জাহানারা ইউসুফ
চতুর্দশীর চাঁদ ঢলে পড়েছে,
রাতের শেষ প্রহর।
নরম রূপালী চাঁদের আলো,
ম্লান হতে চলেছেÑ দিনের আগমনীর বারতায়।
কত রাত কাটিয়েছি দু’জনে, মায়াবী কুজনে,
এমন রাত আসে বিভীষিকায়।
কথা ছিল তুমি আমাকে যাবে না ছেড়ে।
তবে কেন গেলে চলে, আমায় একা ফেলে?
তোমার বিরহে সময় কাটে ব্যাকুলতায়,
চোখে জ¦ালা ধরে ঘুম পালায়।
রাতের প্রহর কাটে যন্ত্রণায়।
তোমার আমার প্রিয় জায়গায় এসে বসি,
তোমায় খুঁজি।
সবকিছু তেমনি আছে। নেই শুধু তুমি।
এখানে দু’জনে কত সময় কাটিয়েছি নিরিবিলি।
তুমি আমার কি ছিলে, দেয়া হয়নি ফিরিস্তি।
আজ নিজের মনে বলি, তুমি ছিলেÑ
আমার প্রথম চাওয়া, কল্পনার কাক্সিক্ষত পুরুষ।
স্বপ্ন দেখার রঙিন চশমা।
তুমি আমার পরম নির্ভরতার আস্থা-ভরসার স্থল।
তুমি এগিয়ে চলার প্রেরণা, আমার শক্তি, উদ্দীপনা
দুঃখ ভুলিয়ে দেয়ার শান্তনা।
তুমি আমার সঙ্গী অবসরের, ব্যস্ততায়।
তুমি আমার না বলা কথা, তুমি আমার চিন্তাহীন বিনিদ্র রজনী।
তুমি আমার হাসি-কান্না, তুমি আমার আনন্দের প্রতিশ্রুতি।
আমি অল্প শিক্ষিত, তুমি আমার জ্ঞানের দীপশিখা।
তোমার আলোয় আমার পথচলা।
তুমি আমার মায়াবী জোছনা রাতেরÑ
আলো আঁধারীতে দুষ্টুমির চঞ্চলতা।
তুমি আমার ভালবাসার অনুভূতির প্রশান্তি
আমার অসুখের ঔষধ।
তুমি আমার বিশ^াস। তুমি আমার বুকের কাঁটাÑ
আমার অপেক্ষার বুনো হাঁস।
তুমি আমার সব চাওয়া পাওয়ার প্রাপ্তির পূর্ণতা।
তুমি আমার সাময়িক বৈরিতার অস্থির অপারগতা।
আমি ছিলাম তোমার আদর ভালবাসার অপূর্ণতা।
তোমার ভালবাসার ব্যাপ্তি ছিল সীমাহীন গভীরতা।
আমায় তুমি ভালবেসেছো আমায় চেয়েও অধিক।
এখনও নির্ভৃতে দোলা দেয়, পুলকিত করে মন।
যেদিন তুমি এলে আমার জীবন।
তুমি ছিলে আমার খেয়ালে কল্পনায়।
বাস্তবে তুমি এলে, তখন আমি সপ্তদশী।
তুমি স্টাব্লিস্ট বয়স তেত্রিশ। তাতে নেই কোন বাঁধা।
তোমার আমার হাতে হাত মিলিয়ে দিলো আমার অভিভাবক বাবা
প্রথম হলো দেখা, হলো চোখাচোখিÑ
হলো পরিচয়-পরিণয়। বন্ধু হলাম।
ভালবাসলাম দু’জন দু’জনায়।
সময় পেরিয়ে যায়, বসে আছি ঠাঁয়।
রাতের আকাশে সুখতারা দেখা দেয়।
বায়ু বহে মৃদুলা বায়।
এক ফালি মেঘ দেখা দেয় ঈশান কোণ।
আমি ভাবিনি তুমি আসবেÑ
তোমার গায়ের উষ্ণতা টের পাচ্ছি।
চোখ বুজে আছি বসেÑ
তুমি সরিয়ে দিচ্ছো আমর মুখের উপর
উড়ো চুলগুলো ফুঁ দিয়ে।
আমি অপেক্ষায় তোমার দুষ্টুমির ওষ্ঠের ছোঁয়ার।
হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে গর্জে উঠে বজ্র্য
গা ঘেঁষে বসা পোষা বিড়ালটা উষ্ণতা ছড়িয়েছে।
বজ্র্যের আওয়াজে ভয় পেয়ে, যায় ঘরে ছুটে।
চুলগুলো আমার বাতাসেই উড়ে।
আমি ছিলাম হ্যালোসিয়েশনে।
আজও স্মৃতির মণিকোঠায় আমাদের প্রেম-ভালবাসাÑ
সুখানন্দ, দুঃখ-বিরহরে স্পর্শকাতর অনুভূতি নাড়া দেয়।
তুমি আমায় রেখেছিলে ভালবাসার দীপ্তালোকে ভরে।
তুমি চলে গেছো মৃত্যুর স্বাভাবিকতায় পরপাড়ে।
তুমি ছিলে আমার প্রয়োজন, তুমি ছাড়া আমি একা,
আজ দুঃখ-বেদনায় আমার কান্না মোছাবারÑ
নেই আর ভালবাসার হাত, আদরে আদরে প্রবোধ দেবার।
বয়সের ভারে ন্যূজ্ব, তবুও স্মৃতিরÑ
সুখের পায়রা হাতড়ে বেড়াই।
তুমি স্বামীর চেয়ে বেশি ছিলে বন্ধু।
বন্ধু, তুমি যেখানে থাকো ভাল থাকো।
তোমার জন্য করি দোয়া, মোনাজাত।
থাকো হেফাজতে পরোয়ারদেগার।