Thikana News
২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
মিত্রের হঠকারিতায় ছাত্ররা * মাহফুজের রেড সিগন্যাল

দেশে দাঙ্গা বাধানোর নয়া খেলা

দেশে দাঙ্গা বাধানোর নয়া খেলা
গণ-অভ্যুত্থানে তৈরি হওয়া নতুন রাজনীতির সম্ভাবনায় আলোর স্বল্পতা ভর করেছে। স্পষ্ট হয়ে উঠেছে অনৈক্য, সন্দেহ, অবিশ্বাস আর বিভ্রান্তি। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব     
দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তাদের সহযোগীরা প্রভাবশালী হলেও নেতিয়ে পড়তে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের বিদায়ের পর ক্ষমতাপ্রত্যাশী হয়ে ওঠা বিএনপি-জামায়াতের ভেতরও টেনশন। কোত্থেকে কী হয়ে যাচ্ছে, বুঝে উঠতে উঠতেই ঘটছে আরেকটি ঘটনা।
নাগরিক সমাজ, বুদ্ধিজীবী, ভাবুক ও চিন্তক গোষ্ঠী সভা, সেমিনার, ওয়েবিনার, ফেসবুক বা ইউটিউবে অস্তিত্বের জানান দিলেও কুলিয়ে উঠতে পারছে না। বরং আশ্চর্য ম্যাজিকে অচেনা গোপন শক্তি বেশি সুবিধাজনক অবস্থায়। যার জেরে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার ছাপ লক্ষণীয়। অবস্থা উপলব্ধি করে দ্রুত নির্বাচনের নিশ্চয়তা চায় বিএনপি। নইলে নতুন ওয়ান ইলেভেন, নেতা-নেত্রীর মাইনাস আতঙ্ক তাদের। কোথাও কিছু একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে বার্তা দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্ররা ভেতরে ভেতরে কয়েক ভাগ। তাদের কয়েকজন সরকারে আছেন। আবার রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত কয়েকজন। সরকারের সমালোচনার বিপরীতে সরকারের মেয়াদ দীর্ঘ করার ফন্দিতেও তাদের কেউ কেউ। যে তারুণ্য জাতির বুকের ওপর থেকে ১৫ বছরের পাথর সরাল, আজ সেই তারুণ্যকে আতঙ্ক ছড়ানো ও পরস্পরকে বধের নেশা চাপানোর ফের। কয়েকজন সমন্বয়ককে হিডেন রাজনীতির বটিকা বানানো হয়েছে। এ সরকারের চালিকাশক্তি ছাত্রদের দুর্বল করা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে প্রধান উপদেষ্টার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের স্ট্যাটাসে।
ছাত্র-জনতাসহ বিশেষ কয়েকটি মহলে তোলপাড় করা স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘অনেক মিত্রই আজ হঠকারীর ভূমিকায়। ... আমরা আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করি। আমরা শিখেছি এবং ব্যর্থতা কাটানোর চেষ্টাও করছি। ... বাম ও ডান মানসিকতার কতিপয় নেতৃত্ব বা ব্যক্তি অভ্যুত্থানে এবং পরবর্তী সময়ে সরকারে নিজেদের শরিকানা নিশ্চিত না করতে পেরে উন্মত্ত হয়ে গেছেন। তাদের উন্মত্ততা, বিপ্লবী জোশ ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেশটাকে অস্থির করে রেখেছে। ... মুক্তিযুদ্ধের পরের দশ-পনেরো বছরের ইতিহাস মুক্তিযোদ্ধাদের একে অপরকে হত্যার ইতিহাস। যারা চায়নি বাংলাদেশ শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াক, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের একে অপরকে দিয়ে হত্যা করিয়েছে। তাদের নিজেদের ভুল ছিল না তা নয়, কিন্তু আমাদের মুক্তিযোদ্ধাগণের একের পর এক হত্যা বাংলাদেশকে কীভাবে পিছিয়ে দিল, তা ইতিহাস একদিন বলবে। এবারের আন্দোলন সাহসী ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে জনগণের আন্দোলন। কিন্তু একটি দল এবং দেশি-বিদেশি সুযোগসন্ধানী এস্টাবলিশমেন্ট গত ৩ মাসে ছাত্রদের ভিলিফাই করেছে, বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন দিয়ে ছাত্রদের মধ্যে বিভেদ ঘটিয়েছে, অন্য একটি তরুণ দলকে লেলিয়ে দিয়েছে ছাত্রদের বিরুদ্ধে, তদুপরি ছাত্রদের সাথে সম্মানজনকভাবে ডিল তো করেইনি, বরং ছাত্রদের তারা শত্রু গণ্য করেছে। তার পরিণতি কি ভালো হচ্ছে বা হবে?’ ছাত্ররা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল চালিকাশক্তি- এ কথা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবার তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানে মাহফুজকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। সেই মাহফুজেরই এই স্ট্যাটাস অনেকের জন্য ভাবনার বিষয় হয়ে উঠেছে। নাম না নিয়ে তাকে ইঙ্গিত করে বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতা জনসভায় প্রকাশ্যে বলেছেন, ড. ইউনূসের অত্যন্ত কাছের একজন তাকে ভুল পথে নিচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এ অবস্থার মাঝে নানান চিন্তায় আগোয়ান সম্প্রদায়গত একাধিক গ্রুপ। তারা হিন্দু-মুসলিম দুদিকেই। পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানো  হয়েছে কেবল জাতীয় পতাকা অবমাননার মামলায়। তার তৎপরতা ভিন্ন দিকে, যা কৌশলগত কারণে সামনে আনতে চায় না সরকার। বিএনপিও এ ব্যাপারে অতি কৌশলী। আওয়ামী লীগ রাখঢাক রাখেনি। তাকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ অনতিবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেছে। দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া মারাত্মক ঝাঁজালো। চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও ইসকন নেতা উল্লেখ করে শুধু নিন্দাই জানাননি তিনি, তাকে মুক্তি না দিলে সীমান্তে সনাতনীরা ধ্বজ নিয়ে অবরোধ করবে বলেও হুমকি দিয়েছেন। এমনকি কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে বিক্ষোভ করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। ভারত থেকে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে কোনো পরিষেবা বাংলাদেশে ঢুকতে না দেওয়ার হুংকারও দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করে চিন্ময়কে বলা হয়েছে বাংলাদেশে হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষার নেতা নামে। সংখ্যালঘু নিয়ে এমন কার্ডের বিপরীতে উগ্রবাদী কার্ডও ঘুরছে বাংলাদেশে। তা ছোড়া হয়েছে এক্সপার্ট হ্যান্ডস দিয়ে। হিজাব, মাজার ইত্যাদি ছাড়িয়ে তা ঘুরছে দেশের মিডিয়া জগতের বিশেষ শক্তি প্রথম আলো-ডেইলি স্টার চত্বরেও। অবিশ্বাস্য দৃশ্যায়ন সেখানে। গরু জবাই, মিছিল প্রকাশ্যে। জবাই করা গরুর গায়ে ‘প্রথম আলোর সম্পাদকে’র নাম লিখে সাঁটা হয়েছে। খেলা বড় জঘন্য। প্রথম আলো, ডেইলি স্টারকে ঘিরে এসব পরিকল্পিত ঘটনা দেশের বাইরে সরকারের ইমেজ নষ্টের এ খেলা এখন চরম পর্যায়ে। ‘প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার’ বন্ধের দাবিতে তাদের অফিসের সামনে ‘গরু জবাই’ বহির্বিশ্বে ভুল বার্তা পৌঁছানোর কাজে লাগসই হিসেবে কাজে দিয়েছে। এখনো সে রকমের ওয়েল ট্রেইন্ড কয়েকজন কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে সংক্ষেপে জেসি পান্থ নামের একদা ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োজিত জগদীশ চন্দ্র পান্থর সফল অপারেটিভ এখানে আলোচিত। তার অনন্ত চেষ্টাতেই ঘাদানির প্রসার ঘটে, তসলিমার লজ্জা ইস্যু তৈরি হয়, জামায়াত জোট বাধে লীগের সঙ্গে। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর দুটি বড় ইস্যু তৈরি হয়, যা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক অসুবিধার মধ্যে ফেলে দেয়। একটি ঘাদানি তৈরি, আরেকটি হঠাৎ তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’ বই প্রকাশ। তসলিমার ‘লজ্জা’ বইটি ঝড়ের গতিতে প্রকাশিত হয়। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আবার এটি নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত প্রচারণা শুরু করে। এদিকে বাংলাদেশে কথিত ধর্ম রক্ষার নামে একদল উগ্রভাবে মাঠে নেমে পড়ে। তখন প্রেসক্লাবের সামনে আকস্মিক কতগুলো লোক বিষাক্ত সাপ নিয়ে তসলিমা-বিরোধী মিছিল করে। মুহূর্তে ওই সাপ নিয়ে মিছিলের ছবি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এখানকারই কিছু ফটোগ্রাফার ওত পেতে বসে ছিলেন এবং তারা জানতেন সাপ নিয়ে মিছিল হবে! অন্যদিকে হুট করে আরেক গ্রুপ নেমে পড়ে ‘আল্লার দল’ নামে। গায়ে বিশাল জোব্বা, মাথায় পাগড়ি, হাতে লম্বা লাঠি। এরাও প্রেসক্লাবের আশপাশে মিছিল করতে থাকে ধর্ম রক্ষার জন্য! এদের ছবিও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। গোয়েন্দারা একসময় একটি ছবি ভালোভাবে দেখে বিস্মিত হয়ে পড়েন। স্বয়ং দাড়িওয়ালা জেসি পান্থ জোব্বা পরে ওই মিছিলে! গোয়েন্দাদের তৎপরতায় তখন দ্রুত নাই হয়ে যায় ‘আল্লার দল’। এবারের প্রেক্ষিত ও ঘটনা ভিন্ন। আয়োজনে আরও ভিন্নতা।

কমেন্ট বক্স