যিশু খ্রিস্টের জন্ম হয়েছিলো যোসেফ ও মারিয়ার অতি দীনহীন পরিবারে। পবিত্র বাইবেলে উল্লেখ আছে, যিহুদিয়া প্রদেশের বেথলেহেমের এক গোয়ালঘরে তাঁর জন্ম হয়েছিলো। ইহুদি যুবক যোসেফ (ইউসুফ)-এর সাথে বাগদত্তা মারিয়া (মরিয়ম) বিয়ের আগেই হয়েছিলেন সন্তানসম্ভবা! বিষয়টি জানতে পেরে যোসেফ, মারিয়াকে ভাবী স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে চাইলেন না। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, মারিয়ার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন না। আর সেই সময় স্বর্গদূত গাব্রিয়েল স্বপ্নে যোসেফকে বললেন, তিনি যেনো ভয় না করেন। তিনি যেনো মারিয়াকে ভুল না বোঝেন। মারিয়া এবং যোসেফের বেলায় যা ঘটতে যাচ্ছে, তাতে মানুষের কোন ভূমিকা নেই। এতে মহান সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের ইচ্ছা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। মারিয়ার গর্ভে যিনি আসছেন, তিনি শান্তিরাজ, মানুষের মুক্তিদাতা। যাঁর আগমন সম্পর্কে বিভিন্ন নবী এবং ভাববাদীরা পবিত্র শাস্ত্রে লিখে গিয়েছেন। পবিত্র আত্মার শক্তিতেই মারিয়ার গর্ভে সন্তান এসেছে। যোসেফ তাঁর মত পাল্টালেন। এবং যোসেফের জানার আগেই মারিয়া জানতে পারেন, তিনি গর্ভধারণ করেছেন। ধার্মিকা এই বিদূষী পরিশীলিতা সুন্দরী তরুণী, নিজেকে ইসরায়েল রীতিনীতির মধ্যে আবদ্ধ রেখেছিলেন। পারিবারিক এবং সামাজিক প্রথামতো যুবক পরিশ্রমী ইহুদি কাঠমিস্ত্রি যোসেফের সাথে বাগদত্তা হওয়ার পর স্বর্গদূতের কণ্ঠ শুনতে পান তিনি। স্বর্গদূত জানালেন, মারিয়া তাঁর গর্ভে সন্তান ধারণ করেছেন! এতে মারিয়া অবাক হলেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন, এ ঘটনা কীভাবে হচ্ছে? তাঁর তো বিয়েই হয়নি! স্বর্গদূত তাঁকে বলেন, মহান সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের বেলায় কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। তাঁর মাধ্যমে তিনি তাঁর উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে যাচ্ছেন। মারিয়া নিজেকে ‘প্রভূর দাসী’ ব’লে স্বর্গদূতের প্রস্তাবে সম্মতি প্রদান করেন।
সে সময় আদম শুমারিতে নিজেদের নাম যুক্ত করার জন্য, যিশু খ্রিস্টের মা মারিয়া এবং পালক-পিতা যোসেফ সে সময় গালিলিয়ার নাসারেথ থেকে যিহুদিয়াস্থ বেথলেহেমের দাউদ নগরে গিয়েছিলেন। হঠাৎ তাঁর প্রসববেদনা শুরু হয়। যোসেফ হণ্যে হয়ে নিরাপদআশ্রয় খুঁজে ব্যর্থ হন। মানুষের কোন বাড়িতে বা পান্থশালায় তিনি মারিয়াকে নিয়ে যেতে পারেননি। কোন উপায় করতে না পেরে, অবশেষে বাধ্য হয়েই রাখালদের গবাদিপশুর রাখার জন্য একটি গোয়ালঘরে মারিয়াকে নিয়ে ওঠেন। সেখানেই ইহুদিবংশের অতিদরিদ্র কাঠমিস্ত্রির পরিবারে শীতার্ত রাতে জন্ম হয় যিশু খ্রিস্টের। মারিয়া তাঁর নবজাত শিশুকে কোনোমতে নিজেদের পরণের কাপড়ে জড়িয়ে গবাদিপশুর খাদ্য খড়কুটোয় তাঁদের আদরের ধনকে জড়িয়ে জাবপাত্রে রেখেছেন প্রচন্ড শীত থেকে রক্ষা করার জন্য। যিশু খ্রিস্টের জন্মের পরপরই স্বর্গীয়দূত প্রান্তরে অন্যান্য পশুশালায় অবস্থানরত রাখালদের দেখা দেন। তাঁর দিব্যমূর্তি দেখে রাখালরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। স্বর্গদূত তাদের অভয় দিয়ে বলেন, ‘ভয় করো না। কেনোনা দেখো, আমি তোমাদেরকে মহানন্দের সুসমাচার জানাচ্ছি। সেই আনন্দ সমুদয় লোকেরই হবে। কারণ, আজ দাউদনগরে তোমাদের জন্য ত্রাণকর্তা জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি যিশু খ্রিস্ট! তোমরা যাও সেখানে। তাঁকে তাঁর মা-বাবার সাথে দেখতে পাবে। তোমরা দেখতে পাবে, তাঁকে কাপড়ে জড়িয়ে পশুদের খাবারের পাত্রে শুয়িয়ে রাখা হয়েছে।’ [পবিত্র বাইবেলের লূক লিখিত সুসমাচার : ২ অধ্যায়, ১০-১২ পদ]।
স্বর্গদূতের দেয়া সেই আনন্দবার্তা হলো, ঈশ্বর মানুষ হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নিলেন। তিনি মানুষের ত্রাণকর্তা রূপে, এ জগতে আবির্ভূত হলেন।
আনন্দে অভিভূত রাখালরা তৎক্ষণাৎ ব্যতিব্যস্ত হয়ে সবাই ছুটে যায় সেই গোয়ালঘরে। তারা সেখানে, স্বর্গদূতের বর্ণনা মতো ঠিকই দেখে, মা-বাবার সান্নিধ্যে যাবপাত্রে শায়িত ফুটফুটে সুন্দর শিশুকে। তিনিই মানবের ত্রাণকর্তা যিশু খ্রিস্ট! তারা তাঁকে রাজার সম্মান দিয়ে প্রণাম করে। শ্রদ্ধা জানায় এবং নেচে-গেয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করে।
সে সময় প্রাচ্যের তিনজন জ্যোতির্বিদ পণ্ডিত তাঁদের অধিবিদ্যা মতে যিশু খ্রিস্টের জন্ম সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে, বেথলেহেমের উদ্দ্যেশে যাত্রা করেন। তখন তাঁরা ঊর্ধ্বাকাশে একটি নতুন তারকা দেখে পণ্ডিতেরা নিশ্চিত হন, সত্যই পবিত্র শাস্ত্রে বর্ণিত ইসা মসিহ বা ত্রাণকর্তা জন্মগ্রহণ করেছেন। এই তারকা তাঁদের প্রতি মহান সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা ও প্রতাপের নিদর্শন।
যিহুদিয়ায় পৌঁছে পণ্ডিতরা সরাসরি শাসনকর্তা হেরোদের রাজপ্রাসাদে গিয়ে হাজির হন। তাঁরা হেরোদের সাক্ষাতে তাঁকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘যিহুদীদের যে ভাবী রাজা জন্মেছেন, তিনি কোথায়? আমরা তাঁর নিদর্শন একটি তারা দেখে নিশ্চিত হয়েছি! আমরা তাঁকে সম্মান জানাতে এবং প্রণাম করতে এসেছি। তাঁর সম্পর্কে আমরা শাস্ত্রে পড়েছি, তিনি ইস্রায়েলকে শাসন এবং পালন করবেন।’
হেরোদ পণ্ডিতদের কথা শুনে খুশি হতে পারেননি। ‘যিহুদীদের ভাবী রাজা’ বলতে তাঁরা যার কথা বলছেন, তিনি নিশ্চিত তাঁরই প্রতিপক্ষ। হেরোদ পণ্ডিতদের গোপনে ডেকে আকাশে উদিত নতুন তারকার বিষয়ে তথ্য-তালাশ নিলেন। তিনি পণ্ডিতদের বললেন, ‘আপনারা বেথলেহেমে যান। তাঁর খোঁজ করুন। তাঁর সঠিক অবস্থান আমাকে জানান। আমিও, আপনাদের মতো তাঁকে সম্মান জানাতে এবং প্রণাম করতে চাই।’
রাজপ্রাসাদ থেকে বের হয়ে পণ্ডিতরা আকাশে আবার সেই তারকা দেখতে পান। তাঁরা দেখেন, তারকাটি তাঁদেরকে পথনির্দেশ করে আগে আগে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। এক সময় তারকাটি স্থির হয়ে যায়। পণ্ডিতরা সামনে একটি জীর্ণ গোয়ালঘর দেখতে পান। তাঁরা আগ্রহ নিয়ে সেই গোয়ালঘরের দিকে এগিয়ে যান। কাছে গিয়ে মা-বাবা, রাখাল এবং গবাদিপশু পরিবেষ্টিত যাবপাত্রে একটি শিশুকে দেখতে পান। পণ্ডিতরা নিশ্চিত হন, এই শিশুই যিশু খ্রিস্ট। যাঁর আগমনের কথা শত শত বছর পূর্বেই ভাববাদিরা, প্রবক্তারা শাস্ত্রে স্পষ্ট করেই লিখে গেছেন। তাঁরা এগিয়ে গিয়ে মারিয়া এবং যোসেফকে সসম্মানে শুভেচ্ছা জানান। জাবপাত্রে শায়িত শিশুকে প্রণাম করেন। তাঁর জন্য আনা সম্মানের প্রতীক স্বর্ণ, কুন্দুরু, গন্ধরস, বিভিন্ন উপঢৌকন প্রদান করেন। ফেরার পথে স্বর্গীয়দূত স্বপ্নে তাঁদেরকে রাজা হেরোদের দরবারে যেতে মানা করেন।
তাঁদেরকে বলা হয়, অন্য পথে তাঁরা যেনো নিজেদের দেশে ফিরে যান। পণ্ডিতরা তাই করেন।
পণ্ডিতদের ফিরতি দেখা না পেয়ে হেরোদ বিচলিত হয়ে পড়েন। কথিত নবজাত শিশুকে তিনি তাঁর প্রতিপক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গণ্য করেন। তিনি ঘোষণা করেন, রাজ্যের সমস্ত পরিবারে অনুসন্ধান/ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে প্রথমজাত দুই বৎসর এবং তার কম সমস্ত পুত্রসন্তানদের যেনো হত্যা করা হয়। তার আগেই স্বর্গদূত স্বপ্নে মারিয়া ও যোসেফকে আদেশ করেন, তাঁরা যেনো গোপনে তাঁদের নবজাত শিশুকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ মিশরে গিয়ে আশ্রয় নেন।
স্বর্গদূত বলেন, ‘যতদিন আমি তোমাদের না বলি, ততোদিন সেখানে থাকো। কারণ, হেরোদ তোমাদের এই শিশুকে হত্যা করার জন্য উন্মাদ হয়ে উঠেছে।’
মারিয়া ও যোসেফ স্বর্গদূতের আদেশ মোতাবেক রাতের আঁধারে, একটি গাধায় চড়ে যিশুকে নিয়ে মিশরে চলে যান। তাঁরা সেখানে হেরোদের মৃত্যু পর্যন্ত অবস্থান করেন। এদিকে হেরোদের অনুগত বাহিনী, যিহুদিয়ার ঘরে ঘরে তল্লাসি করে এবং তার আদেশমত কাজ করে। এ সময় যিহুদিয়ার ঘরে ঘরে কান্নার রোলে, করুণ আর্তনাদের এবং হাহাকারে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। কয়েক বৎসর পর হেরোদের মৃত্যুর পর, স্বর্গীয় দূতের বার্তা পেয়ে মারিয়া-যোসেফ শিশু যিশুকে নিয়ে তাঁদের আবাসভূমি গালিলের নাসারতে ফিরে আসেন।
এই জগতে শান্তির রাজ্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে নস্যাৎ ও প্রতিহত করতে স্বার্থান্বেষী প্রতিক্রিয়াশীলচক্র উন্মাদ হয়ে ওঠে। বিশ্বের ইতিহাস তার সাক্ষ্য দেয়। নিজেদের ক্ষমতা ‘চিরস্থায়ী’ এবং নিষ্কণ্টক করতে তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে! নিজেদের স্বার্থোদ্ধার করতে, নির্বিচারে নারী নির্যাতন, নিরস্ত্র মানুষ হত্যা, এমন কি নিষ্পাপ অবোধ শিশুহত্যার মত জঘন্য প্রবৃত্তিতেও পাশবিক উন্মত্ততায় মত্ত হয়ে ওঠে। এমন নজির এখনও এ বিশ্বে চলমান রয়েছে। বর্তমান পৃথিবী লাগাতার যুদ্ধের ডামাডোলে তটস্থ। অতি সাম্প্রতিক কালের রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে অগণিত শিশুসহ নারী-পুরুষ তথা শান্তিবাদী সাধারণ মানুষ সংঘাতের বলি হচ্ছে। তারা অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার শিকার হচ্ছে। করোনার রেশ কাটিয়ে ওঠার আগেই, মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়াবার আগেই এই অপ্রত্যাশিত যুদ্ধ সারাবিশ্বকে, বিশ্বের সব মানুষকে ঠেলে দিয়েছে আরেক বিপর্যয়ের মুখে। বিশ্বময়, দেশে দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা দিনে দিনে প্রকট আকার ধারণ করছে। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের চলমানযুদ্ধ বন্ধে দু’পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ ও সন্ত্রাস শুধু বেসামরিকদের জন্য মৃত্যু ও দুর্দশাই ডেকে আনে! স্থায়ী কোনো সমাধান দেয় না!’ একইসঙ্গে বিবদমান দুই পক্ষের কাছে থাকা জিম্মিদের মুক্তি দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি। বর্তমান বিশ্বে এটা স্পষ্টতই দৃশ্যমান, ধর্ম, ভু-রাজনীতি, ভূ-অর্থনীতি ইত্যাদির আবরণে পেশীশক্তি ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত ও দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের বলয়ে আবদ্ধ করে, নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়ার হীনপ্রবৃত্তিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পরাশক্তিগুলো। এতদচিত্র সামনে রেখে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘যুদ্ধ বন্ধে, নিরাপত্তাপরিষদ কার্যত কিছুই করতে পারছে না!’ আসলেই, গোটা বিশ্ববাসী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাদের উপর নির্ভর করে, তাঁরাই এখন গোটা বিশ্বে তাদের নিজেদের ক্ষমতার ও শক্তির অক্ষ এবং বলয় তৈরি করে তার প্রসার ঘটাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ক্ষমতার ও শক্তির মহড়া দেখাচ্ছে! কোন কোন দেশকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক চাপে রাখছে। ‘স্যাংশন’ দিচ্ছে। উপর্যুপরি আরো কিছু করার হুমকি দিচ্ছে! ক্ষমতার এক মেরু ধমক দিচ্ছে! অন্য মেরুও পাল্টা ধমক দিচ্ছে! কেহই ছাড় দিতে রাজী নয়! এই দৃশ্য দেখে সততই মনে হচ্ছে, বিশ্ববাসীর আকাক্সিক্ষত ‘বিশ্বশান্তি’ সুদূরপরাহত হয়েই আছে! প্রকৃত অর্থে, বিশ্ববাসী এখন দেখতে চায় দোদুল্যমান এই বিশ্বের ভাগ্যাকাশে উদিত শান্তির নতুন তারকা! এই তারকা বিশ্ববিবেক প্রাজ্ঞজনদের সঠিক পথে অগ্রসর হওয়ার দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। এই বিশ্বে শান্তির পক্ষে, সমস্ত প্রতিষ্ঠান একযোগে রাষ্ট্রনেতৃবৃন্দ সবাইকে একই ঐকমত্যে সমবেত করতে পারেন কায়মনোবাক্যে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে সবাই।
প্রাচ্যের তিন জ্যোতির্বিদ পণ্ডিত যেমন দীর্ঘ বন্ধুরপথ পাড়ি দিয়ে ‘শান্তিরাজ’ যিশুর সন্ধানে ছুটে গিয়েছিলেন এবং তাঁর পাদমূলে নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন, ঠিক তেমনই তাঁদের ভুমিকায় বর্তমান বিশ্বনেতাদের অগ্রসর হতেই হবে। এই বিশ্বকে, বিশ্ববাসী সবাইকে স্বর্ণ, কুন্দুরু এবং গন্ধরসের মোড়কে ‘বিশ্বশান্তি’ উপঢৌকন দিতে হবে। এই বড়দিনের পর পরই বিশ্ববাসী সবাই নতুন বছর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দকে বরণ করবে।
সারা বিশ্বে চলমান রয়েছে লাগাতার যুদ্ধ-বিগ্রহ। ক্রমেই মানুষের মনে ছড়িয়ে পড়ছে অস্থিরতা। এ সময় সারা বিশ্বে শান্তি রক্ষায় শান্তিবাদী মানুষ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের মূল্যবোধে চলা এবং ধর্মীয় প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সাথে সবার জীবনে আশার আলো জ্বালাতে পারা হলো মহান সৃষ্টিকর্তার কাজ। মানুষ সবাইকে শান্তির একই শামিয়ানার ছায়াতলে দাঁড় করিয়ে এই জগতে ঈশ্বরের শান্তির রাজ্য প্রতিষ্ঠা করাই হলো বড়দিনের মূল শিক্ষা। খ্রিস্টিয় বিশ্বাসের মূলভিত্তি হলোÑ প্রেম এবং অনুগ্রহ। ঈশ্বর চূড়ান্তভাবে তাঁর অনুগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাঁর একজাত পুত্র যিশু খ্রিস্টকে জগতের পরিত্রাণের জন্য দান করে। তাই বড়দিন, মহান ঈশ্বরের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। অনুগ্রহের মহিমায় সমুজ্জ্বল। তাঁর সেই ত্যাগ ও অনুগ্রহ অতীব মূল্যবান। কেবলমাত্র ক্ষমা করতেই যিশু খ্রিস্ট তাঁর জীবন দেননি। তিনি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে জীবন দিয়েছেন। তিনি তাঁর জীবন দিয়ে, মানুষের জন্য নিশ্চিত স্বর্গীয় মুক্তি ক্রয় করেছেন।
ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শয়তানের কার্যকারিতার ফল ও পাপের দাসত্ব থেকে মানুষকে মুক্ত করতে যিশু খ্রিস্ট এ জগতে মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েছেন। মহান সৃষ্টিকর্তা, মহাপবিত্র ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষকে সম্মিলিত করতে, স্বর্গীয় অনন্তজীবনের আধিকারিক করতে, যিশু খ্রিস্ট তিনি এ জগতে এসেছেন।
এই বড়দিনে আমাদের সবার প্রত্যাশা, প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেনো শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। বিশ্বের নেতৃবৃন্দ সবাইকে ‘শান্তিরদূতের’ ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
এবারের বড়দিনের পূণ্যলগ্নে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে জানাই আন্তরিক ‘শুভবড়দিন’-এর শুভেচ্ছা! আসন্ন নববর্ষ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ সবার জন্য বয়ে নিয়ে আসুক আনন্দের, শান্তির ও সমৃদ্ধির নববারতা!
শুভ বড়দিন! শুভ খ্রিষ্টিয় নববর্ষ ২০২৫!