Thikana News
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অভ্যুত্থানের পর গ্রেপ্তার ৩০ সাবেক মন্ত্রী-এমপি

অভ্যুত্থানের পর গ্রেপ্তার ৩০ সাবেক মন্ত্রী-এমপি


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা     দিয়ে দেশত্যাগ করেন। বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ ভারতে যান। অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের টানা চারবারের শাসনামলের। দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর পর থেকে দ্রুত দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী ও এমপিরা গা-ঢাকা দিতে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান, অনেকে দেশত্যাগ করেন। গ্রেপ্তার হতে শুরু করেন আওয়ামী লীগের নেতা, আলোচিত মন্ত্রী ও এমপি। এরই মধ্যে দেশজুড়ে শুরু হয় গণহারে হত্যা মামলা দায়ের, আসামির সংখ্যায় উল্লেখ করা হয় শত শত আওয়ামী লীগের অনুসারীর নাম, অজ্ঞাত রাখা হয় হাজার হাজার। একের পর এক এসব মামলায় আসামির তালিকায় আসতে থাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ শীর্ষ প্রায় সব নেতা ও এমপি-মন্ত্রীর নাম।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এ পর্যন্ত (১৭ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগ সরকারের ৩০ জন মন্ত্রী-এমপি, উপদেষ্টা ও শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হয় আওয়ামী লীগের বিতর্কিত মন্ত্রী, আর্থিক অনিয়মের জন্য আলোচিত ব্যক্তিবর্গের গ্রেপ্তার। সর্বশেষ গত ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার রাতে গ্রেপ্তার হন সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। একই দিন দুপুরে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে রাজধানী ঢাকার আদাবর থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এর আগের দিন ১৫ সেপ্টেম্বর রোববার রাতে গ্রেপ্তার হন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান ও সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। ১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে গ্রেপ্তার হন সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বেসরকারি শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে শুরু হয় এই মিছিল। এরপর একে একে সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এবং সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয় গ্রেপ্তার হন।
সাবেক এমপিদের মধ্যে নেত্রকোনা-৫ আসনের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মাদারীপুর-৩ আসনের দলের প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, চট্টগ্রাম-৬ আসনের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, কক্সবাজার-৪-এর আব্দুর রহমান বদি, বরিশাল-২ আসনের শাহে আলম তালুকদার, চট্টগ্রাম-১১ আসনের এমএ লতিফ, ঠাকুরগাঁও-১ আসনের রমেশ চন্দ্র সেন, ঢাকা-৭ আসনের হাজী সেলিম, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের মাজহারুল ইসলাম সুজন, ঝিনাইদহ-১ আসনের নায়েব আলী জোয়ার্দার, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের নিজামউদ্দিন হাজারীকে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আটক করে।
এ ছাড়া বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার সাবেক মন্ত্রী-এমপি, রাজনৈতিক নেতারা রিমান্ডে বলছেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে মারণাস্ত্র প্রয়োগ ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে দায় চাপানো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ওপর। অধিকাংশ মামলাতেও তাদের আসামি করা হয়েছে। কিন্তু এ তিনজনের কাউকেই এ পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেমন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তেমনি সাবেক অনেক কর্মকর্তাও আটক হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত সেনা কর্মকর্তা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, যিনি একসময় র‍্যাবে কর্মরত ছিলেন, তাকেও আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সাবেক দুই আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, বরখাস্ত হওয়া ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফীসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর বাইরে আলোচিত ব্যক্তিদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবির, দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোজাম্মেল হক বাবু, একাত্তর টেলিভিশনের চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়া বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ, প্রধান প্রতিবেদক-উপস্থাপক ফারজানা রুপা প্রমুখ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও হত্যাকাণ্ডের হুকুম দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কয়েকটি মামলার আসামি হয়েছেন সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৩৫০ আসনের অধিকাংশ এমপিই মামলার আসামি হয়েছেন। সাবেক মন্ত্রী, এমপি, সরকারি কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতাসহ কয়েকশ আসামি এখনো অধরা। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানা গেছে।

কমেন্ট বক্স