Thikana News
০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

পরম মহিমান্বিত লাইলাতুল মিরাজ

পরম মহিমান্বিত লাইলাতুল মিরাজ
বিশ্ব মুসলিম সম্যক অবহিত যে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসুল হজরত মোহাম্মদ (সা.) জননী আমিনার জঠরে থাকাবস্থায় তাঁর পিতা আবদুল্লাহ পরলোকে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তাই পিতা-মাতার অকৃত্রিম স্নেহসান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা অপরাপর শিশু-কিশোরের মতো শৈশব ও কৈশোরে পিতার হাত ধরে পবিত্র মক্কা নগরীর অলিগলিতে হাঁটাচলার সুযোগ শিশু মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহর হয়নি। অনবদ্য কারণে জঠরজাত সন্তানের ভবিষ্যৎ দুশ্চিন্তায় অকাল বৈধব্যের শিকার বিবি আমিনার অন্তরে সর্বদা সাহারার লু হাওয়া বয়ে যেত। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা মহান আল্লাহ তায়ালা অন্তঃসত্ত্বা বিবি আমিনার মর্মপীড়া সম্যক উপলব্ধি করেছিলেন। তাই বিশ্বপ্রতিপালক ১৮ হাজার মাখলুকাতের মধ্যে একমাত্র আখেরি নবী মোহাম্মদ (সা.)-কেই ইসরা ও মিরাজ নামক সাধারণের ভেদবুদ্ধির অগম্য এবং অবাক্সমানসগোচর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমগ্র সৃষ্টিজগৎ সশরীরে পরিভ্রমণ এবং পরিদর্শনের আয়োজন করে নজিরবিহীন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষ এবং মহাকাশযানের গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে অভিযানের পূর্বে একটি রাতের অর্ধেক বা ছয় ঘণ্টা সময়ের মধ্যে হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর ইসরা ও মিরাজের মাধ্যমে স্বর্গ-মর্ত্য তথা বেহেশত-দোজখ আরশে আজিম সশরীরে পরিভ্রমণের ঘটনাটি একমাত্র ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছাড়া অন্যদের নিকট ছিল কল্পনাতীত বা হাস্যাস্পদ কাহিনি। কারণ অন্য কোনো নবী-রাসুল কিংবা সৃষ্টিজগতের ক্ষেত্রে মিরাজ বা সশরীরে ঊর্ধ্বগমনের দ্বিতীয় নজির বিশ্বমানবের কোনো ধর্মগ্রন্থ কিংবা ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। যাহোক, বিদ্যুতের গতিবেগের আবিষ্কারের ফলে অপরাপর ধর্মাবলম্বীদের নিকটও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসুল হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর ইসরা ও মিরাজের সত্যতা উপলব্ধিকে সহজসাধ্য করে তুলেছে।
ইসলাম ধর্মবিশারদ এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ অবহিত যে পবিত্র আল কোরআনের পঞ্চদশ অধ্যায়ে সুরা বনি ইসরাইলের শুরুতে ইসরা (নৈশ ভ্রমণ) ও মিরাজ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ঐ সত্ত্বা (আল্লাহ) পবিত্র, যিনি স্বীয় বান্দা (মোহাম্মদ সা.)-কে রাতারাতি মসজিদে হারাম (পবিত্র কাবাগৃহ) থেকে মসজিদে আকসা (বাইতুল মুকাদ্দাস) পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। এর চারপাশের (সিরিয়া) দেশব্যাপী নানাভাবে বরকতময় করে রেখেছি; উদ্দেশ্যÑআমি তাঁকে (মোহাম্মদ সা.-কে) আমার কুদরতের বিস্ময়কর কিছু নিদর্শন প্রদর্শন করাব। [পবিত্র হাদিসে বলা হয়েছে, বাইতুল মুকাদ্দাস নির্মাণ করেছিলেন হজরত সুলাইমান (আ.)। অসংখ্য নবী-রাসুল বাইতুল মুকাদ্দাস-সংলগ্ন এলাকায় সমাহিত রয়েছেন, যাকে ধর্মীয় দৃষ্টিতে এবং তৎসংলগ্ন দিগন্তবিস্তৃত এলাকার ফল উৎপাদক অসংখ্য বৃক্ষরাজি, রাশি রাশি নহর এবং শস্যক্ষেত্রকে পার্থিব দৃষ্টিতে বরকতময় বলা হয়েছে। আবার নেহাত স্বল্প সময় অর্থাৎ মাঝরাত থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ব মুহূর্তের মধ্যবর্তী সময়ে পবিত্র মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস ভ্রমণ; বিভিন্ন স্থানে বিরতি শেষে সালাত আদায়; বাইতুল মুকাদ্দাসে ১ লাখ ৪০ হাজার বা তার চেয়েও অধিক সংখ্যক নবী-রাসুলের অংশ নেওয়া সালাতে ইমামতি ও আলোচনা করেন হজরত মোহাম্মদ (সা.)। অতঃপর বিদ্যুতের সমান কিংবা তার চেয়ে বেশি গতিসম্পন্ন বুরাক নামক বিশেষ যানযোগে আখেরি নবী মোহাম্মদ (সা.) সশরীরের ঊর্ধ্বাকাশে গমন করেন। ওই ঊর্ধ্বাকাশ যাত্রায় হজরত মোহাম্মদ (সা.) বিভিন্ন আকাশে কয়েকজন নবী-রাসুলের সঙ্গে সালাম বিনিময় ও আলোচনা করেন এবং সবশেষে আরশে আজিমে বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার আতিথ্য গ্রহণ ও ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভ করেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ ও আতিথ্য গ্রহণকালে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসুল (সা.) দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ এবং রমজান মাসের ফরজ রোজার আদেশ লাভ, নিজ চোখে বেহেশত-দোজখ অবলোকন ইত্যাদি নির্দেশ লাভ ও কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেন, যাকে এককথায় মহান আল্লাহর কুদরতের বিস্ময়কর নিদর্শন বলা হয়েছে।]
মুসলমানমাত্রেরই কমবেশি জানা আছে, নির্জন হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বিশ্বপ্রতিপালকের পক্ষ থেকে ৪০ বছর ৬ মাস বয়সে মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ ফেরেশতাকুল শিরোমণি হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর ওহি (আসমানী বাণী) লাভের মাধ্যমে নবুয়তি লাভ করেন। সেই পাপপঙ্কিল আইয়্যামে জাহেলিয়াত যুগে মক্কার প্রতিষ্ঠিত পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আল্লাহর একত্ববাদ বা ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে হজরত মোহাম্মদ (সা.) অমানুষিক নির্যাতন ও অবর্ণনীয় ক্লেশ ভোগ করেছিলেন। আল্লাহর একত্ববাদ প্রচারে অটল সংকল্পবদ্ধ হজরত মোহাম্মদ (সা.) অন্ধকারাচ্ছন্ন মক্কার যুদ্ধলিপ্সু ও পৌত্তলিক গোত্রপতিদের যাবতীয় নির্যাতন হাসিমুখে বরণ করে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে একাধিকবার মুমূর্ষু দশায় উপনীত হয়েছিলেন। আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত হলে এবং পৌত্তলিকতার অবসান ঘটলে পৌত্তলিক গোত্রপতিদের স্থায়ী আয়ের উৎস চিরতরে নস্যাৎ হয়ে যাবে, তা ব্যভিচারী সমাজপতিরা সম্যক উপলব্ধি করেছিল। তাই মোহাম্মদ (সা.)-এর আপন চাচা পার্থিব মোহাবিষ্ট লব্ধপ্রতিষ্ঠ গোত্রপতি আবু জাহেল, আবু লাহাব প্রমুখ ব্যক্তিস্বার্থে ইসলাম প্রচারের বিরোধিতায় মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত হলো। সেই বাধার বিন্দাচল অতিক্রম এবং এক হাতে সূর্য ও অন্য হাতে চন্দ্র এনে দেওয়ার প্রস্তাব অকুতোভয়ে নাকচ করে দিয়ে হজরত মোহাম্মদ (সা.) ইসলাম প্রচার অব্যাহত রাখেন।
উল্লেখ্য, নিজে ইসলামের দাওয়াত কবুল না করলেও হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর আপন চাচা আবু তালিব আমৃত্যু হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর যাবতীয় বিপদ-আপদে সর্বদা ঢাল হিসেবে প্রতিরক্ষাব্যুহ তৈরি করতেন। এ ছাড়া নবীর (সা.) সহধর্মিণী হজরত খাদিজা (রা.), হজরত আবু বকর (রা.), ওমর (রা) প্রমুখ নবদীক্ষিত মুসলমানগণ যাবতীয় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ইসলাম এবং মোহাম্মদ (সা.)-এর স্বার্থে যথাসর্বস্ব উজাড় করে দিতে সদা তৈরি ছিলেন। এদিকে নবুয়তির দ্বাদশ বর্ষে প্রিয়তমা পত্নী হজরত খাদিজা (রা.) এবং চাচা আবু তালিব পরলোকগমন করায় হজরত মোহাম্মদ (সা.) বহুলাংশে মুষড়ে পড়েন। এ বছর তায়েফে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে পৌত্তলিকদের লেলিয়ে দেওয়া কিশোর-যুবকদের ছোড়া প্রস্তরাঘাতে মোহাম্মদ (সা.) মুমূর্ষু দশায় উপনীত হয়েছিলেন। সুন্নি মতাবলম্বীদের ধারণামতে, মহানবী (সা.) জীবনের সেই চরম সংকট ও দুর্যোগ মুহূর্তেই নবুয়তির দ্বাদশ বর্ষে ২৭ রজব রাতে দুটি ধাপে মহান আল্লাহর নির্দেশে পবিত্র মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল।
প্রথম ধাপ : পাশ্চাত্যের দিনপঞ্জি অনুসারে আখেরি নবী মোহাম্মদ (সা.) ৬২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে উম্মে হানির (রা.) গৃহে শায়িত ছিলেন। মাঝরাতের ক্ষণিক পূর্বে ফেরেশতাকুল শিরোমণি হজরত জিবরাইল (আ.) সশরীরে ওই গৃহে প্রবেশ করলেন এবং হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে কাবাগৃহের গোলাকার স্থান বা হিজরে নিয়ে গেলেন। সেখানে ক্ষুরধার ছোরার সাহায্যে জিবরাইল (আ.) আখেরি নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর বক্ষদেশ বিদীর্ণ করলেন এবং দেহাভ্যন্তরের হৃৎপিণ্ডসহ নাড়িভুঁড়ি বের করে আনলেন। হজরত জিবরাইল (আ.) স্বয়ং ওই নাড়িভুঁড়ি পবিত্র জমজমের বারিতে ভালোভাবে ধৌত করলেন এবং মোহাম্মদ (সা.)-এর বক্ষের অভ্যন্তরে সবকিছু পুনস্থাপন করে বক্ষদেশ সেলাই করে দিলেন। হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর বর্ণনা অনুসারে, হজরত জিবরাইল (আ.) সোনালি একটি ট্রেতে নিয়ে আসা জ্ঞান-প্রজ্ঞা এবং বিশ্বাসও আখেরি নবীর (সা.) বক্ষদেশে প্রবেশ করিয়ে দিলেন। অতঃপর হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে সঙ্গে নিয়ে হজরত জিবরাইল (আ.) বুরাক নামক একটি বিশেষ বাহনযোগে বাইতুল মুকাদ্দাসের উদ্দেশে যাত্রা করেন। [স্মর্তব্য, বুরাক আকারে গাধার চেয়ে সামান্য বড় এবং খচ্চর থেকে সামান্য ছোট এবং সেকেন্ডে আলোর গতি তথা ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইলের চেয়েও অধিক দ্রুত গতিসম্পন্ন বিশেষ ধরনের বাহন।] হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে সঙ্গে নিয়ে মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস গমনকালে হজরত জিবরাইল (আ.) এবং নবীজি (সা.)-কে বহনকারী বুরাকটি চারটি স্থানে ক্ষণিকের জন্য থেমেছিল। প্রতিটি বিরতিস্থলে হজরত জিবরাইল (আ.)-এর পরামর্শে আখেরি নবী মোহাম্মদ (সা.) বুরাক থেকে অবতরণ করেন এবং প্রতিটি স্থানে দুই রাকাত করে সালাত আদায় করেন। বুরাক সর্বপ্রথম থেমেছিল ইয়াসরিব বা মদিনায় এবং হজরত জিবরাইল (আ.)-এর পরামর্শে হজরত মোহাম্মদ (সা.) সেখানে বুরাক থেকে অবতরণ শেষে দুই রাকাত সালাত আদায় করেন। হজরত জিবরাইল (আ.) ইঙ্গিতে মহানবী (সা.)-কে পূর্বাভাস দেন যে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মহান আল্লাহর নির্দেশে হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিজ মাতৃভূমি মক্কা ত্যাগপূর্বক ইয়াসরিবে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে। মূলত এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে মোহাম্মদ (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের প্রথম অলৌকিক নির্দেশ। দ্বিতীয় দফা বুরাকের যাত্রাবিরতি সিনাই পর্বতে এবং মোহাম্মদ (সা.) বুরাক থেকে অবতরণ ও দুই রাকাত সালাত আদায় করেছিলেন সেখানে। এই পর্বতেই বিশ্বপ্রতিপালকের পক্ষ থেকে বনি ইসরাইলের নবী হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত নাজিল হয়েছিল। তৃতীয় দফা বুরাক যাত্রাবিরতি করেছিল বেথলেহামে। বিবি মরিয়ম-পুত্র হজরত ঈসা (আ.) এই বেথলেহামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং হজরত মোহাম্মদ (সা.) সেখানে দুই রাকাত সালাত আদায় করেছিলেন। বুরাকের চতুর্থ দফা যাত্রাবিরতি ঘটেছিল মসজিদে আল-আকসার সন্নিকটবর্তী হজরত মুসা (আ.)-এর কবরের পাশে। সেখানেও হজরত মোহাম্মদ (সা.) বুরাক থেকে অবতরণপূর্বক দুই রাকাত সালাত আদায় করেছিলেন। সেখানে হজরত মোহাম্মদ (সা.) নবী মুসা কলিমুল্লাহকে (আ.) নিজ কবরের মধ্যে দাঁড়িয়ে সালাত আদায়রত দেখতে পান। এতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়, নবী-রাসুলগণ নিজ নিজ কবরের মাঝে জীবিত অবস্থায় রয়েছেন। অবশেষে মহানবী (সা.) আল-কুদস বা জেরুজালেমে পৌঁছান এবং বাইতুল মুকাদ্দাস বা মসজিদ আকসায় প্রবেশ করেন এবং ১ লাখ ২৪ হাজার মতান্তরে ততোধিক নবী-রাসুলের অংশগ্রহণে দুই রাকাত তাহিয়াতুল মসজিদ নামাজে ইমামতি করেন। বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদে প্রবেশের পূর্বে হজরত জিবরাইল (আ.)-এর পরামর্শে অঙ্গুলির সংকেতে হজরত মোহাম্মদ (সা.) একটি পাথরে দুটি ছিদ্র করেন এবং ছিদ্রযুক্ত পাথরের সঙ্গে বুরাককে বেঁধে রাখেন।
ভ্রমণের দ্বিতীয় ধাপ : সালাত শেষে আবার হজরত জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে বুরাকযোগে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মোহাম্মদ (সা.) সপ্তম আসমান ও সিদরাতুল মুনতাহা গমন করেন। ঊর্ধ্বাকাশ গমনকালে প্রথম আসমানে জীবিত অবস্থায় আদি পিতা হজরত আদম (আ.); দ্বিতীয় আসমানে হজরত ঈসা ইবন মরিয়ম (আ.) ও হজরত ইয়াহিয়া (আ.); তৃতীয় আসমানে হজরত ইদ্রিস (আ.); চতুর্থ আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.); পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.); ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ.) এবং সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে পরিভ্রমণরত আখেরি নবী মোহাম্মদ (সা.)-এর সাক্ষাৎ, সালাম ও কুশল বিনিময় হয়। সপ্তম আসমানে হজরত জিবরাইল (আ.) আখেরি নবী মোহাম্মদ (সা.)-এর আপ্যায়নের জন্য এক গ্লাস মধু এবং এক গ্লাস দুধ আনয়ন করেন। হজরত মোহাম্মদ (সা.) দুধ পান করায় হজরত জিবরাইল (আ.) সহাস্যে বলে উঠলেন, আপনার উম্মত বা অনুসারীরা হবেন ফিতরা বা প্রকৃতির অনুসারী। আর আপনি মধু পান করলে আপনার উম্মতগণ হতেন উন্মাদ বা পাগল । এরপর জিবরাইল (আ.) সমভিব্যাহারে আখেরি নবী (সা.) আস-সাখরাহ আল-মুশাররফ নামক অভিনব পাথরের দিকে এগিয়ে গেলেন। বর্তমানে ওই পাথরখণ্ড আল আকসার আল-হারাম আস-শারিফের রক মসজিদের পবিত্র গম্বুজের শোভা বর্ধন করছে। এরপর হজরত জিবরাইল (আ.)-এর সাহচর্যে মোহাম্মদ (সা.) বাইতুল মুকাদ্দাস এবং সিদরাতুল মুনতাহা গমন করেন। এ পর্যায়ে হজরত জিবরাইল (আ.)-এর ভ্রমণের ইতি ঘটে এবং হজরত মোহাম্মদ (সা.) বিশ্বপ্রতিপালক মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের নিমিত্তে বাদবাকি পথ রফরফ নামক বিশেষ যানযোগে একাকী পাড়ি দিয়ে আরসে আজিমে পৌঁছান। সেখানে তাশাউদের মাধ্যমে মহান আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় হাবিব পারস্পরিক সালাম বিনিময় করেন এবং সাইয়েদিল মুরসালিন মোহাম্মদ (সা.) করুণাময় আল্লাহ তায়ালার আতিথ্য লাভে ধন্য হন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাকে সাদর সম্ভাষণ জানান এবং পরস্পর সালাম বিনিময় করেন। যথারীতি সালাম বিনিময় শেষে আল্লাহ তায়ালা হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের জন্য প্রথমে দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত এবং পরে পর্যায়ক্রমে ৫ ওয়াক্ত ফরজ সালাত এবং রমজান মাসের সাওম পুরস্কার হিসেবে নবীজিকে (সা.) উপহার দেন।
স্মর্তব্য, হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতগণ নিয়ম-রীতি অনুযায়ী দৈনিক ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করলে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা তাদের আমলনামায় ৫০ ওয়াক্ত সালাতের সওয়াব দান করবেন। আবার পবিত্র রমজানের সাওমের পুরস্কারও স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা স্বহস্তে প্রদান করবেন। বিশ্বপ্রতিপালকের আতিথ্য ও সান্নিধ্য শেষে ফেরার পথে প্রিয় নবী (সা.) বেহেশত-দোজখ পরিদর্শন করেন এবং পাপীদের শাস্তিভোগের মর্মবিদারী দৃশ্য স্বচক্ষে অবলোকনের পর উম্মতদের দুর্ভোগের কথা ভেবে অশ্রু বিসর্জন করেন। সাক্ষাৎ পাপাচারের লীলানিকেতন বর্তমান বিশ্বে পার্থিব মোহাবিষ্ট মুসলমানমাত্রই শয়তানের প্ররোচনায় পারলৌকিক পাথেয় সঞ্চয়ের স্থলে জাগতিক ভোগবিলাস ও ইন্দ্রিয়ের অবৈধ চাহিদা মেটাতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। তথাকথিত অভিজাত এবং অঢেল বিত্তশালী উঠতি মুসলিম যুবক-যুবতীদের বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড নিয়ে রাতযাপন বিশেষ সংস্কৃতিতে পরিণত হচ্ছে। পরিশ্রমের বিনিময়ে জীবিকার্জনের স্থলে উৎকোচের সুবাদে রাতারাতি বড় লোক হওয়ার প্রতিযোগিতা এবং মনুষ্যত্ববোধের অপমৃত্যু ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মরণখেলা গোটা বিশ্বকে নরককুণ্ডলীতে পরিণত করছে। নানা অজুহাতে দৈনিক ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায়ে আমাদের অনীহা ও উদ্বেগ দোজখের পথকে সুগম করছে।
যাহোক মুসলিম ক্যালেন্ডারের রজব, শাবান ও রমজান অত্যন্ত মহিমান্বিত মাস। ইসলামের ভাষায় রজবকে বলা হয় আল্লাহর মাস; শাবানকে নবী (সা.)-এর মাস এবং রমজানকে বলা হয় উম্মতের মাস। সেই চরম আইয়্যামে জাহেলিয়াত যুগের যুদ্ধলিপ্সু ও পাপাচারে লিপ্ত মক্কাবাসী এ তিনটি মাসে যাবতীয় অপরাধ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখত। ইসলামি চিন্তাবিদদের বর্ণনা অনুসারে, ইমান-আকিদাসহ কোনো মুসলমান রজব মাসে সাতটি রোখা রাখলে তার জন্য সাতটি দোজখের দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়। আর আটটি রোজা রাখলে তার জন্য বেহেশতের আটটি দরজা খোলা হয়ে যায়। আর রোজাদারদের বেহেশতের রজব নামক বিশেষ ঝরনার সুমিষ্ট পানীয় দ্বারা আপ্যায়ন করা হবে। বিশেষত, কোনো মুসলমান ২৭ রজব রোজা রাখলে তাকে এক বছর রোজা রাখার সওয়াব প্রদান করার কথাও পবিত্র হাদিস গ্রন্থাবলিতে উল্লেখ রয়েছে।
যাহোক, যুদ্ধবিগ্রহ, নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি করোনার মতো প্রাণঘাতী এইচএমপিভি (দ্য হিউম্যান মেটানিউমো) ভাইরাস সংক্রমণের সংবাদে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশ্বের ডাকসাইটে চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের দুশ্চিন্তা বেড়ে গেছে। তাই জায়েজ/না-জায়েজের খণ্ডযুদ্ধ যথাসম্ভব পরিহার করে ২৭ রজব রোজা রাখা এবং অনুশোচনাগ্রস্ত চিত্তে ও সাশ্রু নয়নে মিরাজ রজনীতে মহান আল্লাহর অনুকম্পা ভিক্ষা করার সানুনয় মিনতি জানাচ্ছি।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
 

কমেন্ট বক্স