আইস আতঙ্কে এখন ধর্মপ্রাণ অনেক মুসল্লি মসজিদে যাচ্ছেন না। তারা বাসায়ই নামাজ আদায় করছেন। আগে যেখানে অনেক মুসলমান মসজিদে গিয়ে তিন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন, এখন ১০-২০ শতাংশ মানুষ কম যাচ্ছেন। আগে জুমার নামাজে যে পরিমাণ ভিড় হতো, এখন সেই পরিমাণ ভিড় হচ্ছে না। আগের চেয়ে ১০-২০ শতাংশ মানুষ কম যাচ্ছে। এমন বর্ণনা দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন। তারা বলেছেন, মসজিদে আগে অনেক মানুষ আসত। কিন্তু এখন সে রকম মানুষ আসে না। কারণ আইসের অভিযানে মানুষের মধ্যে এমন ভয় ও ভীতি তৈরি হয়েছে যে, অনেকেই মনে করছেন, তিনি আইসের সামনে পড়তে পারেন। কারণ কেউ জানে না, কবে কখন কোথায় অভিযান পরিচালনা করবে আইস।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক আফতাব উদ্দিন মান্নান বলেন, মসজিদে আগের চেয়ে মুসল্লি কিছুটা কম আসছে। আইসের অভিযানের কারণে মানুষ ভয় পাচ্ছে। তবে আমরা মানুষকে সচেতন করার জন্য ‘নো ইউর রাইটস’ সম্পর্কে একটি অনুষ্ঠান করছি। এটি শনিবার হওয়ার কথা ছিল কিন্তু স্নোর কারণে সেটি করা সম্ভব হয়নি। আমরা আগামী শনিবার ১৫ ফেব্রুয়ারি একই শিরোনামে অনুষ্ঠানটি করছি। সেখানে কয়েকজন অ্যাটর্নি থাকবেন। কেয়ারের ডাইরেক্টর থাকবেন। তারা এ দেশে যারা আছেন, তাদেরকে তার অধিকার সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সচেতন করবেন। তিনি আরও বলেন, আমরা মানুষের মধ্যে অনেক ভয় দেখছি। আশপাশের দোকানপাটের ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ, এটা শুনছি। কারণ ক্রেতা তেমন নেই। আমাদের এখানে বৈধ মানুষই বেশি আসে। ফলে উপস্থিতি কিছুটা কমলেও আশা করা যাচ্ছে স্নো পড়া কমলে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার মুসল্লিরা ফিরে আসবে। আমরা মানুষকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছি। হিলসাইড ইসলামিক সেন্টার ৮ ফেব্রুয়ারি একটি অনুষ্ঠান করেছে।
বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ডা. আল আমীন রাসেল বলেন, আগে একেকটি মসজিদে প্রতি ওয়াক্তে যে পরিমাণ মুসল্লি আসতেন, এখন ঠিক তেমনটা হচ্ছে না। এর পেছনের কারণ হচ্ছে ভয়। মসজিদের ভেতরে রেট না দিলেও মসজিদের আশপাশের রাস্তায় বা মসজিদের বাইরেও অভিযান পরিচালিত হতে পারে। যাদের নথিপত্র ও বৈধ স্ট্যাটাস আছে, তাদের ভয়ের কারণ নেই। কিন্তু অনেকেই এখানে অ্যাসাইলাম প্রার্থনা করেছেন আবার অনেকে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন, তারা আটক হতে পারেন।
এদিকে এখন নতুন একটি অবস্থা শুরু হয়েছে, কেউ কেউ তার নিজের পরিবারের সদস্যকেও ধরিয়ে দিচ্ছেন। সম্প্রতি সিটির একটি দোকান থেকে এক স্টাফকে আটক করা হয়। এর পেছনের কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, যাকে আটক করা হয়, তার সোশ্যাল ও ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে। এই ওয়ার্ক পারমিট ও সোশ্যাল তার বোন ও বোনের জামাই তাদের কাছে রেখে দেন। শোনা গেছে, তার বোনের সুবাদে তিনি এখানে এসেছেন। এখানে আসার বিনিময়ে ৩৫ হাজার ডলার তার বোন ও বোনের স্বামীকে দেওয়ার কথা। তিনি দিতে পারেননি। অনেক দিন ধরেই তার বোন ও বোনের স্বামী তার কাছে অর্থ চেয়ে আসছিলেন। তিনি দিচ্ছিলেন না। এ কারণে অনেকটা রাগ হয়েই তার বিষয়টি জানিয়ে দেন আইসকে। আর আইস এসে তাকে আটক করে। এখন তাকে ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পাওনা অর্থ পাননি বলেই তারা নিজের ভাই ও শ্যালককে ধরিয়ে দিলেন। সূত্র জানায়, বোনের স্বামী একটি বেসরকারি টেলিভিশনের কাছে অভিযোগ করেছেন, তার শ্যালক মাদক গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে বোন ও বোনের স্বামী তাকে ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন। বলছেন, এই সময়ে অনেক মানুষই বিপদে আছেন। এই বিপদের সময় কারোই উচিত নয় আক্রোশবশত পরিবারের কোনো সদস্য, আত্মীয়স্বজন কিংবা পরিচিত কাউকে ধরিয়ে দেওয়া। আইসের হাতে ধরিয়ে দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। কাউকে ইমিগ্র্যান্ট করার সুবাদে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অবৈধ। এটি যদি তিনি আইসকে জানান, তাহলে যিনি অর্থ নিয়েছেন, তিনিও বিপদে পড়বেন।
মসজিদ আল কুবার পরিচালনা পরিষদের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, আইসের অভিযানের কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তবে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। মানুষ যাতে ভয় না পান, সে জন্য আমরা পরামর্শ সভা করেছি। মানুষকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ভয়ের কিছু নেই। আমরা ও সোসাইটি অসহায় মানুষের পাশে রয়েছি। কমিউনিটির আরও সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। ভয় কাটানো সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। সেই সঙ্গে সবাইকে সচেতন করতে হবে।