Thikana News
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
কোটা সংস্কার আন্দোলন ► অনড় শিক্ষার্থীরা 🔸 কঠোর সরকার 🔸 নিহত ৬

টালমাটাল বাংলাদেশ

টালমাটাল বাংলাদেশ
উত্তপ্ত পুরো বাংলাদেশ। চারদিকে আতঙ্ক। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগের হামলা ও পুলিশের সংঘর্ষ, সংঘাতে রণাঙ্গন হয়ে উঠেছিল ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, কুমিল্লা, খুলনায় কোটা আন্দোলনকারী, ছাত্রলীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘাত-সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। রাজধানীর প্রবেশপথ ঢাকা টু চট্টগ্রাম, ঢাকা টু ময়মনসিংহ, ঢাকা টু মানিকগঞ্জ মহাসড়ক এবং মহাখালীতে রেলপথ অবরোধে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দিনভর দূরপাল্লার কোনো বাস রাজধানীতে প্রবেশ করেনি; ঢাকা থেকেও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। রেলপথ অবরোধ করায় কয়েক ঘণ্টা ঢাকার কমলাপুর থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
গত ১৬ জুলাই পুরো রাজধানী ঢাকা কার্যত হয়ে উঠেছিল উত্তাল। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এলাকা ছাড়াও রামপুরা, কুড়িল বিশ^রোড, নতুন বাজার, শনির আখড়া, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, চানখাঁর পুল, আগারগাঁও, মতিঝিল শাপলা চত্বর, পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক, মিরপুরসহ পুরো ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত লাখো শিক্ষার্থী। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষ এবং পুলিশের হামলা ও গুলিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। ঢাকা কলেজের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় ২ জন নিহত হয়েছেন। রংপুরে সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী মারা যান। ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে আরো কয়েকশ শিক্ষার্থী আহত হন। সারা দেশে ভয়াবহ সংঘাত, সংঘর্ষ এবং পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর ও বগুড়ায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব স্কুল, কলেজ ও সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবারের এইচএসসি ও সমমনা পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। এ অবস্থায় পুরো বাংলাদেশ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
হতাহত আর রক্ত ঝরলেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অনড়। তারা দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অন্যদিকে সরকারও কঠোর। পুলিশ-ছাত্রলীগকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করছে। সরকারের মন্ত্রীরাও বলছেন, কোটার বিষয়ে আদালতকে পাশ কাটিয়ে কোনো কিছুই করবে না সরকার। আন্দোলনকারী ও সরকারের পরস্পর অনড় অবস্থানে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে, বিশ^বিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মা-বাবা ভীষণ শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলনের পরিণতি কী দাঁড়ায়, তা নিয়ে তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। দেশের সচেতনমহল বলছেন, ইতিমধ্যে অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে, অনেক মেধাবী ছাত্রের তাজা রক্ত ঝরেছে, অনেক ছাত্রী নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাই এখনই এ বিষয়ে সমাধানে আসা জরুরি। না হলে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে গোটা দেশকেই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন গুলিবিদ্ধ : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করা হয়েছে। এতে চারজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে তিনটায় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হন জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জজ কোর্ট পার হয়ে রায়সাহেব বাজারের দিকে যাচ্ছিল মিছিলটি। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এতে চারজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ একজন শিক্ষার্থী ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ফেরদৌস আহমেদ। আরেকজন ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী অনিক। তাদেরকে ন্যাশনাল মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চাঁনখার পুলে ৪ জন গুলিবিদ্ধ : পুরান ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। তাদের মধ্যে অন্তত চারজন গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা : কোটা আন্দোলনে অংশ নিয়ে সারা দেশে মৃত্যুবরণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ সারা দেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ জুলাই মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ (মঙ্গলবার) হামলায় নিহত শহীদ ভাইদের জন্য আগামীকাল বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলা হয়, আপনারা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলায় জেলায় গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল পালন করুন। ঢাকায় অবস্থানরত সকলে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সময়মতো চলে আসুন।
মাঠে থাকবে ছাত্রদল : কোটা আন্দোলনের দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এখন থেকে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তবে ছাত্রদল তাদের সংগঠনের ব্যানারে না থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আন্দোলনে অংশ নেবে। ১৬ জুলাই মঙ্গলবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম এ কথা বলেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে গত সোমবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। রাকিবুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের ব্যানারে যেদিন থেকে শিক্ষার্থীরা সভা-সমাবেশ শুরু করেছেন, তখন থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের পাশে রয়েছেন। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে এই আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রদলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
কোটা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারেক রহমান : ওবায়দুল কাদের : সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন যা বাংলাদেশে চলছে, এর নেতৃত্ব নিয়েছেন লন্ডনের দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান। তার দল বিএনপি প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে। একটি অরাজনৈতিক আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পেছনে একটা মতলবি মহল আছে। বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার জন্য দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যকেও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আদালতের রায় বলপ্রয়োগের মাধ্যমে পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এসবের পেছনে একটা মতলবি মহল আছে। ১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে জনগণকে সাড়া দেওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের : কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে জনগণকে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৬ জুলাই মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা যে আহ্বান জানিয়েছেন, আমি মনে করি সারা দেশের মানুষের সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়া উচিত। সব রাজনৈতিক দলেরও তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো উচিত।’ তিনি বলেন, ‘এ দেশের মানুষ জেগে উঠছে। বিশ^াস করি, জনগণ তাদের অধিকার আদায় করে নেবে।’ বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার গতকাল যা ঘটিয়েছে, তা বাংলাদেশে আমরা আগে কখনো দেখিনি। হাসপাতালের মধ্যে গিয়ে সরকারি দলের লোকজন ছাত্রদের ওপর আক্রমণ করেছে। এটা আমরা কখনো চিন্তাও করতে পারি না।’
কোটাবিরোধী আন্দোলনরতরাই বীর মুক্তিসেনা : জি এম কাদের : বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, ছাত্রছাত্রীদের অহিংস কোটাবিরোধী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। এই যৌক্তিক আন্দোলনে সশস্ত্র বাধাদানের ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। কোটাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের প্রতি আমার অভিনন্দন। কোটাবিরোধী আন্দোলনরত ছাত্ররাই বীর মুক্তিসেনা। গত ১৬ জুলাই এক বিবৃতিতে জি এম কাদের এসব কথা বলেন। কোটাবিরোধী আন্দোলনের দাবিগুলো নীতিগতভাবে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, ‘পরবর্তী করণীয় ঠিক করা যেতে পারে এবং সে বিষয়গুলো আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জানানো যেতে পারে। অন্যথায় দেশ ও আগামী প্রজন্ম একটি সংঘাতময় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছি। মনে রাখতে হবে, অযৌক্তিক জেদ কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।

কমেন্ট বক্স