Thikana News
০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শুভ বড়দিন প্রেম এবং ভালোবাসা

শুভ বড়দিন প্রেম এবং ভালোবাসা
প্রেম এবং ভালোবাসা, স্রষ্টার সৃষ্টি প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই বিদ্যমান। তবে প্রেম-ভালোবাসার প্রকৃতি নির্ভর করে আবার সম্পর্কের ভিত্তিতে, যা কেবল মানুষ নামক প্রাণিকুলের মধ্যেই দেওয়া যায়। অন্য প্রাণীদের মধ্যে নয়। একটা নির্দিষ্ট বয়সসীমার কাছাকাছি আসার পরে প্রত্যেক নর-নারী বিপরীত লিঙ্গের কারও প্রতি ভিন্ন রকম প্রেম-ভালোবাসার অস্তিত্ব অনুভব করে। অর্থাৎ পরিবারের মা-বাবা-ভাইবোন অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ব্যতিরেকে একজন পুরুষ একজন নারীর প্রতি আবার একজন নারী একজন পুরুষের প্রতি। এই প্রেম-ভালোবাসা তাদের দুজনকে একে অপরের কাছে আসতে শেখায়, তাদেরকে সংসার করতে শেখায়, জীবনে-মরণে একসঙ্গে থাকতে শেখায়।
তাই বলা যায়, প্রেম-ভালোবাসা সনাতন। এ রকমই প্রেম-ভালোবাসার মশগুল ছিলেন যোসেফ ও মারিয়া। ইতিহাসে আমরা এ রকম আরও অনেক অনেক প্রেম ও ভালোবাসার কাহিনি পাব। ২০২৪ বছর পূর্বে যিশুখ্রিষ্টের জন্মের আগে তাঁর মা এবং বাবার প্রেম-ভালোবাসা, যা ছিল স্বর্গীয় ও পবিত্র। তাঁদের প্রেম-ভালোবাসার জন্য তাঁদের পরিবার তাঁদের দুজন এনগেজমেন্ট করিয়ে রাখলেন। সে জন্য বলা হয় মারিয়া ছিলেন যোসেফের বাগদত্তা। ধর্মভীরু নারীদের মধ্যে মারিয়া হলেন প্রথমা। স্রষ্টার প্রতি ছিল তাঁর অগাধ ভক্তি ও বিশ্বাস। একটা নিয়মতান্ত্রিক ধর্মীয় জীবনযাপন করতেন। সে কারণে ঈশ্বর পরিকল্পনা করলেন মারিয়ার মাধ্যমে তিনি জগতের মানুষের মুক্তির পথ খুঁজে বের করবেন।
এই রকম এক রাতে মারিয়া যখন প্রার্থনায় রত, তখন স্বর্গদূত তাঁর সামনে হাজির হলেন এবং বললেন, ভয় পেয়ো না মারিয়া, ঈশ্বরের মহাপরিকল্পনায় তুমি গর্ভবতী হবে এবং এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেবে। যাঁর মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্কের সূত্রপাত হবে। যাঁর নাম রাখতে ইম্মানুয়েল অর্থাৎ আমাদের সহিত ঈশ্বর। যিনি হবেন জগতের মানুষের ত্রাণকর্তা। আর তুমি হবে জগতের মা। মারিয়া বললেন, আমি যে কুমারী। স্বর্গদূত বললেন, সে জন্যই ঈশ্বর তোমাকে মনোনীত করেছেন, যেন তাঁর মহিমা প্রকাশের জন্য তাঁর একজাত পুত্র কোনো কুমারীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। মারিয়া বললেন, ঈশ্বরের ইচ্ছাই পূর্ণ হোক।
মারিয়া গর্ভবতীÑএই কথা শোনার পর যোসেফ রাতের অন্ধকারে মারিয়াকে ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করবেন, কিন্তু স্বর্গদূত তাঁকে দেখা দিয়ে বললেন, যোসেফ, মারিয়াকে গ্রহণ করো, সে পবিত্রা, নারীকুলে ধন্যা, ঈশ্বর তাঁর আপন একজাত পুত্রকে মনুষ্যকুলের পাপ মোচনের জন্য মারিয়ার মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন। যোসেফ তার ভুল বুঝতে পারলেন এবং মারিয়াকে গ্রহণ করলেন। যোসেফ মারিয়ার প্রেম-ভালোবাসা এবং মারিয়ার ঈশ্বরভক্তি, প্রেম-ভালোবাসার মানবজাতির মুক্তির লক্ষ্যে পরম করুণাময় ঈশ্বরের মনুষ্যপুত্র মুক্তিদাতা প্রভু যিশুর জন্ম এ ধরাধামে।
ঈশ্বরের মহাপরিকল্পনায় মারিয়া গর্ভবতী হওয়ার পরের ইতিহাস আমরা সবাই জানি।
Happy Merry Christmas, বাংলায় শুভ বড়দিন এবং অন্যান্য ভাষায় যেভাবেই বলা হোক না কেন ‘আজ শুভ বড়দিন’। সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা। পৃথিবীব্যাপী আজ মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে খ্রিষ্টধর্মীয় বিশ্বাসীদের ত্রাণকর্তা, মুক্তিদাতা প্রভু যিশুখ্রিষ্টের শুভ জন্মদিন। পৃথিবীব্যাপী খ্রিষ্টধর্মীয় বিশ্বাসীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
আমি মনে করি, অন্যান্য ধর্মীয় প্রধান উৎসব মানুষকে যে শিক্ষা দেয়, শুভ বড়দিন প্রভু যিশুর জন্মদিনও সবাইকে সেই শিক্ষাই দেয়। আদম ও হবা থেকে শুরু করে যিশুখ্রিষ্টে বিশ্বাসীরা যিশুখ্রিষ্টতে মুক্তির পথ দেখে ওখানেই থেমে যান, আর তারপর ৫৭০ বছর পরে পয়গম্বর বা মেসেঞ্জার হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে মুক্তির পথ হিসেবে যে বিশ্বাসীরা আছেন, তা ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাসী। কিন্তু ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাসীরা যিশুখ্রিষ্ট বা ঈসা মসীহকেও মানেন, তবে প্রধান হিসেবে নয়। তারা মানেন একজন নবী বা মেসেঞ্জার পয়গম্বর হিসেবে।
খ্রিষ্ট বিশ্বাসীরা শুভ বড়দিনে বিভিন্ন প্রতীক কেন ব্যবহার করেন। এই প্রতীক ব্যবহারের ইতিহাস আমরা যদি যিশুকে ভালোভাবে বুঝি, তাহলেই বুঝতে পারব।
যোসেফ ও মারিয়া যখন রাজা হেরোদের ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন এবং বেথলেহেম নগরে ছিলেন, তখন মারিয়ার ভীষণ প্রসববেদনা উঠল। তখন যোসেফ সেই রাতে কোথাও জায়গা না পেয়ে কোনো এক বাড়ির গোয়ালঘরে (সেখানে গরু-ছাগল থাকে) প্রচণ্ড শীতের রাতে আশ্রয় খুঁজে নিলেন। আর সেখানেই জন্ম নিলেন আমাদের মুক্তিদাতা প্রভু যিশুখ্রিষ্ট। সে জন্যই বড়দিনের সময় সব চার্চের সামনে দেখা যায়, সেই রকম গোশালা। গরু, বাছুর, ভেড়া ও ছাগল এবং পশুগুলো যে গামলায় খায়, সেখানে যিশু শুয়ে আছেন, পশুখাদ্য খড়ের বিছানায়।
পাইন গাছ বা পাইন ট্রি বা ক্রিসমাস ট্রি এবং সেই গাছের ওপর উজ্জ্বল তারা ব্যবহার করা হয়। যিশু যখন জন্মগ্রহণ করলেন, তখন পূর্বদেশীয় তিনজন পণ্ডিত বা গবেষণাবিদ, তারা এই তারা দেখে গবেষণা করে দেখলেন, মানবমুক্তির জন্য ঈশ্বরের মহাপরিকল্পনায় এক নতুন রাজা জন্মেছেন। তখন এই তিন পণ্ডিতÑস্বর্ণ, কুর্ণ আর গন্ধরস নিয়ে সে রাতেই বের হলেন মুক্তিদাতাকে প্রণাম করার জন্য। যে কারণে তারা (ঝঃধৎ) যিশুখ্রিষ্টের জন্মের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই তারা যিশুখ্রিষ্টের জন্মের বারতা বয়ে নিয়ে এসেছিলেন, এমন তারা আজ অবধি আর কখনো দেখা যায়নি।
ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে যে গাছ ব্যবহার করা হয়, তার নাম আসলে পাইন ট্রি, যে গাছ কাগজ উৎপাদনের জন্যও ব্যবহার করা হয়। ব্যবহার করা হয়, না বলে বলা যায়, এ গাছ থেকে কাগজ উৎপন্ন হয়। যিশুকে মারার জন্য যে ক্রসটি তৈরি করা হয়, তা ছিল এই পাইন ট্রি। পাইন ট্রি, গাছ দিয়েই যিশুর জন্য ক্রস তৈরি করা হয়।
তাই তো যুগে যুগে প্রভু যিশুর জন্মদিনে, প্রেম ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে খ্রিষ্ট বিশ্বাসীরা ব্যবহার করে আসছেন গোশালা, উজ্জ্বল তারা, ক্রিসমাস ট্রি। আর প্রভু যিশুর জীবনী অধ্যয়ন করলে আমরা দেখতে পাই, সেখানে প্রেম, ভালোবাসা আর ক্ষমার এক মহামিলন। তাই তো শুভ বড়দিন বা  Merry Christmas আমাদের শিক্ষা দেয় প্রেম ও ভালোবাসার এক মহা সেতুবন্ধন তৈরি করতে। ক্ষমা করে সবাইকে বুকে টেনে নিতে। প্রভু যিশু বলেছেন, যে তোমাকে একগালে চড় মেরেছে তার জন্য অপর গালটি পেতে দাও, তারপরও তাকে ক্ষমা করে দাও। এমন ক্ষমার দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে বিরল।
সবাইকে শুভ বড়দিনের শুভেচ্ছা। শুভ বড়দিন।
 

কমেন্ট বক্স