Thikana News
০৫ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

ইউনূস-বাইডেন বৈঠক ও বাংলাদেশের অর্জন

ইউনূস-বাইডেন বৈঠক ও বাংলাদেশের অর্জন


জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে অবতরণ করেন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এবার বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের আগমন ছিল একান্তই জৌলুশবিহীন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন মাত্র ৫৭ জন। যেখানে অতীতে সফরসঙ্গীর বহরে দেখা যেত ২০০ থেকে ২৫০ সদস্য। তিনি এসেছেন সাধারণ বাণিজ্যিক ফ্লাইটে। চার্ডার্ড বিমানে আসার বিলাসিতা তিনি ত্যাগ করেছেন, যা জাতিসংঘে অন্যান্য অংশগ্রহণকারী অতিথিদের খুব প্রশংসা কুড়িয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এ বছরের ৭৯তম অধিবেশন ছিল যেন ড. ইউনূসময়। ২৪ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিল যেন ইউনূস-বন্দনায় ভরা।
এসব কথা সব মিডিয়ার মাধ্যমে এরই মধ্যে প্রচার হয়ে গেছে। কিন্তু গল্পের পেছনে গল্প, কথার পেছনেও কথা লুকিয়ে থাকে। জাতিসংঘে মূল ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি অনেকগুলো সাইডলাইন বৈঠক এবং পাকিস্তান, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ নিয়ে কথা বলেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ বৈঠক হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। একে অপরকে স্বাগত জানানোর ভাষা ছিল অভূতপূর্ব। একে অপরকে যেন হৃদয়ের সব ভালোবাসা, ভালো লাগা ঢেলে দিয়ে বুকে টেনে নেন। মনে হচ্ছে, বহুদিন পর বহু কিছু অর্জনের পর দুই ভাইয়ের মিলন ঘটল। দুজনের প্রাণখোলা হাসিতে যেন ফুটে উঠল অতীতের ব্যথা-বেদনা ভুলে আনন্দ সরোবরে ভেসে বেড়ানোর ছবি। মনে হচ্ছিল দুজন যেন বিশ্বজয়ী। বাইডেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েই ক্ষান্ত হননি; রাষ্ট্র মেরামত থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন, আইন ব্যবস্থার সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্কারÑসব অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বহু দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ তাদের ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত বন্ধু উল্লেখ করে সব ধরনের সহযোগিতাদানের আশ্বাস পেয়েছে। সবাই যেন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে পারলে নিজেরা বর্তে যায়। ড. ইউনূস কী এমন জাদু দেখালেন যে বিশ্বসভা তাকে নিয়ে মাতোয়ারা হয়ে উঠল। বাংলাদেশকে তার রাষ্ট্র মেরামত এবং অন্যান্য জরুরি সংস্কার কাজে সহায়তা দিতে তাদের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দরজা খুলে দিয়ে বললেন, ‘নাও কত নেবে। সব তো তোমারই জন্য। তুমি যা আমাদের দিয়েছ, সে তুলনায় তো এ সামান্যই।’ ড. ইউনূস নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং রাষ্ট্র সংস্কারে আমেরিকাসহ বিশ্বনেতাদের সহযোগিতা চাইলেন। তার চেয়ে শত গুণ বেশি সহযোগিতার আশ্বাস নিয়ে দেশে ফিরলেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে তার ভাষণ বিশ্ববাসীর মনে নতুন এক বিশ্বের স্বপ্ন বুনে দিয়েছে।
জাতিসংঘে ড. ইউনূসের সফর যেন ‘এলাম, দেখলাম এবং জয় করে নিলাম’। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. ইউনূসকে ঘিরে বিশ্বনেতাদের আবেগ ও উচ্ছ্বাস দেখে এ কথাটাই বারবার মনে আসবে। নিজ দেশের নেতাকে ঘিরে বিশ্বসভার অধিবেশন যতটা আলোকিত হয়েছে, সেই আলোর ঝলকানিতে প্রবাসীদেরও আনন্দের সীমা ছিল না। প্রবাসের, বিশেষ করে নিউইয়র্ক প্রবাসীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সীমা ছিল না। গর্বে, অহংকারে বাঙালিরা ছিলেন উদ্দীপ্ত। আগামীতে প্রবাসীরা সত্যি সত্যি ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এক নতুন বাংলাদেশ দেখতে উদ্্গ্রীব। প্রবাসীদের ধারণা, বাংলার মানুষকে অতীতের অসহনীয় ভয়ের পরিবেশ থেকে মুক্তি দিলে একমাত্র ড. ইউনূসই দিতে পারবেন। বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুতি দান মুদ্রাবাজার থেকে ও ব্যাংক থেকে খেকোদের লুটপাটে অর্থনীতির যে বেহাল অবস্থা, সেটার অভাব দূর হবে এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার চাকা সচল থাকবে।
শেষ কথা হচ্ছে : বাংলাদেশের মানুষ এখন নতুন কিছু প্রাপ্তির মোহে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন। কিছুদিন পর এই মোহ হয়তো থাকবে না। তখন তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতি পালনে সততা ও সাফল্য মূল্যায়ন করতে শুরু করবেন। আমাদের প্রত্যাশা সেই পরীক্ষাতেও ড. ইউনূসের সরকার সফল হবে।

কমেন্ট বক্স