বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এসেছেন। তিনি নিউইয়র্কে চার দিন অবস্থান শেষে ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে ফিরে যাবেন। ড. ইউনূসের সফর যত সংক্ষিপ্তই হোক, তার এই সফরকে ঘিরে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রবাসীরা ড. ইউনূসকে নিউইয়র্কে জানিয়েছেন সুস্বাগত।
প্রবাসীরা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন ড. ইউনূসের এই সফরের দিকে। দেশের মানুষ যেমন তাকে নিয়ে ভাবছেন, তেমনি প্রবাসীরাও তাকে ঘিরে আশার আলো দেখছেন। দেশবাসী ও প্রবাসীদের প্রত্যাশা গত ১৫ বছরে জমা সব জঞ্জাল সাফ করতে তিনি সফল হবেন। এ ছাড়া তিনি রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় চালকের আসনে বসেছেন। রাষ্ট্র সংস্কার কোনো সাধারণ দায়িত্ব নয়, এ এক বিরাট বিশাল দায়িত্ব। বিচারব্যবস্থা, আইন সংস্কার, অর্থনীতির বেহাল দশা থেকে উদ্ধার করা। অতীতের নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়নের চক্রে চারদিকে যে ধস, সে ধস থামিয়ে দেশকে সামনে নিয়ে যাওয়া খুব সহজ কথা নয়। তবে দেশের গরিষ্ঠ মানুষ, প্রায় সব রাজনৈতিক দল ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তাদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে। এত সব সত্ত্বেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তিন মাস বা ছয় মাস সময়কালে সবকিছু ঠিক করে ফেলা খুব সহজ কথা নয়। এ ছাড়া জাগতিক উন্নয়ন সম্ভব হলেও মানবিক উন্নয়ন সহজ কথা নয়। বেঁধে দেওয়া সময়ে এসব কাজ হয় না। এ জন্য প্রয়োজন মানুষের নিজস্ব চেতনায় পরিবর্তন এনে শুদ্ধ হওয়া। এটা যেমন সময় বেঁধে হবে না, বাইরে থেকে জবরদস্তি করেও সম্ভব নয়। তবে রাজনীতি এমন একটি বিষয়, যেখানে সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে আজ চতুর্দিকে দুর্বৃত্তায়নের যে বিষাক্ত পরিবেশ ও মূল্যবোধের অবক্ষয়, ঘুষ-দুর্নীতি, আইনের অপশাসন, পুলিশে অনৈতিকতা, বিচারব্যবস্থায় ধস, ব্যাংকে লুটপাট, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অভাব, পাহাড়ে পাহাড়ে দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষÑসব মিলিয়ে বেহাল দশায় মানুষের কাহিল অবস্থা।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, প্রবাস ও দেশের মানুষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, মানুষের প্রত্যাশার যে সাগর আপনার সামনে, তা আপনি আপনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, মেধা, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বে আপনার যে সুসম্পর্ক, সেটা কাজে লাগিয়ে সেই সাগর পাড়ি দিতে আপনি অবশ্যই সফল হবেন। আপনার চেয়ে অর্থনীতির এ কথা বেশি আর কে জানে, ‘মানুষের চাহিদা সীমাহীন আর সম্পদ সীমিত।’ তাই সীমিত সম্পদে মানুষের অপার চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। তবু ব্যবস্থাপনার যে তত্ত্ব রয়েছে, বিশ্বে তা আর আপনার চেয়ে ভালো কে জানে। মানুষ বিশ্বাস করে, আপনার নেতৃত্বে দেশ আর কোনো দুঃস্বপ্নে পতিত হবে না। আপনাকে নিয়ে প্রবাসীদের দারুণ উৎসাহ এবং অনেক প্রত্যাশা। প্রবাসীদের পক্ষ থেকে তাদের কিছু প্রস্তাব ঠিকানা তুলে ধরছে। ঠিকানার চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি এম এম শাহীন বাংলাদেশের পার্লামেন্টে প্রবাসীদের জন্য ৩০টি আসন সংরক্ষণের দাবি তুলে ধরেছিলেন। সে দাবি আজও পূরণ হয়নি। এ ছাড়া ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু হলেও তা বহুদিন হয় বন্ধ রয়েছে। সবাই প্রত্যাশা করছে, আপনার নেতৃত্বে বিমানের সেই ফ্লাইট আবার চালু হবে। বন্ধ হবে বিমানবন্দর থেকে শুরু করে দেশে অবস্থানকালে প্রবাসীদের সব ধরনের হয়রানি। তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করা, যাতে প্রবাসীদের স্বদেশ গমন নিরাপদ ও নির্ঝঞ্ঝাট হয়। স্বদেশে তাদের সহায়-সম্পদ রক্ষা করা হয়। প্রবাসীরা গভীরভাবে বিশ্বাস করেন, তাদের দাবিগুলো আপনি মানবিক বিবেচনায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন। রেমিট্যান্সযোদ্ধা হিসেবে প্রবাসীদের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে গেলে এসব দাবি মেনে নেওয়া খুবই যৌক্তিক। বাংলাদেশের মানুষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, বিভিন্ন দেশের অগণিত নেতা, রাষ্ট্রপতি, সরকারপ্রধান আপনার ব্যক্তিগত বন্ধু ও সুহৃদ। জাতিসংঘের মূল অধিবেশনের পাশাপাশি তাদের অনেকের সঙ্গে আপনার কথা হবে। তাদের সান্নিধ্য আপনার সব কাজে সাফল্য লাভে সহায়ক হবে। জাতিসংঘে আপনার অপার সাফল্য কামনা করছি। নিউইয়র্কে আপনার অবস্থান যেন শান্তিময় ও স্বস্তিদায়ক হয়। আপনার দীর্ঘ জীবন ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।