Thikana News
০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সাম্প্রতিক ভাবনা

সাম্প্রতিক ভাবনা
মোটাদাগে লোভ হচ্ছে আরও পাওয়ার অদম্য এক বিকৃত ইচ্ছা। আরও অর্থবিত্ত, মান-মর্যাদা, প্রতিপত্তিসহ আরও বহু কিছু নিজের করে পাওয়ার দুর্দমনীয় আকাক্সক্ষা লোভের মধ্যে পড়ে। সে জন্যই দেখা যায়, এসবের অনেক কিছু যথেষ্ট পরিমাণে নিজের কাছে থাকা সত্ত্বেও কিছু মানুষ আরও বেশি সহায়-সম্পদ লাভের জন্য এমন কিছু নেই, যা করতে দ্বিধান্বিত হয়। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের ইতিহাসে এমনই বিকৃত রুচির এক ব্যক্তির নাম শেখ হাসিনা।
লন্ডনের বহুলপ্রচারিত জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইলে (Daily Mail) সম্প্রতি প্রকাশিত এক সংবাদে শেখ হাসিনার বিকৃত লোভের এক চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকাটির ১৯ ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার দলের মন্ত্রী হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক ও শেখ হাসিনাসহ তাদের পরিবারের আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে কমবেশি চার বিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে খবরে বলা হয়। বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে বলে খবরে জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের হাইকোর্টের আদেশে ওই তদন্ত শুরু করা হয়, যেখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চুক্তি সম্পাদনে মধ্যস্থতার সূত্রে ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের ওই প্রকল্প থেকে টিউলিপসহ অন্যরা আর্থিকভাবে লাভবান হন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত রোস্টম কোম্পানির সঙ্গে মস্কোর ক্রেমলিনে ২০১৩ সালে শেখ হাসিনা, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও টিউলিপ সিদ্দিকের উপস্থিতিতে ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অর্থ আত্মসাতের তদন্তে হাসিনা-পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও শেখ রেহানার দেবর হাসিনার প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের নামও রয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে তা থেকে তারা প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। টিউলিপ অবশ্য এ অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। হাসিনা ও তার পরিবার কর্তৃক রূপপুর পারমাণবিক ও কক্সবাজারের মাতারবাড়ি হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রকল্প থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের খবর বিগত বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও মহলে একটি বহুল চর্চিত বিষয়, যদিও ৫ আগস্টের আগে এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করার সাহস কেউ পায়নি।
শেখ হাসিনা, যিনি একসময় বলেছিলেন, তার একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেই হবে। সেই তিনি মাত্র ১০১ টাকার নামমাত্র মূল্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গণভবন আইন করে নিজের নামে লিজ নিয়ে নেন। পরে অবশ্য সেই আইন বাতিল হলে গণভবন হাতিয়ে নেওয়ার তার প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। ছোট বোন শেখ রেহানাকে তিনি ধানমন্ডি ও গুলশানে এক বিঘার চেয়ে বড় জমির ওপর নির্মিত দুটি সুরম্য বাড়ি দেন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে নিজের পৈতৃক ও ৫ নম্বর সড়কে লেকের পাড়ে নিজের স্বামীর বাড়ি (সুধাসদন) থাকা সত্ত্বেও হাসিনা পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পে নিজের ও পরিবারের অন্যান্যের নামে ৬০ কাঠা জমি বরাদ্দ নেন। স্পষ্টত তিনি যে আরও সম্পত্তি অর্জনের লোভ সংবরণ করতে পারেননি, এ থেকে এটা সহজেই বোঝা যায়।
হাসিনার অর্থ লোপাট ও অপচয়ের আরও দু-একটি ঘটনা উল্লেখের দাবি রাখে। বাংলায় একটি প্রবাদ চালু আছে, টাকা লাগে দেবে গৌরী সেন। বাংলাদেশের মানুষের দেওয়া টাকা হাসিনা বিগত দেড় দশক ধরে গৌরী সেনের মতো ব্যয় করেছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে যান চলাচলের সুবিধার্থে হাসিনা তার পিতার নামাঙ্কিত কর্ণফুলী টানেলের উদ্বোধন করেন। প্রথমে এই টানেলের নির্মাণব্যয় ৮৪ বিলিয়ন ডলার ধরা হলেও পরে তা বেড়ে হয় প্রায় ১০৬ বিলিয়ন ডলার। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় টানেল-সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৫ হাজার বর্গফুট জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে নির্মাণ করা হয় বিলাসবহুল সাত তারকা মর্যাদার ৩০টি রেস্ট হাউস। এগুলো প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রীরা, সরকারের ও প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবকাশ যাপন ও ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়। রেস্ট হাউসগুলো শীতাতপনিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থা ও অত্যাধুনিক আসবাবপত্র দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। এ ছাড়া ওই এলাকায় নির্মাণ করা হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ফায়ার সার্ভিস কেন্দ্র, জিমনেসিয়াম ও সুইমিংপুল। দুঃখের বিষয়, ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে রেস্ট হাউসগুলো হাসিনা ও তার দোসরদের পদধূলি লাভ থেকে বঞ্চিত হয়। বর্তমানে এগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। টানেল দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহন থেকে টোল আদায় করে যে অঙ্কের অর্থ পাওয়া যাবে বলে মনে করা হয়েছিল, সেটা না হওয়ায় এই প্রকল্পটি একটি লোকসানি শ্বেতহস্তীতে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু-সংলগ্ন এলাকায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অনুরূপ একটি রেস্ট হাউস প্রকল্পেরও একই দশা হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকার একটি পত্রিকায় শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের ওপর পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই অর্থের ৩৭৮ কোটি টাকা ইতিমধ্যে ব্যয়িত হয়েছে বলে খবরে বলা হয়। এই অর্থের একটি অংশ ভারতীয় চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় নির্মিত ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ ও রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর ছেলে আরশাফ আদনানের প্রযোজনায় বাণিজ্যিক ছবি ‘প্রিয়তমা’ ও ‘রাজকুমার’ নির্মাণে ব্যয় করা হয়, যদিও এই চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণে এত বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয়িত হওয়ার কথা নয় বলে অনেকে মনে করেন। যার মানে হলো, এখান থেকেও বিপুল অর্থ লোপাট করা হয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের বাকি ১৯৬ কোটি টাকা নির্মিত চলচ্চিত্রের তত্ত্বাবধান, রক্ষণ ও পরিবেশনা বাবদ ব্যয়ের জন্য রাখা হয়েছে।
আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থে যারা অপচয় করে তাদেরকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। উপরে বর্ণিত দুর্নীতি ও অর্থ লোপাট ও অপচয়ের কারণে শেখ হাসিনাও কি শয়তানের একজন দোসর হননি? বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইতিমধ্যে হাসিনার বিরুদ্ধে ওঠা গণহত্যা ও বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ নিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। বিচারকাজ যাতে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের পরামর্শক হিসেবে ব্রিটিশ আইনজীবী ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ট্র্রাইব্যুনালে পূর্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে যেভাবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়, এবার সে ধরনের কোনো হস্তক্ষেপ হবে না বলে তিনি জানিয়েছেন। মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা দণ্ডিত না খালাস পাবেন, সেই বিচারের ভার শুধু আদালতেরই থাকা উচিত। স্বৈরশাসক হাসিনা ও তার দোসরদের দ্বারা সংঘটিত অসংখ্য গুম-খুন-হত্যা, দুর্নীতি ও অপকর্মের বিচার ছাড়া তাদেরকে পুনরায় রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হলে সেটা তাদের অপকর্মের শিকার হওয়া সেসব মানুষের প্রতি অবিচারের শামিল হবে বলে সুধীমহল মনে করেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহল ঐকমত্যে আসবেন-সেটাই প্রত্যাশা করি।  লেখক : কলামিস্ট

কমেন্ট বক্স