Thikana News
০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আমার তীর্থের অভিজ্ঞতা

আমার তীর্থের অভিজ্ঞতা
তীর্থ একটি অতীব পবিত্র কাজ, যা হৃদয়ের গভীর থেকে আবির্ভূত হয়। এতে প্রভুর প্রচুর শক্তি ও আশীর্বাদ থাকে। সে জন্য মানুষ তীর্থ সম্পর্কিত লেখা থেকে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারে। রেভাঃ ফাদার স্ট্যানলী গমেজের সঙ্গে আমরা বাঙালি ৭৩টি পরিবার ১৬ জুলাই রাত ১০টায় ইউরোপ তীর্থের উদ্দেশে রওনা দিই। ঘবি New Jersey EWR (লিবার্ট এয়ারপোর্ট) থেকে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করি এবং দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা পর আমরা হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করি। কড়া নিরাপত্তার ভেতর দিয়ে হিথরো বিমানের চেকিং শেষ করে পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষা করি। এক ঘণ্টা পর ইউনাইটেড বিমানে চড়ে পর্তুগালের লিসবনের উদ্দেশে আমাদের প্লেন উড়ে চলে। দীর্ঘ সাড়ে সাত ঘণ্টা পর আমরা পর্তুগালের লিসবনে অবতরণ করি। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স শেষে আমরা বের হয়ে পড়ি। আমরা পর্তুগাল দেশটি দেখতে পাই। হৃদয় আনন্দে ভরে ওঠে। ছোটবেলা থেকে পর্তুগালের নাম শুনেছি এবং স্কুলে ভূগোলের বইয়ে পড়েছি। আজ স্বচক্ষে দেখা ও উপভোগ করার সুযোগ হলো। দেশটি অনেক বড় ও খুবই সুন্দর। এ জন্য প্রভু উজাড় করে এই দেশকে আশীর্বাদ করেছেন। প্রথম রাতে পর্তুগালের একটা হোটেলে উঠি এবং মালপত্র গুছিয়ে আমরা রুমে যাই।
পরের দিন সকাল সকাল নাশতা করে ফাতিমাতে মা মারিয়া যে তিনটি দরিদ্র শিশুর সঙ্গে দর্শন দিয়েছিলেন, তাদের বাড়িতে যাই। তাদের বাড়ি গ্রামে এবং দুই ঘণ্টা পর আমরা তাদের বাড়িতে পৌঁছে যাই। আমরা ঘুরে ঘুরে তাদের বাড়ি দেখি। এই তিনটি শিশুর নাম ছিল লুসি, ফ্রান্সিসকা ও জাসিন্তা। এই শিশুদের ঘরবাড়ি পর্তুগাল সরকার রক্ষণাবেক্ষণ করে অনেক সুরক্ষিত রেখেছে। রাষ্ট্র থেকে এই স্থানকে দর্শন স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। বিশ্বের পরিব্রাজকেরা প্রতিবছর এই স্থান দর্শন করে যান।
পরের দিন ফাতিমার ক্যাথিড্রালের নিকট আমরা একটি হোটেলে উঠি। প্রতিরাত নয়টায় এই ক্যাথিড্রালে আর্চ বিশপ মীসা উৎসর্গ করেন। ১০-১৫ হাজার খ্রিষ্টভক্ত মোমবাতি নিয়ে মীসায় যোগদান করেন। আমরা মীসায় অংশগ্রহণ করেছি। মীসা শেষে মা মারিয়ার মূর্তি নিয়ে প্রসেশন আরম্ভ করে। প্রথমে শিশু, তাদের পেছনে সিস্টার, পরে সাধারণ খ্রিষ্টভক্তরা মোমবাতি জ্বালিয়ে তাদের অনুসরণ করেন। পরে ফাদারগণ ও আর্চ বিশপ সাক্রামেন্ত নিয়ে অগ্রসর হন। এক ঘণ্টা প্রসেশন শেষে ক্যাথিড্রালে ফিরে আসেন। আর্চ বিশপ সাক্রামেন্ত ও মূর্তি রেখে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। প্রতিদিন রাত নয়টায় এই মীসা উৎসর্গ করা হয়। ফাতিমার এই আশীর্বাদ আমাদের সুস্থ, সবল ও কর্মময় রাখবেÑএই আমাদের গভীর বিশ্বাস।
পরের দিন আমরা প্রাচীন রাজাদের মনোরঞ্জনে ষাঁড়ের লড়াইয়ের স্টেডিয়ামে যাই। ঘুরে ঘুরে অনেক কিছু দেখতে পাই। পরে আমরা পর্তুগালের বিখ্যাত আর্ট গ্যালারি পরিদর্শন করতে যাই। সেখানে ঘুরে ঘুরে বিখ্যাত চিত্রকারদের চিত্রগুলো দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই। আমাদের ইন্টারপ্রিটেটার সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেন। বিশ্ববিখ্যাত লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির চিত্রগুলো দেখে প্রাণ ভরে যায়। সত্যিই জীবনে বড় একটা অভিজ্ঞতা। এই সুযোগ কমই পাব।
পরের দিন আমরা বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে দেখে দুপুরের খাবারের পর সাধু আন্তনির গির্জায় যাই। সেখানে গিয়ে আমরা দুটি পুরোনো গির্জা দেখতে পাই। গির্জাগুলো লোকে লোকারণ্য। একটা গির্জায় প্রবেশ করে ঘুরে ঘুরে সাধু আন্তনির ব্যবহার করা জিনিসপত্র, লাইব্রেরি ও তার মূর্তি দেখতে পাই। হৃদয়ে অনেক ভক্তি বেড়ে যায় এবং পাশের আরেকটা গির্জায় বাংলায় মীসা শুনতে যাই। গির্জায় বিভিন্ন ভাষাভাষীর ভক্তরা উপস্থিত থেকে বাংলা মীসা শোনেন।
রেভারেন্ড ফাদার স্ট্যানলী ও আরেকজন ফাদার বাংলায় মীসা উৎসর্গ করেন। বাংলা গানে আমরা গির্জা মাতিয়ে তুলি। পাদুয়ার সাধু আন্তনির গির্জায় এই প্রথম মীসা উৎসর্গ হয়। আনন্দে ভরে ওঠে আমার হৃদয়। মীসা শেষে ফাদার স্ট্যানলী আমাদের ৫০, ৪০ ও ২৫ বছরের সবার বিবাহবার্ষিকীর আশীর্বাদ নবায়ন করেন ও আশীর্বাদ দেন। ৭৩ বাঙালি পরিবারও এই আশীর্বাদে অংশীদার হন।
এই তীর্থে এসে অনেক অপরিচিত ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে এসে অনেক অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। এটা আমার বিরাট একটা অর্জন। পরের দিন সকালে আমরা স্পেনের উদ্দেশে রওনা হই। ভূগোলে স্পেনের বিষয়ে আমরা শুনেছি। পর্তুগাল থেকে স্পেন ১২ ঘণ্টার দূরত্ব। আমরা সকাল আটটায় স্পেনের উদ্দেশে রওনা হই। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ। গাড়িতে আমরা গান, কবিতা, কৌতুক, চুটকির মধ্য দিয়ে সময় কাটাই।
আমাদের ভ্রমণ অনেক আনন্দের হয়েছে, যা ভোলার নয়। এই সবকিছু জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে।
পরের দিন আমরা অনেক আনন্দ নিয়ে লুর্দের রানির দেশে রওনা দিই। হৃদয়ে কত আনন্দ। বাসে বসে বিচিত্র আলাপ-আলোচনায় সময়কে সুন্দরভাবে অতিবাহিত করি। সকাল ১০টায় গাড়ি থেমে যায় চা, কফি ও হালকা নাশতার জন্য। পরে গাড়ি ছেড়ে যায়। আনন্দে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। দুপুর দুইটায় লাঞ্চের জন্য আমাদের গাড়ি থামে। এক ঘণ্টা লাঞ্চ বিরতির পর আমরা পুনরায় গাড়িতে উঠি। কথাবার্তার মধ্য দিয়ে আমাদের সময় কাটে। রাত আটটায় আমরা লুর্দের এক হোটেলে উঠি। আমরা নিজেদের মালপত্র সংগ্রহ করে নিজ নিজ রুমে চলে যাই ও বিশ্রাম করি। পরে রাতে আমরা হোটেলে যাই ও ডিনার করে রুমে ফিরে আসি।
পরের দিন সকাল আটটায় আমরা গাড়িতে চড়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও উঁচু গির্জা দেখতে যাই। এত উঁচু ও বড় গির্জা পবিত্র পরিবারের গির্জা বলে সবার কাছে পরিচিত। গির্জাটি আরও উঁচু হবে। কাজ চলছে। আমরা প্রাণভরে ঘুরে ঘুরে দেখে নিলাম। পরিব্রাজকেরা দেখছে এবং ফটো তুলছে। আমরাও ফটো নিলাম। অনেক আনন্দে হৃদয় ভরে গেল।
পরের দিন আমরা সাধ্বী বার্নাডেটের বাড়ি ভ্রমণ করতে যাই। এই সাধ্বীর সঙ্গে মা মারিয়া দর্শন দিয়েছিলেন। তিনি খুবই দরিদ্র ঘরের সন্তান ছিলেন। তিনি মা ও বাবাকে প্রতিটি কাজে সাহায্য করতেন। ঘরে এখনো থালাবাটি, চামচ, বেলুন, চরকা ও অনেক পুরোনো ব্যবহৃত সামগ্রী দেখতে পেলাম। সবকিছু এখনো সুরক্ষিত আছে।
বাড়িঘর ঘুরে ঘুরে দেখি ও ফটো নিই। আমাদের কোমল হৃদয়ের মাঝে এই সাধ্বীর জীবনধারা সঞ্চিত থাকবে। এই সাধ্বীর আশীর্বাদ আমার জীবনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
আমরা রেভাঃ ফাদার স্ট্যানলীর কাছে অনেক ঋণী। তিনি আমাদের অনেক দেশে তীর্থভ্রমণে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমরা ৭৩টি পরিবার সুস্থ দেহে আমেরিকায় ফিরে এসে আমাদের বন্ধুবান্ধবকে তীর্থে যাওয়ার জন্য উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দেব। প্রভু সবাইকে সুস্থ রাখুন।

কমেন্ট বক্স