Thikana News
২৪ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

কোন ম্যাজিকে নো টেনশনে আ.লীগের বিত্তবানরা?

কোন ম্যাজিকে নো টেনশনে আ.লীগের বিত্তবানরা?
টেনশন কেটে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের পলাতক ধনকুবের নেতাদের। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো যে সংকটে পড়ে, তা ঘুছে যাচ্ছে রাজনৈতিক বোঝাপড়ায়। লাটে উঠেছে আওয়াজ রটলেও ভেতরে ভেতরে গোছগাছ করে ব্যবসা দেখে রাখার গ্যারান্টার পেতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা। পার্টনার বা অভিভাবক হয়ে তাদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার যোগ্য লোক গজিয়ে গেছে। মাস কয়েক আগেও তা ধারণা ছিল কারো? 
ধারণা না থাকলেও এটাই বাংলাদেশ, এটাই বাস্তবতা। এ ধারা কেন্দ্র থেকে মফস্বলেও। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের তীব্রতা ও সরকার পতনের আভাস পেয়ে অনেকে আগেই দেশ ছাড়েন। কেউ কেউ দেশ ছাড়েন ৫ আগস্টের পর। মধ্যম মানের বা মফস্বলের যারা এখনো দেশেই কোথাও আত্মগোপনে, তারাও ব্যবসা রক্ষার তাবিজ-কবচের দেখা পেয়ে গেছেন। ক্ষমতার ১৫-১৬ বছরে নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ গড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতিষ্ঠানে কোথাও কোথাও হামলা হয়েছে। এতে অনেকের ধারণা জন্মে তারা শেষ। তাদের প্রতিষ্ঠানও শেষ। বাস্তবে কেন ফলেনি ওই ধারণা? 
ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশে শামীম, নাসিম, সেলিম ওসমানদের ব্যবসা কারা দেখেশুনে রাখছেন- স্থানীয় কেউ কেউও জানে। ওসমানীয় সাম্রাজ্যের গার্মেন্টস, শিপিং, পরিবহন, আবাসন ইত্যাদি ব্যবসা কিছুদিন থেকে হালে পানি পেয়েছে। বিদেশে বসেই নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যের রক্ষাকর্তা খুঁজে নিতে পেরেছেন ওসমানীয়রা। বিএনপির এক নেতা প্রতিদান দিচ্ছেন, যাকে আওয়ামী লীগ আমলে দেখেশুনে রেখেছিলেন শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জের আরেক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম দস্তগীর গাজীই বা বাদ থাকবেন কেনো? 
শামীম ওসমানের  মতো না হলেও শেখ হাসিনা সরকারের এই পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জেলে থেকে এরইমধ্যে যদ্দূর সম্ভব ভরসা হাছিল করেছেন। তার কারখানাগুলো শিগগিরই চালু হবে। ভরসা পেয়েছেন কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক এমপি শফিউদ্দিন শামীম, রাজশাহীর শাহরিয়ার আলম, এমন কি চট্টগ্রামের হাছান মাহমুদও। তাদের এক এক জনের কতো ব্যবসা, ধারণা আছে ক’জনের?  
গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগের ব্যবসা ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। সরকারি প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিয়ে সেগুলো অন্য ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দিতেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০০৯ সালের পর থেকে গত দেড় দশকের বেশি সময়জুড়ে রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যও আবর্তিত হয়েছে ক্ষমতাসীন দলকে ঘিরে। ব্যবসার ক্ষেত্রে একচেটিয়া কর্তৃত্ব ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ে তোলেন তারা। নেতাকর্মীরা ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার পাশাপাশি পেশাদার ব্যবসায়ীদেরও নিজেদের দলে টেনে নেন শেখ হাসিনা। জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনগুলোতেও সম্পদশালী ব্যবসায়ীদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল বিরোধীদের বর্জনের মুখে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ২৬৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৭০ জনই ছিলেন ব্যবসায়ী, যা দলটির মোট প্রার্থীর ৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। তা কি এমনি এমনি হয়েছে?
আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে থাকা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। অন্যরা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী কুমিল্লার আ হ ম মুস্তফা কামাল, চট্টগ্রামের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, কুষ্টিয়ার মাহবুব-উল আলম হানিফ, চুয়াডাঙ্গার আওয়ামী লীগ নেতা দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, কেরাণীগঞ্জের নসরুল হামিদ বিপু, গুলশানের খসরু চৌধুরী, এসএম মান্নান কচি, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, ফেনীর আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম, নিজাম হাজারী ছাড়াও অনেকের বিদ্যুৎ, জ্বালানি, জনশক্তি, আবাসন, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন খাতের  ব্যবসার দেখভালের লোভ সংবরণের মুমিন বান্দা দেশে ক’জন আছেন?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা। 

কমেন্ট বক্স