যুক্তরাষ্ট্রে যারা ইমিগ্র্যান্ট হয়েছেন, তাদের অনেকেই পারিবারিক সূত্রে এ দেশে বৈধভাবে এসেছেন। এ ছাড়া ইমিগ্র্যান্টদের সন্তানেরা বাই বার্থ সিটিজেন।
বৈধ অধিবাসীদের মধ্যে যারা এ দেশে সম্পদ করেছেন ও সম্পত্তি কিনেছেন, তাদের কথা ভিন্ন। কিন্তু এ দেশে অনেকেই আছেন, এখানে থাকার কোনো বৈধ অবস্থান নেই। বিদেশি হওয়ার পরও এ দেশে সম্পত্তি কিনেছেন নামে-বেনামে। করপোরেশন করেও কেউ কেউ সম্পত্তি কিনেছেন। এ ধরনের যারা সম্পত্তি কিনেছেন তারা অনেকেই এ দেশে থাকেন আবার কেউ কেউ আছেন যারা এ দেশে থাকেন না। বাংলাদেশ কিংবা অন্য দেশ থেকে বিনিয়োগ করেছেন। তাদের সম্পত্তিতে এ দেশে অবস্থান করা তাদের পরিবারের কেউ, বন্ধুদের কেউ অথবা ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে এমন মানুষেরাও বিনিয়োগ করেছেন। এ ধরনের বিনিয়োগ যারা করেছেন, তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে যারা এ দেশে বৈধ নথিপত্র না থাকার পরও নিজের নামে সম্পদ ও সম্পত্তি কিনেছেন, তারা ডিপোর্টেশন হলে তাদের সেই সম্পত্তির কী হবে, এ নিয়ে অনেকেই চিন্তিত।
এ বিষয়ে রিয়েলটর আসিফ চৌধুরী বলেন, এ দেশে যাদের নথিপত্র নেই বা যাদের নথিপত্র থাকার পরও রিমুভালের আদেশে রয়েছেন, এমন কারও সম্পত্তি থাকলে সেসব সম্পত্তি তারা তার নামে না রেখে তার পরিবারের কোনো সদস্য অথবা বিশ্বস্ত কোনো আত্মীয়স্বজন অথবা কোনো বন্ধুর নামে ট্রাস্টি করে বদল করতে পারেন। ইনকরপোরেশনের অধীনে যদি কোনো সম্পত্তিতে তিনি পার্টনার থাকেন, তাহলে তিনি তার সেই অংশীদারিত্বের অংশ স্থানান্তর করতে পারেন। কারণ কারও উচিত হবে না এ দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তার সম্পত্তিগুলোর কোনো একটি ব্যবস্থা না করে যাওয়া। তিনি যদি তার সম্পত্তি স্থানান্তর করে না যান এবং তিনি যদি ডিপোর্টেশনের শিকার হন, তাহলে ওই সম্পত্তি তার অধীনে থাকবে না। কারণ একজন মানুষের সম্পত্তি এই অবস্থায় পড়লে তা চলে যাবে স্টেটের অধীনে। যদি ব্যাংকের লোন থাকে, তাহলে সেই সম্পত্তি চলে যাবে লোন কোম্পানি অথবা ব্যাংকের হাতে। ব্যাংকের কিংবা লোন কোম্পানির কাছ থেকে যদি সম্পত্তি কেনা হয়, তাহলে সেই সম্পত্তি ব্যাংক কিংবা লোন কোম্পানি এর দখল বুঝে নেবে। অর্থ না পেলে তারা লোনের অর্থ আয় করার জন্য সম্পত্তিটি ফোর ক্লোজারে পাঠাবে। ফোর ক্লোজারে পাঠানোর কারণে পরে এটি বিক্রি হবে। তারা ব্যাংক থেকে অর্থ আদায় করবে। তবে কেনার সময়ে যে অর্থ দিয়েছেন এবং পরে লোনের পেমেন্ট দিয়েছেন, তা ফেরত পাবেন না।
তিনি বলেন, কেউ এ দেশ থেকে ডিপোর্র্ট হলে তিনি আগামী ১০ বছরের মধ্যে কোনোভাবেই এ দেশে আসতে পারবেন না। আসতে না পারলে তিনি তার সম্পত্তিও রক্ষা করতে পারবেন না। ডিপোর্ট হলে সম্পত্তি রক্ষা তো করতে পারবেনই না, উল্টো তিনি যে অর্থ দিয়ে সম্পত্তি কিনেছেন, সেই অর্থ ফেরত পাবেন না। সূত্র জানায়, এখানে অনেকেই ওয়ার্ক পারমিট ও সোশ্যাল সিকিউরিটি হওয়ার পর সম্পত্তি কেনেন। আবার অনেকেই এ দেশে স্ট্যাটাস হারান এবং ওভার স্টে হলে অন্য মানুষের নামে সম্পত্তি কেনেন। কেউ কেউ আছেন পরিবারের কোনো সদস্য বৈধ হলে তাদের নামে সম্পত্তি কেনেন। যাদের পরিবারে একজন হলেও বৈধ অধিবাসী রয়েছেন, তাদের নামে সম্পত্তি থাকলে ও সম্পদ কিনলে সমস্যা নেই। তবে একসঙ্গে বসবাস করলেও ডিপোর্টেশন অর্ডারের অধীনে থাকা ব্যক্তি যদি পরিবারের বৈধ স্ট্যাটাস রয়েছে এমন কোনো মানুষের নামে সম্পত্তি কিনলেও সমস্যায় পড়তে পারেন।
একজন রিয়েলটর বলেন, আমার পরিচিত এমন মানুষ রয়েছেন, যারা সমস্যায় পড়েছেন। দুজনের কথা বলতে পারি- একজন নিউইয়র্কের, আরেকজন বাইরের স্টেটের। তাদেরকে এই দেশ ছাড়তে হবে। কিন্তু তাদের এখানে সম্পত্তি রয়েছে। এই সম্পত্তির কারণে তিনি চাইলেও থাকতে পারবেন না, কারণ সম্পত্তি কিনলেই কেউ এ দেশে বৈধ হয় না। আজ থেকে ২৫-৩০ বছর আগে কিংবা এরও আগে এ দেশে অনেকেই এসেছেন। তাদের অনেকেই এ দেশে এসে কেবল আইডি দিয়ে বাড়ি কিনেছেন। আবার কেউ কেউ বাড়ি কেনার সময় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এসব মানুষ এখন ধরা পড়তে পারেন। ধরা পড়লে যদি তাদেরকে ডিপোর্ট করা হয়, তাহলে তার সম্পত্তি আর থাকবে না। কারণ লোনের কিস্তি দিতে না পারলে তা হাতছাড়া হয়ে যাবে। আমার ওই ক্লায়েন্টদের আমি পরামর্শ দিয়েছি, তারা যাতে তাদের সম্পত্তি নিজের নামে না রেখে পরিবারের কারও নামে অথবা আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধব অথবা কোনো ওয়েল উইশারের নামে স্থানান্তর করেন। সেটি করলে সম্পত্তিটি অন্তত তার কাছে না থাকলেও নিজের লোকের কাছে থাকবে। আবার যখন তিনি এ দেশে আসবেন, তখন তিনি ফেরত পাবেন। ফেরত না পেলেও অন্তত ফেরত পাওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কিন্তু সরকার নিয়ে গেলে তো আর কোনোভাবেই ফেরত পাবেন না। অন্যদিকে ট্রাস্টি করেও সম্পত্তি স্থানান্তর করতে পারেন। তিনি দেশে গেলেও ট্রাস্টির কাজ করতে পারবেন। তাই কারও এ ধরনের পরিস্থিতি হলে তিনি একজন অভিজ্ঞ রিয়েলটর বা একজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে সম্পত্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে হুটহাট করে সিদ্ধান্ত নিলে ভুল হতে পারে।