গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন পদত্যাগ করে। এরপর গত ৩১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাব করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নাম প্রস্তাব করার শেষ দিন ছিল ৭ নভেম্বর।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত অনুসন্ধান কমিটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে নাম প্রস্তাব করার জন্য রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ, ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টির কাছে কোনো নাম চায়নি অনুসন্ধান কমিটি। এসব দল বাদে বিএনপিসহ ১৭টি দল ও জোট, পেশাজীবী সংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই নাম জমা দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। আইন অনুযায়ী, ২১ নভেম্বরের মধ্যে সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবে। এর মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজনকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেবেন।
নতুন ইসি নিয়োগে সার্চ কমিটির কাছে তিন শতাধিক নাম এসেছে বলে জানা গেছে। গত চারবারের মতো এবারও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদে সাবেক সচিবদের নাম বেশি আলোচনায় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এর পাশাপাশি এবার শিক্ষাবিদদের নামও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় জমা পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবেও নাম জমাকারীদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক সচিব রয়েছেন। আর নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য সুধীসমাজের প্রতিনিধি, সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, বিচারক, শিক্ষক, সিনিয়র সাংবাদিক, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীর নাম জমা হয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপি একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে প্রতিটি পদের জন্য দুজন করে মোট ১০ জনের নাম জমা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী মোট আটজনের নাম প্রস্তাব করেছে। গণঅধিকার পরিষদ ছয়জনের নাম প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, এলডিপি, এবি পার্টি, মুক্তিজোট-এসব দলও পৃথকভাবে নাম প্রস্তাব করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে।
সূত্র জানায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদের জন্য বিএনপি সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দিন ও সাবেক সচিব শফিকুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করেছে। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী কয়েকটি দলও প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য সাবেক সচিব শফিকুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করেছে। ছয় দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চের প্রতিটি দলের পৃথকভাবে দেওয়া প্রস্তাবের মধ্যেও সাবেক সচিব শফিকুল ইসলামের নাম রয়েছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি প্রস্তাব করেছে সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানের নাম। নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপকসহ মোট ছয়জনের নাম প্রস্তাব করেছে। এই ছয়জনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুহুল আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের নাম রয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঞা, বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) এ এল এম ফজলুর রহমান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল লতিফ মাসুম, সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবীর, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সাবেক সদস্য তানজিনা ইসলাম, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এস এম জাকারিয়া, সাবেক সচিব মহিবুল হক, শহিদুল ইসলাম, সাবেক সেনা কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতিদার আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুহুল আমিন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম হাসান তালুকদার, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী, ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, সাবেক জেলা জজ শামীম আহমেদ ও এস এম নুরুজ্জামানসহ আরো অনেকের নাম প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিএনপির হাইকমান্ড থেকে একটি তালিকা সমমনা দলগুলোকে দেওয়া হয়। সেখান থেকে পছন্দ অনুযায়ী নাম প্রস্তাবের জন্য বলা হয়। সেই তালিকা থেকে কয়েকটি নাম অন্তর্ভুক্ত করে ওই সব দল নিজেদের মতো করে তালিকা করে জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা মুখ খুলতে নারাজ। আবার আরেকটি পক্ষ দাবি করে, তালিকা নিয়ে তাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো যোগাযোগই হয়নি। তারা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে তালিকা চূড়ান্ত করেছেন। সেখানে কাকতালীয়ভাবে অনেকের নাম মিলে যেতে পারে। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জানান, তারা নিজেদের দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এবং সবার সিদ্ধান্তমতে তালিকা করে জমা দিয়েছেন। সেখানে বিএনপি বা কারও নামের সঙ্গে মিলে গেলে, সেটা কাকতালীয়।