Thikana News
২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
বিগ ব্রাদারে বিগ ডিল ♦মোদি-মমতা একাট্টা

যুদ্ধের উসকানি দিল্লির

যুদ্ধের উসকানি দিল্লির ছবি: সংগৃহীত
কেবল হাইকমিশন অফিসে হামলা-ভাঙচুর, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পোড়ানো নয়; বাংলাদেশি পর্যটকদের থাকা বন্ধ করে দিয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার হোটেলগুলো। বাংলাদেশিদের কাছে ভাত বা খাদ্য বিক্রিও বন্ধ। কলকাতা -আগরতলা ত্রিপুরার কয়েকটি হাসপাতাল বাংলাদেশিদের চিকিৎসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জারি করেছে। বাংলাদেশে আলু-পেঁয়াজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের আলোচিত বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া এই নেতার একসময়ের নেত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার হুমকি ও মতিগতি আরও চড়া। তিনি বাংলাদেশে জাতিসংঘ পিস কিপিং সৈন্য পাঠানোর হুংকার দিয়েছেন। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নিতেও বলেছেন মমতা।
এগুলো কেবলই কথার কথা, না অন্য কিছু- এ প্রশ্ন থাকলেও ভারতের এ ধরনের কাজের দৃষ্টান্ত আছে। উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় ভারত একবার শান্তির নামে সৈন্য পাঠিয়েছে। এরপর আবার পাকিস্তান ও মিয়ানমারেও ভারতীয় সৈন্য ঢুকে পড়েছিল। এবার তাদের চোখ বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশের দিকে একের পর এক এমন শব্দবোমা ছুড়লেও বাংলাদেশ সরকার ও মুসলমানরা সহিষ্ণুতা দেখিয়ে কূটনৈতিক ম্যাচিউরিটির দৃষ্টান্ত তৈরি করছে। এর নেপথ্য পরিষ্কার। উগলাতে না পেরে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গিলতে ও আগলে রাখার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে ভারত। এ প্রশ্নে মোদি-মমতা-শুভেন্দুর একই রাও। বুঝে-শুনেই সীমান্তের ওপার থেকে অব্যাহত উসকানি দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। সেই সঙ্গে অন্তহীন অপপ্রচার।
গোটা বিষয়টি একটি সার্কেল বা সাইকেলেই ঘুরছে। ১৯৮১-তে বিশেষ অ্যাজেন্ডায় দিল্লি থেকে ঢাকায় আগমন শেখ হাসিনার। প্রাণে বাঁচতে ২০২৪ সালে ঢাকা থেকে দিল্লিতেই নির্গমন। একাত্তরের ডিসেম্বরে বিজয়ের পর পাকিস্তানি রাজাকাররা আশ্রয় নেয় ইসলামাবাদে। আর ৫ আগস্টের বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয় দিল্লিতে। সেই সঙ্গে ভারতের রুদ্রমূর্তিতে ফেরা। সেখানে এবার ছুঁতো করা হয়েছে ইসকনকে দিয়ে। বাংলাদেশে নিজেদের লালিত-পালিত খাস পছন্দের সরকারকে এভাবে হটতে হবে, তা ভারত কল্পনাও করতে পারেনি। বাস্তবে সেটাই হয়েছে নিদারুণভাবে। ভারতের সেই শোধ নেওয়ার বার্তা একদম পরিষ্কার। কোনো রাখঢাক নেই। প্রকাশ্যেই বাংলাদেশে একটার পর একটা ইস্যুতে যারপরনাই ভূমিকা রাখছে ভারত। নিজেরাও পায়ে পা দিয়ে কেবল ঝগড়া নয়, যুদ্ধ পাকানোর চেষ্টাও করছে। এর অংশ হিসেবে বিগ বাজেটে মাঠে নামিয়েছে ইসকনকে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার কথিত হিন্দু জাতীয়তাবাদের আধিপত্যের কার্ডে টেনে নিয়েছেন ইসকনকে। তাদের মাধ্যমে চট্টগ্রামে জামায়াত-সমর্থিত একজন নামকরা আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। এর শোধ নিতে গিয়ে জামায়াত বেপরোয়া হোক, সেই কামনা ভারতের। তা হলে খেলাটা জমে। শত বেদনাহত হয়েও জামায়াত সেই পথে পা দেয়নি। এতে মোদির ক্ষমতার টুলসগুলো দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য। তাই ঠুনকো অস্ত্র সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে ঘায়েল করার চেষ্টায় ভারত। কোনো ছুঁতোই বাদ দিচ্ছে না। প্রয়োজনে ছুঁতো পয়দা করছে। এর অংশ হিসেবে হিন্দু সেনাপ্রধান স্থানীয় একটি আদালতে পিটিশন দাখিল করে দাবি করেছেন, আজমির শরিফ দরগার নিচে শিবমন্দির আছে। দুই দেশের ভেতর থেকে এ অসৎ রাজনীতির বাহকরা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছে- এতে দুই দেশের উগ্রবাদীদের চটিয়ে দেওয়ার মিশন মোদি সরকারের। পীর-মুর্শিদ, সাধু-পুরোহিত, বাউল, তাবলিগ, শরিয়ত-মারেফত যেখান দিয়ে সম্ভব গন্ডগোল তথা দাঙ্গা বাধানো গেলে সেই মিশন সাকসেসের অপেক্ষা দুই দেশেরই বিশেষ গ্রুপের। সে ক্ষেত্রে বিপ্লবপন্থীদের বিতর্কিত করার ছক এগোচ্ছে। আবার শেখ হাসিনা ও গত ১৫ বছরের সুবিধাভোগীদের এককাট্টা করার মিশনও বেশ সক্রিয়। তা আগায়, আবার পেছায়। অতিমাত্রায় বেনিফিশিয়ারিরা মাঝেমধ্যে সিরিয়াস হয়ে আবার ডুব দেয়। হারিয়ে যায়। ঝুঁকিতে নামতে দোটানায় তারা।
গণঅভ্যুত্থানের ফ্রন্টলাইনের একাংশ ফ্যাসিস্ট চক্রকে কোনো ছাড় না দেওয়া ও এদের বিরুদ্ধে দ্রুত অ্যাকশন চায়। এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও ৫ আগস্টের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে তাদের স্নায়ুবিরোধও চলছে। শেখ হাসিনাকে আজীবন ক্ষমতায় রাখতে এবং মৃত্যুর পর তাকে না ভোলার শপথ নেওয়া দুষ্টচক্রের কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় মনঃক্ষুণ্ন তারা। এই সরকারের বিরুদ্ধে চক্রটির সার্বক্ষণিক অনাসৃষ্টির কিছু তথ্য-সাবুদ তাদের বগলে। সেদিকে বিশেষ ইঙ্গিত করেছেন শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে বলেছেন, ব্যাংকের সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের সম্পদ কেন এখনো বাজেয়াপ্ত হলো না। এখনো অধিগ্রহণ করতে না পারলে কিসের বিপ্লব? ভারত এবং আওয়ামী লীগের হরিলুট চক্রের বিরুদ্ধে ড. ইউনূস সরকারকে বিপ্লবী করে তোলার মহলে এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ। এর সমান্তরালে যথারীতি ‘এজ ইট ইজ’ ভূমিকায় সরকার। এটি সময় পার করা, না সময় নিয়ে ‘আচ্ছামতো’ ধরার প্রস্তুতি- এ নিয়ে দুই ধরনের তথ্যই ঘুরছে তথ্যের হাটে।

 

কমেন্ট বক্স