দিনে দিনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে পরমাণুযুদ্ধের আশঙ্কা। অন্যদিকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের গতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন আমেরিকার দেওয়া ভয়ংকর ভয়ংকর সব যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের সমূলে ধ্বংস করতে পারাটাই ইসরায়েলের একমাত্র লক্ষ্য। আর এর শেষ পরিণতিটাই বুঝি পারমাণবিক যুদ্ধ। বিশ্বশান্তি এবং সভ্যতা ধ্বংস। সভ্য জগতের সব সভ্য ও মানবিক মানুষ মাত্রই জানেন, যুদ্ধ মানেই ধ্বংস, রক্তপাত এবং প্রাণহানি। এই বিশ্বে এ পর্যন্ত যত যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, কোনো যুদ্ধের মধ্য দিয়েই শান্তি আসেনি। মল্লযুদ্ধ থেকে আজকের আধুনিক যুগে যুদ্ধ মানেই হয় পরাজয়। আর পরাজয় মানেই বিজয়ীর চাপিয়ে দেওয়া সব শর্ত মেনে নিয়ে নতজানু হয়ে চলা।
এই অসম্মান ও অমর্যাদা থেকেও নতুন যুদ্ধের সূচনা হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয়ের ফলে তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অমর্যাদাকর ভার্সাই চুক্তির বিষময় ফল হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু বলে আন্তর্জাতিক অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। হিটলার জার্মানির শীর্ষ নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এই অসম্মানকর ভার্সাই চুক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ান। তিনি জার্মানদের তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ করে ভার্সাই চুক্তির সব শর্ত অমান্য করতে শুরু করেন। ফল প্রথম যুদ্ধের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। মানুষ দেখেছে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু, রক্তপাত, ধ্বংস। দেখেছে মানুষের আহাজারি। সমগ্র বিশ্ব জড়িয়ে পড়েছে সেই যুদ্ধে। সে কারণেই তো বলা হয় বিশ্বযুদ্ধ। আজ যে যুদ্ধ চলছে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে, অচিরেই সে যুদ্ধে ব্যবহৃত হওয়ার প্রবল শঙ্কা পরমাণু অস্ত্র। পরমাণু অস্ত্র ব্যবহৃত হলেই প্রবল আশঙ্কা থাকবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাবে পূর্ব ইউরোপ থেকে সমগ্র ইউরোপে। সে যুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো বিশ্বও হয়তো দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
সে যুদ্ধে কি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতোই ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হবে বিশ্ব? সোজা উত্তরÑনা। এবার বিশ্বযুদ্ধ বাধলে যে কী ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে মানবসভ্যতা, তা দেখার মানুষ থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আজকের এই সময়ে বিশ্বের পরমাণুশক্তির অধিকারী দেশগুলো, বিশেষ করে আমেরিকার অস্ত্রভান্ডারে যে কী রকম ধ্বংসক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র আছে, তা কারও পক্ষে অনুমান করাও দুঃসাধ্য বিষয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে পারমাণবিক বোমার ধ্বংসলীলা মানুষ দেখেছে, এখন সেই বোমার ধ্বংসক্ষমতা যে কত গুণ বৃদ্ধি হয়েছে, তা মানুষের কল্পনারও বাইরে। শুধু বোমা নয়; ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্রসহ আরও কত প্রকার যে পারমাণবিক অস্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, তার পরিসংখ্যান জানা সত্যিই দুষ্কর।
সে কারণেই বিশ্বের যারা শান্তিকামী ও মানবিক মানুষ, তাদের সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া উচিত এখনই সব যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া এবং যুদ্ধরত সব পক্ষকে স্থায়ীভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে বাধ্য করা। সময় থাকতে এই উদ্যোগ নিতে হবে। সময় হাতছাড়া হলে মানবসমাজকে চরম মূল্য দিতে হবে। আমাদের উত্তর প্রজন্মের জন্য একটা বাসযোগ্য বিশ্ব গড়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখি, সে স্বপ্নও ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা। অনেক বিজ্ঞানীই গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি সত্যি সত্যি সংঘটিত হয়, তবে তার ধ্বংসলীলা দেখার মতো কোনো মানুষ জীবিত থাকবে কি না, সে বিষয়ে গভীর সংশয় রয়েছে।