Thikana News
২৪ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’

শুভ হোক বাংলা নববর্ষ ১৪৩২

শুভ হোক বাংলা নববর্ষ ১৪৩২
কবিগুরুর কথায় শুরু করি-
এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো
তাপস নিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক...
ষড়ঋতুর লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। ঋতু পরিবর্তনে ঝড়-বৃষ্টির দামামা বাজিয়ে, ধুলাবালির মেঘ উড়িয়ে, বজ্রের গর্জনে কাঁপিয়ে প্রতি বছরই বৈশাখ আসে এক নবজাগরণের প্রতীক হয়ে। আজ সেই পহেলা বৈশাখ। শুভ বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো আরও একটি নতুন বছর, বাংলা বর্ষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। গত বছরের নানা ঘটনা ফিরিয়ে নতুন সম্ভাবনায় এবারের নববর্ষের সূচনা হতে যাচ্ছে এমন প্রত্যাশা সর্বমহলে। যে কারণে নববর্ষ উদযাপন ক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন। পরিবর্তন এসেছে এর উদযাপন নামেও। আনন্দ শোভাযাত্রা থেকে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ তা বদলে নববর্ষ উদযাপন হবে এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে। এতে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে বলে আয়োজকদের পক্ষে জানানো হয়েছে। শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান। কবির ভাষায় বলতে গেলে- আসছে উৎসব, আসছে রঙ, আসছে বৈশাখ। বৈশাখে কেবল প্রকৃতিই নয়, জেগে ওঠে বাঙালির হৃদয়। তাইতো রোদের দাবদাহ পিছু হটায় না বাংলার মা মাটির মানুষ কৃষককেও। যাদের জন্য শুরু হয়েছিল নববর্ষের ধারা, তাদেরও বুকে জাগায় আশা-ভরসার আলো। বাঙালির জীবনচক্রে প্রকৃতির মেজাজি সন্তান বৈশাখ যেন অনিবার্য। তাই এবারের পহেলা বৈশাখও আসছে ভিন্ন রূপে। এ বৈশাখ শুধু ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে নতুন বছর শুরু করার নয়, এ একটি নতুন সময়ের সূচনা। স্বৈরশাসকের পতনের পর তারই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নতুন বছরে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে একটি আলোকিত ভবিষ্যতের। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিজয়ের আবহেই সেই পহেলা বৈশাখের শুভযাত্রা শুরু আজ থেকে। চারদিকে উৎসবের রঙ, মুখে মুখে শুভেচ্ছা, কিন্তু এর মাঝেও রয়েছে এক আশার বার্তা। সে বার্তা বদলে যাওয়ার, নতুন দেশ গড়ে তোলার। সোনালি দিনের এই প্রত্যশায় সকলকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা ও শুভকামানা।
আমরা প্রত্যাশা রাখি, জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেসে যাবে, ‘মুছে যাবে গ্লানি’। কারণ- এবারের পহেলা বৈশাখ আমাদের সব সঙ্কীর্ণতা, কূপমণ্ডুকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবনব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমাদের মনের ভেতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যমে বাঁচার অনুপ্রেরণা যোগাবে। আমরা সেই বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, আমাদের পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণের মধ্য দিয়ে স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে ফিরিয়ে এনে নতুন প্রাণে উজ্জীবিত হবো।
অন্যদিকে, পহেলা বৈশাখ বাঙালির একটি সর্বজনীন লোকউৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেয়া হয় বাংলা নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক মনে করা হয় নববর্ষকে। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হয় বাংলা নববর্ষ। আজ সেই বর্ণিল উৎসবে মেতে উঠবে সারা দেশ। এ উপলক্ষে রাজধানী এবং সারা দেশে জুড়ে থাকছে বর্ষবরণের নানা আয়োজন। ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩২’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। 
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল প্রধান উপদেষ্টা তার বার্তায় সমগ্র জাতিকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, শুভ নববর্ষ ১৪৩২। বাংলা নববর্ষের এ উপলক্ষে, আমি দেশবাসীকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। ‘পহেলা বৈশাখ’ ঐতিহ্যবাহী উদযাপন বাঙালি সংস্কৃতিতে এক অনন্য এবং লালিত স্থান অধিকার। এটি বাঙালিদের ঐক্য এবং মহা পুনর্মিলনের দিন। বংশগতভাবে, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি নববর্ষকে নবচেতনা এবং নতুন অঙ্গীকারের সঙ্গে গ্রহণ করে আসছে। এই দিনে মানুষ বিগত বছরের দুঃখ, জরা এবং হতাশাকে দূরে সরিয়ে রেখে সম্প্রীতি, বন্ধুত্ব, আনন্দ এবং ভালোবাসার চেতনায় একত্রিত হয়। নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর সময়, আসুন আমরা অতীতের দুঃখ, কষ্ট এবং দুর্ভাগ্যকে পেছনে ফেলে নতুন আশা ও উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে যাই। ২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথ খুলে দিয়েছে। এটি আমাদেরকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, সুখী, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ এবং প্রাণবন্ত একটি বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়। এই নববর্ষ এমন একটি জাতি গঠনের জন্য আমাদের যৌথ অঙ্গীকারের দ্বারা চিহ্নিত হোক। প্রধান উপদেষ্টা নববর্ষ উপলক্ষে গৃহীত সব উদ্যোগের সাফল্য কামনা করেন। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। ঠিকানা নিউজের পক্ষ থেকেও আমাদের সব পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা এবং শুভানুধ্যায়ীদের জানাই নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা। 
উপসংহার : বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সাম্যভিত্তিক সমাজ, যেখানে থাকবে না কোনো বিভাজন, গ্লানি কিংবা ক্ষোভ। আমরা চাই সহনশীল, মানবিক, শান্তিপূর্ণ একটি বাংলাদেশ, যেখানে বাঙালিয়ানার গৌরব বহমান থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ আমাদের জীবনে নিয়ে আসুক সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও মানবিকতা। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যা হয়ে উঠুক আমাদেশ শক্তির পাথেয়। শুভ নববর্ষ।
লেখক: সাংবাদিক, ঠিকানা নিউজ, ঢাকা।

কমেন্ট বক্স