Thikana News
২৪ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
কোনো চুুক্তি হয়নি, বাতিল হলো যৌথ সংবাদ সম্মেলন

হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প–জেলেনস্কি বৈঠকে কথার উত্তেজনা

হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প–জেলেনস্কি বৈঠকে কথার উত্তেজনা মুখোমুখি বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত।
এবার মুখোমুখি বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৈঠকে তাঁদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার চুক্তি সইয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
রাশিয়ার সঙ্গে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে কয়েক শ কোটি ডলারের অস্ত্র ও অর্থসহায়তা পেয়েছে ইউক্রেন; কিন্তু গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। জেলেনস্কির সমালোচনা করছেন ট্রাম্প। যুদ্ধের জন্য জেলেনস্কিকে দোষারোপ করে আসছিলেন তিনি। তাই সবার চোখ ছিল এই বৈঠকে।
সাংবাদিকদের সামনে এই বৈঠকে জেলেনস্কিকে একের পর আক্রমণ করে বক্তব্য দেন ট্রাম্প। জেলেনস্কি ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন’ বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আপনার দেশের মানুষ খুবই সাহসী; কিন্ত আপনাকে হয় (রাশিয়ার সঙ্গে) একটি চুক্তি করতে হবে নইলে আমরা আর আপনাদের সঙ্গে নেই। আর আমরা যদি না থাকি তাহলে আপনাকে একা লড়তে হবে।’
ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে মতপার্থক্য একসময় চিৎকার-চ্যাঁচামেচির পর্যায়ে চলে যায়। ‘জেলেনস্কি যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন’ দাবি করে ট্রাম্প বলেন, ‘মানুষ মারা পড়ছে। যুদ্ধের জন্য সেনার সংখ্যাও কমছে ক্রমশ। আপনার হাতে কার্ড (বিকল্প) নেই। একবার আমরা চুক্তি সই করলে আপনি ভালো অবস্থানে চলে যাবেন। কিন্ত আপনাকে আদৌ কৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে কি এটা ভালো কোনো বিষয় নয়।’
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে চাইলে ইউক্রেনকে ছাড় দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘ছাড় দেওয়া ছাড়া আপনি কোনো চুক্তি করতে পারবেন না। তাই এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় তাঁকে (জেলেনস্কি) কিছু ছাড় দিতে হবে। কিন্তু আশা করি, বড় কোনো ছাড় দিতে হবে না যেমনটা লোকে বলে বেড়াচ্ছে।’
ট্রাম্পের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম উল্লেখ করে বলেন, একজন খুনিকে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত নয়। পুতিনের বিষয়ে ট্রাম্পের নমনীয় অবস্থানের সমালোচনা করেন জেলেনস্কি। একজন খুনির সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা না করার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শুধু ট্রাম্প নয়, জেলেনস্কির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও। ওভাল অফিসে বসে বিতণ্ডায় জড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জেলেনস্কি অসম্মান করেছেন মন্তব্য করে ভ্যান্স বলেন, ‘আপনি একবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না।’ মাথা নেড়ে ভ্যান্সের কথায় সায় দেন ট্রাম্প।এ সময় গলার স্বর উঁচু করে জেলেনস্কি উত্তর দেন, ‘বহুবার বলেছি, আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ।’
হোয়াইট হাউসে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পরও হোয়াইট হাউস জানায়, দুই রাষ্ট্রনেতা কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি সংবাদ সম্মেলনে আসবেন। সেখানে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তিতেও সই করবেন তাঁরা। কিন্ত এর কিছুক্ষণ পর হোয়াইট হাউজ এই সংবাদ সম্মেলন বাতিল করার কথা জানায়। এরপর জেলেনস্কি ও তাঁর সঙ্গে থাকা ইউক্রেনের অন্য কর্মকর্তাদের হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া একে পোস্টে লিখেছেন, জেলেনস্কি ‘যুক্তরাষ্ট্র ও এ দেশের শ্রদ্ধার জায়গা ওভাল অফিসকে (হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) অসম্মান’ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যেদিন তিনি (জেলেনস্কি) শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, আবার (হোয়াইট হাউজ) ফিরে আসতে পারেন।’
হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে জেলেনস্কিকে!
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে 'উত্তপ্ত' বৈঠকের পর পরিকল্পিত যৌথ সংবাদ সম্মেলন না করেই হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেছেন ইউক্রেনের নেতা ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে চুক্তিতে সইও করেননি।
ফক্স নিউজের সাংবাদিক জ্যাকি হেনরিখ এক্স-পোস্টে লিখেছেন, ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বের করে দিয়েছেন - তিনি নিজে থেকে চলে যাননি।
এই সাংবাদিক হোয়াইট হাউসে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনের বরাতে দাবি করেছেন, ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দল 'পুনরায় আলোচনা সেট করার জন্য' অনুরোধ করছে। তবে (সেক্রেটারি অফ স্টেট) রুবিও এবং (জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা) ওয়াল্টজ তাদের জানিয়েছেন, জেলেনস্কিকে (হোয়াইট হাউসের মাঠ) ছেড়ে চলে যেতে হবে।
জেলেনস্কি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যানসের মধ্যে বৈঠকটি দ্রুত একটি প্রকাশ্য 'বৈরী তর্ক-বিতর্কে' পরিণত হয়েছিল। এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান জেলেনস্কিকে ইউক্রেন সংঘাতের অবসানে আলোচনায় 'অকৃতজ্ঞতা এবং অনিচ্ছার' জন্য অভিযুক্ত করেন।
ইউক্রেনের বিরল প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির ধারণাটি প্রাথমিকভাবে জেলেনস্কিই উত্থাপন করেছিলেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই মাসের শুরুতে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। আশা করা হয়েছিল, দুই নেতা শুক্রবার বৈঠকে চুক্তিতে সই করবেন। তবে শুক্রবার হোয়াইট হাউসে 'অগ্নিগর্ভ বাক্যবিনিময়ের' পর দৃশ্যত চুক্তিটি ঝুলে গেল।
বৈঠকটি তিক্ত হয়ে ওঠে যখন ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন যে, তাকে রাশিয়ার সাথে শান্তি আলোচনা করতে হবে। এরপর ইউক্রেনীয় নেতা এর বিরুদ্ধে জোরালো মন্তব্য করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা উচিত।
এ সময় জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি 'যথেষ্ট সম্মান ও কৃতজ্ঞতা' দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে ট্রাম্প মন্তব্য করলে জেডি ভ্যান্সও তর্কে যোগ দেন।

ঠিকানা/শই

 

কমেন্ট বক্স