Thikana News
০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নববর্ষ হোক নব চেতনায় উজ্জীবিত

নববর্ষ হোক নব চেতনায় উজ্জীবিত
সময় একটি চলমান প্রক্রিয়া। মানবজাতি জীবন-জীবিকা পরিগ্রহ করার জন্য সময়কে গ্রহ-নক্ষত্রের চলাচলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেকেন্ড মিনিট থেকে শুরু করে মাস বছর এমনকি শতাব্দীর পর্যায়ে নির্ধারণ করে সময় গণনার পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে আসছে। যদিও সময় গণনা নতুন কোনো আবিষ্কার নয়। মহান সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি সৃষ্টিকে জীবনের সঙ্গে সময়ের সামঞ্জস্য রেখে প্রতিপালন করে আসছেন। মানব সৃষ্টির প্রথম ব্যক্তি হজরত আদম (আ.) থেকে মানবজাতিকে সময়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, যদিও মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশে যুগে যুগে সময় ও সভ্যতার বিবর্তনহেতু মানবজাতির পক্ষে সময়ের সঠিক হিসাব সংরক্ষণ সম্ভব হয়নি, তবু যুগে যুগে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে সময়ের হিসাব নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়েছে, যা গবেষণার বিভিন্ন পর্যায়ে পূর্ববর্তী গবেষণা ভুল প্রমাণিত হলেও মানবসভ্যতার জন্য তা মাইলফলক হিসেবে গণ্য। কারণ প্রতিটি গবেষণাই পরবর্তী উচ্চতর গবেষণার পথিকৃৎ।
প্রতিটি জাতির জন্যই জাতীয় জীবনে নববর্ষের ভূমিকা অপরিসীম। নববর্ষ জীবনের পুরোনো সব হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে দিয়ে নব উদ্যমে জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়। বিভিন্ন ভাষাভাষীর নিজস্ব ভাষা ও অঞ্চলভিত্তিক বর্ষ গণনার আলাদা রেওয়াজ থাকলেও খ্রিষ্টাব্দ পৃথিবীব্যাপী সকল ভাষাভাষীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্টের জন্মের বছর থেকে যে বছর গণনা করা হয়, তাকেই খ্রিষ্টাব্দ বলে। যিশুখ্রিষ্টের জন্ম, জীবন, সেবাকাজ, মৃত্যু, পুনরুত্থান অবিস্মরণীয় করে রাখার জন্য সাধু গ্রেগরি নতুন এ বছরের গণনা শুরু করেন। আর বর্তমান পৃথিবীতে এ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও প্রচলিত। বছর গণনায় ইংরেজিতে BC ও AD দুটি শব্দ প্রচলিত। BC শব্দের অর্থ হলো Before Chris, বঙ্গানুবাদ হলো খ্রিষ্টপূর্ব বা খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। আর AD এসেছে লাতিন শব্দ অহহড় Anno Domini Nostri Jesu Christi  থেকে, যার ইংরেজি অনুবাদ হলো The year of our Lord, বঙ্গানুবাদ হলো খ্রিষ্টাব্দ। সহজ অর্থাৎ যিশুখ্রিষ্টের জন্মবছর থেকে যে বছরের গণনা শুরু করা হয়েছে, তা হলো খ্রিষ্টাব্দ (AD)। আর যিশুখ্রিষ্টের জন্মের আগ থেকে যে বছর গণনা করা হয়, তা হলো খ্রিষ্টপূর্বাব্দ (BC)। এ গণনারীতি অনুযায়ী কোনো শূন্য বছর নেই, অর্থাৎ যিশুখ্রিষ্টের জন্মবছরই হলো খ্রিষ্টাব্দের (AD) প্রথম বছর। আর পূর্বের বছরই হলো খ্রিষ্টপূর্বের (BC) শেষ বছর।
মানবজীবনে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই মানবজাতির জীবন পরিচালনার জন্য পবিত্র আল কোরআনে সময়ের অপচয় ও অনর্থক কাজে ব্যয় করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ইসলামে মানুষের অনর্থক কাজে সময় ব্যয় করার কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কাজেই যখনই অবসর পাও, ইবাদতের কঠোর শ্রমে লেগে যাও এবং নিজের রবের প্রতি মনোযোগ দাও।’ (সুরা ইনশিরাহ : ৭-৮) অন্যত্র উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তারা কি ধারণা করে নিয়েছে তাদের অনর্থক সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের আমার দিকে ফিরে আসতে হবে না? (সুরা আল-মুমিনুন : ১১৫)। সুতরাং মানুষের জীবনে প্রতিটি মুহূর্ত অতীব দামি। প্রবাদ রয়েছে, ‘সময় ও নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না।’ সময় নদীর স্রোতের মতো প্রবহমান। একই জলপ্রবাহে যেমন দুবার ডুব দেওয়া যায় না, তেমনি একই সময়কে দুবার পাওয়া যায় না। পৃথিবীর কোনো শক্তিই সময়ের গতিশীলতাকে রোধ করতে পারে না। সময় কখনো থামতে জানে না, সে আপন গতিতে সদা চলমান। সময় কখনো ক্লান্ত হয় না, তাই তার বিশ্রামেরও প্রয়োজন হয় না। সময়ের গুরুত্ব বোঝাতে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল কোরআনে সময়ের শপথ করে বলেন, ‘সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা আসর : ১-৩)। সময়ের যথাযথ ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ।
সৌভাগ্যবান কারা? একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করা হলো, তিনি বললেন, সৌভাগ্যবান তারা, যারা দীর্ঘায়ু লাভ করেছে এবং তা নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে। অতঃপর আবার জিজ্ঞেস করা হলো, দুর্ভাগা কারা? তিনি বললেন, দুর্ভাগা তারা, যারা দীর্ঘায়ু পেয়েছে এবং তা বদ আমলে কাটিয়েছে বা আমলবিহীন অতিবাহিত করেছে। (তিরমিজি-২৩২৯, মুসনাদে আহমাদ-১৭৭৩৪)। পৃথিবীর সফল মানুষের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা সময়কে গুরুত্ব দিয়েছে, তাই তারা সফল। জীবনে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাইলে এবং পরকালে মহান আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য সময়কে যথার্থভাবে কাজে লাগানো প্রয়োজন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজ হাশরে শেষ বিচারের দিনে প্রত্যেক মানুষ পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া এক পা পর্যন্ত নড়তে পারবে না। প্রশ্নগুলো হলো : তার জীবনকাল কী লক্ষ্যে কাটিয়েছে? যৌবনকাল কী কাজে ব্যয় করেছে? কোন পথে আয় করেছে? কী কাজে ব্যয় করেছে? জ্ঞান অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করেছে কি না?’ (তিরমিজি ৪ : ৬১২/২৪১৬)। আজ আমরা অনেকেই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার পেছনে ছুটে ভুলে গেছি একদিন আল্লাহ তায়ালার দরবারে উপস্থিত হতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদিগকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে, যতক্ষণ না তোমরা সমাধিগুলো দেখতে পাও (তোমাদের মৃত্যু হয়)। এটি কখনো সংগত নয়! অচিরেই তোমরা জানতে পারবে। আবারও বলি, এটি মোটেই সমীচীন নয়; তা তোমরা অনতিবিলম্বে জানতে পারবে। না, তোমাদের নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা মোহগ্রস্ত হতে না। তোমরা (সময়ের প্রতি উদাসীন কর্মে অবহেলাকারীরা) অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে (তাতে প্রবেশ করবে)। পুনশ্চ! অবশ্যই অতি অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম চাক্ষুষ দেখে (তাতে প্রবেশ করে তার শাস্তি ভোগ করে) প্রত্যয় লাভ করবে। অতঃপর অবশ্যই সেদিন তোমাদিগকে প্রদত্ত সব নিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (সুরা তাকাছুর, আয়াত : ১-৮)।
সময়কে কাজে লাগানোর অন্যতম উপায় হলো লক্ষ্য স্থির করা। লক্ষ্যহীন মানুষ সময়ের অপচয় করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে তার বিপরীত পাঁচটি জিনিসের পূর্বে মূল্যায়ন করো ও তার সদ্ব্যবহার করো। তোমার যৌবনকে বার্ধক্যের আগে, সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের আগে, অবসরকে ব্যস্ততার আগে, জীবনকে মৃত্যুর আগে।’ (বায়হাকি-১০২৪৮, মুসনাদে হাকিম-৭৮৪৬)। নয়তো এ সময়ের জন্য আফসোস করতে হবে। কারণ উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কাজটি করতে না পারলে, অসময়ে শত চেষ্টার পরও তা করা সম্ভব হবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(হে রাসুল) যদি তুমি দেখতে! অপরাধীরা যখন তাদের প্রতিপালকের সম্মুখে মাথা নত করে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শুনলাম, এখন তুমি আমাদের পুনরায় (পৃথিবীতে) পাঠিয়ে দাও, আমরা সৎকাজ করব। নিশ্চয়ই আমরা (এখন) দৃঢ়বিশ্বাসী।’ (সুরা আস সাজদাহ : ১২) তাই এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় যতটুকু সময় পাওয়া যায়, আল্লাহর পথে ব্যয় করা উচিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা করো, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।’ (সুরা মুনাফিকুন : ১০-১১)। মানুষকে এমনিতে ছেড়ে দেওয়া হবে না। তাই সকলের উচিত আলস্য, উদাসীনতা ও দুনিয়ার মোহ পরিহার করে সময়কে যথাযথ ব্যবহার করে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার সুধা পান করা। আল্লাহ তায়ালা মানবজীবনে সকলকে প্রকৃত সফলতা ও চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
(কৃতজ্ঞতা স্বীকার : কিছু অংশ গুগল থেকে নেওয়া)
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও গবেষক।

 

কমেন্ট বক্স