একদা একসময়ের মাস্টার মানুষ। ভাবখানা যেন একদা একসময়ের এক মুঘল সম্রাট। নাম তার সম্রাট শাহজাহান। শৌর্যে-বীর্যে, প্রেমে অতুলনীয়। তাই তো শ্রমিকের ঘাম নিংড়ে প্রেমের উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করতে প্রেয়সী মমতাদের নামে নিজে জগদ্বিখ্যাত একজন হয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিতে সমর্থ হয়েছিলেন। প্রেমহীন এ বিশ্বে প্রেমের বড় আকাল। তাই তো মমতাদের প্রেমবিলাসের সোপান বেয়ে সম্রাট শাহজাহান পৃথিবীর এক অতুলনীয় উদাহরণ স্থাপন করে হয়ে উঠেছেন অপরূপ এক প্রেমিক।
হ্যাঁ, বলছিলাম একদা একসময়ের এক মাস্টার মানুষের কথা। আজ সে অস্তগামী এক সূর্য। কিংবা বলা যায় অপ্রয়োজনীয় এক অকর্মা। সেই যে ৪০ বছর বয়স নিয়ে দস্তয়ভস্কি তার ‘নোটস ফ্রম’ আন্ডারগ্রাউন্ডে এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন, ৪০ বছরের বেশি বেঁচে থাকা অনৈতিক। কেবল নির্বোধ আর অপকর্মরাই বেঁচে থাকে।
কথাটির যথার্থতা থাকলেও অপমানিত বোধ হয়। কারণ সত্যকে মেনে নেওয়ার সৎ সাহস যে নেই। কখনো ছিল কি না, তা-ও মনে পড়ে না। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে নিজেকে যথাচিতভাবে উপস্থাপন করতে না পারার কারণ বলে তুলে ধরি। প্রচণ্ড তুষারপাতের মধ্যে উদ্দেশ্যহীন তাকিয়ে থাকি। আত্মশুদ্ধি জীবনে অনিবার্য কি না ভাবতে চাই না। এই নভোবতে ভারতেই ভাবনার জগতে নড়েচড়ে বসা। ধার করা কিছু কথা শ্রবণ ও বয়ান করাই যে আজন্ম অভ্যাস। নিজের রিক্ত ঝুলি পূর্ণ করতে প্রয়োজনে অন্যের বুলি ছাড়া গত্যন্তর নেই। মনে পড়ে তবুও, ‘শৃঙ্খলপ্রিয় সিংহের থেকে স্বাধীন গাধা উত্তম।’
‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই, প্রীতি নেই, করুণার আলোড়ন নেই-
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।’ এই যে আমি ভাবছি নানা কর্মকথার নানা উপাদান নিয়ে। এর মধ্যেও তো শুধু আমি আর আমি। সবার ভেতরেই আমি যেÑসবকিছু অস্বীকার করলেও এই আমিত্বকে অস্বীকার করি কেমনে। এই আমিত্বই আমাকে এগিয়ে যেতে প্রাণিত করে। সভ্যতা রক্ষা করে মানবতা প্রসারিত করতে ইন্ধন জোগায়, উৎসাহিত করে। তাই তো মানবতা ধারণের অনিবার্য এক স্বপ্ন মাথা তুলে দাঁড়ায়, মনুষ্যত্ব বিকাশে এগিয়ে নিয়ে-
‘তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শত বার জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।’
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী, জন্মেছি জননীর ত্যাগ বেদনা আর ভালোবাসার অসীমতায়। জননীর জঠর থেকে অপার বিস্ময়ে নিঃস্বার্থ বাতাস, বৃক্ষ পল্লবিত নদীবিধৌত যে মাটি আমাদের ধারণ করে গৌরবের পালক অর্পণ করে সেই তো স্বদেশভূমি। জননী-স্বদেশ জন্মভূমি স্বমহিমায় ভাস্বর। বাঙালির জীবনে ডিসেম্বর মাস, বিজয় দিবস এলেই মনটা একেবারে আনন্দ-বেদনার এলোমেলো ভাবনায় যেন ডুবে সাঁতার খেলে। ভাবনার সেই জগতে কোথা থেকে কোথায় যে মনটা ভেসে যায়। অবাধ্য মনটাকে আয়ত্তে আনা কঠিন। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের উত্তাল মহাসমুদ্র পাড়ি দিয়ে মনটা অবাধ্য ভালোবাসায় রঞ্জিত হয়ে ওঠে। মনটা অমর ইতিহাসের পাতায় স্বাক্ষর রেখে যেন দৌড় প্রতিযোগিতায় শামিল হয়। সেই সঙ্গে মনে পড়ে হাজার বছরের আমাদের ঐতিহ্য। আর এমন দিনে তারেও মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে খেটে খাওয়া বাংলার অনাহারক্লিষ্ট, বঞ্চিত, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের মুখ। তাদের সংগ্রাম, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অধিকার প্রতিষ্ঠার জীবনসংগ্রামে ত্যাগী গণমানুষের প্রতিচ্ছবি শ্রদ্ধায় স্মরণীয় হয়ে আছেন স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মদাতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি আমাদের বাঙালি জাতির জনক, আমাদের একান্ত স্পন্দিত হৃদয়ের অনিবার্য অমূল্য সম্পদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। সারা বিশ্বের কাছেও আমরা বিজয়ী জাতি। দেশমাতৃত্ব মায়ের উচ্চারণে পিতার অঙ্গীকারে কবির কলমে উচ্চারিত হয়। মাগো কোথায় তুমি খুঁজো এই আমাকে? তোমার লাল-সবুজ শাড়ি পরে এই তো আমি তোমার শতছিন্ন তালি দেয়া শাড়ির মিলে আমি তো উজ্জ্বল হয়ে আছি।
আমরা আছিÑভাষা আন্দোলনে, মার্চের ভাষণে, মুক্তির ডাকে, খামারির পান্তাভাতের যৌথ হাঁড়িতে মায়াবী তলানি হয়ে।
মাগো/ধারাপাতের নামতা মুখস্থের মতো তুমিই তো শিখিয়েছÑইলা মিত্র, প্রীতিলতা, সূর্যসেন, জাতির পিতা, বেগম রোকেয়া সব মুক্তিযোদ্ধাসহ মা-বোন আর শহীদ জননীর পরম্পরা আমরা।
মাগো/তোমার সৃষ্টি শস্যদানার মতো এই হৃদ সুখানে অনুভবের অবিশ্বাস্য মমতা মানবতার
অতন্দ্র অন্তরীক্ষতায় কড়া নাড়তে উজাড় করে। উচ্চারণে উদ্দীপ্ত করে আমরা আছিÑথাকবই জাতির পিতার স্বকণ্ঠ আহ্বানে, আমরা জেগে থাকব আজীবন।
এই বিজয়ের দিনে আমাদের অঙ্গীকার-সারা বিশ্বের মানবতার বিজয়ে নিবেদিত থাকবে বাংলার আপামর জনগণ। জয় হোক বাংলার, জয় হোক বাঙালির, জয় হোক বিশ্বমানবতার। জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু।