারা অর্থ ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করবে। এই অর্থ ফেরত নেওয়ার জন্য আমরা বাজেট নির্ধারণ করেছি, তা হলো আমরা বাংলাদেশ থেকে অর্থ দেব না। আমরা যে দেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ ফেরত নেব, ওই অর্থের ২০ শতাংশ ল’ ফার্মকে দেব। এই অর্থ বাংলাদেশের টাকা, এই টাকা পাচারকারীরা দেশ থেকে পাচার করে এনেছে, সেটাই প্রমাণ করে দেব। ১৯ এপ্রিল ঠিকানাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এদিন তিনি নিউইয়র্কের বারী টাওয়ারে ঠিকানার প্রিন্ট ও ডিজিটাল মিডিয়ার নতুন অফিস পরিদর্শন করেন। একই সঙ্গে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অতিথি ছিলেন। ওই দিন দুপুর পৌনে ১২টায় তিনি ঠিকানা অফিসে আসেন এবং ঠিকানা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেন। এর বাইরেও তিনি ঠিকানা পত্রিকার জন্য এই সাক্ষাৎকার দেন। ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের মূল বিষয়গুলো ঠিকানার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে আপনারা উদ্যোগ নিয়েছেন, যারা অর্থ পাচার করেছেন সেই অর্থ ব্যাংকে থাকলে তা হয়তো ফেরত নিতে পারেন কিন্তু যেগুলো ব্যবসায় ও স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে বাড়ি, গাড়িসহ বিভিন্ন সম্পদ কিনতে ব্যবহৃত হয়েছে, সেসব অর্থ কীভাবে ফেরত নেবেন?
এ ব্যাপারে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, স্থাবর ও অস্থাবর দুই ধরনের সম্পত্তির অর্থই ফেরত নেওয়া হবে। তবে আগে আমরা অর্থ ফেরত নেব। এটাতে সফল হলে বাকিগুলোও হবে। ইতোমধ্যে দেশে থাকা ব্যাংক হিসাব ও সম্পত্তি চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন বিদেশের গুলোর কাজ চলছে। বিদেশে যার যত ধরণের সম্পদ আছে আমরা চেষ্টা করবো সবগুলো বের করতে ও সেগুলো তালিকা করে ল’ ফার্ম দেয়া হবে। 
বাংলাদেশের কত লোক বিদেশে অর্থ পাচার করেছে বলে আপনারা জানতে পেরেছেন এবং কাদের অর্থ ফেরত নেওয়ার জন্য কাজ করছেন?
তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ৩০০ জনের অর্থ ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে কাজ করছি। এই অর্থ ফেরত নিতে পারলে আরাও যারা অর্থ পাচার করেছেন, সেগুলো চিহ্নিত করে এরপর ফেরত নেওয়া হবে। আমরা যে ৩০০ জন নিয়ে কাজ করছি, তারা প্রথম সারির। আস্তে আস্তে সবগুলোই দেখা হবে।
যারা বাংলাদেশি ছিলেন, এখন বিদেশি নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা, তারা বিদেশে সম্পত্তি করেছেন, অর্থ নিয়েছেনÑতাদের বিষয়ে কী করবেন? কারণ যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়েছে, ওই সব দেশের সরকার তো তার দেশের নাগরিক ও বাসিন্দাদের অর্থ ফেরত দিতে সহায়তা করবে না।
এ বিষয়ে গভর্নর বলেন, আসলে এখানে নাগরিকত্ব কোন দেশের, সেটি ম্যাটার করবে না। কারণ পাচারকারী তো বাংলাদেশ থেকেই অর্থ এনেছেন। কোন মাধ্যম ব্যবহার করে এনেছেন, আমরা তা নিয়ে কাজ করব। ল’ ফার্মগুলোও সেভাবেই কাজ করবে। তারা প্রমাণ করবে, ওই অর্থ কীভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরে এরপর যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে। এরপর তারা কীভাবে ব্যাংকে রেখেছেন ও সম্পত্তি কিনেছেন। আমরা অনেক মানুষের সম্পত্তি ও ব্যাংকের তথ্য যোগাড় করেছি। যখন যেটি পাওয়া যাবে তা সম্পৃক্ত করা হবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া।  
অনেকেই বলেন, বাংলাদেশে ৮ থেকে ১০টি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, আপনার সেগুলোকে সহায়তা দিয়ে চালু রেখেছেন। অনেকের মধ্যে ব্যাংক নিয়ে উদ্বেগও আছে- সেটি আপনারা কীভাবে দেখছেন?
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেখুন, বাংলাদেশে যাতে ব্যাংক বন্ধ না হয়, সে জন্য আমরা চেষ্টা করছি। এ কারণে যেসব ব্যাংক লোকসানের মুখে এবং খারাপ অবস্থায় আছে, ওইসব ব্যাংককে অর্থ দিয়ে তার কর্মকাণ্ড পরিচালনা অব্যাহত রাখার জন্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জনগণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেই বিষয়টি আমরা মাথায় রেখেছি। কোন কোন ব্যাংক অর্থ সংকটে আছে এবং তাদের লাভ-লোকসান কেমন, সেগুলো আমরা দেখেছি। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা নয়, চালু রেখে লাভজনক করার বিষয়টি দেখছি। আমরা ওই সব ব্যাংকের ব্যাপারে বড় একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি। এটুকু বলতে পারি জনগনের ক্ষতি হবে না। 
শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ৫ আগস্টের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আপনারা আগের সব টাকার নোট বাতিল করে দিচ্ছেন এবং টাকার ওপর থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবিও বাদ দিচ্ছেন? এ বিষয়ের অগ্রগতির কথা বলবেন কি?
গভর্নর বলেন, বাংলাদেশে এখন যত টাকা আছে, সব টাকার নোট বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি নতুন নোট আসবে। টাকার ওপর কোনো মানুষের প্রতিকৃতি থাকবে না। এ কারণে সব নোট তুলে নেওয়া হবে। তবে এই নোট একবারেই সব তুলে নেওয়া হবে, বিষয়টি এমন নয়। আমরা বাজার থেকে পর্যায়ক্রমে একক ব্যক্তি ছবি-সংবলিত পুরোনো যেসব টাকা আছে, সব তুলে নেব। আগামী দিনে টাকার ওপর ছবি থাকছে না। তবে একটি ছবি থাকবে, সেটি হলো জুলাই বিপ্লবের ছবি।
এমনও শোনা গিয়েছিল, এক হাজার টাকার নোট আর বাজারে থাকবে না, এটি বাতিল করে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে গভর্নর বলেন, না, এক হাজার টাকার নোট বন্ধ করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এক হাজার টাকার নোট বাজারে থাকবে। সব নোটই থাকবে।
বাংলাদেশে অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছেন, অনেকেই সেই পরিমাণ ঋণ পাওয়ার যোগ্য নন। আবার ওই টাকা তারা কেবল বিনিয়োগই করেননি, বিদেশেও নিয়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে গভর্নর বলেন, আমরা ওই সব ব্যক্তিদের চিহ্নিত করছি, কারা কারা ব্যাংকের মালিক ছিলেন। ব্যাংকের মালিক হয়ে নিজেরা এবং তাদের লোকের মাধ্যমেই অর্থ লোন নিয়েছেন। যেমন এস আলম গ্রুপ ব্যাংকে যে পরিমাণ টাকা জমা রেখেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ নিয়ে গেছে। এ ছাড়া ব্যাংক মালিক হয়ে অনেকে যেমন টাকা নিয়েছেন, তেমনি অনেকেই বিভিন্নভাবে ব্যাংক থেকে অর্থ লোন নিয়েছেন। সেটি নিয়ে তারা পাচার করেছেন। ওই সব ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেরই ব্যাংক হিসাব বন্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু রেখেই সেগুলো থেকে অর্থ আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করছি না। প্রতিষ্ঠান চালু থাকলে কর্মসংস্থান ঠিক থাকবে, পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলো রানিং থাকলে আয় হবে। বন্ধ করে দিলে তো কিছুই পাওয়া যাবে না। তবে এটুকু বলা যায়, যারা ব্যাংক লোন নিয়ে অর্থ পাচার করেছেন, তারা তদন্তের আওতায় আসবেন এবং অর্থ ফেরত দিতে হবে। আর ওই সব বক্তিদের প্রতিষ্ঠান দেশী কিংবা বিদেশের যেখান থেকে বেশি অফার পাওয়া যাবে। সেখানে বিক্রি করে অর্থ আদায় করা হবে। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কয়েক বছর আগে বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরি হয়েছিল। এই চুরির সঙ্গে কারা কারা জড়িত, এটি আপনারা চিহ্নিত করতে পেরেছেন এবং ব্যাংকের যারা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি?
তিনি বলেন, এই চুরির ঘটনা আপনারা জানেন। ঘটনাটি নিয়ে এখন নিউইয়র্কের একটি আদালতে মামলা চলমান আছে। এই মামলার অগ্রগতি হলেই আপনারা সব জানতে পারবেন কারা দোষী। কে কী অপরাধ করেছেন, তাও বেরিয়ে আসবে। এ কারণে মামলা চলমান অবস্থায় আমি বিষয়টি নিয়ে তেমন কিছু বলতে চাইছি না। আদালতে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন হয়েছে। তবে ২/৩ মাসের মধ্যে মামলার অগ্রগতি আশা করা যাচ্ছে। মামলা চলমান থাকার কারণে এই বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাইছি না। 
আপনার কি মনে হয় সুপরিকল্পিতভাবেই রিজার্ভের অর্থ সরানো হয়েছিল? বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার, সিকিউরিটি, পিন কোড, পাকোড অন্য সবকিছুই এত সহজ যে চাইলেই রিজার্ভ থেকে অর্থ পাচার করা সম্ভব?
তিনি বলেন, সেই সময়ে নেটওয়ার্ক, সিকিউরিটি হয়তো নাজুক ছিল। আর যদি না-ই হবে, তাহলে কীভাবে চুরি হলো। ল্যাকিংস তো অবশ্যই ছিল। তবে এখানে বলা প্রয়োজন, আমরা এখনো অনেক ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে করে আগামী দিনে রিজার্ভ থেকে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কেউ কোনো অর্থ চুরি করতে না পারে। দিন যত যাবে, নিরাপত্তা আরও বেশি জোরদার করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক মানুষেরই ব্যাংক হিসাব বন্ধ করেছে। এর মধ্যে অনেক ভিভিআইপি, ভিআইপিও রয়েছেন। তারা সবাই কি ব্যাংকের অর্থ চুরি করেছেন, নাকি দুর্নীতি করেছেন? 
গভর্নর বলেন, ব্যাংকের অর্থ, দেশের অর্থ নিয়েছেন বলেই তো এগুলো অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
এর আগে ওয়ান ইলেভেনের সরকার ও বিগত সরকারের সময়েও বলা হয়েছিল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। কেকোর ২০ কোটি টাকা ফেরতও নেওয়া হয়েছিল বলে বলা হয়েছিল। তাদের সব ব্যাংক হিসাব বন্ধ রাখা হলো। এখন ১৭ বছর পর দেখা যাচ্ছে, তারেক রহমান বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন বলে যে কথা বলা হয়েছিল, তা প্রমাণ হয়নি। তিনি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। তাহলে তারেক রহমানকে যে হেয়প্রতিপন্ন করা হলো, তার সম্মানহানি হলো, এটা কেন? এবারও কি প্রথম সাঁড়ির যাদের তালিকা করা হয়েছে বা হচ্ছে এমন হবে, যারা টাকা পাচার করেছেন এখন বলা হচ্ছে পরে দেখা যাবে তারা টাকা পাচার করেননি বা টাকা পাচার করলেও প্রমাণ করা সম্ভব হবে না?
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগের কথা বলতে পারছি না। তবে আগের মতো হবে না। আগের মতো আমরা কাজও করছি না। আমরা এমনভাবে করছি, যাতে কোনো মানুষ বিদেশে অর্থ পাচার করে থাকলে সেটা কোন দেশে পাচার করেছেন, তা আমরা বের করেই প্রমাণ করব। যেমন অনেকেই বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরিয়ে এরপর অর্থ সিঙ্গাপুরে নিয়েছেন, সেখান থেকে পরে তিনি অন্য দেশে নিয়েছেন। আমরা এবার প্রমাণ ছাড়া কথা বলছি না। এবার যতজনের তালিকা করা হয়েছে সবার অর্থ সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেই তা বলা হচ্ছে। 
শেখ রেহানা এবং টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে আপনারা কি বলতে চান তারাও টাকা পাচার করেছেন? তাদের বিরুদ্ধে তো অনেক প্রচারণা চলছে? তারা ব্রিটিশ নাগরিক, বিদেশে কাজ করেন, বিদেশে তাদের সম্পত্তি থাকতেই পারে, আপনি কি তাদের অর্থ ফেরত নিতে পারবেন?
তিনি বলেন, তারা বিদেশি নাগরিক হলেও সমস্যা হবে না। কারণ এখানে বিদেশি নাগরিক কে, সেটা দেখা হবে না। দেখা হবে তারা বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করেছেন কি না বা দেশ থেকে অর্থ নিয়ে গিয়েছেন কি না। নিয়ে থাকলে ফেরত নেওয়া হবে, না থাকলে হবে না। গভর্নর বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক অর্থ পাচার করেছেন কি না এটা তো বলছি না। বরং এটা আমরা বলছি যে তিনি দেশে সম্পত্তি কিনেছেন। তার নামে সম্পদ আছে। এ জন্য তার অর্থ লেনদেন হয়েছে। কত অর্থ লেনদেন করেছেন, সেটা দেখা হবে। কীভাবে করেছেন, সেটাও দেখা হবে। আসলে এখানে দুটি বিষয়- তা হলো কেউ যদি বাংলাদেশে বসে অর্থ লেনদেন করেন, তাহলে সেই অর্থ কোথা থেকে এল, কে লেনদেন করল, কে কাকে দিলেন, কোথায় নিয়ে গেলেন, সেটা দেখা হবে। আসলে অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় হয়- একটি হলো পাচার আরেকটি হলো অবৈধ লেনদেন। আমরা কেবল আর্থিক বিষয়টি দেখছি। আমরা দুর্নীতির বিষয় দেখছি না। এটি দেখছে অন্য সংস্থা। আমরা যে যে অর্থ নিয়েছেন, সেসব অর্থ ফেরত নেব।
আপনি তো যুক্তরাষ্ট্রেও ছিলেন, এখন বাংলাদেশে আছেন, কাজ করতে কেমন লাগছে?
গভর্নর বলেন, বাংলাদেশে আমি অনেক বছর ধরেই আছি। এখানে ছিলাম। সেখানে কাজ করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে এবার গভর্নর হওয়ার পর কাজের অনেক চাপ। চাইলেই এখন আর ছুটি নেওয়া যায় না।
এই সরকার তো বলছে, আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে চায়। সেই হিসাবে এই সরকার আরও এক বছর দুই মাসের মতো আছে। এই সময়ের মধ্যে কি আপনার কোনো লক্ষ্য আছে, যেটি আপনি পূরণ করতে চান?
গভর্নর বলেন, এই সময়ের মধ্যে অনেকগুলো পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে যেসব ব্যাংক থেকে অর্থ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো ফেরত নিতে চাই। পাচারকৃত অর্থ ফেরত নিতে চাই। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী ও দৃঢ় অবস্থানে নিতে চাই। লোকসানের মুখে পড়া ও নাজুক অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলোকে সচল করতে চাই। এছাড়া আরো অনেকগুলো পরিকল্পনা করেই আমরা এগুচ্ছি। 
ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে কি না- এ বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে এটা ইনফ্লাশনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইনফ্লাশন বাড়লে এটি ওঠানামা করে। আগে এক ডলার ৮২ টাকা ছিল, এখন ১২২ টাকা হয়েছে। কেবল যে আমাদের দেশেই ডলারের দাম বাড়ছে তা নয়, ভারতেও বাড়ছে। বিভিন্ন দেশেই বেড়েছে। আগে ডলারের দাম যতটা উঠা নামা করতো এখন তা হচ্ছে না। স্থিতিশীল রয়েছে। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য। এখন ২৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ আছে। এটি আরও বাড়বে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করেছি। এছাড়াও আমরা কোন লোনের কিস্তি বাকি রাখছি না। আইএমএফ এর কাছ থেকে যে অর্থ পাওয়ার কথা ছিল। এখনও তা পাইনি। 
নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেসব মানুষ বিদেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন, তাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তার জাতীয় পরিচয় বাতিল করে দেওয়া হবে? এ বিষয়ে আপনার মত কী?
গভর্নর বলেন, এমন নিয়ম হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমি মনে করি না এটা হবে।
বাংলাদেশে সব ধরনের ব্যাংক হিসাব পরিচালনার জন্য এনআইডি কার্ডের দরকার হয়। আর প্রবাসীরা তো সবাই দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করেননি, সে ক্ষেত্রে এনআইডি কার্ড বাতিল করলে তো বড় ধরনের সমস্যা হবে?
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান বলেন, যেসব বাংলাদেশি বিদেশের নাগরিক হয়েছেন, তাদের এনআইডি কার্ড বাতিল হবে বা হয়েছে এমনটি এখনো হয়নি। যদি করে তাহলে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। কিন্তু আমার কাছে এ ধরনের কোনো কথা আসেনি। সে ক্ষেত্রে যদি করতেই হয়, তাহলে পাসপোর্ট আইডি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে অথবা অন্য বিকল্প বের করতে হবে।
সাক্ষাৎকার শেষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ঠিকানা পরিবারের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন। মধ্যাহ্নভোজের পর বিদায়বেলায় তিনি ঠিকানা গ্রুপের সাফল্য কামনা করেন এবং ঠিকানার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি সাবেক এমপি এম এম শাহীনসহ ঠিকানা পরিবারের সবাইকে ধন্যবাদ জানান। ঠিকানা অফিস পরিদর্শনের সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমানসহ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
 

কমেন্ট বক্স