প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ষ্পষ্টভাবে বলেছেন, আওয়ামী লীগ নয়, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে। এছাড়া সংবিধান সংস্কারে সংবিধান থেকে ধর্মকে বাদ দেওয়া উচিত। এই সংস্কার কার্যক্রমে ফ্যাসিস্ট ও তার সহযোগী ছাড়া সবাইকে সম্পৃক্ত করা হবে। ৯ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে ইউটিউব চ্যানেল ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মাহফুজ আলম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জনপ্রিয় সঞ্চালক ও সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন।
প্রায় এক ঘণ্টা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম খালেদ মুহিউদ্দীন ছাড়াও অনলাইনে করা দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নে উত্তর দেন। তার উত্তরে মুলতঃ উঠে আসে অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যত নানান দিন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ বড় একটি রাজনৈতিক দল। তাদের বড় একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। আমি মনে করি- আওয়ামী লীগের যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচার হতে হবে। এরপর তারা রাজনীতি করার সুযোগ পেতে পারে বলে ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরেন মাহফুজ আলম।
প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করায় একজন সরকারি নারী কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগ সরকারের মত হলো কীনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, একটি ফ্যাস্টিট সরকারকে পরাজিত করার পর পরবর্তী সরকারকে সেই আগের সরকারের সঙ্গে তুলনা করা অন্যায্য। সরকারি কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই কর্মকর্তা শহীদ আবু সাঈদকে কটুক্তি ও সন্ত্রাসী বলেছেন। পাকিস্তানিরা এমনটি বলতো। অর্থাৎ যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিল তাদের সন্ত্রাসী বলতো। শহীদ আবু সাঈদকে কটুক্তি করা মানে ১৫শ শহীদকে কটুক্তি করা। এটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে বললে তিনি হয়তো মাফ করে দিতেন। কিন্তু শহীদদের নিয়ে কটুক্তি করায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, গত ৫৩ বছর যে যে সংবিধান ছিল তা শুধুই আওয়ামী লীগের। তারা নিজেদের মত করে সংবিধানের সংজ্ঞায়ন করেছে। সংবিধানের চার মূলনীতি ছিল মুজিববাদী প্রকল্প, যা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই। সব নাগরিক অধিকারে রাষ্ট্র চাই। এজন্য আমরা সার্বজনীন একটি সংবিধান চাই। নতুন বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক।
এদিকে অনুষ্ঠান শেষে মাহফুজ আলমের সঙ্গে আলাপটি কেমন ছিল তা নিয়ে অনেকে নানা ধরনের মন্তব্য বা মতামত দিয়েছেন। দুটি বাছাই করা মত তুলে ধরেছেন খালেদ মুহিউদ্দীন।
সেলিম রেজা নিউটনের ভাষ্য- ইউটিউবে খালেদ মুহিউদ্দীনের আজকের অনুষ্ঠানের নিচে একেবারে সাধারণ মানুষজন মাহফুজ আলম সম্পর্কে কেমন মন্তব্য করেছেন সেটা যেন আমাদের তিড়িংবিড়িং করা বুদ্ধিজীবীরা অনুগ্রহ করে একটু পড়ে দেখেন। মাহফুজ আলম আপনাদের মতো পটরপটর করা ক্যানভাসার না। এত দিন কিছু মানুষ শুধু মাহফুজের বদনাম শুনেছেন। একটানা বদনাম করে গেছেন বিভিন্ন সস্তা টার্ম মুখস্থ করা কেরানি-বুদ্ধিজীবী এবং কেরানি-বিপ্লবীরা। কিন্তু আজকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ নিজের চোখে তাঁকে দেখেছেন, নিজের কানে তাঁর কথা শুনেছেন। পার্থক্যটা তাঁদের কাছে অনেকখানি পরিষ্কার হয়ে গেছে। মানুষের প্রত্যক্ষ বিচার-বিবেচনার শক্তির উপর আমি আস্থাবান।
মাহফুজ আলম পাবলিক পরিসরে যত বেশি কথা বলবেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান তত বেশি উপকৃত হবে। রাষ্ট্র-সংস্কারের কাজ তত বেশি উপকৃত হবে।
বোকা এবং চালাক টাইপের ফটকা-বুদ্ধিজীবী আমরা অনেক দেখেছি। গভীর, শান্ত, স্থিতধী মানুষ বিরল। মাহফুজ-নাহিদদের মতো তরুণ মানুষেরা আমাদের বড় ভরসা। এঁদেরই কালেক্টিভ নেতৃত্বে, সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে, শহীদদের রক্তের বিনিময়ে, সহস্র মানুষের অঙ্গহানির বিনিময়ে আমরা জুলাইবিপ্লব পেয়েছি।
আরেকজন সুষুপ্ত পাঠক। তিনি বলেছেন- সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের টকশো শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে ওঠে, কারণ তিনি বেকায়দা প্রশ্ন করে উত্তরকারীর পিছলামী আমড়াগাছি উত্তর মেনে নেন। পাল্টা প্রশ্ন করে চেপে ধরেন না। অন্যসব বাংলাদেশি সাংবাদিকদের মত তিনিও পড়াশোনা কম করা সাংবাদিক। রাজনৈতিক ইতিহাস খুব বেশি তার পড়া নেই। ফলে অতিথিরা এসে ভুল-ভাল ইতিহাস বলে গেলে তিনি পয়েন্ট ধরে ধরে আটকাতে পারেন না। সলিমুল্লাহ খান থেকে সমন্বয়ক মাহফুজ আলমের মত বইয়ের মলাট পড়ে বুদ্ধিজীবী হওয়া ঠেকানো যায়নি আমাদের সাংবাদিকদের কম পড়াশোনার জন্য।