Thikana News
১০ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
রয়টার্সকে সাক্ষাৎকারে ওয়াকার-উজ-জামান

  সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না 

  সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না 


ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত আগস্ট মাসের শুরুতে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার দেশের প্রধান প্রধান খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এমন অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের এই সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

‘যাই হোক না কেন’ সরকারকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না জানিয়ে তিনি বলেছেন, আগামী দেড় বছরের মধ্যে দেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ হতে হবে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এসব কথা বলেন বলে ২৪ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থাটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পতনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া প্রধান প্রধান সংস্কার কাজগুলো সম্পন্ন করতে সাহায্য করার জন্য ‘যাই হোক না কেন’ অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান, যাতে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

রয়টার্স বলছে, গত আগস্টের শুরুতে হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং সেনাবাহিনী কোনও বাধা দেয়নি। আর এতেই শেখ হাসিনার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায় এবং ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর স্বৈরাচারী এই শাসক পদত্যাগ করে প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে যান।

এমন অবস্থায় সোমবার রাজধানী ঢাকায় নিজের কার্যালয়ে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেনারেল ওয়াকার বলেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এছাড়া সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্তি দেওয়ার একটি রূপরেখাও দিয়েছেন তিনি।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “আমি তার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) পাশে থাকব। যাই হোক না কেন। যাতে তিনি তার মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।”

বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত ড. ইউনূস ১৭ কোটি মানুষের দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করতে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির কয়েক সপ্তাহ আগে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, সংস্কারের পর গণতন্ত্রে উত্তরণ এক বছর থেকে দেড় বছরের মধ্যে করা উচিত। তবে এই সময়ে ধৈর্যের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, “আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলব— এই সময়সীমার মধ্যেই আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।”

রয়টার্স বলছে, অবশ্য বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং তার সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল উভয়ই গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছিল।

জেনারেল ওয়াকার বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং তিনি (সেনাপ্রধান) প্রতি সপ্তাহে বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন এবং তাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অশান্তির পর দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত যে— আমরা যদি একসাথে কাজ করি তবে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনও কারণ নেই।”

গত জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর তৎকালীন সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়নে ও হিংসাত্মক সংঘর্ষে এক হাজারেরও বেশি লোক নিহত হন। একপর্যায়ে এই আন্দোলন বিস্তৃত সরকারবিরোধী বিদ্রোহে পরিণত হয়, যা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন।

গণঅভ্যুত্থান ও বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরী ঢাকার জমজমাট রাস্তায় শান্তি ফিরে এসেছে, কিন্তু হাসিনার প্রশাসনের নাটকীয় পতনের পর সিভিল সার্ভিসের কিছু অংশ এখনও সঠিকভাবে কার্যকর হয়নি।

বাংলাদেশের পুলিশের প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার সদস্য এখনও বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি কাজ করছে সেনাবাহিনী।

শাস্তি এবং সংস্কার
রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সামরিক শাসনের অধীনে আসে। এরপর ১৯৯০ সালে দেশের সামরিক শাসক হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন, যার ফলে গণতন্ত্র ফিরে আসে।

এরপর ২০০৭ সালে সামরিক বাহিনী আবার একটি অভ্যুত্থান ঘটায় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন জানায়। দুই বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত ওই সরকার শাসন করেছিল।

দীর্ঘ কর্মজীবনে একজন পদাতিক অফিসার হিসেবে এই অশান্তির সময়গুলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন জেনারেল ওয়াকার। তিনি বলেছেন, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে কোনও হস্তক্ষেপ করবে না।

তিনি বলেছেন, “আমি এমন কিছু করব না যা আমার সংস্থার (সেনাবাহিনী) জন্য ক্ষতিকর হয়। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।”

হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকে প্রস্তাবিত ব্যাপক সরকারি সংস্কারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও তার সদস্যদের ইতোপূর্বে করা অন্যায়ের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছে এবং ইতোমধ্যে কিছু সৈন্যকে শাস্তিও দিয়েছে। তবে এই বিষয়ে আরও বিশদ কোনও বিবরণ দেননি জেনারেল ওয়াকার।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স