Thikana News
০৭ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪

আহমদ ছফা : মনন ও সাহিত্যবোধ

আহমদ ছফা : মনন ও সাহিত্যবোধ
এবিএম সালেহ উদ্দীন


বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ আহমদ ছফার (১৯৪৩-২০০১) জন্ম ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন। তিনি একাধারে লেখক, ঔপন্যাসিক, কবি, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশে খ্যাতিমান।

চট্টগ্রামের হাসিমপুরের গাছবাড়িয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ বাড়িতে বেড়ে ওঠা আহমদ ছফার মাঝে শিশুকালেই মেধা ও প্রতিভার দিকটি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। প্রাইমারিতে পড়ার সময় রামচন্দ্রকে নিয়ে একটি পদ্য রচনার মধ্য দিয়ে তিনি স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ
করেন। পুত্রের এই কৃতিত্বে বাবা হেদায়েত আলীর (ধন মিয়া) নির্দেশে জুমার নামাজের পর মসজিদের মুসল্লিদের সামনে পদ্যটি পাঠ করতে হয়েছিল। উদ্দেশ্য, গুরুজনের দোয়া ও শুভাশিষ। ছোটবেলা থেকেই তাঁর ভেতর মেধা ও মননচিন্তার বিস্ময়কর প্রতিভা পরিলক্ষিত হয়।

হাইস্কুলে পড়ার সময় তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। তার অন্যতম কারণ ছিল সমাজের নানা রকম অন্যায়, অনাচার ও অসংগতি দেখতে দেখতে স্কুলজীবন থেকেই আহমদ ছফার চিন্তা ও দর্শনে এই পরিবর্তন আসে। তিনি বুঝতে পারলেন, যেকোনো কাজ সফল করতে হলে 

ঐক্যবদ্ধভাবে করতে হবে। তাঁর যুক্তি ছিল কোনো প্রতিবাদ ও প্রতিকার করতে হলে এককভাবে করা যায় না। এ জন্য সম্মিলিত ও সংঘবদ্ধ শক্তির ভূমিকার প্রয়োজন। সে জন্য তিনি ছাত্রজীবন থেকেই সংগঠনে যুক্ত থেকে মানুষকে যাবতীয় কুসংস্কার থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। প্রত্যাশা ছিল সামাজিকভাবে অবহেলিত মানুষকে শিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলা। মানুষের মুক্তি ও অধিকারের সমব্যবহার নিশ্চিত করা। তিনি সামাজিক অবক্ষয় ও কুসংস্কারের বিরোধিতা করতেন। রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশে অরাজকতা ও গণমানুষের দুর্ভোগে খুব কষ্ট পেতেন। ফলে ওই সব কষ্টবোধ ও সংক্ষুব্ধতার ফলে তাঁর সাহিত্যকর্মে একধরনের প্রতিবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে।

আমাদের সমাজের মানবতা-বিবর্জিত কুসংস্কার আর অনাচারবৃত্তির ঔদ্ধত্যপূর্ণ আস্ফালনের জবাব মেলে আহমদ ছফার লেখনীতে। অসাধারণ মেধা ও মননের ছাপ তাঁর প্রতিটি প্রবন্ধ ও গল্প-উপন্যাসের পরতে পরতে। তাঁর লেখা সাহিত্যের প্রাসঙ্গিক উপাদানে ভরপুর। তাঁর কয়েকটি কবিতার বইও আছে, যার অনেক কবিতা কালজয়ী। এ ছাড়া বেশ কিছু চিরন্তন গানও আছে তাঁর। প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গল্প, উপন্যাস এবং উপলক্ষের লেখাগুলো পাঠককে নাড়া দেয়, শিহরিত করে। পাঠককে আলোড়িত করে এবং ভাবতে শেখায়। আমাদের চলমান সমাজ ও রাষ্ট্রপুঞ্জকে নাড়া দিয়ে যায়।
বাংলা সাহিত্যাকাশে আহমদ ছফার আবির্ভাব অনেকটা ধ্রুবতারার মতো। সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় তাঁর আশ্চর্যজনক বিচরণ ছিল। তাঁর মনন-ক্ষমতা এতই প্রখর ও ঈর্ষণীয় ছিল, অনেকটা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনধারার সঙ্গে কিছুটা তুলনা করা যায়। নজরুলের অপ্রতিরুদ্ধ সাহসী চেতনার মতো আহমদ ছফা সব সময় রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও সমাজে চেপে থাকা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। যেকোনো বৈষম্য ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। অসংগতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, লিখেছেন এবং মাঠপর্যায়ে কাজ করেছেন। জাতীয় চেতনার কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে তিনি বলেন :

‘একটি ভাববিপ্লবের মশালচি হিসেবে বাংলার সাহিত্যাকাশে কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব।’ নজরুলের মননশীলতা, সৃজনক্ষমতা ও সৃষ্টিচেতনায় ঊর্ধ্বমুখী শিহরণের কথা তিনি সব সময় জোরের সঙ্গে বলতেন। নজরুলের সৃষ্ট ‘বিদ্রোহী’ কবিতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিখ্যাত কবিতা বিদ্রোহী জলস্তম্ভের মতো চেতনার ঊর্ধ্বে উড্ডীন অবস্থার প্রকাশ; তা যেমন চিত্তবিহারী, তেমনি বলিষ্ঠ। এই চিত্তবিহারী বলিষ্ঠতাই নজরুলের সর্বশ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য।’

তিনি উচ্ছ্বাস ও আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘আমাদের সাহিত্যের এ পর্যন্ত সর্বশেষ আদর্শ নির্মাতা এবং শেষতম শ্রেষ্ঠ কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মের পুনর্মূল্যায়ন এখনো হয়নি।’
বাংলা সাহিত্যের দিকপালদের নিয়ে এমন অসংখ্য মন্তব্য নির্বিশঙ্কভাবে আহমদ ছফা প্রকাশ করেছেন। বাংলা সাহিত্যদর্শনেও তাঁর ভেতরকার সৃজন ও মননের শক্তিময়তার বহু নজির আছে। কখনো কোনো একপেশে মতবাদে তিনি বিশ্বাস করতেন না। এ ক্ষেত্রে তিনি সমাজের সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবীকেও পরোয়া করে চলেননি। যাকে মনে ধরেছে তাঁকে নিয়ে লিখেছেন। সাহিত্যাদর্শে যেকোনো অসংলগ্নতা প্রশ্নে নিজের ভাবনাচিন্তা ও লেখায় রবীন্দ্রনাথ এবং বঙ্কিমচন্দ্রকেও ছাড় দেননি। ব্যক্তিগতভাবে কবিগুরুর প্রতি তাঁর অগাধ ভক্তি ছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে সর্বব্যাপী সব মানুষের কথা বলতে ও লিখতে কিংবা সব মানুষ সম্পর্কে মূল্যায়নে ঘাটতি পরিলক্ষিত হওয়ায় কতিপয় মৌলিক প্রশ্নে আহমদ ছফা তাঁর সংক্ষুব্ধতা ও আক্ষেপ প্রকাশ করেন।

এ প্রসঙ্গে ‘জীবিত থাকলে রবীন্দ্রনাথকেই জিজ্ঞেস করতাম’ শিরোনামে একটি কালজয়ী প্রবন্ধে স্পষ্টত তাঁর প্রতিবাদী চেতনা, সংক্ষুব্ধতা ও সাহসের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়, যা রীতিমতো বিস্ময়ের ব্যাপার। এখানে তিনি স্পষ্টভাবে রবীন্দ্রনাথকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, “গোত্রের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আমার জীবনের মহত্তম মানুষ। জীবনের সমস্ত রকম সমস্যা সংকটে আমি তার রচনা থেকে অনুপ্রেরণা সঞ্চয় করতে চেষ্টা করেছি। আমার বোধবুদ্ধি যখন একটু সেয়ানা হয়ে উঠল, একটা প্রশ্ন নিজের মধ্যেই জন্ম নিল। আমি মুসলমান চাষা সম্প্রদায় থেকে আগত একজন মানুষ। রবীন্দ্রনাথ আমাদের নিয়ে কিছু লিখেননি কেন? এ প্রশ্নটা মনের মাঝে জাগলেও প্রকাশ্যে উচ্চারণ করতে সাহস করিনি। আমাদের গোঁড়া মুসলমানরা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যে সকল অপপ্রচার করে থাকে, আমার প্রশ্নটিকে তাদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে আমাকে রবীন্দ্র-বিরোধীদের সঙ্গে এককাতারে দাঁড় করার ভয়ে অনেক দিন চুপচাপ ছিলাম। এখন আমার একটি উপলব্ধি এসেছে, যে যেভাবে ইচ্ছে গ্রহণ করুক, আমার মন যেভাবে বলছে আমি প্রশ্নটা সেভাবে উচ্চারণ করব। এখানকার রবীন্দ্রভক্তরা হয়তো রুষ্ট হবেন। তবে আমি নিশ্চিত, রবীন্দ্রনাথের রুহ মোবারক আমার প্রশ্নে কষ্ট পাবে না। রবীন্দ্রনাথের অনুভূতি অত্যন্ত সূক্ষ্ম। তিনি ফুলের গন্ধ, পাখির গান, এমনকি গোধূলির আলোর কাছেও নিজেকে ঋণী ভাবতেন। সম্প্রতি ‘ফায়ার অব বেঙ্গল’ শীর্ষক এক হাঙ্গেরিয়ান মহিলার একটি চমৎকার উপন্যাস আমি পেয়েছি। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা। ওই উপন্যাসের চরিত্রের একটি উক্তি ‘রবীন্দ্রনাথ যখন ধ্যানে বসতেন ঘাসের অঙ্কুর গজানোর শব্দও তিনি শুনতে পেতেন।’

“আমার প্রশ্নে আসি। অত্যন্ত সহজ ও সরল প্রশ্ন। কোনো ঘোরপ্যাঁচ নেই। রবীন্দ্রনাথ তাঁর মুসলমান প্রজাদের নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ গল্প কিংবা উপন্যাস কেন লিখলেন না? এই মুসলমান প্রজারাই তো রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের পূর্বের ঠাকুর জমিদারদের অন্ন সংস্থান করত। এই মুসলমান প্রজাদের জীবনের সমস্যা-সংকট সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ যত বেশি জানতেন, গোটা ভারতবর্ষে সে রকম আর একজন মানুষও ছিলেন কি না সন্দেহ।”

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ওপর আহমদ ছফার শ্রদ্ধাবোধ ও ভক্তির অপার নিদর্শন ছিল। যাঁর প্রতি ছিল আকাশ পরিমাণ শ্রদ্ধাবোধ। কিন্তু কবিগুরুর রচনার মধ্যে কোনো অসংগতি দেখা দিলে তো স্বাভাবিকভাবে তাঁকে কাঁদাবে, পীড়িত করে তুলবে।

রবীন্দ্রনাথের ব্যাপারে তাঁর ভক্তি-শ্রদ্ধার কমতি ছিল না। কবিগুরুর বিষয়ে তাঁর উক্তি হচ্ছে :
‘বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আর কারো রচনায় আমার মন বসে না।’
আসলে আদর্শ ছায়ায় নিজের মননসত্তা পোক্ত হওয়া মানুষই পারেন অধিকারের আপন মহিমায় এমন শক্ত ও কঠিন সত্যের পক্ষে অবস্থান করতে পারেন। তাঁর মধ্যে একটা অনুসন্ধিৎসু ভাব ও আবিষ্কারের নেশা ছিল। যিনি আমাদের সমাজের চিত্র ও চারপাশ দেখতেন। সমাজের প্রকৃত চিত্র তাঁর লেখার মধ্যে এঁকে নিতেন।

১৯৬৭ সালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে রবীন্দ্রনাথের ওপর আহমদ ছফা একটি প্রবন্ধ সংকলন বের করেছিলেন, যার সম্পাদকীয় লিখেছেন ড. আনিসুজ্জামান। বাংলাবাজারের স্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে সেটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ শ্রদ্ধাবোধ আকাশ সমান থাকলেও সাহিত্যের অসংগতির ব্যাপারে তিনি তাঁর আক্ষেপ, দুঃখবোধ ও কষ্টের কথা কেন এমনভাবে প্রকাশ করলেন, তা নিয়ে অনেকের মাঝে দ্বিধার সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে ‘শতবর্ষের ফেরারি : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়’ নামে সুদীর্ঘ প্রবন্ধ পুস্তক লিখেও বঙ্কিমের উপন্যাসে মুসলমানবিদ্বেষী লেখার কঠোর সমালোচনা করেছেন আহমদ ছফা। যা নিয়ে বঙ্কিমপন্থীরা ঢাকা ও কলকাতায় আহমদ ছফাকে কুপোকাত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর যুক্তির কাছে টিকতে পারেননি। কেননা, সাহিত্য-সংস্কৃতি কোনো নাচের পুতুল নয়। কোনো মতলববাজ রাজনীতি কিংবা ধর্মান্ধতা নয়, কট্টর থেকে বিবেকবোধহীন জড় পদার্থও নয় সেটি। আহমদ ছফার সাহিত্যদর্শন হচ্ছে সর্বজনীন। সব মানুষের জন্য নিবেদিত।

পৃথিবী ও প্রকৃতির প্রতি ছিল তাঁর অনুরাগ। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আহমদ ছফা ‘উত্থানপর্ব’ নামে একটি সুসমৃদ্ধ সাহিত্য পত্রিকার মাধ্যমে সমাজের বৈষম্য ও রাষ্ট্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার কলাম চালিয়েছেন।

স্বাধীনতার পর অন্যান্য কবি-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে আহমদ ছফা স্বাধীন দেশের আলো ও বাতাসের স্নিগ্ধ পরশের দোলায় দুলতে দুলতে মুক্তহাতে লেখালেখি শুরু করলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থাপনায় মানবতাহীন বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে উঠল। একশ্রেণির উগ্র বখাটে রাজনীতির নেতাকর্মীদের দ্বারা ঢাকা শহরসহ অন্যান্য শহরে অবাঙালি ব্যবসায়ীদের ধন-সম্পদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় পালিয়ে যাওয়া সংখ্যালঘু হিন্দুদের সম্পত্তিগুলো সরকারি দলের লোকেদের দখলে চলে যেতে শুরু করল। আহমদ ছফা কঠোর প্রতিবাদ করলেন। তিনি কলাম লিখতে শুরু করলেন। এ ছাড়া ব্যাপক লুটতরাজ, রক্ষীবাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধেও কলাম লিখলেন। এই সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল হলে থাকতেন। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের কল্যাণে লিখতে শুরু করলেন। শুধু তা-ই নয়, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাকশাল প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সরকারি নীতির কঠোর সমালোচনা করেন। কিন্তু তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কখনো সমালোচনা করেননি। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিও ছিল তাঁর আকাশ পরিমাণ শ্রদ্ধাবোধ। তিনি কখনো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো কটূক্তি করেছেন বলে আমার জানা নেই। এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কারও কারও সমালোচনা ও বক্রোক্তিকে তিনি কখনো আমলে নেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীগণ যেন সরকারের ফাঁদে পা না দেন এবং বাকশালের খাতায় স্বাক্ষর না করেন, সে জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ করেন। আমাদের দেশের পরান্নজীবী বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে তিনি তার কষ্টবোধ ও সংক্ষুব্ধতা নিয়ে অনেক সাহসী কথা লিখেছেন। ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ (১৯৭২) গ্রন্থে তিনি লেখেন :

‘বর্তমান মুহূর্তে আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিজীবীরাই হচ্ছেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রেণি। এরা চিরদিন হুকুম তামিল করতেই অভ্যস্ত। প্রবৃত্তিগত কারণে তারা ফ্যাসিস্ট সরকারকেই কামনা করে। কেননা একমাত্র ফ্যাসিস্ট সরকারই কিছুসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে সম্মান শিরোপা দিয়ে পুষে থাকে। অল্পসংখ্যক বাছাই করা লোককে দিয়ে নিজেদের প্রচার-প্রোপাগান্ডা করিয়ে দেশের জনসমাজের স্বাধীন চিন্তা এবং প্রাণস্পন্দন রুদ্ধ করেই ফ্যাসিবাদ সমাজে শক্ত হয়ে বসে। চিন্তাশূন্যতা এবং কল্পনাশূন্য আস্ফালনই হলো ফ্যাসিবাদের চারিত্র্য লক্ষণ।’

(বাকি অংশ আগামী সংখ্যায়)

কমেন্ট বক্স