Thikana News
২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

২০২৫ নির্বাচন নিয়ে সংশয়

২০২৫ নির্বাচন নিয়ে সংশয় ছবি: সংগৃহীত
দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলসমূহের বিদ্যমান দূরত্ব ও নির্বাচনের সময় নিয়ে সংশয়ের অবসান ঘটেনি। বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের এ দূরত্ব ক্রম বিকাশমান দ্বন্দ্বে রূপ নিচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর কৌশলী ভূমিকাও কিছু প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। নির্বাচনের সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ঘোষণা পরস্পরবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান উপদেষ্টা ২০২৫ সালের 
ডিসেম্বরের মধ্যে আর তার প্রেস সচিব ২০২৬-এর জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে। প্রধানত বিএনপির চাপের মুখেই প্রধান উপদেষ্টা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য রূপরেখা ও সময় ঘোষণা করেছেন। এতে অস্পষ্টতা ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় বিএনপিরই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে তার প্রেস সচিব ২০২৫ সালের মধ্যে সর্বাধিক ২০২৬-এর ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন-সংক্রান্ত সংশয়, শঙ্কার দৃশ্যমান অবসান ঘটিয়েছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের মতে, তার পরও একটা সংশয় থেকেই গেল। আপিল বিভাগ কর্তৃক পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করার ঘটনা ভিন্ন এক পরিবেশ-পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটাচ্ছে।
রাষ্ট্র মেরামত-সংস্কার কাজ সম্পাদনে অন্তর্বর্তী সরকার ও তাদের মূল সহযোগী বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অবস্থান সংশয়-শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার থেকে এখনো বিষয়টি খোলাসা করা হয়নি। উপদেষ্টাদের বিভিন্নমুখী বক্তব্য ধোঁয়াশা সৃষ্টিতেই ভূমিকা রেখেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে এই বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার সময় উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তি দেখা দিলে তা হবে জনআকাক্সক্ষা বিরোধী। তিনি বলেন, রাষ্ট্র মেরামতের জন্য কত সময় প্রয়োজন, তা জানার অধিকার জনগণের আছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পরই সরকার ২০২৬ এর জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শঙ্কা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেছেন, নির্বাচন বিলম্বিত করে নির্বাচিত সরকারের বাইরে কাউকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আনা হতে পারে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই তারা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনের প্রধানদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের দায়িত্ব হবে নির্বাচন-সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া। বিএনপি ও অন্যদের চাপের মুখে সরকার শেষ পর্যন্ত মূল পরিকল্পনা থেকে অনেকটা সরে এসে নির্বাচন-ব্যবস্থা সংস্কার এবং আরও দু-তিনটি মৌলিক বিষয়ে সংস্কার আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যান্য সব সংস্কারকাজ করবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার।
এদিকে বৈষম্যবিরোধীরা ও জাতীয় নাগরিক কমিটি স্বল্প সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে নয়। মৌলিক ও জাতীয় জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারসমূহ করার পরই তারা নির্বাচনের পক্ষে, তাতে যদি দুই-আড়াই বছরও লাগে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের মন্ত্রীদের বিচারের পরই নির্বাচনের দাবি তাদের। বৈষম্যবিরোধীরা এমনও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, এর আগে যারা নির্বাচন দাবি করবেন, তারা জনগণের শত্রু। বিএনপির নেতারাও সংস্কারের বিপক্ষে নন। তারা নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার পক্ষে। বিএনপির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধীদের বিরোধ নির্বাচন নিয়েও। জামায়াতে ইসলামী নীতিগতভাবে বৈষম্যবিরোধীদের পক্ষে। রাজনৈতিক চাপে তারা নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির অবস্থানের বিপক্ষেও কথা বলতে পারছে না। তবে বিএনপির মতো দ্রুত না করে সংস্কার ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড একই সঙ্গে চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে জামায়াত।
অন্যদিকে পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের মূল কাঠামোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ আপিল বিভাগ কর্তৃক রহিত করায় ভিন্নতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের ফলে দলীয় সরকারের অধীনে নয়, নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। কারও কারও মতে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালন করতে পারবে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ মহল ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। তারা মনে করেন, বর্তমান সরকার দলীয় সরকার নয়; যাদের সমন্বয়ে ও যে প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তা তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থার অনুরূপ নয়। এই সরকার গঠিত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভিপ্রায় ও পরিকল্পনামাফিক। দায়িত্ব নিয়ে সাংবিধানিক সংশোধনীর কাজে হাত দেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে বড় ভয় রয়েছে এসবের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিয়ে। পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের ওপর নির্ভর করবে সাংবিধানিক বৈধতা। যে ভয় থেকে ক্ষমতাপ্রত্যাশী ও বিপুল সম্ভাবনাময় বিএনপির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল ও দুর্বল ছিল তারা। আপিল বিভাগের গণভোট পুনর্বহালের রায় তাদের মনোবল, শক্তি বহুগুণে বাড়িয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার মৌলিক সংস্কারসহ যেসব সংস্কার কাজ সম্পাদন করবে, সংবিধানসম্মত উপায়েই গণভোটের মাধ্যমে সেসবের বৈধতা নেওয়া হবে। অবশ্য গণভোট নেওয়া হলেও সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়ার বাধ্যবাধকতার প্রশ্ন থাকবে। সে ক্ষেত্রে উভয় পক্ষেরই দায় ও পারস্পরিক নির্ভরতা থেকে যাবে।
 

কমেন্ট বক্স