সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর, চাকরিপ্রত্যাশীদের এই দাবি এখনো যৌক্তিক বলে মনে করেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের আহ্বায়ক আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, কমিটির সুপারিশও এমন ছিল। কিন্তু সরকার তা কাটছাঁট করে ৩০ থেকে দুই বছর বাড়িয়ে বয়স ৩২ করেছে। কমিটির সুপারিশ কেন, আমলে নেওয়া হয়নি, তা জানেন না তিনি। ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন টকশোতে এসব কথা বলেন মুয়ীদ চৌধুরী।
১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার নিউইয়র্ক সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) যা সরাসরি প্রচারিত হয় ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ ইউটিউব চ্যানেলে। সরকারি নিয়োগ, জনপ্রশাসন সংস্কার, প্রশাসনে দলীয়করণ, দুর্নীতি, আইনের শাসন, এমন নানা বিষয়ে অতিথিকে প্রশ্ন করেন ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীন।
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর মেনে নেয়নি, আন্দোলনকারীরা। তারা এখনো মাঠে আছে। এদিকটি তুলে ধরে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সুপারিশে বয়স ৩৫ সবার জন্য প্রযোজ্য ছিল। তবে নারীদের জন্য আরো দুই বছর বাড়িয়ে ৩৭ বছর সুপারিশ করেছিলাম। এর কারণ অনেক মেয়ের পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায়। তারপর সন্তান হয়। এতে পড়া শেষ করতে করতে সময় বেশি লেগে যায়।’
তিনি আরো যোগ করেন, তাদের সুপারিশ কেন কাটছাঁট করা হলো, সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো বক্তব্যও দেওয়া হয়নি। বয়সসীমা ৪০-এর বেশিও আছে কোনো কোনো দেশে। বয়স উন্মুক্ত করে দিলেও কোনো অসুবিধা দেখেন না, বলেন মুয়ীদ চৌধুরী।
এদিকে শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পুরো প্রতিবেদন। যেখানে দুই শতাধিক সুপারিশের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: দেশের পুরনো চারটি বিভাগকে চারটি প্রদেশে রূপান্তর করা। এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, প্রদেশ হলে কেন্দ্রের এখনকার ক্ষমতা থাকবে না। কারণ এতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ হবে। আসলে সেবা নিশ্চিতে মানুষের যতো কাছে সরকারকে নেওয়া যায়, ততো ভালো। এতে স্থানীয় পর্যায়ে মানুষ কাজ শেখার সুযোগ পাবে বলে মনে করেন তিনি।
অবসরে যাওয়া জনপ্রশাসনের ৭৬৪ কর্মকর্তার ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অর্থসংকটে থাকা সরকারের এ সিদ্ধান্তে ‘বিস্মিত’ হওয়ার কথা বললেন আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। তবে তিনি যোগ করেন, আগে যারা বঞ্চনার শিকার হয়েছিলেন, তারা এখন সুবিধা পেতেই পারেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি সম্প্রতি বলেছেন, বিপ্লব যে দেশে হয়, সেদেশে পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখে না। প্রশাসনের দায়িত্বশীল কারো এমন বক্তব্য ‘মব লিঞ্চিং’ উসকে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে কি না, জানতে চাইলে জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব পালন করা বর্ষীয়ান আমলা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, “জানি না কোন প্রেক্ষাপটে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যেহেতু বিগত সরকারের পতন হয়েছে। এই আঙ্গিকে হয়তো বলে থাকতে পারেন। তবে রুল অব ল’র ভায়োলেশন কোনোভাবেই কাম্য নয়। আইনের শাসন বজায় রাখতে পারলেই বুঝানো যাবে আগের সরকারের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যবধান আছে। এই ব্যবধান তৈরির একমাত্র পথই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।”