মেক্সিকোতে জন্মগ্রহণকারী অ্যাঞ্জেল পালাজুয়েলোস চার বছর বয়স থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার খবরে তিনি ঘুমাতে পারছেন না। ২২ বছর বয়সী এই তরুণ অ্যারিজোনার ফিনিক্সে বসবাস করেন এবং বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করছেন। ট্রাম্পের গণপ্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতিতে তিনি উদ্বিগ্ন।
পালাজুয়েলোস বলেন, ‘খবরটি শোনার পর আমি ভীত হয়ে পড়েছি। আমি উদ্বিগ্ন যে আমাকে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে, যা অর্জন করতে এত কষ্ট করেছি তা হারাতে পারি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমার পরিবার থেকে আলাদা হতে পারি।’
মেক্সিকোতে জন্ম হলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চার বছর বয়স থেকে বসবাস করছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘ড্রিমার’-দের একজন, যারা শিশু অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন এবং মার্কিন নাগরিকত্ব পাননি।
তার মতো ৩৫ বছর বয়সী হোসে প্যাটিনোও ‘ভীতি’ ও ‘বেদনার’ কথা জানান। মেক্সিকোতে জন্মগ্রহণকারী এবং ছয় বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসা প্যাটিনো বর্তমানে এলিয়েন্টো নামের একটি কমিউনিটি সংস্থার জন্য কাজ করেন, যা অবৈধ অভিবাসীদের সহায়তা করে।
তিনি বারাক ওবামার চালু করা ‘ডাকা’ কর্মসূচির সুবিধা পেয়েছেন, যা সুরক্ষা ও কাজের অনুমতি প্রদান করে। তবে এই সুরক্ষা আগামী বছর শেষ হবে এবং ট্রাম্প ডাকা প্রোগ্রামটি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অনিশ্চয়তার মুখে, প্যাটিনো এমন রাজ্যে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন যা তাকে ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করবে না, যেমন কলোরাডো বা ক্যালিফোর্নিয়া। তিনি স্মরণ করেন যে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তার কুড়ি বছরের জীবন কেমন কঠিন ছিল- যখন তিনি ম্যাকডোনাল্ডসে কাজ করার ও ড্রাইভারের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেননি বা ভ্রমণ করতে পারেননি কারণ তাকে ফেরত পাঠানোর ভয় ছিল।
ট্রাম্পের বিজয় তার কাছে কেবল ভীতিকরই নয়, বরং অপমানজনক। তার মতো অবৈধ অভিবাসীরা সবাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দনি পার করছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর একটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘অবৈধ অভিবাসী সমস্যা’ সমাধান। নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের দিনই দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ‘অবৈধ অভিবাসী বিদায় অপারেশন’ পরিচালনা করবেন।
সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তিনি প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে সাবেক পুলিশ ও অভিবাসন কর্মকর্তা টম হোমানকে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব দিচ্ছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি, অভিবাসন বিষয়ক হক স্টিফেন মিলারকে ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তার মনোনয়ন ঘোষণা করেননি।
১১ নভেম্বর সোমবার নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং মিলারকে নিয়োগের জন্য ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি প্রেসিডেন্টের আরেকটি চমৎকার পছন্দ। মিলার ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময় পলিসি উপদেষ্টা এবং স্পিচ রাইটার হিসেবে কাজ করেছিলেন। তার প্রচারের সময়ও এই ভূমিকা পালন করেছেন, প্রায়ই ট্রাম্পের র্যালিতে তার সঙ্গে সফর করেছেন।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তিনি তার প্রধান প্রচারণা পরিচালক সুসান উইলেসকে চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন। ১০ নভেম্বর রোববার রাতে ট্রাম্প বলেন, তিনি টম হোমানকে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব দিচ্ছেন, যিনি বহিষ্কার এবং সীমান্ত নিরাপত্তা কঠোর করার দায়িত্বে থাকবেন। অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মিলার ও হোমান একসঙ্গে কাজ করবেন এমন কিছু আশা করা হচ্ছে, যা ট্রাম্প তার প্রচারের কেন্দ্রে রেখেছিলেন। এদিকে, হোমানকে ‘সীমান্ত সম্রাট’ (বর্ডার জার) নামে অভিহিত করেন ট্রাম্প। এর আগেও ট্রাম্প প্রশাসনে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্সির পরিচালক হিসেবে অভিবাসী নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন হোমান। এর আগে ওবামা প্রশাসনেও তিনি আইসের নির্বাহী সহযোগী পরিচালক ছিলেন। ট্রাম্পের নতুন এই যোদ্ধা ‘ঝেঁটিয়ে’ বিদায় করবেন অবৈধদের, এমনটাই ভাবছেন বিশ্লেষকরা। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্পের কথাবার্তাতেও এ ধরনের মনোভাবের প্রকাশ পেয়েছে।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক বার্তায় ট্রাম্প লিখেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি সাবেক আইস পরিচালক ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের কিংবদন্তি টম হোমান ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দেবেন। এই ‘‘সীমান্ত সম্রাটের’’ হাতেই দেশের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব তুলে দিচ্ছি। আমি টমকে অনেকদিন ধরে চিনি। সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে রাখায় তারচেয়ে ভালো কেউ নেই।’
বার্তায় ট্রাম্প নিশ্চিত করেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর’ দায়িত্বে থাকবেন হোমান। ১৭৯৮ সালের ‘এলিয়েন শত্রু আইন’ অনুযায়ী অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প। এই আইন অনুযায়ী, শত্রু দেশগুলো থেকে আসা লোকজনকে গ্রেপ্তার করে ফেরত পাঠানোর এখতিয়ার রাখে সরকার।
এই আইনে পাওয়া ক্ষমতাবলে ‘অপারেশন অরোরা’ নামে একটি অভিযান পরিচালনা করবে ট্রাম্প প্রশাসন। এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়া লাখো অভিবাসীকে দেশ থেকে বিদায় করার পরিকল্পনা করছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এক কোটিরও বেশি অবৈধ অভিবাসী বসবাস করছে। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট ও এএফপি।